নবারুণ প্রকাশন

নবারুণ প্রকাশন ইসলামের শাশ্বত জ্ঞান, বিমল সৌন্দর্য ও চিরায়ত চেতনা নতুন আলোকে পৌঁছে দিতেই নবারুণ-এর উদয়।

15/07/2025

পূর্ব প্রকাশিতের পর...

দালীলুর রহমান আরো বলেন, ‘এছাড়াও ইসলাম ধর্মের প্রতিটি বিধানই জীবনঘনিষ্ট। সম্পূর্ণ মানবিক। পক্ষান্তরে হিন্দু ধর্মের কিছু বিষয় আগাগোড়াই অমানবিক। যেখানে মানবতার লেশ মাত্র নেই। যেমন, হিন্দু ধর্মে কেউ মারা গেলে ছেলেরা যত বিত্তবানই হোক না কেন, তাদেরকে চল্লিশ দিন পর্যন্ত কেবল ধুতি পরে কাটাতে হয়। এ সময় মাছ-মাংস কিছুই খেতে পারে না। আর ‘কাকবলি’ প্রথা পালন ছাড়া রান্না করা কিছু খাওয়া তো মহাপাপ!

শবদেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার মতো ভয়ংকর বিষয় মনে হয় পৃথিবীতে অন্যটি নেই। অথচ দেখো, ইসলাম ধর্মে এসব অমানবিকতার লেশমাত্র নেই। নেই অমানবিক নিয়মের বালাই। কেউ মারা গেলে সবাই কতো সুন্দর করে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দাফন করে। পরকালীন মুক্তি-কামনায় দোয়া-মোনাজাত করে। মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন শোকাহত থাকায় পড়শীরা তাদের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে যায়। এর চেয়ে সুন্দর জীবনব্যবস্থা আর কী হতে পারে? আশা করি বিষয়গুলো তুমি স্বাধীনভাবে একটু ভেবে দেখবে।’

কথাগুলো ঠাকুরমার বেশ মনে ধরে। তাই সুযোগ পেলেই নাতির কাছে ছুটে যান। ইসলামের সৌন্দর্য ও সাম্যের কথা শোনেন। একসময় তার হৃদয়েও হেদায়াতের দ্যুতি বিচ্ছুরিত হয়। তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমে দালীলুর রহমানের জন্য পরিবারের অন্যান্যদের কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে মাত্র দুই মাসের মাথায় তার পরিবারের সবাই একসাথে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়।

وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاء إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
‘আল্লাহ তা‘আলা যাকে খুশি তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন’
(চলবে ইনশাল্লাহ!...)

বই: কফি হাউজের সেই আড্ডাটা
লেখক: রবিউল হাসান
ধরন: দ্বীনে ফেরার গল্প
প্রকাশিতব্য

শীঘ্রই আসছে...
06/11/2024

শীঘ্রই আসছে...

