19/07/2025
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের একটা গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করা আমার এক ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমাদের মতে হাসিনার পতনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন কোনটা?
এক সেকেন্ডের মধ্যে তার উত্তর ছিল ১৮ জুলাই, প্রাইভেট ভার্সিটির নজিরবিহীন প্রতিরোধ। ও বলল, সরকার কনফিডেন্ট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, বিএনপি-ছাত্রদল-জামাতের কিছু শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নজরদারিতে রাখতে পারলে এবং গ্রেফতার করলে এই আন্দোলনকে আটকে দেয়া যাবে। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক একটা মুভমেন্ট হতে পারে এ ব্যাপারেও সরকার প্রিপেয়ার্ড ছিল। এজন্য হেফাজত নেতৃবৃন্দ নজরদারিতে ছিল।
এ কারনে সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা, তদকালীন পুলিশ-র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভ্যাকান্ট করা হয়। শীর্ষ সমন্বয়কদের খুঁজে খুঁজে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত হয়। ২/১ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে আন্দোলনকে সংগঠিত করার কোন শক্তি অবশিষ্ট থাকবে না এরকমটা ভাবা হয়।
কিন্তু সব ইকুয়েশনকে ওলট পালট করে দিয়েছিল প্রাইভেট ভার্সিটি। এরা ম্যাক্সিমাম সরকারি চাকরিতে আসে না। সো কোটা নিয়ে তারা খুব একটা মাথা ঘামাবে এই ধারণা সরকারের ছিল না।
কিন্তু তারাই নজিরবিহীনভাবে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেল। একের পর এক শিক্ষার্থী মারা গেল। বাংলাদেশে ঘটলো সেই সময় পর্যন্ত সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী শিক্ষার্থী-পুলিশ-র্যাব সংঘর্ষ। ৩৫ এর কাছাকাছি শিক্ষার্থী শহীদ।
প্রাইভেট ভার্সিটির এই মুভ সরকারের জন্য সিলেবাসের বাইরে থেকে প্রশ্ন ছিল, যার উত্তর তাদের জানা ছিল না। এরা কোথেকে আসলো, কিভাবে আসলো, কারা এদের সংগঠিত করলো এটা নিয়ে সবাই পাজেলড ছিল।
প্রাইভেট ভার্সিটির এই নজিরবিহীন ঘুরে দাঁড়ানো পুরো বাংলাদেশের ভয় ভেংগে দিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেল। সরকার আতংকিত হয়ে গেল। শেখ হাসিনা বাধ্য হল কারফিউ দিতে। আর বাংলাদেশে কারফিউ দেয়ার পর কোন সরকার কখনো টিকে থাকতে পারেনি।
প্রাইভেট ভার্সিটির এই নজিরবিহীন ঘুরে দাঁড়ানো আরেকটা কাজ করলো যেটা বিএনপি জামাতের ১৭ বছরের আন্দোলন করতে পারেনি। সেটা হচ্ছে শহুরে মিডল ক্লাস এবং আপার মিডল ক্লাসকে এই আন্দোলনে যুক্ত করে ফেলা।
প্রাইভেট ভার্সিটি মূলত শহুরে মিডল ক্লাস এবং আপার মিডল ক্লাসকে রিপ্রেজেন্ট করে। এই গ্রুপটা নিজেদের ক্যারিয়ার আর জীবন নিয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। যখন তাদের সন্তানদের বুকে গুলি চলেছে এটা তাদের জন্য রেড লাইন ছিল।
একটা সরকার সব সময় টিকায় রাখে মিডল ক্লাস, আপার মিডল ক্লাস। এই কারনে হাসিনা ঢাকাকে ক্যান্টনমেন্ট বানায়ে রাখছিল। সারা দেশে আন্দোলন হলেও ঢাকাতে কখনো কাউকে দাঁড়াতেই দেয় নাই।
১৮ জুলাইয়ের পর আপার মিডল ক্লাস রাস্তায় নামতে শুরু করলো, সোশ্যাল মিডিয়াতেও কথা বলতে শুরু করলো। ফলে হাসিনার গদিও নড়েচড়ে উঠলো।
সো হাসিনার পতন হয়ে গেছে মূলত ১৮ জুলাই। ৫ আগস্ট ছিল আনুষ্ঠানিকতা।
আমরা যাদেরকে ফার্মের মুরগি ডাকি, সেই ফার্মের মুরগিগুলো দেশের বিপদে বুক পেতে দিল, র'ক্ত দিল, মানুষকে কাঁদালো আর তারপর নিজেদের পড়ার টেবিলে ফিরে গেল। না চাইলো ক্ষমতার ভাগ, না দাবী করলো অন্য কোন কিছু।
এই জাতিকে মুক্তির রাস্তা দেখানোর জন্য এই সেলফলেস ফার্মের মুরগিগুলোর প্রতি রইলো অনেক অনেক দোয়া।
copied