Nurul Islam

Nurul Islam Welcome to my page

ট্রেন দেখার অভিযানঅধ্যায় ১: টং ঘর আর তিন বন্ধুর পরিকল্পনাসিফাত, জিসান, আর জুনায়েদ—এই তিনজন শুধু বন্ধু না, যেন তিন দিকের ...
02/04/2025

ট্রেন দেখার অভিযান

অধ্যায় ১: টং ঘর আর তিন বন্ধুর পরিকল্পনা

সিফাত, জিসান, আর জুনায়েদ—এই তিনজন শুধু বন্ধু না, যেন তিন দিকের তিনটি পাখি। সারাদিন গ্রামের এদিক-ওদিক ছুটোছুটি, কখনো মাঠে দৌড়ঝাঁপ, কখনো আবার বিলের ধারে বসে গল্পগুজব। ওদের গ্রামটা ছিল অপূর্ব সুন্দর—কাঁচা রাস্তা, চারপাশে ধানক্ষেত, মাঝে মাঝে বড় বড় শিমুল আর কাঁঠাল গাছ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, ওরা নিজেরাই একটা ছোট্ট টং ঘর বানিয়ে ফেলেছিল।

ওদের টং ঘরটা ছিল গ্রামের একেবারে শেষ মাথায়, বিশাল ফসলি জমির পাশেই। পুরনো বাঁশ আর টিন দিয়ে বানানো ছোট্ট ঘর, তার সামনেই খোলা মাঠ। এখানে বসে বসে ওরা কত যে গল্প করেছে, তার হিসেব নেই।

সেদিন দুপুরে তিনজন ওদের টং ঘরে বসে লাটাই ঘুরিয়ে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। আকাশে নানা রঙের ঘুড়ির মেলা। হঠাৎ জিসান বলে উঠল,

— "শুন, আমরা ট্রেন দেখতে যাবো!"

সিফাত অবাক হয়ে বলল, "কোথায়?"

— "এইপারে এখন ট্রেন চলে, জানিস না? পদ্মা সেতুর পর আমাদের দিকেও ট্রেন আসছে!"

জুনায়েদ চোখ বড় বড় করে বলল, "ট্রেন? মানে সেই বিশাল লোহায় বানানো বিশাল গাড়ি?"

— "হুম! আমরা তো কখনো সামনে থেকে ট্রেন দেখি নাই। এই সুযোগ!"

সিফাত ভেবে দেখল, ব্যাপারটা দারুণ হবে। কিন্তু কোথায় দেখতে যাবে?

— "কোথায় যাবো?"

— "আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে স্টেশন আছে। সাইকেল নিয়ে গেলে ঠিক সন্ধ্যার আগেই পৌঁছাতে পারবো!"

সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। ওরা দু'দিন পর সকালবেলা রওনা দেবে ট্রেন দেখতে।

অধ্যায় ২: যাত্রার শুরু ও প্রথম বিপদ

সকালের প্রথম আলো ফুটতেই সাইকেল নিয়ে তিন বন্ধু বেরিয়ে পড়ল।

রাস্তায় গ্রামের মাটির গন্ধ, ধানক্ষেতের বাতাস, আর মাঝেমধ্যে শালিক পাখির ডাক—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম আনন্দ। ওরা হালকা বাতাসের সাথে সাইকেল চালিয়ে মনের আনন্দে এগিয়ে চলল।

কিন্তু হঠাৎ এক সমস্যা!

হঠাৎ বিকট আওয়াজ হলো—চড়চড়াং!

জুনায়েদ এর সাইকেলের চেন ছিঁড়ে গেল!

জুনায়েদ চমকে উঠে চিৎকার করল, "আমরা কি এখন হেঁটে যাবো?"

তিন বন্ধু রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগল। সামনে বিশাল পথ বাকি, আর এখনই একটা সমস্যা! কিন্তু বন্ধুত্ব তো সমস্যার সামনে হার মানার জন্য না।

অধ্যায় ৩: সাইকেল ঠেলা আর নতুন সংকট

জুনায়েদ এর সাইকেলের চেন ছিঁড়ে যাওয়ার পর তিন বন্ধু কিছুক্ষণ মাথা চুলকে ভাবল, এখন কী করা যায়!

