Razonna Mystiverse

Razonna Mystiverse আমি তোমাদেরই লোক
(2)

সব রকমের বিনোদন ও সায়েন্স ফিকশন, কালোজাদু, তন্ত্রমন্ত্রের গল্প বা বাস্তব ঘটনা, হরর গল্প ও সিনেমা দেখতে পেইজটি ফলো করুন।

ইউটিউবে লিখে সার্চ দিন এবং দেখুন। Horror Short film

লা-মাজহাবী, আহলে হাদিস, সালাফি ও ওয়াহাবি— এক নতুন মাজহাব এর গল্পইসলাম এমন এক ধর্ম, যেখানে ভালোবাসা, বিনয় আর জ্ঞান—এই তিন...
24/10/2025

লা-মাজহাবী, আহলে হাদিস, সালাফি ও ওয়াহাবি— এক নতুন মাজহাব এর গল্প

ইসলাম এমন এক ধর্ম, যেখানে ভালোবাসা, বিনয় আর জ্ঞান—এই তিনটি একসাথে চলার কথা। কিন্তু সময়ের স্রোতে যখন মানুষ নিজের বুঝকেই “সবচেয়ে সঠিক” ভেবে নেয়, তখন শুরু হয় বিভেদ। আজকের যুগে সেই বিভেদের এক রূপ আমরা দেখি আহলে হাদিস, সালাফি ও ওয়াহাবি নামে।

তারা বলে— “আমরা কোনো মাজহাব মানি না, শুধু কুরআন ও সহিহ হাদিস মানি।”

এই কথা শুনতে খুব সুন্দর। কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই প্রশ্ন জাগে—
তারা যে “সহিহ হাদিস” অনুসরণ করে, কে সেই হাদিস যাচাই করলেন?

ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইবনে তাইমিয়া, আলবানি—এরা কি সাধারণ মানুষ ছিলেন?

না, এঁরাও ছিলেন জ্ঞানী ইমাম, যাঁদের মতামত, বিশ্লেষণ ও ফতোয়ার ওপরই আজকের “মাজহাবহীন” গোষ্ঠীগুলো দাঁড়িয়ে আছে।

অবাকভাবে দেখা যায়, তারা যে “অমাযহাবি” দাবি করে, তারাই ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যিম, মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব, আলবানি, ইবনে বায প্রমুখ ইমামদের মতবাদ ও ফতোয়া অন্ধভাবে অনুসরণ করে।

অর্থাৎ, তারা এক মাজহাব ছেড়ে অন্য মাজহাব তৈরি করেছে—কিন্তু নাম দিয়েছে “লা-মাজহাবী”।

এ যেন কেউ আয়নায় নিজের মুখ দেখে বলে—

“আমি তো কারও মতো নই।”

বাহ্‌, শুনতে বড়ই নির্মল!

ইসলাম কখনো একচেটিয়া দাবি করার ধর্ম নয়।

আজ আহলে হাদিস বা সালাফি লা- মাজহাব মতের অনেক ভাই-বোন এমন এক ভাবনায় পড়েছেন,
যেখানে মনে হয়, শুধু তারাই “সঠিক মুসলিম”।
অন্যরা যেন ভুল পথে আছে।বাকিদের “বিদ‘আতি” বা “গোমরাহ” বলে আখ্যা দেয়।
কিন্তু কুরআন তো স্পষ্ট বলেছে—

“তোমরা দলে বিভক্ত হয়ো না।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৫)

তাহলে কেন এই বিভাজন?
কেন অন্যকে ছোট করে নিজের ধর্মচর্চাকে বড় ভাবা?
ইসলাম শিখিয়েছে বিনয়, শিখিয়েছে শ্রদ্ধা—
“যদি না জানো, জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নাহল ১৬:৪৩)

অর্থাৎ আমাদের পথচলা হবে শেখার, না যে নিজের মতকেই চূড়ান্ত ধরা।

ইমামগণ কেউই বলেননি— “আমার কথাই শেষ কথা।”
বরং তাঁরা সবাই বলেছিলেন—

“যদি আমার কথার বিপরীতে সহিহ হাদিস পাও, তবে সেই হাদিসকেই গ্রহণ করো।”

সুতরাং, মাজহাব মানে অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং জ্ঞানের উত্তরাধিকার।
যে বলে, “আমি কারও মত মানি না,”
সে আসলে নিজেরই মতকে ইমাম বানিয়ে নেয়।

ইসলাম এক প্রবাহমান নদী, যার উৎস কুরআন ও রাসূলের শিক্ষা।
বিভিন্ন মাজহাব সেই নদীর শাখা, যা একেকভাবে মানুষকে সেই উৎসে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
কিন্তু যখন কেউ বলে— “আমার পথই একমাত্র সঠিক,”
তখন সে নদীর স্রোত নয়, বাঁধ তৈরি করে।

অতএব, আজ যখন আহলে হাদিস, সালাফি বা ওয়াহাবি গোষ্ঠী মানুষকে বিভক্ত করে, নিজেদের দলকে “আসল ইসলাম” বলে ঘোষণা দেয়—
তখন বুঝতে হবে, তারা কুরআনের নয়, নিজেদের মানমর্যাদার দাস হয়ে পড়েছে।

কারণ যে হৃদয় সত্যিকারভাবে আল্লাহভীরু, সে কারও ওপর নিজের সত্য চাপিয়ে দেয় না—
সে আলো ছড়ায়, বিভেদ নয়।


#অর্পন_রহমান #অর্পন_রহমান_কলাম

মহা জগৎ ভ্রমন: অর্পন রহমান১️. কলব — হৃদয় বা অন্তরঅর্থ: “কলব” মানে হলো হৃদয়, তবে রক্ত পাম্প করা অঙ্গ নয়—আধ্যাত্মিক হৃদয়, ...
24/10/2025

মহা জগৎ ভ্রমন

: অর্পন রহমান

১️.

কলব — হৃদয় বা অন্তর

অর্থ: “কলব” মানে হলো হৃদয়, তবে রক্ত পাম্প করা অঙ্গ নয়—আধ্যাত্মিক হৃদয়, যেখানে ঈমান, অনুভব ও উপলব্ধি বাস করে।
কাজ: এটি মানুষের আল্লাহর সাথে সংযোগের কেন্দ্র।
যখন কলব পবিত্র থাকে, মানুষ আলোর মতো স্বচ্ছ হয়; যখন কলব কালো হয়, তখন সঠিক-ভুল হারিয়ে যায়।
কুরআনে:

“সেদিন ধন-সম্পদ বা সন্তান কিছুই কাজে আসবে না,
কেবল সেই ব্যক্তি সফল হবে যে আল্লাহর কাছে পবিত্র হৃদয় (قلب سليم) নিয়ে উপস্থিত হবে।”
(সূরা আশ-শু’আরা, ২৬:৮৮–৮৯)

সংক্ষেপে:

কলব — অনুভবের কেন্দ্র, ঈমানের আসন।

২️. রূহ — আত্মা

অর্থ: “রূহ” মানে আত্মা, সেই রহস্যময় শক্তি যা আল্লাহ নিজে দিয়েছেন।

“আমি তাতে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছি।” (সূরা হিজর ১৫:২৯)

রূহ হলো আল্লাহর আদেশে জীবনের স্ফুলিঙ্গ। এটি পবিত্র ও চিরশুদ্ধ, পাপ দ্বারা কলুষিত হয় না—কেবল শরীর ও নফসের জটিলতা তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।
রূহের কাজ: আল্লাহর আলো বহন করা; মানুষকে উচ্চতর জ্ঞান ও চেতনার দিকে টেনে নেয়।

সংক্ষেপে:

