16/11/2025
ছাত্রদল নেতা রোমান বহিস্কারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে সরব ফেসবুক
ফরিদপুর টাইমস
ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম রোমানকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি।
রোববার ১৬ নভেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম রোমানকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির আজ এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনরূপ সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের ওই নেতা খাইরুল ইসলাম রোমান বলেন, “এ ব্যাপারে এখন আর কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।”
এদিকে, খায়রুল ইসলাম রোমানকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিস্কারের সিদ্ধান্তে তীব্র দুঃখ প্রকাশ করে দলীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জোর দাবি জানানো হয়েছে সহকর্মী সহযোদ্ধা সহ সিনিয়র ও জুনিয়রদের পক্ষ থেকে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নান্নু ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন- সন্ধ্যায় এই সংবাদ দেখে বুকটা ভেঙে গেল। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামের রাজপথের আইকন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্পর্কে খায়রুল ইসলামের আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি বলতে চাই- খাইরুল ইসলাম গর্ব করার মতন একজন সাহসী যোদ্ধা। নিঃসন্দেহে ছাত্রদল ওকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। সে একজন মানবতাবাদী ছাত্রনেতা। তাঁর জীবনবৃত্তান্ত খোঁজ করলে দেখবেন ভুরি ভুরি মানবসেবা ওর ঝুঁড়িতে। ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ তো মহাসচিবের সন্তান সমতুল্য। সন্তানের এই ভুল পিতা তো অবশ্যই ক্ষমা করতে পারেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের কাছে আমার অনুরোধ রইলো- যদি সম্ভব হয় মাননীয় মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই বিষয়টি আরেকটু বিবেচনা করা যায় কিনা?
মধুখালী পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব রেদোয়ান আবেদিন লিখেছেন- “রোমান ভাইয়ের কি অপরাধ ছিলো জানিনা। অনেক নেতার নৈতিক স্খলন দেখেছি। কিন্তু রোমান ভাইকে সেই ছোট থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দেখে এসেছি। রোমান ভায়ের বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনা করার বিনীত অনুরোধ করছি। তিনি লিখেন- আমি তাঁর লোক নই। কিন্তু মনে করি- ছাত্রদলে এদের অবশ্যই, অবশ্যই এবং অবশ্যই দরকার আছে।
মো: হানিফ শরীফ লিখেছেন- “ছাত্রদল তাকে বহিষ্কারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে সারা বাংলাদেশ ছাত্রদলের প্রতি মানুষ গ্রহণ যোগ্যতা কমবে।”
-::-
ফেসবুকে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তুলে আবেগঘন পোস্ট
“আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা ও ত্যাগের গল্প” শিরোনামে রোমান লিখেছেন-
“আমার রাজনৈতিক সূচনা ২০০৬ সালে—কলেজ জীবনের সেই নিষ্পাপ বয়সে যখন শুধু স্বপ্ন ছিল দেশ, গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকার নিয়ে। তারপর শুরু হয় সংগ্রামের এক দীর্ঘ অধ্যায়।
২০১২ সালে প্রথম গ্রেফতার হই। সেদিন ঘটনাস্থলে পুলিশের বর্বর লাঠিচার্জে আমার পায়ের তিনটি লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। দেশের বাইরে চিকিৎসা নিলেও আজও আমি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। কিন্তু থেমে যাইনি।
২০১৪ সালে আবারও গ্রেফতার হই। পুলিশের রাইফেলের আঘাতে আমার হাত ভেঙে যায় এবং আমাকে ঘটনাস্থল থেকেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে আবারও গ্রেফতার। টানা দুই মাস কারাভোগের পর মুক্তি পাই।
শেষ হয়নি।
২০২৩ সালেও আবার গ্রেফতার হই। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে হামলা, মার্ডার মামলা, বিস্ফোরণ, ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা—এমন অসংখ্য মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার বোঝা কাঁধে নিয়ে টিকে থেকেছি শুধু দলের জন্য, দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পরে যখন পুলিশের গুলিই ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের একমাত্র পরিচয় ও আতঙ্ক—সেই সময় আমি নিজ দায়িত্বে, নিজের নেতৃত্বে অসংখ্য মিছিল করেছি। দিনের পর দিন ঝড়–ঝাপটা–বৃষ্টি–অন্ধকারে রাত কাটিয়েছি শুধু দলকে বাঁচাতে, আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে।
কিন্তু কখনো ১%—হ্যাঁ, মাত্র ১%—অসচ্চতা বা দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী কোনো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করিনি।
৫ তারিখের পর পুলিশসহ দেশের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা আমার নামে পাঁচ টাকারও অসচ্চতার প্রমাণ দেখাতে পারবে না—আমি এ বিষয়ে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে চ্যালেঞ্জ জানাই।
এত কিছু করেছি দলকে ভালোবেসে, দেশকে বাঁচাতে, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের স্বপ্নে।
আমি নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শকে আঁকড়ে ধরে রাজনীতি করেছি এবং ইনশাআল্লাহ—এ ভাবেই রাজনীতি করে যাবো।
আজ দল আমাকে বহিষ্কার করেছে—কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত নই।
দল আমাকে চিনবে, দল আমাকে খুঁজে নেবে—আমি এই বিশ্বাস রাখি।
ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
আমি মানুষের ভালোবাসা, নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা, এবং আল্লাহর রহমত নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই—এগিয়েও যাবো।
গণতন্ত্রের জন্য, দলের জন্য, আর আমার এই অটুট আদর্শের জন্য।
ইনশাআল্লাহ…!