29/10/2024

কোনো বান্দা যখন পাক্কা নিয়ত করে, আল্লাহর উদ্দেশে হিজরত করবে, তখন পদে পদে তাকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সবার আগে যে বাধাটি তাকে পার হতে হয়, সেটা হচ্ছে প্রবৃত্তির তাড়না, গাড়ি-বাড়ি-নারী ও পদ-পদবির মোহ। এখানে যদি সে আটকে যায়, তবে পথে নামার আগেই যাত্রাভঙ্গ হয় তার।
আর যদি সে এই বাধা পার হতে পারে, তবে সহসাই তার পথ আগলে দাঁড়ায় সম্মান ও খ্যাতির বিড়ম্বনা। মানুষ তার পেছনে পেছনে ঘোরে। কোনো মজলিসে উপস্থিত হলে সবাই তাকে জায়গা করে দেয়। হাতে চুমু খায়। বুকে জড়িয়ে নেয়। দুআ দেয়। দুআ নেয়। রাস্তায় বের হলে, ইশারা কোরে দেখায়—ওই যে অমুক যাচ্ছে। এই পর্যায়ে এসে যদি সে আটকে যায়, তবে আর গন্তব্যে পৌঁছা হয় না তার।
আর যদি এই বাধাও সে টপকে যেতে পারে, তবে তার সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় কাশফ ও কারামাত। নানা অলৌকিক বিষয় প্রকাশ পেতে শুরু করে তার থেকে। এগুলো দেখে সে যদি আত্মমুগ্ধ হয়ে পড়ে, তবে আর আল্লাহকে পাওয়া হয় না তার। আর যদি কোনোভাবে এই বাধাও অতিক্রম কোরে যেতে পারে, তখন তার গতি রোধ করে দাঁড়ায় একাকিত্ব ও দুনিয়াবিমুখতা। মানুষের কাছে আর শান্তি পায় না সে। কোলাহল তার ভালো লাগে না। তার শুধু ইচ্ছে করে, নীরবে নিভৃতে আল্লাহর ধ্যান ও ইবাদতে নিমগ্ন থাকতে। এটা অবশ্যই এই যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইল ফলক; তবে গন্তব্য নয়। কাজেই এখানে থেমে গেলেও আল্লাহকে পাওয়া যাবে না।
আল্লাহকে পেতে হলে তাকে আরও কিছু দূর অগ্রসর হতে হবে, নিজেকে নিয়ে যেতে হবে এমন একটা পর্যায়ে, যেখানে তার চলার পথের পাথেয় হবে আল্লাহর ভালোবাসা, তার দৃষ্টি থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অভিপ্রায়ের প্রতি নিবদ্ধ, আল্লাহ যা চান অথবা যেটাতে খুশি থাকেন, বান্দা হিসেবে সেটা করাই হবে তার একমাত্র কাজ, এতে তার আরাম লাগুক কিংবা কষ্ট, লাভ হোক কিংবা লস, মানুষ তাকে পছন্দ করুক কিংবা অপছন্দ, সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না সে।
কোনো বান্দা যখন নিজেকে এই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তখন সে আল্লাহকে পায়; এর আগে নয়। কাজেই আল্লাহকে পেতে চাইলে যথেষ্ট সাধনা করতে হবে। চলার পথে লোভনীয় অনেক কিছু আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকবে। ইচ্ছে করবে, ওগুলো কুড়িয়ে কোচড়ে ভরি; যা পেয়েছি, তুষ্ট থাকি তাতেই। কিন্তু আল্লাহকে পেতে হলে এই ইচ্ছাকে পাত্তা দেওয়া যাবে না। দৃষ্টি স্থির রাখতে আপন লক্ষ্যে। তবেই আমরা পাব আল্লাহকে।
আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিন এই অভিযাত্রা।

28/10/2024

বিশর আল-হাফি ছিলেন বিখ্যাত তাবেয়ি। আলিম ও যাহিদ হিসেবে বিশেষ খ্যাতি ছলো তার। শীতের একরাতে কয়েকজন তালিবুল ইলম তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে দেখেন, তিনি থরথর করে কাঁপছেন। কোনো রকমের গরম কাপড় নেই তার গায়ে। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন, এই শীতে সুবিধা-বঞ্চিত মানুষদের অনেক কষ্ট হয়। আমার একার পক্ষে তাদের সবার কষ্ট লাঘব করা সম্ভব নয়। তবে আমি চাইলে তাদের কষ্টের ভাগীদার হতে পারি; নিবিড়ভাবে অনুভব করতে পারি তাদের দুরবস্থা। সেটাই করছি এখন।