রূহ — আল্লাহর দেয়া পবিত্র নিশ্বাস, চেতনার শিখা।

৩️.নফস — প্রবৃত্তি বা আত্মসত্তা

অর্থ: “নফস” মানে স্ব-সত্তা বা প্রবৃত্তি, যা ভালো-মন্দ উভয়ের দিকেই টানতে পারে।
এটি তিন স্তরে দেখা যায়:

1. নফস-এ আম্মারা (نفس أمّارة) — যা মন্দের আদেশ দেয় (সূরা ইউসুফ ১২:৫৩)।

2. নফস-এ লাওয়ামা (نفس لوّامة) — যা ভুল করলে তিরস্কার করে, বিবেকের কণ্ঠ।

3. নফস-এ মুতমাইন্না (نفس مطمئنة) — যা শান্ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টিতে স্থির।

সংক্ষেপে:

নফস — মানুষকে নিচে নামায় বা ওপরে তুলে নেয়, নিয়ন্ত্রণই এখানে মূল।

সারমর্মে

বিষয় প্রকৃতি ভূমিকা

রূহ পবিত্র, ঈশ্বরপ্রদত্ত জীবন ও আলো দেয়
কলব সংবেদনশীল, পরিবর্তনশীল ঈমান ও অনুভবের কেন্দ্র
নফস প্রবৃত্তিমূলক ইচ্ছা ও সংগ্রামের ক্ষেত্র

একটি চিত্রে কল্পনা করো:
রূহ হলো আকাশের আলো,
কলব সেই আলো ধারণ করা কাঁচের প্রদীপ,
আর নফস হলো বাতাস—যা চাইলে শিখা জ্বালিয়ে রাখতে পারে, আবার নিভিয়েও দিতে পারে।

যখন কলব নফসের প্রেমে পড়ে তখন মানুষ হয়ে যায় পাপী

আর যখন কলব রুহের প্রেমে পড়ে তখন হয়ে যায় পূন্যবান মহামানব।

2.
কলব, রূহ ও নফসের মহাযাত্রা

মনের গভীরে এক অদৃশ্য মঞ্চ আছে — সেখানে তিন চরিত্র প্রতিনিয়ত অভিনয় করে।
একজন হলো রূহ, স্বর্গীয় নিশ্বাস, আল্লাহর আদেশে নেমে আসা এক আলোকবিন্দু।
আরেকজন কলব, হৃদয়ের সেই কাঁচের প্রদীপ, যেখানে আলো জ্বলে কিংবা নিভে যায়।
শেষে আছে নফস, অস্থির বাতাস — কখনো প্রশান্ত, কখনো ঝড়ো।

রূহ বলে,

“আমি আলো, আমি উপরে উঠতে চাই, আমি আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে চাই।”

নফস বলে,

“আমি চাই, আমি ভোগ করতে চাই, আমি এখানেই স্বর্গ বানাতে চাই।”

আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কলব, দ্বিধাগ্রস্ত—
কোন সুরে সাড়া দেবে, কার প্রেমে নিজেকে সমর্পণ করবে?

যদি কলব নফসের আহ্বান শোনে, তবে তার কাঁচে ধুলো জমে।
সে ভুলে যায় নিজের আদি উৎস, হারিয়ে ফেলে স্বচ্ছতা।
তখন মানুষ দেহের তৃষ্ণায় পিপাসিত থাকে, কিন্তু আত্মা শুকিয়ে যায়।
সে হাসে, কিন্তু আনন্দ পায় না; পায়, কিন্তু তৃপ্তি আসে না।

আর যদি কলব রূহের দিকে মুখ ফেরায়—
তবে আলো নেমে আসে ভেতরে ভেতরে,
চোখে করুণা জন্মায়, অন্তরে প্রশান্তি।
তখন পৃথিবীর ঝড় তাকে টলাতে পারে না,
কারণ সে আকাশের আলোয় স্থির হয়ে গেছে।

রূহ তখন ফিসফিসিয়ে বলে—

“তুমি আর আমি এক, আমি তোমার মধ্যে জেগে উঠেছি।”

কলব তখন দীপ্ত হয়, নফস প্রশমিত হয়,
আর মানুষ তখন তার মূলের দিকে ফিরে যায় —
সেই ‘রব্বির’ দিকে, যাঁর নিশ্বাসে সে বেঁচে আছে।

আসলে এই জীবন এক অন্তহীন তীর্থযাত্রা।
রূহ চায় আকাশে ফিরতে, নফস টানে মাটির দিকে,
আর কলব হলো সেই পথের মুসাফির—
যে প্রতিদিন সিদ্ধান্ত নেয়,
সে আজ আলো বেছে নেবে, না অন্ধকার।

এ যাত্রার শেষ প্রান্তে এক নীরব আহ্বান শোনা যায়—

“হে প্রশান্ত আত্মা (নফসুল মুতমাইন্নাহ),
ফিরে এসো তোমার প্রভুর দিকে,
সন্তুষ্ট ও সন্তুষ্টকারী হয়ে।”

আর তখন কলব হাসে—
কারণ সে অবশেষে রূহের প্রেমে জয়ী হয়েছে।

#মুহাম্মদ_সাইদুর_রহমান_অর্পন #অর্পন_রহমান_কলাম
#অর্পন_রহমান #অর্পন_রহমান_নিবন্ধ #অর্পন_রহমান_প্রবন্ধ

21/09/2025

★সূরা আদ:দাহার -(ব্যাখ্যা):★
•••••••••••••••••••••••••••••••••••
১/.দাহার" অর্থ : মহাকাল বা অসীম অখণ্ড কাল।"হীন"অর্থ খণ্ডকাল বা কিছুকাল। অখণ্ড মহাকাল হইতে খণ্ড একটা কাল মানুষের উপর আরোপিত হইয়া থাকে।যে সময়ে বা যখন সে স্বরণ সংযোগের যোগ্য একটি বিষয় ও ছিলো না তখনকার সেই হীন অবস্থা হইতে রূপান্তরিত করিয়া তাহাকে ইনছানিয়াতেত পর্যায়ে উন্নীত করা হইয়াছে। পশু পর্যায়ের জীবনকে বিবর্তনের ধারা অনুযায়ী রুপান্তরিত করিয়া ইনছান রূপে সৃষ্টি করা এককভাবে আল্লাহরই কাজ।।

২/.তারপর ইনছানকে রূপান্তর সৃষ্টি করিয়া অতিমানব রূপে গড়িয়া তোলা বিষয়টি বান্দার একাগ্র প্রচেষ্টা এবং আল্লাহর সহায়তা সাপেক্ষ।এই বাক্যের মধ্যেখানে একটি সংকেতিক চিহ্ন আছে। চিহ্নটির অর্থ হইলো :আল্লাহ যখন বান্দাকে রূপান্তর সৃষ্টি করেন তখন আল্লাহ দিদার অনুসরণ করার কারণে বান্দা ক্বাফ" শক্তির অধিকারী হন। আপন"লা" এর অনুশীলন দ্বারা শেরেকের মোহ কালিমা হইতে মনের সাফায়ী অর্জিত হয়। ইহার ফলে "ক্বাফ" শক্তির অধিকারী হইয়া থাকেন। নর ও নারী উভয়ে "ক্বাফ" শক্তির অধিকারী হইলে তাহাদের সন্তান জন্মগত মাসুম অর্থাৎ জন্মগত আল্লাহর অলী হইয়া থাকেন।।

