sangskriti.com - সংস্কৃতি ডটকম

sangskriti.com - সংস্কৃতি ডটকম শিল্প-সংস্কৃতির ঘরবসতি
http://sangskriti.com/

www.sangskriti.com is an Online magazine of reportage, commentary, criticism, essays, reviews on culture with fiction, satire, cartoons and poetry.

আমার ছেলের গার্লফ্রেন্ড এসেছে আমাদের সাথে দেখা করতে৷ একসময় লোকে পাত্রী দেখতে মেয়ের বাড়ি যেত এখন পাত্রী নিজেই চলে এসেছে হ...
02/09/2025

আমার ছেলের গার্লফ্রেন্ড এসেছে আমাদের সাথে দেখা করতে৷ একসময় লোকে পাত্রী দেখতে মেয়ের বাড়ি যেত এখন পাত্রী নিজেই চলে এসেছে হবু শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করতে। যুগ পাল্টেছে। যদিও যুগের সাথে তাল মেলাতে আমার আপত্তি নাই কিন্তু আমার বেগম মিসেস রেবেকা একদমই মেয়েটাকে পছন্দ করতে পারছে না। মেয়েটা আসবে শুনেই সকাল থেকেই রেগে আগুন হয়ে আছে।একশ একবার বলেছে,

-বিয়ের আগেই ঢ্যাঙঢ্যাঙ করে ছেলের হাত ধরে চলে আমবে।বেহায়া মেয়ে!আজকালকার মেয়েগুলা হচ্ছে নির্লজ্জ টাইপের। ভালো ছেলে দেখলেই গলায় ঝুলে পড়ার মতলব আঁটে।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আমি বললাম,
-ইসলামে কিন্তু মেয়েদের নিজ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সুন্নাত। উম্মুল মুমেনীন খাদিজা(রাঃ) আমাদের প্রিয়নবী মুহম্মদ(সঃ) এর চাচার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন।উনাকে তুমি কি বলবা বেহায়া?

যুক্তিতে না পেরে রেবু কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলের মত টগবগ করতে লাগল।গুণধর পুত্র বাড়ি নাই বিধায় সমস্ত দোষ গিয়ে পরল আমার ঘাড়ে। এই যেমন ছেলেকে আমি কোনোদিন শাসন করি নাই,শাস
করলে আজকের দিনটা দেখতে হত না।

ছেলের বয়স ছাব্বিশ৷সদ্যই ব্যাংকে চাকরি হয়েছে।পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়া একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য কখনই অপরাধ নয় এই সাধারণ সত্যটা রেবু বুঝতে চাইছিল না। বাঙালি মায়েদের এই এক সমস্যা। মাতৃস্নেহ কখন যে সন্তানের প্রাইভেসি অতিক্রম করে বেডরুমে ঢুকে পড়ে তা তারা নিজেরাই বুঝে না। যাই হোক,মেয়েটা আসবে সন্ধ্যায়। সকাল থেকেই গিন্নির মুখের পাশাপাশি হাত চলছে। এইযুগের বাচ্চারা পিঠাপুলি পছন্দ করে না।বেকারি আইটেম কিনে আনা হল। সাথে ঘরে বানানো বেকড পাস্তা,নুডৃুলস,চিকেস ফ্রাই আরো কত কী!

মেয়েটি শৈশবের সাথে হাজির হল ঠিক সন্ধ্যা সাতটায়।নাম মেঘা।বড় বড় চোখ,কোঁকড়া চুলের মিষ্টি চেহারার মেয়ে।নীল চুড়িদারের সাথে ম্যাচিং ছোট্ট নীল টিপ। মেয়েদের খুঁটিয়ে দেখার বয়স পাড় হয়ে গেছে বহু বছর আগে। কিন্তু এই মেয়েটি আমার পুত্রবধূ হবে বিধায় ওকে নিজ সন্তানের মতই আপন করে দেখছিলাম।মেঘা হোস্টেলে থাকে।ওর বাবার সরকারি চাকরির সু্বাদে শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে ওর পরিবার ঝিনাইদহ আছে আর ও ঢাকা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। এবছর এমবিএ দিবে। বয়সে শৈশবের বছর তিনেকের ছোট হবে।

দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিয়ে করবে সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের আপত্তি চলে না। মেয়েটিকে আমার ভালোই লাগল,অল্পবয়সী হাসিখুশি মেয়ে। কিন্তু আমার স্ত্রী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওকে প্রশ্ন করতে লাগলেন,
সম্পর্ক কতদিনের,কিভাবে পরিচয় ইত্যাদি!
খাওয়ার টেবিলে মেঘা চাউমিন শৈশবেে প্লেটে সার্ভ করতেই রেবু বলে উঠল,
-ওমা!তোমাদের দুই বছরের পরিচয় কিন্তু এই জানো না! ওর চিংড়ি মাছে এলার্জি!

