26/07/2025
‘তখন রাত আটটা কি সোয়া আটটা হবে। বার্ন ইউনিটে মাহরীনের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়।
বললাম, তোমার বাচ্চা দুইটার দিকে তাকিয়ে যদি একটু স্বার্থপর হতা।
ও বলল, “এগুলো তো আমার বাচ্চা, সব বাচ্চাই তো আমার বাচ্চা।”
এই যে তার মানসিকতা। সে একটু স্বার্থপর হইলে আমাদের সন্তানদের এই অবস্থা হয় না।
তার চিন্তা হয়তো ওপরের লেভেলের ছিল। তার যে শরীরের ভাষা, তাতে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তটাই সে নিয়েছে।'
স্ত্রী মাহরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগের কথা এভাবেই বর্ণনা করলেন মনসুর হেলাল।
মাহরীন চৌধুরী উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন।
গত সোমবার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
মাহরীনের বাবার বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়ায়।
চার ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন মাহরীন।
মঙ্গলবার তাঁকে পারিবারকি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বুধবার চৌধুরীপাড়ায় গিয়ে কথা হয় মনসুরের সঙ্গে।
তিনি জানালেন, তাঁরা দুজন ছিলেন ঢাকার শাহীন স্কুলের শিক্ষার্থী।
১৯৯২ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁদের বন্ধুত্ব হয়। ২০০৮ সালে তাঁরা বিয়ে করেন।
মনসুর বলেন, 'তার (মাহরীন) চিন্তাচেতনা, ধ্যানধারণা—সবকিছুতে দৃঢ়তা ছিল।'
ঘটনার দিন বার্ন ইউনিটে গিয়ে মাহরীনকে পান উল্লেখ করে মনসুর বলেন,
'সে আমাকে দেখার পর বলে, “তুমি আসছো।”
আমি বললাম, আসছি। বলে, “আমি থাকব না। আমাকে তুমি আমার বাবা- মায়ের কাছে নিয়ে যাও।”
এরপর স্তব্ধ হলো। আমরা সবাই মিলে আইসিইউতে নিয়ে গেলাম।
ও “আমি আর বেশিক্ষণ নেই” বলে আমার ডান হাত শক্ত করে ধরে তার বুকের ওপর রেখে বলল,
“আমি চলে যাচ্ছি, জীবনে তোমার সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না।'
মনসুর আরও বলেন, 'আরেকটা জিনিস সে চাইছিল,
বলে, “আমার খুব খিদা লাগছে। আমাকে কিছু খাবার দাও।"
শুধু তিন ফোঁটা পানি দিতে পারছিলাম। অন্য কোনো খাবার তাঁকে দিতে পারি নাই।
চিকিৎসক বলেছিলেন, কিছু খেতে দিলে শ্বাসনালিতে আটকে যেতে পারে। এই কষ্ট সারা জীবন থাকবে।'
এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মনসুর।
দুই ছেলে আয়ান রশিদ (১৬) ও আদিল রশিদ (১৪) পাশে নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিল।
পরিবারের চাওয়া, রাষ্ট্র যেন মাহরীনের আত্মত্যাগের মূল্য দেয়।