21/09/2025
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত এর তাৎপর্য, ফজিলত ও গুরুত্ব:
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (২২, ২৩, ২৪) হলো আল্লাহর সুন্দরতম নাম ও গুণাবলীর বর্ণনা। এই আয়াতগুলোর মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদ, ক্ষমতা এবং সৃষ্টিজগতের ওপর তাঁর কর্তৃত্বের গভীর তাৎপর্য নিহিত। এই আয়াতগুলো পাঠের মাধ্যমে আল্লাহকে জানা ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন সহজ হয়।
আয়াতসমূহের বিস্তারিত বিশ্লেষণ
১. ২২ নং আয়াত: "হুওয়াল্লাহুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়া, আ'লিমুল গায়বি ওয়াশ-শাহাদাহ, হুয়ার-রাহমানুর-রাহীম।"
* তাৎপর্য: এই আয়াতটি তাওহীদের (একত্ববাদ) মূল ভিত্তি। এর অর্থ, তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনিই অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী। তিনি পরম দয়ালু, অসীম দয়ালু।
* বিশ্লেষণ: এই আয়াতে আল্লাহর তিনটি মৌলিক গুণ প্রকাশ করা হয়েছে:
* একত্ববাদ: 'লা ইলাহা ইল্লা হুওয়া' - এই ঘোষণাটি ইসলামের মূল ভিত্তি।
* সর্বজ্ঞানী: 'আ'লিমুল গায়বি ওয়াশ-শাহাদাহ' - আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জ্ঞান রাখেন, যা আমাদের কাছে অদৃশ্য (যেমন ভবিষ্যতের ঘটনা, মানুষের মনের কথা) এবং যা দৃশ্যমান।
* করুণাময়: 'আর-রাহমানুর-রাহীম' - এই দুটি গুণবাচক নাম আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও করুণা প্রকাশ করে।
২. ২৩ নং আয়াত: "হুওয়াল্লাহুল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল মালিকুল কুদ্দুসুস-সালামুল মু'মিনুল মুহাইমিনুল আ'জিজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির। সুবহানাল্লাহি আম্মা ইউশরিকুন।"
* তাৎপর্য: তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি বাদশাহ, মহাপবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তার উৎস, রক্ষক, পরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অহংকারের অধিকারী। তারা যাকে শরিক করে তা থেকে তিনি পবিত্র।
* বিশ্লেষণ: এই আয়াতে আল্লাহর আরও সাতটি সুন্দর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাঁর মহিমা ও ক্ষমতার পরিচয় দেয়:
* আল-মালিক: বাদশাহ, সকল কিছুর মালিক।
* আল-কুদ্দুস: মহাপবিত্র, সকল ত্রুটিমুক্ত।
* আস-সালাম: শান্তি ও নিরাপত্তা দানকারী।
* আল-মু'মিন: নিরাপত্তা ও আশ্রয়দাতা।
* আল-মুহাইমিন: পর্যবেক্ষক ও রক্ষক।
* আল-আ'জিজ: পরাক্রমশালী, যার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
* আল-জাব্বার: মহাপরাক্রমশালী, যিনি সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
* আল-মুতাকাব্বির: অহংকারের অধিকারী, যা শুধুমাত্র তাঁর জন্যই শোভা পায়।
* এই আয়াতে 'সুবহানাল্লাহি আম্মা ইউশরিকুন' বলে আল্লাহ শিরক থেকে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন।
৩. ২৪ নং আয়াত: "হুয়াল্লাহুল-খালিকুল-বারিউল-মুসাওয়িরু লাহুল-আসমাউল-হুসনা। ইউসাব্বিহু লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়াহুয়াল-আ'জিজুল-হাকীম।"
* তাৎপর্য: তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকারী, আকৃতিদানকারী। তাঁর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
* বিশ্লেষণ: এই আয়াতে আল্লাহর আরও তিনটি সৃষ্টি সম্পর্কিত গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে:
* আল-খালিক: সৃষ্টিকর্তা, যিনি সবকিছুকে অস্তিত্বে আনেন।
* আল-বারি: উদ্ভাবনকারী, যিনি প্রতিটি জিনিসকে সঠিক আকৃতিতে তৈরি করেন।
* আল-মুসাওয়ির: রূপদানকারী, যিনি প্রতিটি সৃষ্টিকে নির্দিষ্ট রূপ ও আকৃতি দেন।
* 'লাহুল-আসমাউল-হুসনা' - এই বাক্যটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এই তিনটি নাম ছাড়াও আল্লাহর আরও অনেক সুন্দর নাম রয়েছে।
* 'ইউসাব্বিহু লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ' - এই অংশটি মহাবিশ্বের সবকিছু যে আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে, তা তুলে ধরে।
* সর্বশেষে, 'ওয়াহুয়াল-আ'জিজুল-হাকীম' - এই বাক্যটি আল্লাহর চূড়ান্ত ক্ষমতা ও প্রজ্ঞাকে নিশ্চিত করে।
ফজিলত (গুরুত্ব)
* রোগমুক্তি: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে এই তিনটি আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেবেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ ও মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
* মৃত্যুর সময় জান্নাত নিশ্চিত: হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা আল্লাহর কাছে রহমত ও মাগফিরাতের দু'আ করে এবং সেদিন মারা গেলে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে।
* আল্লাহর নৈকট্য লাভ: এই আয়াতগুলো আল্লাহর পরিচয় ও মহিমাকে তুলে ধরে, যা পাঠকারীকে আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
* শিরক থেকে মুক্তি: এই আয়াতগুলো পাঠের মাধ্যমে শিরকের মতো গুরুতর পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং তাওহীদে বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়।
* দুআ কবুল: এই আয়াতগুলো পাঠের পর আল্লাহর কাছে যেকোনো বৈধ দুআ করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এই আয়াতগুলো নিয়মিত পাঠ করা একজন মুমিনের জন্য আল্লাহকে জানার এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি চমৎকার উপায়।