03/08/2025
আমার জন্ম হয় ১ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে বরিশালের ছোট্ট একটা গ্রামে।
জন্মের ১.৫ বছরের মাথায় ১৯৯৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বাবাকে হারাই। বরিশাল সিটি করপোরেশন এর ইনেসপেক্টর ছিলেন কলিগ মারা যায় তাকে দাফন করতে গিয়ে সেই লাশের গাড়ির নিচে পড়ে মা/রা যান।
চলে আসি নানা বাড়িতে, কিছু দিন পর মাকে সিটি করপোরেশন চাকরি দেয় বাবার মৃত্যুর ক্ষতি পূরন হিসাবে তিনি চলে আসেন বরিশালে।
বেড়ে ওঠা শুরু হয় নানা-নানী আর মামা খালাদের কাছে। মা সপ্তাহে একদিন যেতো বৃহস্পতিবার। এভাবেই চলছিলো জীবন। ২০০৪ সালে ক্লাস ৩ এ নানাকে হারাই।
মায়ের স্যালারি কিছুটা বেড়ে যাওয়াতে সে গ্রাম থেকে অফিস শুরু করে।
১.৫ বছর জীবনটা ভালোই কাটছিলো কিন্তু জীবনে অন্ধকার নেমে আসে ৫ম শ্রেনীতে ওঠার কিছু দিন পর।
মা ২য় বিবাহ বসে। মায়ের সাথে অনেকটা দূরত্ব বেড়ে যায়।
২০০৬ সালে ক্লাস ৫ এ বৃত্তি পাই এবং আমাদের ইউনিয়ন এর মাঝে সর্বোচ্চ নাম্বার অর্জন করি ২২ টা প্রাইমারি এর মাঝে।
নানীর কাছে থেকেই চলছে জীবন মা গ্রামের থাকে আমাদের সাথে কিন্তু অনেকটা দূরত্ব বেড়ে যায়। এক বাসায় কিন্তু কথা ও হয় না। মেনে নিতে পারছি না।
৬-৭-৮ ক্লাস চলছে বাহিরে হাসি মুখে ভিতরে অন্ধকার নিয়ে। ২০০৯ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ এ আবারও থানার মাঝে ১২ তম রেজাল্ট অর্জন করি।
২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সেন্টার এর মাাঝে সর্বোচ্চ মেধা তালিকা। সকল বিষয় এ A+
২০১৪ সালের থানার এক কলেজ থেকে HSC পরীক্ষায় higher A grade নিয়ে ঢাকায় ভার্সিটি কোচিং এ ভর্তি হই।
একটা বিষয়ঃ ২০০৭ সালে আমার মায়ের ২য় সংসার একটা মেয়ে হয়।
আমার ২ জন চাচা ও একজন ফুফু থাকলেও কেউ কোনদিন খোজ নেয় না।
২০১৫ সালে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে Applied Physics এ চান্স পাই।
গ্রামে বাবার কিছু গাছ লাগানো ছিলো সেগুলা বিক্রি করে ভার্সিটি তে ভর্তির ইচ্ছা কিন্তু চাচারা তা বিক্রি করতে দেয় না।
বাধ্য হয়ে বরিশালের একটা প্রতিষ্ঠান থেকে BSc in Computer Science and Engineering এ ভর্তি হই।
যেহেতু মা বাবার চাকরি করতো তাই লেখাপড়া খরচা তিনিই দিতেন। গ্রামে থেকে লেখাপড়ার খুব একটা খরচ নাই। বৃত্তির টাকায় অনেক্টা চলে যেতো আর মামাদের সাহায্যে।
২০১৬ সালে টিউশনি শুরু করি। এক বন্ধুর কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারি।
SSC এ ভাল রেজাল্ট করায় ডাচ বাংলা ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ৩০ হাজার উপবৃত্তি পাই।
সেখান থেকে ১০,০০০/- ছিলো আমার কাছে। ২০,০০০/- ধারে এনে Asus x454la ল্যাপটপ কিনি এবং Techtune, eshoaykori সাইট থেকে ব্লোগ পড়ে কাজ শুরু করি ptc সাইটে।
কিন্তু ১.৫ বছরে ইনকাম হয় মাত্র ২ ডলার।
কাজ আর টিউশনি চলছে। ২০১৭ সালে Graphic design শেখা শুরু করি।
সে বছর ফাইবার থেকে ৫৭ ডলার ইনকাম করি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে Upwork এ একাউন্ট করে বিড করি এবং ১৯ ফেব্রুয়ারিতে ১ম ক্লাইন্ট পাই তুর্কী ক্লাইন্ট আলিফ সায়কান। মাত্র ১০$ এর কাজ
তারপর Renorated রিয়েল স্টেড কম্পানির একটা জব আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সে বছর ইনকাম করি ৪০০০$ যা সে সময়ের ৩ লাখ ৮০ হাজার এর মত।
এরপর ইনকাম আরো বাড়ে আর সকলের চাহিদাও বাড়ে।
কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিলো বিশাল। স্বপ্ন ছিলো একটা ব্রান্ড প্রতিষ্ঠা করবোই।
২০২০ সালের ১০ আগস্ট Reflex IT Institute র যাত্রা শুরু করি। Software , website এবং এইটি প্রশিক্ষণ।
কিছু বছরের মাঝেই বরিশাল বিভাগের টপ আইটি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায় এবং পররাষ্ট মন্ত্রী আব্দুল মোমেন থেকে এওয়ার্ড ও পায়।