মেয়েটা সত্যি লজ্জা পেল।আমি পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্যে বললাম,

-ছোট ছোট চিংড়ি মাছ ও বোধহয় দেখতে পায় নাই।তাই না?

মেঘা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।
মেয়েটা ঘণ্টাখানেক পর বিদায় নিতেই রেবু ঘাড় বেঁকিয়ে বসল৷ এই মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিব ন্।
-কেন দিবে না?
-এই মেয়ে শৈশবের পছন্দ,অপছন্দ কিছুই জানে না।নীল রঙের কামিজ পরে চলে এসেছে।ও জানে না,নীল রঙ শৈশবের কতটা অপছন্দ!
-প্রিয়তমাকে মানুষ সব রঙে দেখতেই পছন্দ করে রেবু। আমারো লাল রঙ ভালো লাগত না,বিয়ের দিন তোমাকে লাল বেনারসিকে দেখে মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে।

রেবু লজ্জা পেয়ে বলল,
-ধুর!তোমার যত্তসব বুড়া বয়সে ভিমরতি।

এখনকার মত রেবুকে সামাল দেওয়া গেলেও ভবিষ্যতে ও এই মেয়েটাকে কতটা গ্রহন করতে পারবে জানি না।রেবু নিমরাজি ছিল তবু ওকে নিয়ে জোর করে চললাম ঝিনাইদহ। উদ্দেশ্য মেঘার বাবা-মায়ের সাথে পরিচিত হওয়া।মেঘারা তিন বোন,ও সবার ছোট।বড় দুইবোন জামাইসহ উপস্থিত ছিল। ওদের পরিবারে সবচেয়ে ভালো লাগল ওর বাবা নেয়ামত সাহেবকে। ভদ্রলোক দুই বছর পর অবসর নিবেন।রিটায়ার্ডের আগে ছোট কন্যাকে সুপাত্রস্থ করতে পারলে আর চিন্তা নেই। বুড়ো-বুড়ি শেষ ক'টা দিন গ্রামে গিয়ে পাড় করতে চান। নিজেদের বসতভিটার পাশে একফালি উঠোন আর পুকুরঘাট উনাকে স্বপ্নের মত টানছে। বুঝলা,সারাজীবন সরকারি সার্ভিস দেবার কল্যাণে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘোরা হলেও তার মন পড়ে আছে পিতৃ-পুরুষের ভিটায়। নিপাট ভদ্রলোক,একমাত্র এই লোকটার কথার জাদুতে রেবু বিয়েতে সম্মতি জানাল।মেঘাকে পছন্দ করতে না পারলেও আশ্চর্যজনকভাবে মেঘার পরিবারের প্রশংসার ফুলঝুরি শুনতে পেলাম স্ত্রীর মুখে। এটা অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার,কেননা রেবু সহজে কারো প্রশংসা করে না।

বিয়ের আয়োজন শুরু হল।রেবু গিয়ে খুব পছন্দ করে অ্যাংগেজমেন্টের আঙটি কিনে আনল। বেশ ভারী আঙটি,স্বর্ণের বাজারেদর আকাশছোঁয়া। তবু ও একমাত্র ছেলের বিয়েতে কার্পণ্য করল না।আঙটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শৈশব দেখল। তারপর বলল,
-আঙটিটা সুন্দর কিন্তু তুমি এটা পাল্টে ডায়মন্ডের রিঙ নিয়ে আসো।
রেবু জিজ্ঞেস করল,
-কেন?
শৈশব বলল,
-মেঘার খুব ডায়মণ্ডের রিং পছন্দ।ছোট হোক সমস্যা নাই,ডায়মণ্ডের হলেই হবে।
-ডায়মন্ডের কোনো ফিউচার ভ্যেলু আছে নাকি!সেদিন টিভিতে দেখলাম,একটা নামকরা কোম্পানির সব ডায়মন্ডই নকল।
-প্লিজ, মা।ওর একটা রিকুয়েষ্ট রাখো।
বিয়ে তো জীবনে একবারই করছি...

