20/08/2025
যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ৭২ মিনিটের মধ্যে ৫০০ কোটি মানুষ মারা যাবে। আপনি কি জানেন পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মাত্র দুটি দেশ নিরাপদ থাকবে?
আমরা হয়তো ইউক্রেন বা মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ দেখছি, কিন্তু পর্দার আড়ালে এমন এক বাস্তবতা লুকিয়ে আছে যা মাত্র ৭২ মিনিটে মানব সভ্যতাকে শেষ করে দিতে পারে। The Diary of a CEO পডকাস্টে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট অ্যানি জেকবসেন তার বই Nuclear War: A Scenario থেকে এমন সব চাঞ্চল্যকর এবং ভয়ঙ্কর তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা পেন্টাগন এবং সিআইএ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া।
অ্যানি জানান, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কারও অনুমতি ছাড়াই, মাত্র একার সিদ্ধান্তে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু করতে পারেন। কংগ্রেস, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা সেনাপ্রধান কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই। প্রেসিডেন্টের সাথে সবসময় একজন মিলিটারি এইড একটি ব্রিফকেস নিয়ে ঘোরেন, যার নাম দ্য ফুটবল। এর ভেতরে থাকে নিউক্লিয়ার হামলা চালানোর বিভিন্ন অপশনের একটি ব্ল্যাক বুক যাকে অনেকটা রেস্টুরেন্টের মেন্যু কার্ডের মতো করে সাজানো হয়েছে।
যদি কোনো শত্রু দেশ থেকে মিসাইল ছোড়া হয়, তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে পাল্টা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় থাকে মাত্র ৬ মিনিট। এই অল্প সময়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। তাকে শুধু ব্ল্যাক বুক থেকে একটি অপশন বেছে নিতে হয়।
অ্যানি জানান, একবার পেন্টাগনের নিউক্লিয়ার বাঙ্কারে ভুল করে একটি যুদ্ধের অনুশীলনের VHS টেপ আসল মেশিনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সিস্টেম দেখাচ্ছিল যে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার মিসাইল ধেয়ে আসছে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে ছিল। এমন ভুল যে কোনো দিন আবার হতে পারে।
৭২ মিনিটের নারকীয় তাণ্ডবে যা যা ঘটবে-
প্রথম কয়েক মিনিট: শত্রুপক্ষের মিসাইল শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্টের কাছে খবর পৌঁছাবে এবং তাকে নিরাপদ স্থানে সরানোর চেষ্টা করা হবে।
পাল্টা আক্রমণ: ৬ মিনিটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পাল্টা আক্রমণের নির্দেশ দেবেন। শত শত ICBM (Intercontinental Ballistic Missile) শত্রুপক্ষের দিকে ছুটে যাবে।
মিসাইল আটকানো অসম্ভব: অ্যানি বলেন, ছুটে আসা নিউক্লিয়ার মিসাইলকে আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়ার ধারণাটি একটি ফ্যান্টাসি। আমেরিকার কাছে মাত্র ৪৪টি ইন্টারসেপ্টর মিসাইল আছে, যা দিয়ে রাশিয়ার ১৬৭৪টি মিসাইলকে আটকানো অসম্ভব। এটিকে বলা হয়, একটি বুলেট দিয়ে আরেকটি বুলেটকে আঘাত করার চেষ্টা।
ধ্বংসের শুরু: মিসাইলগুলো যখন শহরে আঘাত হানবে, তখন প্রতিটি বিস্ফোরণের কেন্দ্রে তাপমাত্রা হবে ১৮০ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট। হাজার হাজার মাইলজুড়ে সবকিছু জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাবে, বিল্ডিং ভেঙে পড়বে, রাস্তা গলে যাবে এবং কোটি কোটি মানুষ মুহূর্তে মারা যাবে।
কতজন মারা যাবে এবং কারা বাঁচবে? অ্যানি বলেন, প্রথম ৭২ মিনিটেই প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ মারা যাবে। যারা বাঁচবে, তারা ভাগ্যবান নয়। কারণ এরপর শুরু হবে নিউক্লিয়ার উইন্টার। পুরো পৃথিবী বরফে ঢেকে যাবে, সূর্যের আলো আসবে না, ফসল ফলবে না এবং বেঁচে থাকা মানুষেরা খাবারের জন্য একে অপরকে হত্যা করবে। তখন বেঁচে থাকাটাই হবে মৃতদের চেয়েও বড় অভিশাপ।
বিজ্ঞানীদের মতে, নিউক্লিয়ার যুদ্ধের পর কৃষি কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ থাকবে শুধু অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে। বাকি বিশ্ব ১০ বছরের জন্য বরফে ঢাকা থাকবে।
ভবিষ্যতে AI হয়তো নিউক্লিয়ার অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। চ্যাটজিপিটি কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল পৃথিবী কীভাবে ধ্বংস হতে পারে। এর উত্তরে চ্যাটজিপিটি নিজেই নিউক্লিয়ার যুদ্ধের একটি সিনারি তৈরি করেছিল। অ্যানি বলেন, মানুষের ভুলের চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে AI এর কোনো ভুল সিদ্ধান্ত।
অ্যানি তার জীবনের এক আবেগঘন মুহূর্তের কথা বলেন, যেখানে তিনি নাগাসাকি বোমায় বেঁচে যাওয়া এক নারীর সাথে দেখা করেছিলেন। অন্যদিকে, তিনি এমন একজন মানুষেরও সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন যিনি নাগাসাকিতে ফেলা সেই বোমাটি নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। এই দুই প্রান্তের মানুষকে কাছ থেকে দেখা তাকে শিখিয়েছে যে এই যুদ্ধের পেছনে কোনো মহত্ত্ব নেই, আছে শুধু মানুষের অপরিসীম কষ্ট।
বাঁচার কি কোনো উপায় আছে? অ্যানি একটি আশার কথা শুনিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে The Day After নামে একটি সিনেমা দেখে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে পারমাণবিক অস্ত্র কমানোর চুক্তি করতে বাধ্য হন। এর ফলে বিশ্বে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা ৭০,০০০ থেকে কমে ১২,৫০০ তে নেমে আসে। অ্যানির মতে, সচেতনতাই পারে এই ধ্বংসযজ্ঞকে থামাতে।