৩/.ইন্দ্রিয়গুলি দেওয়া হইয়াছে মানুষকে পরাক্ষা করার জন্য। সে এইগুলি আল্লাহর বিধানমতো ব্যবহার করিয়া ধন্যবাদযোগ্য কৃতজ্ঞ বান্দা হইবে। তথা আপন ইচ্ছামত পরিচালনা করিয়া কাফের হইবে তাহা মানুষের আপন ইচ্ছাধীন করিয়া রাখিয়াছেন। ইহাই তাহার পরিক্ষা। ইন্দ্রিয়গুলি কোন পথে কেমন করিয়া পরিচালনা করিতে হইবে তাহাও নির্ধারিত করিয়া দিয়াছেন। পথটি সিরাতুল মোস্তাকিম এবং পথ প্রদর্শক হইলেন কালেম মুর্শিদ অথবা আপন রব।।

৪/.ইন্দ্রিয়গুলি সেরাতুম মুস্তাকিমের পথে পরিচালনা না করাই কুফরি। কাফেরদের জন্য শাস্তিমূলক তিনটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করিয়া রাখা হইয়াছে। বিষয় মোহের শৃঙ্খল যাহা দ্বারা আমরা বিষয় মোহের শৃঙ্খলে অবদ্ধ হইয়া পড়ি। মোহের বন্ধন হইতে মুক্ত না হইয়া বরং ইন্দ্রিয়গুলি মোহে আবদ্ধই থাকিয়া যায় আজীবন। ইহার ফলে গলায় বেড়ি বা গলফাঁস লাগিয়া যায় অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্জিত না হইয়া বিষয়মোহের দৃঢ়ভাবে এমন আবদ্ধ হইয়া পরে যে, তাহার মধ্যে সত্য প্রবেশের দ্বার রুদ্ধ হইয়া যায়। গলায় বেড়ি লাগিয়া যায় অর্থ : গৃহপালিত পশুর মতো ধরা পড়িয়া যাওয়া। লেলিহান অগ্নি " অর্থ : বিষয়মোহের লেলিহান আগুন। ইহা অত্যন্ত লোভনীয়। অকৃতজ্ঞ মানুষ তাহার সকল বুদ্ধি অবিবেচনা প্রয়োগ করিয়া ইহা অর্জনের জন্য এই আগুনে ঝাপাইয়া পড়ে। মানবীয় বৃত্তিসমূহ পুরুষ আল্লাহ হইবার জন্যই দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু তাহা অপরিমিত বিষয় অর্জনে ব্যয় করাই অকৃতজ্ঞতা।।

৫/.পূন্যবান ব্যক্তি সৃষ্টি হইতে প্রয়োজন অনুযায়ী যাহা কিছু গ্রহণ করেন তাহা সৌন্দর্যমণ্ডিত ও সুগন্ধিময় সকল সৌন্দর্যের মূল উৎস সালাত। পূণ্যবান ব্যক্তির সকল কর্মকাণ্ড সালাতমণ্ডিত হইয়া থাকে। সালাতের এই সৌন্দর্যকে রূপক করিয়া কাফুর বলা হইয়াছে।।

৬/.৭/. আপন মুর্শিদের চেহারা মোবারকের দিকে তাকাইয়া থাকিয়া তাহা হইতে আপন চোক্ষু দ্বারা প্রেম শরাব পান করিবার রীতি অনেক তরিকার মধ্যে ব্যবস্থা হিসাবে প্রচলিত আছে। অবশ্য নিছিক বস্তুবাদী তরিকার মধ্যে ইহা থাকিবে না। তাহারা ইহাকে শেরেক বলিয়া মনে করে।।

আল্লাহর দাসগন চক্ষু দ্বারা পান করিয়া পূন্যবান হইয়া থাকেন তাহারা পান করেন আপন কামেল মুর্শেদের চেহেরার অমৃত সুধা মুর্শেদের চেহারা ধ্যান করা আল্লাহর দাসত্বের প্রধান অঙ্গ। এই আমল দ্বারা যাহারা পূন্যবান হইয়াছেন তাহারা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এক এক করিয়া। আগমন কারি প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর ইহাতে মোহ-কালিমা হইতে সকল বিষয় প্রত্যেকটি বিষয়ের উপরে। ইহাতে মোহ-কালিমা হইতে সকল বিষয় পরিশুদ্ধ হইয়া সৌন্দর্যমণ্ডিত হইয়া উঠে। বিষয়ের বিষয়বস্তু হইয়া সকলই সুন্দর -মধুময় হইয়া যায়।।

এইরূপে তাহারা দৃষ্টি দ্বারা অর্জন করেন জীবনের পরিপূর্ণতা। তাহারা ভয় করেন সেই সময়ের মন্দকে যাহা সংসার জীবনে সাধারণত ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করিতেছে। মানুষ জন্মলগ্ন হইতে সালাত কর্ম শুরু না করা পর্যন্ত সময়কে মন্দ সময় বলিয়া আখ্যায়িত করা হইয়াছে কারণ, মানুষ এই সময় সালাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকে এবং বিষয় মোহের শিরিক দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে বিধায় সে পরিপূর্ণভাবে একজন মুশরেক এবং কাফের। সালাত কর্ম আরম্ভ না করা পর্যন্ত সময়ের মন্দ স্বরূপটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করিতেই থাকে। এই কারণে সাধকগণ এই মন্দ সময়টিকে ভয় পান এইজন্য যে, পরজীবনে জ্ঞানী গুরুর সংস্পর্শে আসিবার সম্ভাবনা নাও থাকিতে পারে। কারণ, অর্জিত বিষয়মোহ এবং কুফরি ক্রমবর্ধমান হইয়া মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে গ্রাস করিয়া ফেলে।।

৮/.৯/.মিসকিন : ইন্দ্রিয় পথে আগমনকারী বিষয় রাশির মোহ যাহার মন মস্তিষ্ক হইতে ব্যয় করিয়া নিঃস্ব হইয়া গিয়াছেন তাহারাই মিসকিন। এই জাতিয় লোক হইতে সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি নিঃশেষ হইয়া গিয়াছে।
এতিমঃ বিষয় রাশির ছত্রছায়ায় যাহারা আশ্রয় গ্রহণ করে না তাহারাই এতিম।

আসির (বন্দি): ইসলামী রাষ্ট্রে কোন বন্দিকে আটকাইয়া রাখিবার বিধান নাই যদি না তাঁহাদের জন্য সালাতের প্রশিক্ষণ দিয়া কতলের ব্যবস্থা করা হয়। যদি কতলের ব্যবস্থা না থাকে তবে তাহাদিগকে ছাড়িয়া দিতে হইবে (৮ঃ৬৭) এখানে কামেল মুর্শিদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ ভক্তকে বন্দি বলিয়া গণ্য করা যাইতে পারে।।

আমানুগণ গুরুর চেহেরা লাভ অর্থাৎ গুরুর অভিব্যক্তি নিজের মধ্যে অভিব্যক্ত করিয়া তোলার জন্য এতিম মিসকিন ও বন্দিদিগকে আহার্য তথা জীবনধারণের অন্যান্য উপকরণাদি সরবারহ করেন এই বিষয়টি। জগতবাসিকে জানাইয়া দেওয়া হইতেছে যাহাতে তাহারা ইহা পালন করে চলে। এই দান জাগতিক স্বার্থের জন্য ন্যায়; শুধুই আত্মিক উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য।।

১০/.এতিম,মিসকিন ও বন্দিদের উপর সম্পদ ব্যয় করিলে গুরুর সন্তুষ্টি লাভ হয়। জনগনের মধ্যে আল্লাহর চেহারা প্রাপ্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি লাভ করুক ইহাই গুরুদের প্রধান কাম্য। অপরদিকে রবের আদেশ-নির্দেশ সঠিক ভাবে পালনে ব্যর্থ হইয়া গুরুর ভিরকুটির ভয়ে সাধক সবসময় ভীত থাকে, কারণ গুরুর ভ্রুকুটি দুর্যোগপূর্ণ।।