28/10/2024

আরিফ ও যাহিদের পার্থক্য
‘আরিফ’ বলা হয় আল্লাহর এমন বান্দাকে যে তার সবকিছু রবের হাতে সঁপে দেন, ভাগ্যের প্রতি রাখেন কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ। আর ‘যাহিদ’ হলো ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্দীপিত হয়ে দুনিায়ার মায়ামোহ ত্যাগ করেন। পরিচয় দুটো খেয়াল করলে দেখা যাবে, ‘আরিফ’-এর মধ্যে ভরসা ও সমর্পণের মাত্রা বেশি পাওয়া যায় ‘যাহিদ’-এর তুলনায়। গুণে ও সম্মানে যদিও তারা সমান বা কাছাকাছি।
পরিচয়ের এই পার্থক্যটা প্রভাব ফেলে তাদের চিন্তা ও দাওয়াতি কার্যক্রমেও। আরিফ কখনো কাউকে একথা বলেন না যে, তুমি দুনিয়ার কাজবাজ ছেড়ে দ্বীনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়। বরং তিনি বলেন, দুনিয়াকে দুনিয়ার জায়গায় রেখে গুনাহমুক্ত জীবন যাপন কর। এতেই তুমি আল্লাহর ভালোবাসা পাবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাবার জন্য নিঃসম্বল হওয়া শর্ত নয়।
তাছাড়া সম্মানজনক উপায়ে দুনিয়ার জীবন নির্বাহ করতে হলে, সম্পদ উপার্জনের বিকল্প নেই। এটা আমাদের মানবীয় দুর্বলতা। এটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আর এই অনস্বীকার্য ব্যাপারটা যখন ফটে ওঠে আরিফের দাওয়াতে, তখন সেটা গ্রহণ করা সহজ হয় আমাদের মতো নানা প্রয়োজনে জর্জরিত মানুষের জন্য।
আরও সহজ করে বললে, আরিফের কাছে দুনিয়া ত্যাগের তুলনায় গুনাহমুক্ত জীবন যাপন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দুনিয়া ত্যাগ ঐচ্ছিক; আর গুনাহমুক্ত জীবন যাপন ফরয। এজন্য একজন আরিফ কখনো ফরয বিধান পরিপালনে অভ্যস্থ হওয়ার আগে কাউকে নফল বা ঐচ্ছিক বিষয়ের আদেশ করতে পারেন না। তার দৃষ্টিতে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, কাউকে অস্বাভাবিক কোনো বিষয়ের দাওয়াত দেওয়া হলে, তাতে সাড়া দেওয়া ওই লোকের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।
কিন্তু একজন যাহিদ যখন কাউকে দ্বীনের দাওয়াত দেন, তার দাওয়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় দুনিয়া ত্যাগের ব্যাপারটা। তিনি মনে করেন, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে সবার আগে দুনিয়া ত্যাগ করতে হবে। কথা ঠিক। আল্লাহকে পেতে হলে হৃদয়ে অন্য কিছুকে জায়গা দেওয়া যাবে না। কিন্তু দুনিয়া একেবারে বাদ দিয়ে তো জীবন চালানো সম্ভব নয়। তাই তার দাওয়াতে সাড়া দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে মানুষের জন্য।
এটা অনেকটা বাচ্চাদের দুধ ছাড়ানোর মতো। আরিফকে যদি দুধ ছাড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে তিনি বাচ্চাকে আগে অন্য খাবেরর জন্য প্রস্তুত করবেন। টক-ঝাল ও স্বাভাবিক স্বাদের খাবারের সঙ্গে পরিচিত করবেন তাকে। তারপর আলগোছে ছাড়িয়ে ফেলবেন। এতে বাচ্চার কষ্ট কম হবে। স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়বে না খুব একটা।
কিন্তু এই দায়িত্ব যাহিদ পেলে সবার আগে তিনি দুধ ছাড়িয়ে ফেলবেন। এতে বাচ্চার কষ্ট হবে। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়বে তার।
কাজ একই। ফলাফলও কাছাকাছি। কিন্তু প্রক্রিয়াগত ভিন্নতার কারণে একটাতে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে; আরেকটাতে কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের উচিৎ হবে, এমন প্রক্রিয়ায় দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করা, যাতে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, কষ্ট না-পায়। এতে সাড়া পাওয়া যাবে বেশি।

