25/09/2025
হবিগঞ্জ জেলায় একই দিনে তিনটি স্থানে আলোচিত বক্তা মুফতী আলী হাসান উসামার অংশগ্রহণ ঘিরে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় তাফসীর কমিটি, আয়োজক এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে—দিনভর একাধিক ফোনালাপ, অগ্রিম অর্থ প্রদানের দাবি এবং শেষ মুহূর্তের সময়সূচি পরিবর্তনের ফলে মাহফিলগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
আয়োজকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মুফতী আলী হাসান উসামার ২৪ সেপ্টেম্বরের সময়সূচি ছিল এভাবে:
১. সুজাতপুর, ১২ নং ইউনিয়ন, বানিয়াচং উপজেলা – বিকেল ৩টা থেকে।
২. শাহপুর, ১১ নং মক্রমপুর, বানিয়াচং উপজেলা – বাদ এশা।
৩. নরপতি, চুনারুঘাট উপজেলা – রাত ১০টা।
প্রথম অনুষ্ঠান সুজাতপুরের দাওয়াত দেন স্থানীয় মাওলানা বশির আহমদ, দ্বিতীয়টি শাহপুরের আমন্ত্রণের দায়িত্ব নেন মাওলানা আজিজুর রহমান এবং তৃতীয়টি চুনারুঘাটে দাওয়াত দেন মাওলানা মাহমুদুল হাসান।
আয়োজকদের একজন জানান, তিন মাহফিলেই বক্তা উপস্থিত থাকবেন বলে আগে থেকেই ধারণা ছিল। কিন্তু ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ খবর আসে যে বক্তা আসবেন না। তাফসীর শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এমন খবর পেয়ে আয়োজকরা বিব্রত হয়ে পড়েন।
এক আয়োজকের দাবি, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বক্তার চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে বক্তা অগ্রিম পারিশ্রমিক ছাড়া বের হবেন না। “আমি ড্রাইভারকে বারবার অনুরোধ করি, শেষ পর্যন্ত কিছুটা লোভ দেখাতেও হয়,” বলেন ওই আয়োজক। পরে তাফসীর কমিটি বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পাঠালে ড্রাইভার নিশ্চিত করেন যে তারা ঢাকা থেকে রওনা হয়েছেন।
নির্ধারিত সময়ে সুজাতপুরের অনুষ্ঠানে বক্তা উপস্থিত হননি। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি সরাসরি শাহপুরে পৌঁছান। সেখানেও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন—মোট ২০ মিনিট। আয়োজকদের বক্তব্য, “প্রতি মিনিটে হাজার টাকা” হিসেব করলে ঠিক ২০ হাজার টাকার সমান সময় বক্তব্য দেওয়া হয়। বক্তৃতা শেষে তিনি তৎক্ষণাৎ গাড়িতে উঠে পড়েন।
শাহপুরের পর বক্তা রাত সাড়ে ১১টার দিকে চুনারুঘাটে যান। আয়োজকদের অভিযোগ, এই স্থান থেকে আগেই ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে চালকের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা। তবে চুনারুঘাটে গিয়েও বক্তা অসুস্থতার অজুহাতে স্বল্প সময়ের বয়ান করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আয়োজক মনে করছেন, পরিকল্পিতভাবে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে বক্তা ও তাঁর পক্ষ লোকজন অগ্রিম টাকা আদায় করেছেন। “ধর্মীয় মাহফিলের নামে ব্যবসা করা হচ্ছে,” বলে মন্তব্য করেন শাহপুরের একজন কমিটি সদস্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে এটিকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্টকারী ঘটনা হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ ভবিষ্যতে বক্তাদের পারিশ্রমিক ও উপস্থিতি নিয়ে স্বচ্ছ নীতিমালা প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছেন।
এ প্রতিবেদনের সময় পর্যন্ত মুফতী আলী হাসান উসামা বা তাঁর প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ধর্মপ্রাণ জনগণ ও আয়োজকরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আর্থিক লেনদেন ও সময়সূচি ভঙ্গের ঘটনা এড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।