জিসান একটু চিন্তা করে বলল, "শোন, কোনো না কোনো ওয়ার্কশপ বা দোকান অবশ্যই সামনে কোথাও পাবো। তার আগ পর্যন্ত আমরা সাইকেল ঠেলে নিয়ে যাবো!"

"তাইলে তো আরো বেশি সময় লাগবে!"—জুনায়েদ মুখ বাঁকিয়ে বলল।

"তুই ঠেলতে পারবি না, তাই বল?"—সিফাত কটমট করে তাকালো।

"কে বলল পারবো না? আমি তোদের থেকে বেশি জোরে ঠেলতে পারবো!"—জুনায়েদ গম্ভীর গলায় বলল, আর সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে জোরে ঠেলার চেষ্টা করতেই ধপাস!

সে নিজেই মুখ থুবড়ে পড়ল।

জিসান আর সিফাত একসাথে হো হো করে হেসে উঠল।

"এই ছেলে, ট্রেনে ওঠার আগেই যদি মাটিতে পড়ে থাকিস, তাহলে গার্ড তোকে উঠতেই দেবে না!"—জিসান হাসতে হাসতে বলল।

জুনায়েদ ধুলো ঝেড়ে উঠে বলল, "হাসবি না! এবার আমি ঠেলেই দেখাবো!"

তিন বন্ধু এবার ধীরে ধীরে সাইকেল ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল। রাস্তার ধারে গাছের ছায়া ছিল বলে রোদ খুব একটা সমস্যা করছিল না। এক পাশে কাঁচা রাস্তা, অন্য পাশে সবুজ ধানক্ষেত। বাতাসে ধানের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছিল।

এভাবে প্রায় আধা ঘণ্টা ঠেলার পর ওদের গলা শুকিয়ে কাঠ। সামনে একট কাঠাল গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ওরা বিশ্রাম নিতে বসল।

"পানি আনিস নাই?"—সিফাত জিসানকে জিজ্ঞেস করল।

"আমি ভেবেছিলাম তুই নিবি!"—জিসান উত্তর দিল।

"তাহলে তো আমাদের মরুভূমিতে মরতে হবে!"—জুনায়েদ হতাশ গলায় বলল।

ঠিক তখনই ওরা দেখতে পেল, একটু দূরে রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকান।

"ওই দোকানে পানি পাওয়া যাবে!"—সিফাত খুশি হয়ে বলল।

তিন বন্ধু দ্রুত সাইকেল ঠেলে দোকানের দিকে এগিয়ে গেল। এখন ওদের সামনে নতুন একটা আশা—একটা ঠান্ডা পানি আর হয়তো কোনো দোকান, যেখানে সাইকেলের চেন মেরামত করা যাবে!

অধ্যায় ৪: চায়ের দোকানে বিশ্রাম

তিন বন্ধু সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে চায়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল। দোকানটা ছিল ছোট্ট একটা টিনের ঘর, সামনে বাঁশের বেঞ্চ পাতা। একজন মাঝবয়সী লোক কেতলি থেকে ধোঁয়া ওঠা চা ঢালছিল। পাশে এক ভদ্রলোক বিস্কুটে চুবিয়ে চা খাচ্ছিলেন।

সিফাত দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল, “কাকা, পানি আছে?”

দোকানদার তাকিয়ে বলল, “আছে তো, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি নাকি কলের?”

“ঠান্ডা দিন কাকা!”—জিসান উত্তেজিত হয়ে বলল।

তিনজন একসঙ্গে বোতল হাতে নিল, ঢক ঢক করে পানি খেল। গরমে শরীর একদম তেতে উঠেছিল, ঠান্ডা পানি যেন স্বর্গের মতো লাগল।

পাশের ভদ্রলোক খেয়ে উঠে যেতে যেতে বললেন, “তোমরা কই যাও রে?”

