04/04/2025
বউ শ্বাশুড়ির রসায়ন
শাশুড়ি-বউমার সম্পর্কের মূল দ্বন্দ্ব সাধারণত শুরু হয় একজন পুরুষকে কেন্দ্র করে—ছেলে ও স্বামী। একজন মা তার ছেলেকে ছোটবেলা থেকে লালন-পালন করে বড় করেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি একধরনের অধিকারবোধ গড়ে ওঠে। কিন্তু যখন সেই ছেলে বিয়ে করে, তখন তার জীবনে নতুন একজন নারী প্রবেশ করে, যার প্রতি তার ভালোবাসা ও দায়িত্ব বাড়তে থাকে। অনেক শাশুড়িই এই পরিবর্তন সহজে মেনে নিতে পারেন না এবং মনে করেন যে তাদের ছেলে এখন আগের মতো মায়ের প্রতি যত্নশীল নয়। এর ফলে, তারা হয়ত পুত্রবধূকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে শুরু করেন।
অন্যদিকে, নতুন বউমারও অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। সে চায় তার স্বামী তার পাশে থাকুক এবং সংসারে তার মতামতকে গুরুত্ব দিক। কিন্তু যদি সে দেখে যে তার স্বামীর ওপর তার শাশুড়ির প্রভাব বেশি, তাহলে সে তা সহজে মেনে নিতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই বউমারা মনে করেন, শাশুড়ি তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন এবং স্বামীকে তার বিপক্ষে বোঝাচ্ছেন। এই দোটানা থেকে পারস্পরিক সন্দেহ ও বিদ্বেষ জন্ম নেয়।
এছাড়াও, এই শত্রুতা শুধু শাশুড়ি থেকে বউমার দিকেই নয়, অনেক সময় উল্টোটাও ঘটে। নতুন বউ সংসারে আসার পর অনেক সময় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে এবং শাশুড়িকে গুরুত্বহীন করে তোলে। অনেকে ছোট থেকে বড় হয়ই আসে পাশে থেকে শুনে, সিনেমায় দেখে যে শ্বাশুড়ী ভালো না, শ্বশুড়বাড়ীর মানুষ মানেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা শ্বশুরবাড়ির সবকিছুকেই নেগেটিভ মনে করে।ফলে, সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়তে থাকে।
শাশুড়ি ও বউমার মধ্যে অনেক সমস্যার মূল কারণ হলো জেনারেশন গ্যাপ বা প্রজন্মের পার্থক্য। তারা ভিন্ন সময়ে বড় হয়েছেন, ভিন্ন সামাজিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন, তাই তাদের চিন্তাভাবনা, মূল্যবোধ এবং জীবনধারাতেও পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যের কারণে অনেক সময় একে অপরের মতামত ও জীবনযাত্রা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। শাশুড়ি হয়তো মনে করেন, তার সময়ে নারীরা সংসারকেন্দ্রিক ছিলেন, কিন্তু বউমা এখন কর্মজীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেন। অনেক শাশুড়িই মনে করেন, তিনি যখন বউমার অবস্থানে ছিলেন, তখন শাশুড়ির কথা মেনে চলতে হয়েছে, তাই নতুন প্রজন্মেরও একইভাবে চলা উচিত। অন্যদিকে, বউমা যদি দেখেন যে তার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ বা সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, তবে তিনিও রাগান্বিত হন। এতে পারস্পরিক অভিমান ও মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়, যা সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তোলে।
এই সম্পর্ক সুন্দর ও মধুর করে তোলার চাবিকাঠি হলো বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা, ও ভালোবাসা। শাশুড়ি যদি বউমাকে শুধুমাত্র একজন নতুন সদস্য হিসেবে নয়, বরং নিজের মেয়ের মতো গ্রহণ করেন, তাহলে সম্পর্কটা আরও সুন্দর হবে। একইভাবে, বউমাও যদি শাশুড়িকে কেবল একজন কর্তৃত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে না দেখে, বরং একজন অভিজ্ঞ অভিভাবক ও পরিবারের অংশ হিসেবে সম্মান দেন, তাহলে ভুল বোঝাবুঝি কমে যাবে। ছোট ছোট আন্তরিকতা, একসঙ্গে সময় কাটানো, খোলামেলা কথা বলা—এসবই সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।