মেঘার একটা রিকুয়েষ্ট রাখতে গিয়ে দেখলাম একটার পর একটা অনুরোধ নামের বিপত্তি আসতে লাগল।হবু বউমা আর ছেলে নিয়ে প্ল্যান করেছে অনুষ্ঠান হবে চারদিনের। মেহেন্দি,হলুদ,বিয়ে,রিসিপশন। আমার ছেলে সদ্য চাকরিতে জয়েন করেছে। বেতন পায় চব্বিশ হাজার আর বউয়ের দু'হাত মেহেন্দিতে রাঙাতেই মেকাপ আর্টিস্ট পেমেন্ট নিবে পনের হাজার।একমাত্র ছেলের বিয়েতে কার্পণ্য করব না কিন্তু তাই বলে স্রেফ ফটোগ্রাফি আর ভিডিও বানাতে চাইছে ত্রিশ হাজার।টাকা কি গাছে ধরে নাকি!আক্কেল গুড়ুম হল তখন যখন হবু পুত্রবধূ পঞ্চাশ হাজার টাকার লেহেঙ্গা পছন্দ করে বসে থাকল। একদিন মাত্র যেই পোশাক পরা হবে তারজন্যে এতগুলা টাকা নষ্ট!শুধু একদিনের জন্যে তো নয়,চারদিনে চার রকমের সাজপোশাক। সাথে বরের জন্যে চাই ম্যাচিং পাঞ্জাবি,শেরওয়ানি কমপ্লিট স্যুট। হিসেব করে দেখলাম বর-কনের পোশাকের পিছনেই বাজেট রাখতে হবে দেড় লাখ।বেগাঢ় এতগুলা টাকা খরচ করতে বুকের ভেতরটা কেমন ব্যথা করতে লাগল।ছোটোখাটো ব্যবসা করি।বাড়ি তৈরি করে আর ছেলেকে দাঁড়া করাতে গিয়ে সঞ্চয় বলতে তেমন কিছু নাই। বিয়ে উপলক্ষ্যে বড় অঙ্কের টাকা ধার করতে হবে।কিভাবে শোধ করব জানি না,তবু আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া ছেলেটা যেন সুখে থাকে।

একটা সময় বিয়ে ছিল দুটি পরিবারের মিলন,আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। কিন্তু আমার ছেলেট নিজের বিয়ে উপলক্ষ্যে এতটাই এক্সাইটেড যে বাবা-মাকেও ভুলে যেতে বসল। প্রি ওয়েটিং শ্যুট করতে চলে গেল গাজীপুর। সন্ধ্যায় ফিরে আসল মন খারাপ করে। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় ভিডিওগ্রাফি মনের মত হয় নাই।রেবু রেগে গজগজ করছে।

-কেমন ছেলের বউ ঘরে আনছ বুঝি না বাপু।
পাথরের গহনার সেট কিনেছে বাইশ হাজার টাকা দিয়ে।এত ঘটা করে বিয়ের অনুষ্ঠান না করে পাঁচ ভরি গোল্ড কিনলেও ভবিষ্যতে কাজে লাগত।

খরচ আমার একার হচ্ছে না। মেয়ের বাবারও অবস্থা কাহিল।বড় দুই বোনের বিয়েতে হাজার মানুষের আয়োজন ছিল ছোট মেয়ের বিয়েতে কম করলে মান থাকে না।সময়ের সাথে রুচি পাল্টেছে। বিয়েতে নরমাল পোলাও,রোস্ট করলে চলবে না।কাচ্চি বিরিয়ানি সাথে টিকিয়া কাবাব শাহী রোস্ট।নেয়ামত সাহেবকে কল দিয়ে বললাম,

-ভাই,আপনি মাথার উপর চাপ নিয়েন না। আমি বুড়ো মানুষ।পোলাওয়ের সাথে এক পিরিচ দই হলেই খাওয়া হয়ে যায়।কাচ্চি-ফাচ্চি বড়লোকি খাবার গরীবের পেটে সইবে না।

-কি যে বলেন না,ভাইসাব!জামাই আমার একটা আবদার করেছে। ঢাকা থেকে ওর বন্ধুবান্ধব,কলিগরা বরযাত্রীতে আসছে। তাদের জন্যে একবেলা খানাপিনার আয়োজন করব এ আর খুব বেশি নাকি!