জুনায়েদ গম্ভীর মুখে বলল, “আমরা ট্রেন দেখতে যাচ্ছি!”

ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন, “এত দূর? সাইকেলে?”

সিফাত হাসতে হাসতে বলল, “সাইকেলে না, এখন ঠেলে ঠেলে যাচ্ছি!”

ভদ্রলোকের চোখ পড়ে গেল জিসানের সাইকেলের দিকে। তিনি বললেন, “তোমাদের তো দেখছি একটা মেকানিক দরকার। এক কিলোমিটার সামনে একটা বাজার আছে, সেখানে গিয়েই ঠিক করাতে পারবা।”

তিনজন খুশি হয়ে গেল! এতক্ষণে একটা সমাধান মিলল!

অধ্যায় ৫: নতুন বিপদ—বড়ই বাগান!

চা খেয়ে আর বিশ্রাম নিয়ে ওরা আবার সাইকেল ঠেলা শুরু করল। রাস্তার ধারে গাছপালা ঘেরা পথ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ জুনায়েদ থেমে গেল।

“এই দেখ, বড়ই গাছ!”—সে উত্তেজিত হয়ে বলল।

ওরা রাস্তার পাশে তাকিয়ে দেখল, বিশাল এক বাগান। গাছে গাছে কাঁচা-পাকা বড়ই ঝুলছে। টক-মিষ্টি বড়ইয়ের প্রতি জুনায়েদের দুর্বলতা সেই ছোটবেলা থেকে।

“দুইটা বড়ই খাওয়া গেলে মন্দ হয় না, তাই না?”—জিসান ফিসফিস করে বলল।

সিফাত একটু ভাবল, “চুরি করা ঠিক না…”

“ধুর! একটা দুটো বড়ই নিলে কি আর চুরি হয়?”—জুনায়েদ হাসতে হাসতে বলল, “চল, গাছের নিচে পড়ে থাকা বড়ই কুড়িয়ে নিই!”

তিনজন গাছের নিচে ঢুকে বড়ই খুঁজতে লাগল। প্রথমে নিচ থেকে কুড়িয়েই খেতে লাগল,
জুনায়েদ ফিসফিস করে বলল, “উপরে অনেক বড় বড় পাকা বড়ই আছে, আমি গাছে উঠে নিয়ে আসি?”

সিফাত বলল, “তুই উঠতে পারবি?”

“পারবো না মানে? আমি ছোটবেলায় গাছে উঠে আম চুরি করতাম!”—জুনায়েদ গর্বিত মুখে বলল।

সে গাছে উঠতে শুরু করল। প্রথমে ভালোই উঠছিল, কিন্তু তারপর…

“আরে! কে গাছে উঠল?”—একটা কর্কশ গলা শোনা গেল।

তিনজনের বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে গেল। একজন মধ্যবয়সী লোক, হাতে লাঠি নিয়ে বাগানের মধ্যে ঢুকছে!

সিফাত আর জিসান সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে গেল গাছের আড়ালে। কিন্তু জুনায়েদ?

সে তখনো গাছে বসে বড়ই ছিড়ছিল।

লোকটা তাকিয়ে বলল, “এই ব্যাটা! নাম তাড়াতাড়ি!”

জুনায়েদ বুঝতে পারল, সে ধরা পড়ে গেছে। কিন্তু আতঙ্কে সে নামার বদলে উল্টো আরও উঁচুতে উঠে গেল!

সিফাত নিচু স্বরে বলল, “গাধা! নাম বলছি!”

লোকটা এবার রেগে গিয়ে গাছের ডাল ঝাঁকাতে লাগল।

“আম্মাগোওও!”—জুনায়েদ চিৎকার করে গাছ থেকে লাফ দিল!
জুনায়েদ গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিচে পড়ার পর, তিন বন্ধু পাগলের মতো দৌড়ে পালাতে লাগল। তার পিছনে সেই কৃষক ধাওয়া করতে লাগল, হাতে লাঠি! জুনায়েদ দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলল, “এবার তো মরেই গেলাম! ছেলেরা, পালাও!

