
28/07/2025
ছবিটা কেউ দেখলে ভাববে এই মেয়েটা নিশ্চয় কিছু ভুলে গেছে, কিংবা কাউকে। কিন্তু আমি জানি, ছবিটার পেছনে আছে একটা পুরো পৃথিবী যে পৃথিবীটা আমার ছোটবেলায় আটকে আছে।
তখন আমি খুব ছোট। চুলগুলো এমনই ছিল উড়তে চাইত সব সময়, যেমন আমি চাইতাম। গ্রামের বাড়ির পেছনের সেই লম্বা রাস্তা, যেখানে বিকেল হলেই আমি দৌড়ে যেতাম, পেছনে আম্মুর ধমক আর পাশের বাসার খালার হো হো হাসি নিয়ে। কিছুদূর গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম যেমন ছবির এই মুহূর্তটা। কেউ থাকতো না, শুধু গাছের ছায়া আর ধুলো উড়িয়ে যাওয়া বাতাস।
আমার সবচেয়ে পছন্দের কাজ ছিল পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে কাদা বানানো। কাদা দিয়ে আমি নাকি ‘রান্না’ করতাম। পাতার উপর ভাত, আর গাছের ফুল দিয়ে তরকারি। তখন আমার ‘রেঁস্তোরা’ চালু থাকত সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত! কাস্টমার? আমার পুতুলগুলো, আর আমার একমাত্র 'সহপাঠী' ভাইয়ার ছায়া।
একদিন পাশের বাড়ির মামা বললেন, “তুই তো একদিন লেখক হবি।” আমি বলেছিলাম, “লেখক না, আমি কাদায় মাছ ধরব!” সবাই হেসে উঠেছিল, কিন্তু আমি খুব গম্ভীর ছিলাম। তখনও জানতাম না, বড় হয়ে গেলে কাদায় নামার সময় আর সাহস দুটোই হারিয়ে যায়।
সবচেয়ে মজার সময়গুলো ছিল বৃষ্টির পর। আমি আর আমার বান্ধবী ছাতা ছাড়াই দৌড়ে বেড়াতাম। বাড়ি ফিরে জামাকাপড় কাদা-মাটি মেখে একাকার। আম্মু রেগে যেতেন, কিন্তু আমি জানতাম, গামছা দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিতে দিতে তিনি আসলে হেসেই ফেলতেন।
আজ এত বছর পর, এই শহরের ব্যস্ত ভিড়ের মধ্যেও মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, সেই পেছনের রাস্তা ধরে আবার একটু হেঁটে যাই। কেউ পেছন থেকে ডাকুক“এই তুই! দৌড় দে, না হলে ধরবি!”
কিন্তু এখন কেউ ডাকে না।
তাই হয়তো আমি দাঁড়িয়ে থাকি। ছবির এই মেয়েটার মতো চুপচাপ, পেছন ফিরে, যেখানে আমি আসলে আর নেই... কিন্তু হৃদয়ের একটা কোণ ঠিক এখনো ওখানেই রয়ে গেছে।
- Raisa❤️