02/08/2025
‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশ ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফরিদপুরে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশে অশ্রুবিজড়িত কন্ঠে শহীদ মায়েরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যাকারীদের বিচার এখনো সম্পন্ন করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে এই গণহত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। তারা বলেন, এই বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মাঝে শান্তি আসবেনা।
শনিবার সকালে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে শহীদদের মায়েরা তাদের সন্তানদের স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাশউদা হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আজম।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জুলাই যোদ্ধাদের মা অ্যাডভোকেট মেহেরুন নিসন স্বপ্না, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ জান শরিফ মিঠুর মা হানুফা আলম, শহীদ সিরাজুল ইসলাম বেপারীর মা ও তার স্ত্রী, শহীদ শামসু মোল্লার স্ত্রী মেঘলা বেগম, আহত জুলাই যোদ্ধা সজীব ইসলামের মা, কাজী রিয়াজের মা, জুলাই যোদ্ধা কাজী রিয়াজ, জাকিয়া ফারজানা, কাজী জেবা তাহসিন, আরএম হৃদয়, সোহেল রানা, সাব্বির হোসেন খান, রাফিউল ইসলাম সিয়াম, জান্নাতি খানম প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনের সময় মায়েরা তাদের সন্তানদের অনুপ্রেরণা দিয়ে প্রিয় সন্তানকে আন্দোলনে নামতে রাস্তায় পাঠিয়েছেন। অনেকে রাস্তায় নেমে এসে খাবার দিয়ে গেছেন অভুক্তদের। এই অবদান অবিস্মরণীয়। শহীদ পরিবারের এই শূন্যস্থান কখনো পূরণ হবার নয়। তাদের প্রত্যাশা পূরণ হলেই তাদের আত্মার শান্তি পাবে।’
বক্তাগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জুলাই যোদ্ধাদের অসহায় পরিবারের নানা দুঃখদুর্দশা তুলে ধরেন। তারা বলেন, পরিবারের একজন সদস্য হারানো যে কতখানি কষ্টের তা পরিবারের বাকি সদস্যরাই বুঝতে পারেন। একজন মা তার সন্তান না থাকার অভাব কখনো ভুলতে পারেন না।
বক্তারা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, যে প্রত্যাশা করে আমাদের ছেলেরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল তা পূরণ হয়নি। আমরা আমাদের সন্তানদের হত্যার বিচার পাইনি। তাদের উপর মারধর করারও বিচার পাইনি। উপরন্তু আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমাদের প্রিয়জনরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন বাজি রেখে রক্ত দিয়েছে, অথচ তার মূল্যায়ন হচ্ছে না। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কেন অবহেলিত থাকবো? আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চাই।
বক্তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আমাদের উপর হামলা করে আমাদের ছেলেদের আহত করা হয়েছে। তাদের গুলি করা হয়েছে। এখনো অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে।
বক্তাগণ অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, দেশের মায়েরা যেভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তাদের সন্তানদের স্বৈরাচারী সরকার পতনে সাহস যুগিয়েছেন, তা দেশের মানুষ চিরকাল গর্বের সাথে স্মরণ করবে।
তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব মায়েদের সন্তানরা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। প্রতিটি মা জানে সন্তান হারানোর কষ্ট। এটা মা ছাড়া আর কেউ কেউ কষ্ট বুঝবেনা। জুলাই কোন্দ্রীক যে নির্মমতা হয়েছে তাদের ভুলতে বসেছি। সেদিন চিকিৎসা নিতে পারেনি। দাফনে দুই তিনজন লোক ছাড়া অংশ নিতে পারেনি। ফেনীর হত্যা ও পরবর্তী সময় হিটলারের ফ্যাসিবাদের সাথে তুলনা হতে পারে। জুলাই এর সাথে কোনো আপস নাই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতে পারে। আগামী প্রজন্মকে জুলাই স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। আবার পলায়নকারীরা আসার চিন্তা করলে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উপর চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।