02/10/2025
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে সরকারি বাঙলা কলেজ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি:
দাবি ১: অধ্যাদেশ এর ২ নং ধারায় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বাংলা নাম "ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়" সংযুক্ত করা।
দাবি ২: বাঙলা ভাষা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা:
সরকারি বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে যে ঐতিহ্য ও লক্ষ্য নিহিত ছিল, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা। সেই ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে এবং জাতীয় চেতনার ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি জানাচ্ছি যে-
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে একটি স্বতন্ত্র "বাঙলা ভাষা গবেষণা ইনস্টিটিউট" প্রতিষ্ঠা করা হোক।
এই ইনস্টিটিউট হবে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের গভীর গবেষণার প্রধান কেন্দ্র, যেখানে আধুনিক গবেষণা, ভাষাবিজ্ঞান, ডিজিটাল আর্কাইভ, অনুবাদ কর্মসূচি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে বিশ্বদরবারে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে।
দাবি ৩: গবেষণা খাতে ন্যূনতম ২৮% বাজেট বরাদ্দ:
একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে গবেষণায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যেহেতু, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হবে দেশের প্রথম ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শুরু থেকেই একটি দূরদর্শী ও গবেষণাকেন্দ্রিক নীতি প্রণয়ন করা জরুরি।
অতএব, আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি যে, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশের ৩০ ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হোক-প্রতি অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ন্যূনতম ২৮% গবেষণা খাতে বরাদ্দ থাকবে।
দাবি ৪: নির্বাচিত ছাত্র সংসদ ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা:
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো তার গণতান্ত্রিক পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশ, অধিকার আদায় এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচিত ছাত্র সংসদ অপরিহার্য।
ইতিহাস সাক্ষী, জুলাই বিপ্লবের সময় শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির অন্যতম ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এই দাবি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং অনস্বীকার্য।
অতএব, আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি জানাচ্ছি যে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশে একটি নতুন ধারা সংযোজন করে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ গঠনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের প্রতিনিধিত্বের অধিকার নিশ্চিতভাবে লাভ করে।
দাবি ৫: চলমান শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক সহায়তার নিশ্চয়তা: বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধ্যয়নরত অনার্স ২০-২১, ২১-২২, ২২-২৩ এবং মাস্টার্স ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা কার্যক্রম, পরীক্ষা ও সনদ প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যাদেশে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা অপরিহার্য।
আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি জানাই-
১. কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত বা বিলম্বিত না হয়।
২. যারা ইতোমধ্যে ১৭-১৮ ও ১৮-১৯ অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন বা করবেন, তাদের একাডেমিক ধারাবাহিকতা ও সনদ প্রদানে যেন কোনো প্রকার জটিলতা না হয়।
৩. যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানান্তরিত হয়েছেন, তাদের জন্যও যেন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই প্রয়োজনীয় সব সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করা হয়।
অতএব, আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি যে, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশের ৫২ ধারায় স্পষ্টভাবে এই নিশ্চয়তা সংযোজন করা হোক।
দাবি ৬: অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ:
অধ্যাদেশ জারির সাথে সাথে দ্রুত ভিসি নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি, ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এবং চলমান শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট ও সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। এতে বাজেট সংকটে শিক্ষার্থীরা কোনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং ভিসি কার্যক্রম ব্যর্থ না হন।
শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষায় অধ্যাদেশের ধারা ৫ (য) অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে রানিং শিক্ষার্থীরা একটিও মুহূর্ত মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ডিপার্টমেন্টে যেখানে শিক্ষক নেই, সেখানেও কার্যকর সমাধান আসে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, রানিং শিক্ষার্থীদের জন্য এই বিষয়টি ৫২ নাম্বার ধারায় সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা আবশ্যক, যাতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বাজেট ও শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত পদক্ষেপ দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।
দাবি ৭: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ভর করে শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার উপর। আমরা দাবি করছি, বিদ্যমান ক্যাম্পাসের শিক্ষকদেও মেধা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, তবে কোনও কোটা সিস্টেম প্রযোজ্য হবে না।
একইসাথে, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার, প্রক্টর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাবমুক্ত থেকে মেধা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতাকেই একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে নেওয়া অপরিহার্য। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন MIT, Princeton এর মত ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিজ্ঞ প্রফেসরদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও শিক্ষার গুণগত মান উভয়ই নিশ্চিত হয়।
দাবি ৮ : ধারা-৩ অনুযায়ী সময়সূচি উল্লেখের বিষয়ে যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তা সংযোজন করা জরুরি। একাডেমিক কার্যক্রম সময়সূচি থাকতে পারলেও সকল শিক্ষার্থী (ইন্টারমিডিয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়) ক্যাম্পাসে সব সময় প্রবেশের সুযোগ পাবেন, বিদ্যমান হল, বাস, লাইব্রেরী ইত্যাদি বিগত সময়ের মত ব্যবহার করতে পারবে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলিং মডেল নিয়ে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ বাঙলা কলেজ। তবে, এই মডেল নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাই রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীদারের মতামত ও আলোচনা গ্রহণ করে, শিক্ষার গুণগত মানকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে দ্রুত। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশংকা করছে একটা মহল অধ্যাদেশ জারি আটকে দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া ষড়যন্ত্র চলছে তাই বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ থেকে একটা আল্টিমেটাম দেওয়া হল।
আমরা আগামী ৯ অক্টোবরের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি; নতুবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা ১২ অক্টোবর থেকে অধ্যাদেশ জারির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষার্থীদের প্রকৃত কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে আমাদের দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করবে, যাতে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব, গণতান্ত্রিক ও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিত হয়।
#ঢাকাকেন্দ্রীয়বিশ্ববিদ্যালয় #ঢাকা_কেন্দ্রীয়_বিশ্ববিদ্যালয় #ঢাকা_সেন্ট্রাল_ইউনিভার্সিটি