১১/.গুরুর ভ্রুকুটি বিষয়ে যাহারা সাবধানতা অবলম্বন করে তাহাদিগকে রব সকল অনিষ্টকারীতা হইতে রক্ষা করিয়া থাকেন এবং তাহাদিগকে মৃত্যর জগৎ হইতে উত্তরণ ঘটাইয়া সঞ্জীবতা দান করেন এবং ঐ জগৎ যে দুঃখময় নয় আনন্দময় ; উহার সহিত পরিচিত করিয় তোলেন।।

১২/.ধৈর্যের সহিত রবের আদেশ - নির্দেশ পালনকারীকে পুরুষ্কার দেওয়া হয়; তাদের পুরুষ্কারই হইলো জান্নাত ও রেশমি বস্ত্র।জান্নাত ও রেশমি বস্ত্র রূপক বর্নণা। সেখানে জান্নাত বলিতে আনন্দময়তা এবং রেশমী বস্ত্র বলিতে রবের সৌন্দর্যের আবরণ বুঝানো হইয়াছে।।

১৩/.সাধক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করিতে না পারায় তিনি গুরুর চিরন্তন আসনে নির্ভরতার হেলান দিয়ে আছেন। ইহার দ্বারায় গুরুর ছত্রছায়ায় সাধক সকল বিষয়ে পরিমিতি লাভ করে যাহা সূর্যতাপ ও শৈত্যপ্রবাহ রূপে রূপকভাবে বর্নিত হইয়াছে।।

১৪. এখানে ছায়া বলিতে গুরুর আশ্রয়ের ছায়া। বিষয়গুলি সাধকের জন্য সুসংলগ্ন ও সুবিন্যস্ত অবস্থায় থাকে যাহাকে আঙ্গুর ফলপুঞ্জরূপে বর্ণনা করা হইয়াছে তাহার সকল কর্মই একটি অপরটির সঙ্গে সুসংলগ্ন হইয়া থাকে।

১৫/.১৭. /বাক্যেগুলির মধ্যে জান্নাতের বিভিন্ন অবস্থার রূপক বর্ণনা দেওয়া হইয়াছে জান্নাতবাসী সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বারা দিয়ে যাহা কিছু গ্রহণ করে তাহা সৌন্দর্যমন্ডিত এবং স্বচ্ছ ; তাহাতে কোনো আবিলতা নাই। এই বিষয়টিই রূপক ভাবে রৌপ্যপাত্র ও স্বচ্ছ পানপাত্রে পান করা রূপে বর্ণনা করা হইয়াছে।জান্নাত বাসিরা যাহা কিছু পান করে অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় গ্রহণ করা তাহা যদি ও কালিমামুক্ত, স্বচ্ছ, ও সুন্দর তথাপি উহা দেওয়া হয় তগদির রূপে।প্রসঙ্গতঃ বলা যাইতে পারে যে, জাহান্নামে তগদির মন্দ। অপরপক্ষে জান্নাতে তগদির ভালো। যদি ও লা মোকামে উত্তরনের জন্য তগদির মাত্রই পরিত্যাজ্য।।

১৮ /.এই জান্নাতের আদিবাসীদের চোখের নাম দেওয়া হইয়াছে সালসাবীল। সালসাবীল অর্থ যে,চোখের দৃষ্টি শান্ত। স্নিগ্ধ, সুমধুর ও আনন্দদায়ক। তাহারা যাহা কিছু দেখে তাহাই আনন্দময়রূপে দেখে সাধারণ লোকের জন্য এই জগৎ দুঃখময় কিন্তু সালসাবীল নামক চোখের অধিকারী যাহারা তাহাদের জন্য আনন্দময়, কারণ তাহারা দুঃখের জগতকে জয় করিয়া ফেলিয়াছে।।

১৯/.প্রতিষ্ঠিত কিশোর বালকেরা সালসাবীল প্রাপ্তদের তোয়াফ করে সালসাবীল অর্জনের জন্য। বীর্য সংরক্ষণকারীকেই প্রতিষ্ঠিত কিশোররূপে বর্ণনা করা হইয়াছে। যাহারা বীর্য সংরক্ষণে সফল হইয়াছে তাহারা এমন নয়নাভিরাম যেন তাহারা দেখিতে বিক্ষিপ্ত মুক্তার মত।।

২০/.তাহারা আল্লাহর এক' একটি নেয়ামত এবং তাহারা আপন দেহরাজ্যের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করিয়া এক একটি সাম্রাজ্যের রাজা হইয়া গিয়াছেন। এখানে মানবদেহকে সাম্রাজ্য বলা হইয়াছে।।

২১/.এখানে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে রেশমী বস্তুু ও রূপার অলংকার বলা হইয়াছে। তাহাদের রব তাঁহাদিগকে সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার পথে যাহা কিছু পান করান তাহাই কলুষমূক্ত ও মধুর্যমুন্ডিত। ইহাকে পবিত্র শরাবের রূপকে প্রকাশ করা হইয়াছে। শরাবুন তহুরা: সকল বিষয়ের বিষ যখন সালাতের মাধ্যমে বিষমুক্ত হইয়া অমৃতে পরিনত হয় তখন তাহাকে শারাবুন তহুরা বলে।।

২২/.সালাত কর্মের প্রয়োগ দ্বারা সাধকের ইন্দ্রিয়ের প্রতিটি দ্বারপথে আগমনকারী বিষয়রাশি পবিত্র হইয়া যায় --ইহাই চিরস্থায়ী প্রতিদান অর্থাৎ চিরস্থায়ী অর্জন ;তখনই কেবল রব হইতে ধন্যবাদ প্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জিত হয়।।

২৩/.কোন ঘটনাই কোরান নয়;যখন কোন ঘটনার উপর সালাত প্রয়োগ করা হয় তখন ইহার বিবরণ কোরান হইয়া যায় (তুলনীয়১২ঃ৩) কোন একটা ভাবের উদয় হইলে উহার স্থিরীকৃত সিদ্ধান্তের পর অন্য আর একটি ভাব উদয় হয়; তেমনিভাবে আলকোরানও একটি বিষয় বা ভাব যাহা সমাধানের পর অন্য আর একটি বিষয় বা ভাবের উদয় হয়। ইহাকেই এক এক করিয়া কোরান নাজেল হওয়ার কথা বলা হইয়াছে।।

২৪/.বিশ্বের কোথায়ও আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠিত নাই। মোমিনের সংখ্যা বৃদ্ধি না হইলে রাষ্ট্রিয়ভাবে- আল্লাহ ও রসুলের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না বা হইত৷ পারে না। মোমিনের সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ ও ধৈর্যধারণের বিষয়। মোমিন তৈরীর বিষয়টি একটি কঠিন বিষয়। সুতরাং যতোদিন পর্যন্ত মোমিনের সংখ্যা বৃদ্ধি না হইবে ততদিন ধৈর্যধারণ করিতে বলা হইয়াছে। বিশ্বের সর্বত্রই কাফেরদের কুফরি শাসন প্রতিষ্ঠিত; এমতাবস্থায় কুফরি শাসনের কোন অংশই আল্লাহ পন্থি লোকেদের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণিয় নয়, কারণ কাফের শাসনের কোন কিছুর উপরই সালাতের প্রয়োগ নাই।।

২৫/.বিষয়ের আসল ভিত্তির উপর থাকিয়া যৌবন প্রাপ্তির পূর্ব হইতে রবের গুনাবলীর স্বরণ সংযোগের প্রচেষ্টা গ্রহণ করিতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। যৌনতা মানবদেহের ক্ষয় বৃদ্ধি করে। ক্ষয় বৃদ্ধির পূর্ব হইতে আরম্ভ করিয়া শুধু মাত্র অনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আবদ্ধ না থাকিয়া মূল বিষয় অবলম্বনে রবের স্বরণ সংযোগের দ্বারা দ্রুত শুদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।।