২০২২ সালে প্রতিষ্ঠা করি Printx Factory যার কাছ ছিলো টিশার্ট ও জার্সি প্রিনগ করা এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর এর ১০ তারিখ Reflex style Luxury Clothing Brand এর যাত্রা শুরু হয়।
অল্প কিছু দিনেত মাঝেই বরিশালের কাস্টমাইজড টিশার্ট ব্রান্ড এর মধ্যমণি হয়ে যায়।
প্রতি মাসে সেলস প্রায় ২-৩ লাখ ক্রোস করে।
সব ছিলো নিজস্ব ব্রান্ডিং এর।
২০২২ সালে গ্রামে কাজ শুরু করি ডুপ্লেক্স বাড়ির। আমার বাবার কবর সহ দাদা বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
২০২৪ সালের শুরুতে পিউরিট ফুড কম্পানি যাত্রা শুরু করে চার প্রকার আচার, সরিষা তেল, ঘি, হলুদ মরিচ গুড়া সহ আরো কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে নিজস্ব ফ্যাক্টরি।
মাসে প্রায় ৩-৪ লাখে প্রোডাক্ট সেল হতে থাকে পিউরিট এর। কাজ শুরু হয় Reflex style এর ২য় ব্রাঞ্চ ভান্ডারিয়াতে। পূবালী ব্যাংক এর সাথে হয় কোলাবোরেশন, GP Star এর সাথে কোলাবোরেশন
DBC, Nagorik TV তে হয় কভারেজ।
এর পর শুরু হয় আগস্ট এ সরকার পতন। ব্যবসা কিছুটা থম খেয়ে যায়।
২০২৪ এর নভেম্বর থেকে ব্যবসা আসতে আসতে অনেকটা খারাপ হতে থাকে। আমি এটাকে স্বাভাবিক নেই।
জানুয়ারি তে সেলস আরো খারাপ হয় কিন্তু আমি কোন ফল্ট খুজে পাই না।
পাশাপাশি আমিও ভিশন ভাবে অসুস্থ হতে থাকি।
ফেব্রুয়ারিতে কন্ডিশন আরো খারাপ হতে থাকে। আমি ৬৭ কেজি থেকে ৮-১০ দিনে ৫২ কেজিতে নেমে আসি।
অফিস এ যাওয়ার মন নাই। যত দিন যায় মনে হয় সুইসাইড করি। ফেব্রুয়ারি ১৭ তারিখের পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকে।
চরমোনাই এক হুজুরের শরনার্থী হই তিনি দেখে বলেন
আমি কালো যাদু তথা কুফরি কালাম এর শিকার হই। বিশ্বাস হয় না। আরো ২/৩ জন মাওলানা দেখাই তারাও একই কথা বলেন।
মৃত্যু বান এবং রিজিক ধ্বংসের কালো যাদু করা হয়।
অবস্থা খারাপ হলে অফিস ছেড়ে দেই দোকান থাকে।
রমজান মাসে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়। মনে হতে থাকে কতদিন বাচবো।
আমি যে বেচে থাকবো তা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। রমজান মাসে শপ গুলাও ক্লোজ হয়ে যায়। আমি ৭/৮ দিন বিছানা থেকেই উঠতে পারি নাই।
ছেলে, বউ সবার পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে (২০২১ এর জুনে আমি বিবাহ করি ২০২২ সালে পুত্র সন্তান এর বাবা হয়ে যাই মাত্র ২৪ বছর বয়সেই)
আমি রেগুলার তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করি আল্লাহ হয়তো তার জন্য আজ বাচিয়ে রাখছেন।
আপওয়ার্ক এ প্রায় ৩০+ বিড করি জব পাই না। তখন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এর দিকে মুভ করি যদি কিছু ইনকাম হয় এই আশায়।
আমার প্রায় ৭/৮ জন কর্মী ছিলো। মাসে স্যালারি ভাড়া দিতে হতো ৬০-৭০ হাজার টাকা।
বিগত ৬/৭ মাসে মনে হয় না আমার ৩০ হাজার টাকা ইনকাম হইছে। আমি নেশা তো দূরের কথা কোন্দিন সিগারেট ও খাই নাই যে ব্যবসায় লাল বাত্তি জ্বলবে।
আমার মা চাইতো তার সেই জামাইকে আমি বাবা ডাকি, আর মেয়েকে আপন বোন ভাবি। সেটা কি হয়। এক গাছের ছাল কি আরেক গাছে লাগে।
হ্যাঁ , আমার গর্ভধারণ করা মাই আমাকে রাস্তায় নামিয়ে ফেলছে তার হিংসা আর রাগে।
সেই ৯ মাস তার সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। একজন মা তার সন্তানকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে আমার মাকে না দেখলে হয়তো জানতাম না।
গর্ভে রাখিলেই আসলে মা হওয়া যায় না।
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ এখন অনেকটা সুস্থ করছে এবং এই সপ্তাহে প্রায় ৬/৭ মাস পর আবারো কাজে ফিরছি সেই ফ্রিল্যান্সিং এ।
২০১৫ সালে শূন্য হাতে এই শহরে এসে রাজত্ব তৈরি করেছিলাম। আবারও হবে একটু সময়ের ব্যাপার।
এই ৬ মাস আগেও যাদের কাছে ছিলাম ভাই, টাকা না থাকায় এখন হইছি চু** ভাই।
কষ্ট আজীবন থাকে না। এই বিপদের দিনে অনেক কালপিট চিনছি।
পাহাড়ের মত ঢাল হয়ে ছিলো একমাত্র অর্ধাঙ্গিনী। আমি তার কাছে কেয়ামত পর্যন্ত চিরকৃতজ্ঞ।
জীবনে কোন একটা ভাল কাজের জন্য হয়তো তাকে পেয়েছি।
I will Back Soon....