13/05/2025
বাচ্চা মেয়েটা খেলতে বের হয়েছিল। প্রতিদিন বিকালেই পাশের বাসার অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলে। তারপর সন্ধ্যার আগে আগেই বাসা ফিরে আসে।
তাই মা ও আর অতটা চিন্তা করেনি।
কিন্তু গতকাল বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়, তারপর সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। কিন্তু মেয়েটা ঘরে ফিরার কোন নামগন্ধ নেই।
মায়ের মনে সন্দেহ ঢুকে, আশেপাশে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে কিন্তু পায় না।
মেয়েটা একদমই বাচ্চা, বয়স মাত্র পাঁচ বছর। এত ছোট মেয়ে কোথায় যাবে বুঝে উঠতে পারে না মা।
চারদিকে খুঁজা শুরু করে।
কিন্তু না পেয়ে এবারে বিলাপ করে কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে- আমার রোজা মনি, কোথায় গেলি রে মা।
তারপর অটো ভাড়া করে পুরো তেজগাঁও এলাকায় মাইকিং করা হয়৷
মাইকিং এ যখন বলা হচ্ছিল - মেয়েটার বয়স পাঁচ বছর, পড়নে জামা ছিল মা টা তখন মেয়ের নাম ধরে বিলাপ করে কাঁদছিল। সহ্য করতে না পেরে অটোর পেছন পেছন চলে আসতে চাচ্ছিল।
এভাবেই গতকাল রাতটা পার হয়। এত কান্নার মধ্যেও মা ভেবেছিলেন যেহেতু মাইকিং করা হয়েছে তাহলে বোধহয় সকালে পাওয়া যাবে।
একটা ক্ষীণ আশা বুকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়েন মা। আজকেও সকাল থেকে মাইকিং করা হচ্ছিল।
মা টা এদিক ওদিক দৌড়ে মেয়েটার খোঁজ করতেছিল আর যাকে পাচ্ছিল তাকেই জিজ্ঞেস করছিল - আমার রোজা মনিকে তোমরা কেউ দেখছো?
সবাই যখন মাথা নেড়ে না করে তখন মা দৌঁড়ে গিয়ে আরেকজনকে জিজ্ঞেস করে। এভাবে দুপুর গড়ায়।
বিকালের দিকে কয়েকজন লোক দেখতে পায় তেজগাঁও জামে মসজিদের গলিতে কাপড় দিয়ে পেঁচানো কিছু একটা পড়ে আছে, বিচ্ছিরি গন্ধ আসতেছে।
সবাই কৌতূহলী হয়ে কাছে গিয়ে দেখতে পায় ছোট একটা মেয়ের লা*শ।
তারপর এলাকায় জানাজানি হলে খবর পেয়ে ওই মা টাও ছুটে আসে। আসতে আসতে মনে মনে দোয়া করতে থাকে যাতে এটা তার আদরের মেয়ে রোজা না হয়।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!
মা টা এসে কাপড় উল্টেই দেখতে পায় এটা তো তার মেয়েটাই, এ তো তার আদরের রোজা মনি।
একদম জুবুথুবু হয়ে মরে পড়ে আছে। শরীরে ক্ষতের চিহ্ন। প্রথমে ধ*র্ষণ করা হয়েছে, তারপর গরম পানি ঢেলে শরীরের কিছু অংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে যাতে কেউ চিনতে না পারে।
কিন্তু মা দেখেই চিনে ফেলে তার আদরের মেয়ে রোজা মনিকে। মেয়ের এ বীভৎস অবস্থা দেখে ঘটনাস্থলেই কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে দুঃখিনী মা টা।
একটা বাচ্চা মেয়ে, ৫ বছর বয়স মাত্র। যৌনতার কিছুই বুঝেনি এখনো। হাড়ি পাতিল নিয়ে খেলার বয়স তার। সেও শিকার হলো হায়নাদের।
দেশের বিচার ব্যবস্থা এতটাই ঠুনকো যে ধ*র্ষণের এ বিচার পাবে কি-না তা নিয়েও দুঃখিনী মায়ের মনে সন্দেহ।
অথচ আমাদের রাজনীতিবিদরা প্রতিদিন স্লোগানে স্লোগানে চারদিক মুখরিত করে ফেলে। বুঝাতে চায় দেশে উন্নয়ন হবে, ব্রীজ হবে।
দয়া করে এ বুলি বাদ দিন। দরকার হলে দুইটা ব্রীজ কম হোক, তবুও আর দুইটা বাচ্চা মেয়ে ধ*র্ষণ না হোক, লাঞ্চিত না হোক।
জনগণ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের পাশাপাশি নিশ্চিন্তে বাঁচতে চায়, নিরাপত্তা চায়।
মিথ্যা বুলি না আওড়িয়ে নিরাপত্তা জোরদার করুন যাতে আর একটা মাও তার ধ*র্ষিত মেয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান না হয়।
বিচার ব্যবস্থা কঠোর করুন যাতে আর কোন মাকে ধ*র্ষিত মেয়ের লা*শের পাশে বসে অসহায়ভকবে জিজ্ঞেস করতে না হয়- আমার বাচ্চা মেয়েটার ধ*র্ষণের বিচার কি পাব.?
লেখা- Ibrahim Khalil Shawon