২৬/.বিষয় মোহের অন্ধকারকে রাত্রীর রূপকে বর্ণনা করা হইয়াছে। এই মোহের অন্ধকার হইতে মুক্তি লাভের জন্য গুরুর প্রতি সেজদাবনত অর্থাৎ পূর্ণ আনুগত্য থাকার জন্য আদেশ দেওয়া হইয়াছে। গুরুর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের পরিপূর্ণতা আনয়নের জন্য একইরূপে রাত্রীর দীর্ঘ সময় মোহের উপর ভাসমান থাকার জন্য বলা হইয়াছে। এই নির্দেশ পালন করিলে মুক্তি অর্জন ত্বরান্বিত হইবে।।

২৭/.এই ইহারা ভালোবেসে আজল "অর্থাৎ সর্বযুগের সাধারণ জনগণ আজীবন ভালোবাসে আজল।অর্থাৎ নির্দিষ্ট জীবনকাল। মুক্তি লাভের প্রচেষ্টা গ্রহণ না করিয়া পুনঃ পুনঃ জন্মচক্রে আবদ্ধ হইতে ভালোবাসে। "ভরপুর সময় " অর্থাৎ মানব মনের শেরেকপূর্ণ কাল। যতকাল মানুষ সালাত অনুশীলন না করে ততকাল তার মস্তিষ্ক শেরেক দ্বারা ভরপুর হইয়াই থাকে। এই সময়ের অবস্থাকে সামনে রাখিয়া অর্থাৎ পিছনে ফেলিয়া না রাখিয়া ইহা হইতে মুক্তি লাভের প্রচেষ্টা গ্রহণ করিতে হয়। অন্যথায় শেরেকের বন্ধন হইতে মুক্তি লাভের উপায় নাই। শেরেকের প্রতি মোহগ্রস্ত মানুষ তাহার এই দুরবস্থা বিষয়ে সজাগ না থাকিয়া বরং বিষয়টিকে বিস্মৃতির মধ্যে চিরকাল পিছনে ফেলিয়া রাখিতে ভালোবাসে।
"ইয়াওমান শাকীলা" অর্থ ভারীকাল গুরুত্বপূর্ণকাল।।

২৮/.রূপান্তর সৃষ্টির মাধ্যমে রব মানুষকে প্রখর বুদ্ধি-বিবেচনার অধিকারী করিয়া দেন। ফলতঃ মানুষ আপন ভিত্তির গুণগুলী দ্বারা সৃষ্টির কঠিন মোহবন্ধনে আবদ্ধ হইয়া থাকে। যখন তাহাকে মৃত্যু দেওয়া হয় তখন মানুষ যেই মন মানসিকতা ও মোহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকে ঠিক সেই স্তরের মানসিকতা ও মোহবন্ধন সহকারে তাহাকে পরবর্তী স্বরূপে পরিবর্তন করিয়া দেওয়া হয়। আল্লাহ কোনও কিছুই পরিবর্তন করেন না বান্দার ইচ্ছা ব্যতিরেকের অর্থাৎ বান্দা যাহা অর্জন করে এবং অর্জন করতে সচেষ্ট থাকে সেই তাহাতেই তাহার স্বরূপ একইরূপ পরিবর্তনে পরিবর্তন করিয়া দেওয়া হয়।।

২৯/.মোহবন্ধনের এই কঠিক অবস্থা হইতে মুক্তি লাভের জন্য প্রয়োজন দায়েমী সালাত অর্থাৎ অবিরামভাবে গুরুর স্বরণ সংযোগে থাকা। সুতরাং মুক্তিকামী মানুষের জন্য রবের নির্দেশিত পথ গ্রহণের অবিরাম ইচ্ছে অবশ্যই থাকিতে হবে।।

৩০/.কিন্তু মানুষ সালাত পালনের অবিরাম চেষ্টা করে না,যদি তদসংগে আপন রবের ইচ্ছা কার্যকরী না হয়। বান্দা আল্লাহকে স্বরণ না করিলে আল্লাহ তার দিকে তাকান্ না। বান্দা যদি অবিরাম স্বরণ-সংযোগ না করে আল্লাহ ও তাহার সহিত অবিরাম সংযোগ রাখেন না। অথচ মুক্তির জন্য রবের অবিরাম সংযোগ অপরিহার্য। এইজন্যই এখানে" তোমরা অবিরাম ইচ্ছে কর না, আল্লাহ অবিরামভাবে ইচ্ছে না করিলে " এই কথা বলা হইয়াছে। গুরু শিষ্যের অবিরাম স্বরণ সংযোগের ইচ্ছায় সমন্বয় ঘটিলে শিষ্য কাফশক্তির অধিকারী হয়। এই কথাটি সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা বুঝানো হইয়াছে। সাংকেতিক চিহ্নটি হইলো : ছোয়াদ-লাম-ইয়া এবং এর নিচে ক্বাফ। " ক্বাফ " শক্তি দান করার বিষয়ে আল্লাহ বিজ্ঞানময় বিচারক এই ব্যাপারে কাহারও প্রতি ক্বাফ শক্তি দানে অবিচার করা হয় না।।

৩১/.এখানে অসালাতি ব্যক্তিদিগকে জালেম বলা হইয়াছে। কারণ তাহারা আপন নফসের উপর জুলুম করে। মুক্তি লাভের ইচ্ছা রাখে না। তাহাদের জন্য রহিয়াছে কঠিক একটা আজাব। এই আজাব জন্ম জন্মান্তরের শিরিকের কঠিন বন্ধন ছাড়া অন্য কিছু নয়।।

--মওলা সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী (রহ:) 🌹

ইসলামি খেলাফত: রাজনৈতিক দর্শন, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা(একটি একাডেমিক প্রবন্ধ): অর্পন রহমানভূমিকাইসলামের ...
11/09/2025

ইসলামি খেলাফত: রাজনৈতিক দর্শন, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা

(একটি একাডেমিক প্রবন্ধ)

: অর্পন রহমান

ভূমিকা

ইসলামের ইতিহাসে খেলাফত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নবী করিম ﷺ-এর ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মাহ রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য যে কাঠামো গড়ে তোলে, তা হলো খিলাফত। এর উদ্দেশ্য ছিল একদিকে সমাজে কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ন্যায়শাসন প্রতিষ্ঠা করা, অন্যদিকে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সংরক্ষণ।
তবে খেলাফত ধারণাকে ঘিরে বহু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। কেউ এটিকে ঈমানের অপরিহার্য শর্ত মনে করে, আবার কেউ এটিকে কেবল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া মনে করে। এ প্রবন্ধে খেলাফতের রাজনৈতিক দর্শন, এর ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, আধুনিক মুসলিম সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতা এবং ঈমানের সাথে এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হবে।

খেলাফতের রাজনৈতিক দর্শন

খেলাফতের সংজ্ঞা

খিলাফত (الخلافة) অর্থ: প্রতিনিধিত্ব, উত্তরাধিকার, শাসনভার গ্রহণ। ইসলামী পরিভাষায়—
👉 এমন এক নেতৃত্বব্যবস্থা, যেখানে একজন খলিফা আল্লাহর কিতাব ও রাসুল ﷺ-এর সুন্নাহ অনুসারে মুসলিম সমাজকে পরিচালনা করেন।

কোরআন ও সুন্নাহতে ভিত্তি

কোরআন:

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা বানাবেন।”
(সুরা আন-নূর: ৫৫)

হাদিস:
রাসুল ﷺ বলেছেন:

“আমার পরে খিলাফত হবে খেলাফতে রাশেদাহ (সঠিক পথনির্দেশিত খিলাফত), যা আল্লাহ চান ততদিন থাকবে।”
(আবু দাউদ: ৪৬৪৬)