বুঝলাম,শৈশবও কম যায় না। একসময় মেয়ের বাবা পিষ্ট হত যৌতুকের ঘানি টেনে। আর এইযুগে ছেলে এবং মেয়ের বাবা দুজনেই পৃষ্ট হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার লোক দেখানে বিয়ের অনুষ্ঠানে। স্রেফ ফেসবুকে কিছু ছবি আপলোড আর বন্ধুবান্ধবদের কাছে নিজেদের স্ট্যাটাস প্রমাণ করার জন্যে এত বড় আয়োজন।রেবুর কাছে আক্ষেপ নিয়ে বললাম,

-আমরা আমাদের সন্তানকে মানুষ করতে পারি নাই। যেইসব ছেলেপুলে বাবা-মায়ের কায়িক পরিশ্রমের টাকা স্রেফ লোক দেখানো কালচার দেখাতে গিয়ে উড়িয়ে দেয় আমি তাদের শিক্ষাকে কুশিক্ষা বলব।

আম্বানিমার্কা বিয়ের খরচ করা অধিকাংশ পরিবারের ধরাছোঁয়ার বাইরে। আম্বানি এক বিয়েতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করলে সেই বিয়ে উপলক্ষ্যে দশ হাজার কোটি টাকা আয়ের ব্যবসায়িক বুদ্ধি রাখে। মধ্যবিত্ত বাঙালিরর বিয়েতে জমে কিছু সস্তা ডিনার সেট আর রাইস কুকার। যাই হোক,লাখ টাকা খরচ করে লোকজন ডেকে পোলাও-কোরমা খাইয়ে তাদের কাছে উপহার আশা করাটাও এক ধরনের ছ্যাচড়ামি। আমার টাকা নাই ব্যস আমি খুরমা খাইয়ে ছেলের বিয়ে দিব।বড়জোর নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে ডেকে একবেলা ডাল-ভাতের আয়োজন করা। কিন্তু নিতান্ত অর্ধপরিচিত মানুষদের বিয়ে উপলক্ষ্যে জড়ো করে, বিরাট কমিউনিটি সেন্টার আলোকসজ্জা করে টাকার শ্রাদ্ধ করার কোনো মানে হয় না। একজন মধ্যবিত্তের লাখ টাকা যোগাতে বছরের পর বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় সেখানে এক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে লাখ দশেক টাকা খরচ করাকে বোকামি ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না।

যথারীতি মেহেন্দি, গায়ে হলুদ আর ব্যাচেলর নাইট উৎযাপনের পর বিয়ে সম্পন্ন হল৷ যেই মেয়েটা ব্রান্ডের লেহেঙ্গা ছাড়া বিয়ের পিঁড়িতেই বসতে চাইছিল না সেই মেয়েটা নিজের অধিকার ফলানোর ব্যাপারে খুব কাঁচা। দেনমোহর ধার্য করা হল পাঁচ লাখ। নগদ কোনো টাকা বা সোনার গহনা দিয়েও কিছু উসুল করা হল না। তাতে কি!মেঘা ব্যস্ত বিয়ের ফটোসেশনে। নানান অঙ্গভঙ্গি করে ক্যামেরাম্যানের সামনে ছবি তুলে যাচ্ছে। গত চারদিনের অনুষ্ঠানে সম্ভবত এক হাজার ছবি তোলা হয়ে গিয়েছে। এত আর্টিফিসিয়াল ছবি কি সত্যি অ্যালবামে বন্দী হয় নাকি রয়ে যায় ফোনের মেমোরি কার্ডে বছরের পর বছর ধরে।ওরাই ভালো জানে।

বিয়ের পর নবদম্পতি যেখানে চড়ুই পাখির মত সারাদিন কিচির-মিচির করে ঘুরে বেড়ানেোর কথা। সেখানে ওদের রাতদিন ঝগড়া চলছে। শৈশব কথা দিয়েছিল ওকে নেপাল হানিমুনে নিয়ে যাবে। বিয়েতে প্রচুর টাকা খরচ করে অবস্থা করুণ।কক্সবাজার যাবারও পয়সা নাই। ছেলে যেন এবার কিছুটা লজ্জা নিয়েই আমার কাছে হাত পাতল। আমি বললাম,