তিনজন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মাঠের পাশ দিয়ে চলে গেল। কৃষক তাদের দিকে আসতে থাকলেও, সে এতো দ্রুত দৌড়ানোর অভ্যাস না থাকায় একটু পিছিয়ে পড়ল। তবে, তিনজন এক মুহূর্তও থেমে ছিল না।

একসময় তিনজন এক সাথে থেমে গেল। সিফাত বলল, “পলানো ঠিক হবে না। আমাদের তো বুঝতে হবে—এটা ভুল ছিল।”

জুনায়েদ মাথা নিচু করে বলল, “হ্যাঁ, সত্যি! আমরা ভুল করেছি।”

জিসান একটু ভেবে বলল, “ওহ! এখন এই কৃষকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলে, হয়তো আমাদের ছেড়ে দিবে!”

তিনজন আবার হেঁটে গেল কৃষকের কাছে। সে আস্তে আস্তে তাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। সিফাত প্রথমে তার সামনে গিয়ে বলল, “কাকু, আমরা ক্ষমা চাইছি। ভুল করে বড়ই চুরি করলাম। আসলে আমাদের ইচ্ছে ছিল না। দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে দিন।”

কৃষক কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর সে ধীরে ধীরে বলল, “তোমরা কি জানো, এসব চুরি একেবারে ঠিক না?”

তিনজন মাথা নিচু করে বলল, “জানি কাকু। দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে দিন।”

কৃষক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “তোমরা তো ছোট, কিন্তু মনে রেখো, চুরি কখনো ভালো কাজ নয়। তবে তোমরা যে আসলেই দুঃখিত, তা আমি বুঝতে পারছি। যাও, আর কখনো এমন ভুল করো না।”

তিন বন্ধু একসঙ্গে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসল। ওরা জানত, তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হয়েছে।

অধ্যায় ৭: ট্রেন দেখা—শেষের রোমাঞ্চ

একটু পর, তিনজন সাইকেল নিয়ে পুনরায় রওনা দিল। তারা জানত, এই ছোট রোমাঞ্চকর যাত্রা তাদের জীবনের অন্যতম স্মৃতি হয়ে থাকবে।

কিছুক্ষণ পর, সিফাত উত্তেজিত হয়ে বলল, “দেখ, ট্রেন আসছে!”

সত্যিই, দূর থেকে ট্রেনের ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। তিন বন্ধু সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পড়ল। ট্রেনটি তাদের সামনে দিয়ে চলে গেল। সেই বিশাল ট্রেনটা দেখে তাদের চোখে আনন্দের জল চলে আসল।

“আল্লাহ, কত বড়!”—জুনায়েদ চোখ বড় করে বলল।

“এটাই তো ট্রেন!”—সিফাত হাসতে হাসতে বলল।

তিনজন খুশি মনে চিৎকার করতে করতে ট্রেনের সামনে চলে গিয়ে দাঁড়াল। এতদিন ধরে যারা শুধু ট্রেনের কথা শুনে এসেছে, তারা আজ বাস্তবে সেটা দেখে ফেলল।

তাদের যাত্রা শেষ হয়ে গেল, কিন্তু বন্ধুত্বের গল্পটা কিন্তু শুরু হয়েছিল অনেক আগেই।

(সমাপ্ত…)

এটাই ছিল গল্পের সমাপ্তি! কেমন লাগল?

01/02/2025
01/02/2025

Cute☺️

Bangladesh has made a history in Pakistan
03/09/2024

Bangladesh has made a history in Pakistan

Liton Das got to his 4th Test Hundred , ❤️🔥A magnificent innings under pressure when they are 26/6
01/09/2024

Liton Das got to his 4th Test Hundred , ❤️🔥

A magnificent innings under pressure when they are 26/6

Address

Dhaka

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Nurul Islam posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category