28/10/2024

বয়ঃসন্ধি
বয়ঃসন্ধি মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দ্বীন ও জগতের অনেক কিছুই এর সঙ্গে জড়িত। এই সময়ে আমাদের দেহ, মন ও চিন্তার জগতে নানা মাত্রিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আমরা নিজেদের মধ্যে এমন কিছু আবেগ ও দ্বন্দ্ব টের পাই, যা আগে আগে কখনো পেতাম না। প্রকৃতির চিরচেনা রূপ আমাদের দৃষ্টিতে এমনভাবে ধরা দিতে শুরু করে যে, আমাদের মনে হতে থাকে, আজই বুঝি তাকে প্রথম দেখলাম।
বাহ্যিক এই পরিবর্তনের পাশাপাশি বয়ঃসন্ধি আমাদের জীবনে আরও একটি গুরুত্ব পরিবর্তন আনে। এ সময়ে আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনি দায়িত্ব দিয়ে সম্মানিত করেন। সমাজও তার দৃষ্টভঙ্গি বদলে ফেলে আমাদের ব্যাপারে; দিতে থাকে আমাদেরকে পরিপূর্ণ মানুষের মর্যাদা। এভাবে আমরা সম্পূর্ণ এক নতুন জগতে প্রবেশ করি, যেখানে আমাদের আবেগুলো শৈশবের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন হয় আর আমাদের দায়িত্বগুলো হয় বড়দের মতো।
প্রথম পরিবর্তনটা আমরা খুব সহজেই ধরতে পারি। দৈহিক পরিবর্তন, আবেগের উত্তাপ, চিন্তার চঞ্চলতা আমাদের উদ্দীপিত করে। অনিঃশেষ কৌতূহল আর অজানা এক রহসজগৎ অনবরত ডাক দিয়ে যায় আমাদের। আমরা কান পেতে সেটা শোনার চেষ্টা করি। কিছুটা বুঝি আর কিছুটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায় দূর থেকে ভেসে আসা রাখাল বালকের গানের শব্দের মতো।
কিন্তু দ্বিতীয় পরিবর্তনটা আমরা সবাই সচরাচর টের পাই না। আমরা যে একটু একটু করে মহান আল্লাহর দেয়া দায়িত্বগুলো গ্রহণের উপযুক্ত হয়ে উঠেছি, সেটা বুঝতে পারি না। পরিবার ও সমাজের লোকজনও যে আমাদের পরিপূর্ণ মানব হিসেবে বিচার করছে, তাও ধরা পড়তে চায় না আমাদের দৃষ্টিতে।
এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, প্রথম পরিবর্তনটি প্রাকৃতিক। তাই নির্দিষ্ট একটা বয়স হলেই সবাই সেটা টের পায়। এজন্য আলাদা কোনো শিক্ষা-দীক্ষার প্রয়োজন হয় না। এমনকি মানসিকভাবে সুস্থ না-হলেও টের পাওয়া যায় এই পরিবর্তনগুলো। কিন্তু দ্বীতিয় পরিবর্তনটির চরিত্র আলাদা। এটা বুঝতে হলে একটু একটু করে প্রস্তুত করতে হয় নিজেকে।
শৈশবে এ দায়িত্ব থাকে মা-বাবার। বয়স পরিবর্তনের সাথে সাথে একজন মানুষের ব্যাপারে মহান আল্লাহ এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে বদলে যায়—তার একটা বিবর্তনমূলক দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে হয় বাচ্চার সামনে। এতে সে দৈহিক পরিবর্তনের পাশাপাশি দ্বীনি ও মূল্যবোধগত পরিবর্তনগুলোর সঙ্গেও পরিচিত হবার সুযোগ পায়। এভাবে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের মধ্যে সুসমন্বয় ঘটে।
দ্বীনি ও মূল্যবোধগত এই পরিবর্তনের সঙ্গে যার পরিচয়পর্ব যত আগে শুরু হয়, সে ততবেশি এগিয়ে যায় আল্লাহর দিকে। আর যে এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে, তার শারীরিক বিকাশ তো অব্যাহত থাকে; কিন্তু মানসিক বিকাশ হয়ে পড়ে বাধাগ্রস্ত। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন। প্রাকৃতিক পরিবর্তনগুলো আমাদের জীবনে যতোটা ভাস্বর, দ্বীনি ও মানসিক পরিবর্তনগুলো তার চেয়েও জোরালো করে দিন। আমিন।