➡ অর্থাৎ খিলাফতের উদ্দেশ্য হলো ন্যায়, ঐক্য ও শরিয়াহ-ভিত্তিক শাসন।

ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা: খুলাফায়ে রাশেদীন

নবীজির ﷺ পরবর্তী চার খলিফা—আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী (রাঃ)—ইসলামের ইতিহাসে “খুলাফায়ে রাশেদীন” নামে পরিচিত।

আবু বকর (রাঃ): উম্মাহর ঐক্য রক্ষা, মুরতাদ ও বিদ্রোহীদের দমন।

উমর (রাঃ): ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক সংস্কার, বিশ্বে ইসলামের প্রসার।

উসমান (রাঃ): কোরআনের লিখিত সংকলন, তবে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে শহীদ হন।

আলী (রাঃ): ফিতনা-ফ্যাসাদ দমন, খারেজিদের উগ্রবাদ মোকাবিলা।

➡ কিন্তু দেখা যায়—চার খলিফার মধ্যে তিনজনকেই হত্যা করা হয়েছে। এর কারণ:
১. রাজনৈতিক বিভক্তি,
২. গোত্রীয় স্বার্থ,
৩. উগ্রপন্থা (যেমন খারেজি),
৪. দ্রুত বিস্তৃত ইসলামী সাম্রাজ্যের চাপে প্রশাসনিক অস্থিরতা।

খেলাফতের আসল উদ্দেশ্য:

১. ঐক্য: মুসলিম উম্মাহকে বিভাজন থেকে বাঁচানো।
২. ন্যায়বিচার: ধনী-গরিব, আরব-অনারব সবার অধিকার রক্ষা।
৩. শরিয়াহ শাসন: কোরআন-সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে আইন প্রণয়ন।
৪. সামাজিক কল্যাণ: দরিদ্র, এতিম, অসহায়দের সহায়তা।
৫. দাওয়াত: মানবজাতির কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

👉 অর্থাৎ খেলাফত কোনো ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং এটি একটি আদর্শ শাসনব্যবস্থা।

আধুনিক মুসলিম সমাজে খেলাফতের প্রাসঙ্গিকতা

১. ঐক্যের প্রতীক

আজ মুসলিম বিশ্ব প্রায় ৫০টিরও বেশি রাষ্ট্রে বিভক্ত। রাজনৈতিক স্বার্থ, ভৌগোলিক সীমানা ও জাতীয়তাবাদ মুসলিমদের ঐক্যকে দুর্বল করেছে। খেলাফত ধারণা এখানে মুসলিম ঐক্যের প্রতীক হতে পারে।

২. ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা

আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। খেলাফতের মূলনীতি—শূরা (পরামর্শ), জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার—আজও সমান প্রাসঙ্গিক।

৩. ভুল বোঝাবুঝি

অনেক সংগঠন “খেলাফত” নাম ব্যবহার করে সহিংসতা চালায়। অথচ খেলাফতের আসল উদ্দেশ্য রক্তপাত নয়, বরং ন্যায় ও শান্তি। রাসুল ﷺ-এর সুন্নাহ অনুসারে খেলাফত হলো মানবকল্যাণের রাজনৈতিক কাঠামো, ক্ষমতার জন্য যুদ্ধ নয়।

খেলাফত ও ঈমান :

ঈমানের মূল শর্ত

আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য মানা।

মুহাম্মাদ ﷺ-কে শেষ নবী হিসেবে মানা।

ফরজ পালন ও হারাম থেকে বিরত থাকা।

খেলাফত প্রতিষ্ঠা না করলে কি ঈমান থাকবে?

হ্যাঁ, থাকবে।
কারণ ঈমান ব্যক্তি ও আল্লাহর সম্পর্ক।
খেলাফত হলো সমাজের রাজনৈতিক কাঠামো।

➡ যেমন মক্কায় ১৩ বছর মুসলিমরা খেলাফতবিহীন অবস্থায় ছিল, কিন্তু তারা পূর্ণ ঈমানদার ছিল।

ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেন:

“খেলাফত না থাকলেও ব্যক্তি ঈমান অটুট থাকে, তবে মুসলিম সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।”
(ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন)

ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন:

“খেলাফতের উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ায় শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করা। তবে খেলাফতের অনুপস্থিতি কারো ঈমান নষ্ট করে না।”

➡️খেলাফতের শক্তি ও দুর্বলতা :

ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

খেলাফতের সবলতা/ শক্তি :

১. ঐক্যের প্রতীক
খেলাফতের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো মুসলিম উম্মাহকে একটি ছাতার নিচে আনা। জাতি, ভাষা বা ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে খেলাফত মুসলিম সমাজকে এক রাজনৈতিক সত্তা দিয়েছে।

২. আদর্শ শাসনব্যবস্থা
খেলাফতের ভিত্তি ছিল কোরআন-সুন্নাহ। ন্যায়, সমতা, শূরা (পরামর্শ), জবাবদিহিতা—এসব নীতি শাসনের উৎকৃষ্ট রূপ তৈরি করেছিল। উমর (রাঃ)-এর আমলে যেমন নাগরিক অধিকার রক্ষায় নজির স্থাপিত হয়।

৩. সামাজিক কল্যাণ
বায়তুল মালের মাধ্যমে দরিদ্র, এতিম, বিধবা ও মুসাফিরদের সহায়তা করা হতো। খেলাফত কেবল ক্ষমতার প্রতীক ছিল না, বরং ছিল কল্যাণরাষ্ট্রের রূপকার।

৪. প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণ
খেলাফত মুসলিম সমাজকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছে। উমর (রাঃ)-এর সময় পারস্য ও রোম সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে, এবং ইসলামী সভ্যতার দ্বার উন্মোচিত হয়।

৫. জ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশ
খেলাফতের অধীনে ইসলামি সভ্যতা—বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসা, সাহিত্য, স্থাপত্য—বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে। আব্বাসীয় খেলাফত বিশেষভাবে জ্ঞানের স্বর্ণযুগের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।

➡️ খেলাফতের দুর্বলতা

১. মানবীয় দুর্বলতা ও ক্ষমতার লড়াই
খেলাফতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল মানুষের লোভ ও প্রতিযোগিতা। উসমান (রাঃ)-এর সময়ে স্বজনপ্রীতি ও প্রশাসনিক সংকট বিদ্রোহ সৃষ্টি করে। আলী (রাঃ)-এর সময়ে খারেজি ও সিরীয় বিভক্তি ফিতনা বাড়ায়।

২. বৃহৎ সাম্রাজ্য পরিচালনার জটিলতা
দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি ও স্বার্থকে এক কাঠামোয় ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রশাসনিক চাপ দুর্নীতি ও দুর্বলতার জন্ম দেয়।

৩. আঞ্চলিক স্বার্থ বনাম কেন্দ্রীয় শাসন
প্রদেশগুলোর গভর্নররা প্রায়শই স্বাধীন হতে চাইত। মিশর, কুফা, শাম—প্রতিটি জায়গায় কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা যায়।

৪. উগ্রপন্থা ও ধর্মীয় বিভক্তি
খারেজিদের মতো গোষ্ঠী “শুধু তাদের মতামতই ইসলাম” মনে করে রক্তপাত ঘটায়। পরবর্তী সময়ে শিয়া-সুন্নি বিভক্তি খেলাফতের ভেতরে স্থায়ী দ্বন্দ্ব তৈরি করে।

৫. উত্তরাধিকার সংকট
নবী ﷺ-এর পরে স্পষ্ট উত্তরাধিকার নির্দেশনা না থাকায় খেলাফত সবসময় রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে। কে খলিফা হবে—এই প্রশ্ন মুসলিম ইতিহাসে বহু রক্তক্ষয়ের কারণ।

