11/12/2024
ইসলামী রাজনীতির রোল মডেল জামায়াত।
বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতিকে আমি অনেক শক্তিশালী মনে করি। আধুনিক সময়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ইসলামী রাজনীতির জন্ম দিয়েছে এদেশের জামায়াতে ইসলামী। এটা সম্ভব হয়েছে গোলাম আযম ও তার সেই সব শিষ্যদের কারণে, যারা এদেশের হাজার বছরের মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে ট্যালেন্ট প্রজন্ম। যারা আমার কথায় বিরোধ করবেন তারা পারলে শহীদ নিজামী-মুজাহিদ-মোল্লা-কামারুজ্জামান-কাশেমদের মতো আরেকটা লোক খুঁজে দেখায়ে কথা বলবেন।
তারা ভয়ানক বৈরি পরিবেশে সংগ্রাম করেছেন বলে, আমরা তাদের গুরুত্ব ঠিকমতো বুঝতে পারিনি, একবার ভাবুন এখানকার শত্রুপক্ষের চরিত্র আবু লাহাবদের মতো, আর মিত্রদের চরিত্র মদীনার মুনাফিকদের মতো, তার মধ্যেও কিভাবে একদল ছাত্র, যারা মূলত মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আগত এবং লজিং-মেস-হোস্টেলে বড় হয়েছেন, এমন একটা আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিপ্লবের সূচনা করে গেছেন যাকে রাষ্ট্রের আদালাত-বন্দুকের নিষ্ঠুরতা দিয়েও নির্মূল করা সম্ভব নয়।
আমি জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক তৎপরতাকে অত্যন্ত মর্যাদাকর ও শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করি। তাদের লড়াইকে অপ্রতিরোধ্য বিজয়মুখী হিসেবে দেখতে পাই। কিন্তু মুশকিল দেখি তাদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক বয়ানে। আমার পর্যবেক্ষণ হলো, জামায়াত যদি তার রাজনীতিকে যথাযথ করতে জগতকে বিচারের ক্ষেত্রে পর্যালোচনা পদ্ধতি আপগ্রেড করে তাহলে দলটির সাংগঠনিক শক্তির সুফল জনগণের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
এখন কথা হলো, এই কাজটা কে করবে? এটি কি জামায়াতের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব? আমি এমনটি মনে করি না। আমার মতে সীমাহীন মুর্খতা ও পলায়নবাদীতার কারণে দুনিয়ার সব কিছুর বোঝা জামায়াত-শিবিরের নেতাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। যে কাজ দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানীর তা তারা পালন না করে জামায়াতকে দোষারোপ করেন।
বহু স্কলার, শিক্ষক, গবেষক জামায়াত করেন৷ তারা কেউ হয়তো রোকন, নিয়মিত চাঁদা দেন, রিপোর্ট রাখেন। কিন্তু বস্ত আর বাস্তবতা নিয়ে নিজের যোগ্যতাকে ব্যবহার করে ইসলামী আন্দোলনের জন্য কাজ করেন না।
যেমন আমি দেখি, ডাক্তাররা সহীহ নামাজ শিক্ষাসহ বিভিন্ন ইসলামী নানা বইয়ের অনুবাদ করছেন। কিন্তু জাতীয় চিকিৎসা নীতি, স্বাস্থ্যনীতির বিদ্যমান বাস্তবতা পর্যালোচনা করে একে ইসলামের আলোকে গণমুখী করা নিয়ে কোনো আলোচনা কোথাও শুনি না। এখন মীর কাশেম আলীরা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে যতটা পারছেন কিছু বেস্ট অবকাঠামো তথা হাসপাতাল-ক্লিনিক করে গেছেন। কিন্তু গণমুখী চিকিৎসার লড়াইটা তো তাদের কাজ ছিল না। এইটা ছিল এ সেক্টরের লোকদের কাজ, তারা তা করেন নাই কিন্তু।
ধরেন মিডিয়ার কথা। বগুড়া থেকে আসা একটা এতিম ছেলে স্বপ্ন দেখছিলেন এ দেশে একটা ইসলামী দৈনিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠার। শহীদ আবদুল মালেক (রহ.)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রির ছাত্র। তারপর দৈনিক সংগ্রাম হলো। অবকাঠামোর দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ মিডিয়া। বস্তুনিষ্ঠতার দিক থেকে সবার সেরা। আমি সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে বলছি, সংগ্রামে কখনো মিথ্যা খবর ছাপা হয় না। জামায়াতের মুখপাত্র হলেও দলের দালালি করে না।
এখন কথা হলো মিডিয়া অবকাঠামো তৈরি হলেও বিদ্যমান বাজার-আইন-বাস্তবতারকে পর্যালোচনা করে কিভাবে একটা এন্টিস্টাব্লিশমেন্ট প্রোপিপল মিডিয়া চলবে তা বের করার গবেষণা করার দায়িত্বটি কি শহীদ আবদুল মালেকের না, আবুল আসাদ ভাইয়ের? এই কাজ না হওয়ার কারণেই নয়াদিগন্ত বা দিগন্ত টিভির মতো বড় বাজেটের মিডিয়া এসে সম্ভ্রম বাঁচিয়ে বাজারমুখী হওয়ার বেশি কিছু করতে পারেনি।
এক্ষেত্রে পরিহাস হলো এসব নিয়ে গবেষণা, নয়া চিন্তার উদ্ভাবন করার কাজে উপযুক্ত মানুষের খোঁজ না করে খোদ মিডিয়াগুলো পরিচালনায় নিযুক্ত কিছু কর্তাই নীতি গবেষণার কাণ্ডারি হয়ে যান। অথচ এসব কাজের একাডেমিক ও ইন্টেলেকচুয়াল যোগ্যতা তাদের ছিল না।
আমার মত হলো, জগত-রাষ্ট্র-সমাজকে নৈর্বত্তিকভাবে বিচার করে নিজস্ব রাজনীতিকে পর্যালোচনার বুদ্ধিজীবীতা, গবেষণা, পাণ্ডিত্যের অভাবগুলো পূরনের কাজটা আগ্রহীরা যখন করতে শুরু করবেন, তখন জামায়াতের বিপুল শক্তিসামর্থ খুব সহজেই বিজয়ী হতে থাকবেন। এক্ষেত্রে তাদের নিন্দা করার খাসলতের চেয়ে বুদ্ধিজীবীতা, নীতি, দার্শনিকতা, চিন্তা দিয়ে সমৃদ্ধ করার কাজ করতে হবে, জামায়াতকে কিছু চাপানোর চেয়ে হেজিমনি তৈরিকে প্রাধান্য দিতে হবে। মানে সাধারণের কাছেই যেন একটা পারসেপশন তৈরি হয়, যা জামায়াতও বিবেচনা করবে।
কপি পোষ্টঃ- খোমেনি এহেসান