27/10/2024

কীভাবে বুঝবেন আপনি কোন পথে হাঁটছেন?
যখন দেখবেন—জ্ঞান আপনাকে বিনীত করছে, আমল আপনাকে সতর্ক করছে, বয়স আপনার কামনা-বাসনায় লাগাম টানছে, সম্পদ আপনার বদান্যতা বৃদ্ধি করছে, পদ-পদবি আপনাকে মানুষের নিকটবর্তী করছে এবং আপনাকে তাদের প্রয়োজন পূরণে প্রাণিত করছে, তখন বুঝবেন—আপনি সৌভাগ্যের মহাসড়ক ধরে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছেন।
কিন্তু কখনো যদি টের পান—ইলম আপনার ভেতর অহংকার উস্কে দিচ্ছে, আমল আপনাকে বড় করে তুলছে আপনার চোখে, বয়স আপনার লালসায় নতুন নতুন মাত্রা যোগ করছে, সম্পদ আপনাকে কৃপণ ও ধনকুবের করে তুলছে, আর পদ-পদবি আপনাকে মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে—তখন বুঝবেন, আপনার সময় ফুরিয়ে এসেছে। আপনি দুর্ভাগ্যের বেষ্টনীর ভেতর ঢুকে পড়েছেন।
এই যে ব্যক্তিভেদে একই জিনিসের দুটি ফলাফল—এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ এক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়, তারা হয় সৌভাগ্যবান। আর যারা ব্যর্থ হয়, দুর্ভাগ্য হয় তাদের শেষ পরিণতি। কুরআনের ভাষায়—

‘অপরদিকে, যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিল, সে বলল, আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা এনে দিচ্ছি আপনাকে। অতঃপর সুলাইমান যখন সিংহাসনটি তার সামনে উপস্থিত দেখতে পেল, বলে উঠল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ; তিনি (এটা করেছেন) আমাকে পরখ করার জন্য যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি নাকি অকৃতজ্ঞ হই। বস্তুত যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের ভালোর জন্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে; আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, (তার জেনে রাখা উচিৎ যে) আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, (সেইসাথে) মহানুভবও।’ সুরা নামল, আয়াত: ৪০
অন্যত্র এসেছে—

‘মানুষের অবস্থা এই যে, তার প্রতিপালক যখন তাকে পরীক্ষায় ফেলেন এবং তাকে সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন তখন সে বলে, আমার প্রতিপালক সত্যি আমাকে সম্মানিত করেছেন। আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষায় ফেলেন এবং তার রিযিক সংকুচিত করে দেন, তখন সে বলে, আমার প্রতিপালক আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও তেমন নয়।’ সুরা ফাজর, আয়াত: ১৫-১৭
এ থেকে প্রতীয়মান হয়, আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ও বিপদ—দুটোই বান্দার জন্য পরীক্ষার বিষয় হতে পারে। আল্লাহ বিপদ দিয়ে যেমন বান্দাকে পরীক্ষা করতে পারেন, তেমনি পারেন নিয়ামত দিয়েও। বান্দা যদি নেয়ামত পেয়ে আল্লাহর শোকর করে, তবে সে নেয়ামতের পরীক্ষায় উৎরে যায়। আল্লাহ খুশি হয়ে তাকে আরও বেশি করে দান করেন। আবার বিপদে পড়ে যখন সে ধৈর্য ধারণ করে, সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহর ফায়সালায়, তখন বিপদের পরীক্ষায়ও সে পার পেয়ে যায়, আল্লাহ খুশি হয়ে তার নেয়ামত বাড়িয়ে দেন।
কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, বিপদ ও নেয়ামত—চরিত্রের দিক তেকে দুটো দুরকম হলেও আমাদের কাছে তাদের চাহিদা অভিন্ন। আর সেটা হচ্ছে আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্টি ও তাঁর অনুগ্রহ স্বীকার। এই দুটো কাজ যদি আমরা করতে পারি, তবে দুনিয়ার কোনো পরীক্ষাই আমাদের আটকে দিতে পারবে না সৌভাগ্যের প্রবেশ দুয়ারে।