৬. বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ
আব্বাসীয় খেলাফতের শেষদিকে তুর্কি সামরিক বাহিনী, পরে মঙ্গোল আক্রমণ, আবার উসমানীয় খেলাফতের শেষদিকে ইউরোপীয় শক্তি খেলাফতকে দুর্বল করে ফেলে।

➡️ সারসংক্ষেপ

সবলতা: ঐক্য, ন্যায়ভিত্তিক শাসন, সামাজিক কল্যাণ, প্রতিরক্ষা ও সভ্যতার উত্থান।

দুর্বলতা: ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, প্রশাসনিক সংকট, বিভক্তি, উগ্রপন্থা, উত্তরাধিকার সমস্যা ও বিদেশি প্রভাব।

অর্থাৎ, খেলাফতের শক্তি নিহিত ছিল এর আদর্শ ও মূল্যবোধে, আর দুর্বলতা নিহিত ছিল মানবীয় লোভ, ভেতরের বিভক্তি ও বাহ্যিক চাপের মাঝে।

➡️ উপসংহার

খেলাফত হলো ইসলামি রাজনৈতিক কাঠামো, যার উদ্দেশ্য আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ন্যায় ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ ছিল খেলাফতের সোনালী উদাহরণ, তবে মানবীয় দুর্বলতা ও বিভাজনের কারণে খলিফারা শহীদ হয়েছেন।

আধুনিক মুসলিম সমাজে খেলাফতের মূল্যবোধ—ন্যায়বিচার, শূরা, ঐক্য—অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

খেলাফত প্রতিষ্ঠা না হলে মুসলিম সমাজ দুর্বল হবে, কিন্তু ব্যক্তির ঈমান নষ্ট হবে না।

সুতরাং, খেলাফতকে ক্ষমতার লড়াই বা দমননীতির নামে ব্যবহার করা ভুল; আসল খেলাফত মানে হলো—কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক মানবকল্যাণকর শাসনব্যবস্থা।

গ্রন্থতালিকা

১. আল-কোরআন: সুরা আন-নূর: ৫৫; সুরা আলে ইমরান: ১৯, ১০৩।
২. হাদিস: আবু দাউদ (৪৬৪৬), তিরমিজি (২৬৪১), মুসনাদ আহমদ।
৩. ইমাম গাজ্জালী, ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন।
৪. ইবনে তাইমিয়া, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা।
৫. শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা।
৬. আল-তাবারী, তারিখ আল-রসুল ওয়াল-মুলূক।



#মুহাম্মদ_সাইদুর_রহমান_অর্পন
#অর্পন_রহমান_কলাম #অর্পন_রহমান_নিবন্ধ
#অর্পন_রহমান_প্রবন্ধ

#অর্পন_রহমান

11/09/2025

ইসলামি খেলাফত: রাজনৈতিক দর্শন, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা

(একটি একাডেমিক প্রবন্ধ)

: অর্পন রহমান

ভূমিকা

ইসলামের ইতিহাসে খেলাফত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নবী করিম ﷺ-এর ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মাহ রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য যে কাঠামো গড়ে তোলে, তা হলো খিলাফত। এর উদ্দেশ্য ছিল একদিকে সমাজে কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ন্যায়শাসন প্রতিষ্ঠা করা, অন্যদিকে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সংরক্ষণ।
তবে খেলাফত ধারণাকে ঘিরে বহু ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। কেউ এটিকে ঈমানের অপরিহার্য শর্ত মনে করে, আবার কেউ এটিকে কেবল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া মনে করে। এ প্রবন্ধে খেলাফতের রাজনৈতিক দর্শন, এর ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, আধুনিক মুসলিম সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতা এবং ঈমানের সাথে এর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হবে।

খেলাফতের রাজনৈতিক দর্শন

খেলাফতের সংজ্ঞা

খিলাফত (الخلافة) অর্থ: প্রতিনিধিত্ব, উত্তরাধিকার, শাসনভার গ্রহণ। ইসলামী পরিভাষায়—
👉 এমন এক নেতৃত্বব্যবস্থা, যেখানে একজন খলিফা আল্লাহর কিতাব ও রাসুল ﷺ-এর সুন্নাহ অনুসারে মুসলিম সমাজকে পরিচালনা করেন।

কোরআন ও সুন্নাহতে ভিত্তি

কোরআন:

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা বানাবেন।”
(সুরা আন-নূর: ৫৫)

হাদিস:
রাসুল ﷺ বলেছেন:

“আমার পরে খিলাফত হবে খেলাফতে রাশেদাহ (সঠিক পথনির্দেশিত খিলাফত), যা আল্লাহ চান ততদিন থাকবে।”
(আবু দাউদ: ৪৬৪৬)

➡ অর্থাৎ খিলাফতের উদ্দেশ্য হলো ন্যায়, ঐক্য ও শরিয়াহ-ভিত্তিক শাসন।

ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা: খুলাফায়ে রাশেদীন

নবীজির ﷺ পরবর্তী চার খলিফা—আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী (রাঃ)—ইসলামের ইতিহাসে “খুলাফায়ে রাশেদীন” নামে পরিচিত।

আবু বকর (রাঃ): উম্মাহর ঐক্য রক্ষা, মুরতাদ ও বিদ্রোহীদের দমন।

উমর (রাঃ): ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক সংস্কার, বিশ্বে ইসলামের প্রসার।

উসমান (রাঃ): কোরআনের লিখিত সংকলন, তবে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে শহীদ হন।

আলী (রাঃ): ফিতনা-ফ্যাসাদ দমন, খারেজিদের উগ্রবাদ মোকাবিলা।

➡ কিন্তু দেখা যায়—চার খলিফার মধ্যে তিনজনকেই হত্যা করা হয়েছে। এর কারণ:
১. রাজনৈতিক বিভক্তি,
২. গোত্রীয় স্বার্থ,
৩. উগ্রপন্থা (যেমন খারেজি),
৪. দ্রুত বিস্তৃত ইসলামী সাম্রাজ্যের চাপে প্রশাসনিক অস্থিরতা।

খেলাফতের আসল উদ্দেশ্য:

১. ঐক্য: মুসলিম উম্মাহকে বিভাজন থেকে বাঁচানো।
২. ন্যায়বিচার: ধনী-গরিব, আরব-অনারব সবার অধিকার রক্ষা।
৩. শরিয়াহ শাসন: কোরআন-সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে আইন প্রণয়ন।
৪. সামাজিক কল্যাণ: দরিদ্র, এতিম, অসহায়দের সহায়তা।
৫. দাওয়াত: মানবজাতির কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

👉 অর্থাৎ খেলাফত কোনো ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং এটি একটি আদর্শ শাসনব্যবস্থা।

আধুনিক মুসলিম সমাজে খেলাফতের প্রাসঙ্গিকতা

১. ঐক্যের প্রতীক

আজ মুসলিম বিশ্ব প্রায় ৫০টিরও বেশি রাষ্ট্রে বিভক্ত। রাজনৈতিক স্বার্থ, ভৌগোলিক সীমানা ও জাতীয়তাবাদ মুসলিমদের ঐক্যকে দুর্বল করেছে। খেলাফত ধারণা এখানে মুসলিম ঐক্যের প্রতীক হতে পারে।

২. ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা

আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। খেলাফতের মূলনীতি—শূরা (পরামর্শ), জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার—আজও সমান প্রাসঙ্গিক।

৩. ভুল বোঝাবুঝি

অনেক সংগঠন “খেলাফত” নাম ব্যবহার করে সহিংসতা চালায়। অথচ খেলাফতের আসল উদ্দেশ্য রক্তপাত নয়, বরং ন্যায় ও শান্তি। রাসুল ﷺ-এর সুন্নাহ অনুসারে খেলাফত হলো মানবকল্যাণের রাজনৈতিক কাঠামো, ক্ষমতার জন্য যুদ্ধ নয়।

খেলাফত ও ঈমান :

ঈমানের মূল শর্ত

আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য মানা।

মুহাম্মাদ ﷺ-কে শেষ নবী হিসেবে মানা।

ফরজ পালন ও হারাম থেকে বিরত থাকা।

খেলাফত প্রতিষ্ঠা না করলে কি ঈমান থাকবে?

