09/09/2025
খুব বেশি আগেও না, ১৯৬০ সালের দিকে কলেরা, ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যুহার ছিল মাত্রাতিরিক্ত। ওরস্যালাইনের আবিষ্কার এই মৃত্যুহারকে অনেকাংশেই কমিয়ে আনে, যার আবিষ্কারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন ডাক্তার রফিকুল ইসলাম। বর্তমানে সব ফার্মেসিতেই ওরস্যালাইনের প্যাকেট পাওয়া যায়, এমনকি আধা লিটার পানিতে একমুঠো চিনি বা গুড় এবং তিন চিমটি লবণ দিয়ে নিজেরাই ওরস্যালাইন তৈরি করতে পারি আমরা।
চিকিৎসক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানী রফিকুল ইসলাম ১৯৩৬ সালের ১৮ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) কুমিল্লার (বর্তমানে নাঙ্গলকোট) রায়কোট উত্তর ইউনিয়ের মালিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর ব্রিটেনে ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও হাইজিন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন।
এমবিবিএস পাস করার পর ১৯৬০ দশকের দিকে তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (ICDDR,B)-এ যোগদান করেন। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন ঔষধ নিয়ে গবেষণা করেন। তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের একটি খাবার স্যালাইন বা ওরস্যালাইন। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল 'দ্য ল্যান্সেট' তার আবিষ্কৃত স্যালাইনকে ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার’ বলে উল্লেখ করেছিল।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে অনুসারে, ২০০৭-২০১১ সালে ডায়রিয়ার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার ছিল দুই শতাংশ, যা ১৯৮৮-১৯৯৩ সালে প্রায় ২০ শতাংশ ছিল। ২০০৭ সাল থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ৭৮ শতাংশ শিশুকে ওআরএস দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে। ওরস্যালাইন বা ওআরএসের কারণে বাংলাদেশে ১৯৯০ সাল থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে। ওআরএস এখন বিশ্বজুড়ে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইউনিসেফ প্রতি বছর ৬০টি দেশে ৫০০ মিলিয়ন ওআরএস স্যাচেট বিতরণ করে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডায়রিয়ার চিকিৎসায় স্যালাইনের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে WHO ওরস্যালাইনকে স্বীকৃতি দেয়। উল্লেখ্য বাংলাদেশী বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ওরস্যালাইনকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রফিকুল ইসলাম ২০০০ সালে ICDDR,B থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত রোগও ছিল। ঐ বছর ৬ই মার্চ তিনি ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ৬ই মার্চ তাঁর গ্রামের বাড়ী মালিপাড়ায় বিশাল জানাজা শেষে পিতামাতার কবরের পাশে চির শায়িত হন বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম গর্ব ডাক্তার রফিকুল ইসলাম।