26/10/2024

কোনো কথা বা কাজ শুরু করার আগে বান্দা যখন ভাবে, আল্লাহ তাকে সুন্দর একটি মন দিয়েছেন। আরও দিয়েছেন সুস্থ একটি মস্তিষ্ক। তাই সে সুন্দর করে তা কর্ম-পরিকল্পনা সাজাতে পারে। আল্লাহ তাকে কর্মক্ষম দুটি হাত দিয়েছেন। তাই সে তার পরিকল্পনাগুলো গুছিয়ে লিখতে পারে। আল্লাহ তাকে বলবার জন্য সবাক একটি মুখ দিয়েছেন। আরও দিয়েছেন পর্যাপ্ত ভাষাজ্ঞান। তাই সে তার মনের কথাগুলো শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরতে পারে। এভাবে যখন সে চিন্তা করে, তখন তার মনে হয়, আল্লাহ হাতে ধরে তাকে দিয়ে কাজগুলো করিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা পূরণের মাধ্যম হওয়া ছাড়া এখানে তার আর কোনো ভূমিকা নেই। তাই সমস্ত কাজের কৃতিত্ব সে আল্লাহকে দিয়ে দেয়। নিজের জন্য রাখে কেবল খুশিটুকু। কারণ, আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো একটা কাজের মাধ্যম যে হতে পেরেছে সে।
এটাই হলো ইখলাস। আর এভাবেই তা জন্ম নেয় মানুষের হৃদয়ে।
কিন্তু কেউ যখন এই বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেলে, প্রতিটি কাজের নিয়ামক শক্তি মনে করে নিজের মেধা, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতাকে, সে সকল কাজের কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করে। এর পেছনে সে ছাড়া আরও কারও হাত থাকতে পারে—এটা সে মানতেই পারে না। এভাবে তার মধ্যে জন্ম নেয় অকৃতজ্ঞতা ও অহমিকাবোধ, যা মানুষকে উদ্ধত ও ধ্বংস করে।
আর বলার অপেক্ষা রাখে না, এই বোধটা আল্লাহর বিরাট এক নেয়ামত। তিনি যার কল্যাণ চান, তাকে এটা দান করেন। সে তখন প্রতিটি কথা ও কাজে আল্লাহর অনুগ্রহ দেখেতে পায়। তাই তার কৃতিত্বও আল্লাহকে দিয়ে দেয়। এভাবে ইখলাসের প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরে ওঠে তার অন্তর্জগত। আর যাকে এই অনুভূতি থেকে বঞ্চিত করা হয়, সে হয় হতভাগা। সে তার দুচোখে কেবলই নিজের কৃতত্ব দেখে। তাই মানুষ বলুন কিংবা মানুষের স্রষ্টা—কাউকেই সে গণায় ধরে না। বেপরোয়া চলাফেরা করে সবসময়। একারণে কারও সঙ্গেই স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না সে। মানব জীবনে এর চেয়ে বড় পরাজয় আর নেই।
ইবনু সাদ তার ‘আত-তাবাকাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, উমার ইবনু আব্দিল আজিজ রাহিমাহুল্লাল্লাহ জুমার খুতবা দিতেন। খুতবা প্রদানকালে কখনো যদি তার মনে হতো, খুতবার ভাষা, বিষয় ও উপস্থাপনা তার মধ্যে অহমিকা তৈরি করতে পারে, অমনি তিনি খুতবা বন্ধ করে দিতেন। পত্র লেখার সময়ও তিনি একই কাজ করতেন। কখনো যদি মনে হতো, পত্রের কথাগুলো তার মধ্যে আত্মম্ভরিতা উস্কে দিতে পারে, সাথে সাথে তিনি তা ছিঁড়ে ফেলতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ, আমার নফসের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।’ আত-তাবাকাত: ৫/৩২২