হ্যাঁ, থাকবে।
কারণ ঈমান ব্যক্তি ও আল্লাহর সম্পর্ক।
খেলাফত হলো সমাজের রাজনৈতিক কাঠামো।

➡ যেমন মক্কায় ১৩ বছর মুসলিমরা খেলাফতবিহীন অবস্থায় ছিল, কিন্তু তারা পূর্ণ ঈমানদার ছিল।

ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেন:

“খেলাফত না থাকলেও ব্যক্তি ঈমান অটুট থাকে, তবে মুসলিম সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।”
(ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন)

ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন:

“খেলাফতের উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ায় শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করা। তবে খেলাফতের অনুপস্থিতি কারো ঈমান নষ্ট করে না।”

➡️খেলাফতের শক্তি ও দুর্বলতা :

ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

খেলাফতের সবলতা/ শক্তি :

১. ঐক্যের প্রতীক
খেলাফতের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো মুসলিম উম্মাহকে একটি ছাতার নিচে আনা। জাতি, ভাষা বা ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে খেলাফত মুসলিম সমাজকে এক রাজনৈতিক সত্তা দিয়েছে।

২. আদর্শ শাসনব্যবস্থা
খেলাফতের ভিত্তি ছিল কোরআন-সুন্নাহ। ন্যায়, সমতা, শূরা (পরামর্শ), জবাবদিহিতা—এসব নীতি শাসনের উৎকৃষ্ট রূপ তৈরি করেছিল। উমর (রাঃ)-এর আমলে যেমন নাগরিক অধিকার রক্ষায় নজির স্থাপিত হয়।

৩. সামাজিক কল্যাণ
বায়তুল মালের মাধ্যমে দরিদ্র, এতিম, বিধবা ও মুসাফিরদের সহায়তা করা হতো। খেলাফত কেবল ক্ষমতার প্রতীক ছিল না, বরং ছিল কল্যাণরাষ্ট্রের রূপকার।

৪. প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণ
খেলাফত মুসলিম সমাজকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছে। উমর (রাঃ)-এর সময় পারস্য ও রোম সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে, এবং ইসলামী সভ্যতার দ্বার উন্মোচিত হয়।

৫. জ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশ
খেলাফতের অধীনে ইসলামি সভ্যতা—বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসা, সাহিত্য, স্থাপত্য—বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে। আব্বাসীয় খেলাফত বিশেষভাবে জ্ঞানের স্বর্ণযুগের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।

➡️ খেলাফতের দুর্বলতা

১. মানবীয় দুর্বলতা ও ক্ষমতার লড়াই
খেলাফতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল মানুষের লোভ ও প্রতিযোগিতা। উসমান (রাঃ)-এর সময়ে স্বজনপ্রীতি ও প্রশাসনিক সংকট বিদ্রোহ সৃষ্টি করে। আলী (রাঃ)-এর সময়ে খারেজি ও সিরীয় বিভক্তি ফিতনা বাড়ায়।

২. বৃহৎ সাম্রাজ্য পরিচালনার জটিলতা
দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি ও স্বার্থকে এক কাঠামোয় ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রশাসনিক চাপ দুর্নীতি ও দুর্বলতার জন্ম দেয়।

৩. আঞ্চলিক স্বার্থ বনাম কেন্দ্রীয় শাসন
প্রদেশগুলোর গভর্নররা প্রায়শই স্বাধীন হতে চাইত। মিশর, কুফা, শাম—প্রতিটি জায়গায় কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা যায়।

৪. উগ্রপন্থা ও ধর্মীয় বিভক্তি
খারেজিদের মতো গোষ্ঠী “শুধু তাদের মতামতই ইসলাম” মনে করে রক্তপাত ঘটায়। পরবর্তী সময়ে শিয়া-সুন্নি বিভক্তি খেলাফতের ভেতরে স্থায়ী দ্বন্দ্ব তৈরি করে।

৫. উত্তরাধিকার সংকট
নবী ﷺ-এর পরে স্পষ্ট উত্তরাধিকার নির্দেশনা না থাকায় খেলাফত সবসময় রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে। কে খলিফা হবে—এই প্রশ্ন মুসলিম ইতিহাসে বহু রক্তক্ষয়ের কারণ।

৬. বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ
আব্বাসীয় খেলাফতের শেষদিকে তুর্কি সামরিক বাহিনী, পরে মঙ্গোল আক্রমণ, আবার উসমানীয় খেলাফতের শেষদিকে ইউরোপীয় শক্তি খেলাফতকে দুর্বল করে ফেলে।

➡️ সারসংক্ষেপ

সবলতা: ঐক্য, ন্যায়ভিত্তিক শাসন, সামাজিক কল্যাণ, প্রতিরক্ষা ও সভ্যতার উত্থান।

দুর্বলতা: ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, প্রশাসনিক সংকট, বিভক্তি, উগ্রপন্থা, উত্তরাধিকার সমস্যা ও বিদেশি প্রভাব।

অর্থাৎ, খেলাফতের শক্তি নিহিত ছিল এর আদর্শ ও মূল্যবোধে, আর দুর্বলতা নিহিত ছিল মানবীয় লোভ, ভেতরের বিভক্তি ও বাহ্যিক চাপের মাঝে।

➡️ উপসংহার

খেলাফত হলো ইসলামি রাজনৈতিক কাঠামো, যার উদ্দেশ্য আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ন্যায় ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ ছিল খেলাফতের সোনালী উদাহরণ, তবে মানবীয় দুর্বলতা ও বিভাজনের কারণে খলিফারা শহীদ হয়েছেন।

আধুনিক মুসলিম সমাজে খেলাফতের মূল্যবোধ—ন্যায়বিচার, শূরা, ঐক্য—অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

খেলাফত প্রতিষ্ঠা না হলে মুসলিম সমাজ দুর্বল হবে, কিন্তু ব্যক্তির ঈমান নষ্ট হবে না।

সুতরাং, খেলাফতকে ক্ষমতার লড়াই বা দমননীতির নামে ব্যবহার করা ভুল; আসল খেলাফত মানে হলো—কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক মানবকল্যাণকর শাসনব্যবস্থা।

গ্রন্থতালিকা

১. আল-কোরআন: সুরা আন-নূর: ৫৫; সুরা আলে ইমরান: ১৯, ১০৩।
২. হাদিস: আবু দাউদ (৪৬৪৬), তিরমিজি (২৬৪১), মুসনাদ আহমদ।
৩. ইমাম গাজ্জালী, ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন।
৪. ইবনে তাইমিয়া, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা।
৫. শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা।
৬. আল-তাবারী, তারিখ আল-রসুল ওয়াল-মুলূক।


#মুহাম্মদ_সাইদুর_রহমান_অর্পন
#অর্পন_রহমান_কলাম #অর্পন_রহমান_নিবন্ধ
#অর্পন_রহমান_প্রবন্ধ

#অর্পন_রহমান

Address

Khansaheb RoadJomadder Bhari, Bhandaria, PirojpurBarishal
Dhaka
8550

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Razonna Mystiverse posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share