30/10/2025
বিএনপি গণভোটে "না" পক্ষ নিয়ে সুইসাইডাল ডিসিশন নিসে।
গণভোট হচ্ছে দেশ ও রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য। আপনি যদি তা চান তাহলে আপনি "হ্যাঁ" ভোট দিবেন। জনমনে একটা কথা চাউর আছে যে, বিএনপি কোন সংস্কার চায় না, তারা আগের মত রাজনীতি করতে চায়। 'না' পক্ষে যোগ তারা সেই ধারণাকেই আরো এস্টাবলিশ করল।
বিএনপিপন্থী ফাহাম আব্দুস সালাম লিখেছেন যে, গণভোটে 'না' ভোট দিবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। দ্য ইউজুয়াল সাসপেকটস। এখন দেখা যাচ্ছে, তার দল বিএনপিও ঐ গ্রুপে সামিল হচ্ছে। এর ফলে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি একই ক্যাটাগরিতে পড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন সেই পুরনো পার্টিগুলো একজোট হচ্ছে সংস্কার ঠেকানোর জন্য। এই পারসেপশন বিএনপির ব্র্যান্ড ইমেইজের ভয়াবহ ক্ষতি করবে।
বিএনপির একটা ভুল ধারণা হচ্ছে যে, বিএনপি সমর্থকরা বিএনপির কথায় "না" ভোট দিবে। নট নেসেসারিলি। বিএনপির প্রচুর সমর্থক আছে যারা সংস্কারের পক্ষে, জুলাই সনদের পক্ষে। এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও সংস্কার চায়। জরিপে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাপার সমর্থকদের সব পারসেন্ট যোগ করে যারা সম্ভাব্য "না" ভোটের সরল অংক করে ফেলছেন, গণভোট এভাবে হবে না।
গণভোটে "হ্যাঁ" ভোট যেতার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এইটার একটা বিরাট ইম্পলিকেশন আছে।
আরবান মিডল ক্লাস ও এলিট ক্লাসের অভারওয়েলমিং মেজরিটি "হ্যাঁ" ভোট দিবে। সোসাইটিতে এদের যে ইনফ্লুয়েন্স ও ক্লাউট আছে, সেটার সরাসরি প্রভাব অন্যান্য ক্লাসের মানুষের ওপরে পড়ে। কোনটা কুল, কোনটা ভাল, কোনটা ক্ষ্যাত, এই ভ্যালু জাজমেন্টগুলো সোসাইটির এই অংশ থেকে নির্মাণ হয়। সংস্কারের প্রশ্নে তারা জামায়াত ও এনসিপির পক্ষে থাকবে এবং বিএনপির বিপক্ষে জনমত তৈরি করবে।
অলরেডি জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষিত শ্রেণীতে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা কমছে আর জামায়াতের বাড়ছে। আর এনসিপির মূল সমর্থক বেইজ আরবান মিডল ক্লাস। গণভোট নিয়ে যে মেরুকরণটা হবে, তাতে এই প্রবণতা আরো বাড়বে। আরবান মিডল ও এলিট ক্লাসের একটা বড় অংশ বিএনপির হাতছাড়া হবে।
এনসিপির ওপরে এখন প্রচন্ড প্রেসার আছে বিএনপির সাথে জোটে না যাওয়ার জন্য। "হ্যাঁ" ভোট জেতার মানে দাঁড়াবে জামায়াত, এনসিপি ও অন্যান্য দলের অলিখিত জোটের বিজয়। এই জোটটাই একসময় নির্বাচনী জোটে পরিণত হতে পারে। কোন পক্ষে জনমত যাচ্ছে সেটা ইলেকশনের আগেই গণভোটের মাধ্যমে ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
"হ্যাঁ" পক্ষকে জিতিয়ে দিয়ে জনগণের মনে একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসবে যে, এই পক্ষ দেশ ও রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে এবং এদেরকে ভোট দিয়ে জেতানো সম্ভব। এই কারণে গণভোটের রেজাল্ট নির্বাচনের রেজাল্টকে সরাসরি প্রভাবিত করবে।
এজন্যই জামায়াত ও এনসিপি গণভোটটা আগে চাচ্ছে। আর বিএনপি এই রিস্ক নিতে চায় না।
জুলাইয়ের পর জামায়াত নিজেদের পজিটিভ ইমেইজ বিল্ড আপ করেছে। এর মাধ্যমে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনসমর্থন বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলো এর ফলাফল দেখা গেছে। এনসিপি এই সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগাইতে পারে নাই।
বিএনপির ভুলের কারণে এইবার এনসিপি একটা সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে। তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনসমর্থন বাড়ানোর। দেশের মানুষ আসলে সংস্কার চায়। দেশ ও রাষ্ট্র সংস্কারই জুলাইয়ের প্রধানতম আকাঙ্খা। এনসিপিকে দেখাইতে হবে যে, বিএনপি সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আর এনসিপি সংস্কারের জন্য লড়াই করছে। এই লড়াইকে ম্যাস লেভেলে নিয়ে যাইতে হবে, সারাদেশে সব প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে হবে। এনসিপির রাজনীতি দাঁড়িয়ে যাবে।
বিএনপি যে "না" ভোটের পক্ষে যেতে পারে এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। একটা দল কেমনে এরকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারে? এই দল শহীদ জিয়ার দল, একটা বাংলাদেশপন্থী অন্যতম প্রধান দল। আশা করি, তারা তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারা বিএনপির রাজনীতিকে ভয়াবহ ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
- আহমাদ মোসাফফা