22/10/2024

ইখলাস মানে সমস্ত কাজ আল্লাহর জন্য করা। যার মধ্যে এই গুণ থাকে, তাকে বলে মুখলিস। মুখলিস কখনো লোভী হতে পারে না; পারে না কারও প্রশংসারও কাঙ্গাল হতে। কারণ, এসবের মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে না; থাকে শাস্তি ও ধমকি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ইখলাসের সাথে এগুলোর সম্পর্ক অনেকটা আগুন-পানি ও সাপ-নেউলের মতো। এরা যেমন একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে না, তেমনি এক হতে পারে না ইখলাস ও লোভ-লালসাও।
কাজেই আপনি যদি ইখলাস অর্জনের ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে থাকেন, তবে সবার আগে লোভকে গলা টিপে হত্যা করুন। তারপর মাটি দিন মানুষের প্রশংসা লাভের উদগ্র বাসনা। এই দুটো কাজ যদি আপনি করতে পারেন, তাহলে ইখলাস নিয়ে আপনার খুব একটা চিন্তা করতে হবে না। ও আপনা-আপনি ধরা দেবে আপনার হাতে।
এখন কথা হচ্ছে লোভ কীভাবে ছাড়বেন? প্রশংসা লাভের উদগ্র বাসনার গলায় কীভাবে ছুরি চালাবেন? খুবই সহজ। আপনি এভাবে চিন্তা করবেন—লোভ করা যায়, এমন যা কিছু আছে পৃথিবীতে, তার সবই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। তাঁর ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কেউ কিছু অর্জন করতে পারে না কখনো। সুতরাং কোনো কিছুর জন্য যদি কারও দিকে তাকিয়ে থাকতেই হয়, তবে আল্লাহর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকুন; তাঁর কাছে আপনার প্রয়োজনের কথাগুলো বলুন। তিনি হতাশ করবেন না আপনাকে।
আর প্রশংসার ব্যাপারে ভাববেন, মানুষের সম্মান আল্লাহর হাতে। আর আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেন, তাঁর প্রতি ভয় ও ভক্তির ভিত্তিতে; মানুষের প্রশংসা বা মূল্যায়নের নিক্তিতে নয়। কাজেই কারও প্রশংসা বা নিন্দা আপনাকে বড় বা ছোট করতে পারবেন না। এভাবে চিন্তা করলে দেখবেন, মানুষের প্রশংসা বা নিন্দা খুব বেশি প্রভাব ফেলছে না আপনার ওপর; আপনি স্বাভাবিক গতিতে কাজ করে যেতে পারছেন আপনার মতো করে।

20/10/2024

কখনো মিথ্যা বলবেন না
মিথ্যা বলা খুবই বাজে প্রবণতা। এটা যাকে পেয়ে বসে, তার কাছে জ্ঞানের ধারণা পাল্টে যায়। সে মনে করে, নতুন তথ্য দিয়ে মানুষকে চমকে দিতে পারাই জ্ঞানের সার্থকতা। তাই সত্য-মিথ্যা ও ভালো-মন্দ বিচারের পরিবর্তে তার কাছে গুরুত্ব পায় তথ্যের অভিনবত্ব। একপর্যায়ে অবস্থা এতটাই গুরুতর হয় যে, চমক না-থাকলে সে সত্যকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিতে চায় না; কালোকে বলতে চায় না কালো।
এভাবে তার জ্ঞান ও চিন্তার জগত পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়। তখন সে চাইলেও আর ভালো কিছু করতে পারে না। কারণ, মানুষের কর্ম ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে তার জ্ঞান ও চিন্তা। এদিকে লক্ষ করেই হয়তো আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—

