13/10/2025
যেদিন প্রথম “ভারত আরব সম্পর্কে আদি ইতিহাস” বইটি হাতে নিয়েছি, সেই দিন থেকেই পড়া শুরু। আর পড়তে পড়তে বুঝতে পারছি, প্রতিটি পৃষ্ঠা, প্রতিটি বাক্য কতো গভীর চিন্তাভাবনা আর বিশাল অধ্যবসায়ের ফল। মনে হচ্ছে, আমি শুধু একটি বই পড়ছি না—আমি ইতিহাসের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করছি, সভ্যতা, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির সূক্ষ্ম সেতুবন্ধন অনুভব করছি।
মূল রচনাটি মহান ইতিহাসবিদ ও চিন্তাবিদ সাইয়্যেদ সুলাইমান নদবী (রহি:)–এর। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা, বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টি, এবং ইতিহাসকে দেখার স্বতন্ত্র দৃষ্টি সত্যিই অসাধারণ। ভারত ও আরবের সম্পর্ককে যেভাবে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন, তা এক কথায় অতুলনীয়।
এই অনন্য রচনাটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন প্রিয় Arif Khan Saad হুযুর,পড়তে পড়তে বোঝা যায়, এই অনুবাদ শুধু ভাষান্তর নয়, এটি এক ধরনের সাধনা। হুযূর এই অনুবাদ করতে গিয়ে যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছেন, তা কল্পনাও করা কঠিন।
তিনি পড়েছেন দশের অধিক প্রাচীন ও আধুনিক শাস্ত্রের একশোরও অধিক গ্রন্থ, তাওরাত, তালমুদ, রামায়ণ ও মহাভারত—সবই গভীরভাবে যাচাই করেছেন। পড়েছেন আরবি, ফারসি, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষার অসংখ্য বইপত্র। ছাত্রজীবনে কেনা পাঁচটি ভাষার ১২টি অভিধানও কাজে এসেছে।
অনেক সময় এমন হয়—একটি শব্দ লেখার জন্য শতাধিক শব্দ পড়তে হয়, কখনও তারও বেশি। একশো শব্দ পড়ে তবেই যেন একটি শব্দ লেখা যায়। প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি শব্দের পেছনে আছে ইতিহাসের গভীর অধ্যয়ন, বিভিন্ন উৎস যাচাই, এবং একনিষ্ঠ পরিশ্রম।
প্রায় তিন বছর ধরে চলেছে এই অনুবাদ যাত্রা। ঘন্টার পর ঘন্টা মানচিত্র খোলা, উৎস যাচাই, পাতা ওল্টানো— সবই যেন সেই শ্রমের সাক্ষ্য বহন করছে। পড়তে পড়তে নিজেও অনুভব করি—লিখার জন্য, অনুবাদের জন্য, প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য কত পড়াশোনা, কত অধ্যবসায় করতে হয়।
এই বইটি আমার কাছে শুধু ইতিহাস নয়; এটি এক অভিজ্ঞতা, এক অনুপ্রেরণা, এক আলোর পথ,প্রতিটি অধ্যায় পড়তে পড়তে বুঝতে পারি— ইতিহাসের ভেতর দিয়ে সভ্যতা ও সম্পর্কের সেতুবন্ধন কত সূক্ষ্মভাবে তৈরি হয়েছে।
দু'আ করি—আল্লাহ তা'আলা সুলাইমান নদবী (রহি:)– এর এই মহাগবেষণাকে কবুল করুন। আমাদের প্রিয় উস্তাদের ক্লান্ত পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও একনিষ্ঠতা বরকতময় করুন,এই অনুবাদ যেন পাঠকদের জন্য জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দেয়, অনুসন্ধানের উৎসাহ যোগায় এবং ইতিহাস বোঝার পথকে সহজ করেন।
১৩ অক্টোবর ২০২৫
লিখেছেন : তাশরিফ আহমাদ ভাই। ঈর্ষা করার মতো ফটোটাও তারই তোলা।