04/10/2024
‘অতঃপর নারীদ্বয়ের একজন সলজ্জ-পদে তাঁর (মুসা আলাইহিস সালামের) কাছে এসে বললো, ‘আমার আব্বা আপনাকে ডাকছেন। আপনি আমাদের বকরীগুলোকে পানি খাইয়েছেন, তাই আব্বা আপনাকে এর বিনিময় দিতে চান’— সূরা আল কাসাস ২৫
বিস্ময়করভাবে, এই আয়াতটায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মেয়েটির ফিরে আসাটাকে বর্ণনা করেছেন ‘সলজ্জ-পদে’ শব্দ যুক্ত করে। কুরআনের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই—এখানে একটা শব্দ, একটা অক্ষরও নেই যেটা অদরকারি কিংবা অপ্রয়োজনীয়৷
ভাবুন তো—পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে ওই দিন পর্যন্ত কতো অসংখ্য-অগনিত ঘটনা ঘটেছে ইতিহাসে। উত্থান হয়েছে কতো সভ্যতার, ধ্বংস হয়েছে কতো হাজারো সম্প্রদায়। ঢেউয়ের উত্থান আর পতনের মতো, কতো অগনন ঘটনার সাক্ষী কালের সময়! কিন্তু, কুরআন তার সবটাকে আমাদের সামনে হাজির করেনি। এমন অনেক মহীয়ান সভ্যতা ছিলো যারা আজ কালের ধুলোয় মিশে গেছে। এমন কতো তেজস্বী বীরপুরুষ বর্তমান ছিলো যারা ঘোড়া নিয়ে যখন ছুটতো, তখন আকাশ-বাতাস ধুলোতে মাখামাখি হয়ে যেতো। কিন্তু, পৃথিবীর কোথাও তাদের নাম নেই। তাদের ক্ষমতার কথা, দম্ভ আর অহংকারের কথা কেউ মনে রাখেনি।
অথচ দেখুন—একটা মেয়ে একজন পুরুষের সামনে যে সলজ্জ পদভারে এগিয়ে এসেছিলো, সেই কথা কুরআন আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। মহীয়ান সব সভ্যতাকে পৃথিবী ভুলে গেলেও, অনেক তেজস্বী বীরের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস থেকে বিলীন হলেও, একটা মেয়ের খুব সামান্য লজ্জার কথা, লজ্জা-ভরে এগিয়ে আসার কথা কুরআন যুগ যুগ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করেছে। প্রতিদিন, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ মেয়েটার কথা পড়ছে এবং জানছে। একটুখানি লজ্জাকে, একটু সম্ভ্রমকে কুরআন কী অপার মর্যাদায় অবিস্মরণীয় করে রেখে দিলো— ভাবুন!
তাই, আমাদের বোনেরা, যারা আল্লাহর বিধান পর্দাকে ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন, যারা পর-পুরুষের দৃষ্টি হতে, তাদের সংস্পর্শ, সংস্রব হতে নিজেদের বিরত রেখেছেন, অতিশয় দরকার আর প্রয়োজন ব্যতীত যারা পর-পুরুষের সাথে কথা বলেন না, বলতে হলেও যারা শারীয়াহর সীমারেখার মধ্য থেকে, নিজের আব্রুকে হেফাযত করে কথা বলেন, তাদের জন্য সুসংবাদ।
আপনাদের এই বেশ-ভূষা, এই চাল-চলন, এই লজ্জাটুকু আল্লাহ পছন্দ করেছেন৷ আপনারা সেই নারীদের উত্তরসূরী যারা পর-পুরুষ আছে বলে সেদিন কূপে যাওয়া থেকে বিরত ছিলো। আপনারা সেই নারীর পদচিহ্ন অনুসরণকারী মুসা আলাইহিস সালামের সাথে প্রয়োজনীয় কথাটা বলতে এসেও যে নিজের লজ্জাটুকু ধরে রাখতে ভুলে যায়নি। সমাজ যতোই আপনাদের অন্ধকারের বাসিন্দা বলুক, আমরা তো জানি— প্রকৃত আলোর সন্ধানটা আপনারা পেয়ে গেছেন। আপনাদের অভিনন্দন!
( অংশটুকু আমার লিখিত ‘কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ’ বই থেকে নেওয়া।)