‘মিথ্যা মানুষকে পাপের পথে নিয়ে যায়; আর পাপ নিয়ে যায় জাহান্নামে।’ সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০৯৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬০৭

11/10/2024

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও খাতিরে প্রিয় কোনো অভ্যাস ত্যাগ করা অথবা পছন্দের কোনো জিনিস বিসর্জন দেওয়া খুবই কষ্টের। এই কষ্টটা প্রতি মুহূর্তে বুকের ভেতর কাঁটার মতো ফুটতে থাকে। বিশেষ করে, যখন এই ত্যাগ ও বিসর্জন আপনার সখের মানুষের দৃষ্টি কাড়তে পারে না অথবা আপনি ঠিক সেরকম মূল্য পান না তার কাছে, যেমনটা আপনি প্রত্যাশা করেন।
আল্লাহর জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করাও কষ্টের; তবে এ কষ্টটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। ত্যাগের প্রথম প্রহরেই শেষ হয়ে যায় এটা। কারণ, আল্লাহ যখন কোনো কিছু ছাড়তে বলেন, তখন তাঁর উদ্দেশ্য থাকে, ঈমানের দাবিতে আপনি সত্য না মিথ্যা—সেটা পরখ করা, যার অনেকটাই সুসম্পন্ন হয়ে যায় আপনি নিয়ত করার সঙ্গে সঙ্গে। বাকিটা পূর্ণতা পায় যখন আপনি কার্যতই ওই অভ্যাস বা কাজটি ছেড়ে দেন। আর তখনই তিনি আপনার ভেতর স্বর্গীয় এক সুখানুভূতি সঞ্চার করেন, যা শূন্যতাকে পাল্টে দেয় পূর্ণতায়।
ইবনু সিরিন বলেন, আমি শুরাইহকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর কসম, কেউ আল্লাহর জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করলে, আল্লাহ তাকে উত্তম বিকল্প দান করেন।’

একটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—
‘কেউ আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করলে, আল্লাহ তাকে তার চেয়েও ভালো কিছু দান করেন।’ মুসনাদু আহমাদ: ৫/৩৬৩
বিকল্প ও বিনিময় অনেক রকম হতে পারে। যেমন আল্লাহর ভালোবাসা, তাঁর প্রতি আন্তরিক টান, তাঁর সন্তুষ্টি এবং আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহর জন্য কেউ কিছু ত্যাগ করলে, বিনিময় হিসেবে তিনি এগুলো দান করেন তাকে। অনেক সময় আবার এমনও হয়, যে জিনিসটি হাতছাড়া করতে হয়েছে, হুবহু তার বিকল্প দান করেন। তখন আর ত্যাগের কষ্টটা খচখচ করে বিঁধে না বুকের ভেতর। অপার্থিব এক সুখের আবেশে জুড়িয়ে যায় মন।

07/10/2024

ইলম আর দুনিয়ার মোহ কোনো ব্যক্তির মাঝে একত্রিত হতে পারে না কখনো। দুটোর চরিত্র ও চাহিদা সম্পূর্ণ আলাদা। ইলম মানুষকে ত্যাগী ও সাহসী করে; আর দুনিয়া তাকে করে ভীরু ও স্বার্থপর। একারণে কোনো আলিম যখন দুনিয়ার মোহে পড়ে যায়, তখন সে আর সত্য উচ্চারণ করতে পারে না। লোভের কাছে হার মেনে যায় তার সাহস। একপর্যায়ে তার অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয় যে, আল্লাহর বিরুদ্ধেও সে অন্যায্য কথা বলতে শুরু করে; বিশেষ করে ওইসকল ক্ষেত্রে, যেখানে সত্য বললে তার স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে...

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when নবারুণ প্রকাশন posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to নবারুণ প্রকাশন:

Share

Category