-দেখ বাবা,তোকে পড়াশোনা করাইছি। বিয়ে করেছিস এখন আমার দায়িত্ব শেষ। আমাদের বুড়ো-বুড়িকে তোর না দেখলেও চলবে কিন্তু তোর বউয়ের দায়িত্ব একান্তই তোর।

সন্তানদের আদর্শ লিপি,নামতা মুখস্থ করানোর আগে যে সংসারের দৈনন্দিন কাজগুলো শেখানো উচিত তা ওদের বিয়ের পর হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম।মশারি টানানো নিয়ে দুজনের রোজ ঝগড়া চলে,বউমা এক কাপ চা বানিয়ে আনলে শৈশবের পছন্দ হচ্ছে না।

-এটা কি বানিয়ে আনছ? চিনি দিয়ে গুলানো শরবত।
-নিজে করে খাও না!

নাহ!আমার ছেলেরও এক কাপ চা বানানোর মুরোদ নাই।

মানুষ জন্ম থেকে কিছু শিখে আসে না। দুঃখজনকভাবে আমার ছেলে এবং ছেলের বউ দুজনের খাবার রুচি,চেহারা এবং মানসিক অবস্থা যোজনগুণ ব্যবধানে থাকলেও একটা ব্যাপারে দুজনের বেজায় মিল।দুজনে কেউই মানিয়ে নিতে পারে না এবং নতুন কিছু শেখারও আগ্রহ নাই। মেঘা বেলা দশটা অবধি ঘুমায়। উঠে এক কাপ চা হাতে নিয়ে ফোনে স্ক্রলিং করতে থাকে আর শৈশবের তো রোজই অফিস যেতে দেরি হয়।এমন করলে ওর চাকরিটা থাকবে কী না কে জানে!

একরাতে ওদের ঘর থেকে তর্কের আওয়াজ ভেসে আসছে। আমরা বুড়ো-বুড়ি চুপচাপ নিজেদের ঘরে দরজা এঁটে বসে ছিলাম।রেবু বলল,

-হল তো তোমার বিশ্বাস।ওরা একে অপরের জন্য পারফেক্ট না।দুজন না চাইতেই দুনিয়া পেয়ে গেছে তো তাই জানে না একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে স্ট্রাগল করতে হয়।তখন ওদের কথায় রাজি হয়ে ঘটা করে বিয়ে না দিলে আজকের এই দিন দেখতে হত না।

-তাহলে আমি কি করতাম বলো?

-পাছায় লাথি দিয়ে ছেলেকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া উচিত ছিল। চাকরি পেয়েছিস এখন নিজে বাড়ি-গাড়ি করে টাকা জমিয়ে বিয়ে কর।বাপের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে বউয়ের জন্য লাখ টাকা লেহেঙ্গা কিনতে সবাই পারে। নিজের টাকায় একটা বিয়ে করতে হলে বুঝত ঠেলা।কত ধানে কত চাল!

ফেসবুকে ওদের বিয়ের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।ওদের ছবি,ভিডিওর কমেন্টবক্সে চমৎকার সব শুভকামনা।বেস্ট কাপল,কাপল অব দ্য ইয়ার।অবশেষে ভাইয়া-আপুর প্রেম পরিণতি পেল!কে বলবে হাসোজ্জ্বল চেহারায় কপোত-কপোতীর ছবিগুলো স্রেফ অভিনয় ছিল।ঋনের টাকা প্রতিমাসে একটু একটু করে শোধ করি আর আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি ওদের বিয়েটা যেন এযাত্রায় বেঁচে যায়। জানি না,সৃষ্টিকর্তা এই পাপী বান্দার মোনাজাতে সাড়া দেবেন কী না!তবু সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের প্রার্থনা চিরকালই মঙ্গলময়।

দুই বছর পর-

আমি এবং নেয়ামত সাহেব কোর্টের বারান্দায় বসে আছি। আজ শৈশব এবং মেঘার ফাইনাল ডির্ভোস হবে। মেঘা এক বছর ধরে বাপের বাড়িতে ও শৈশবের চেহারা পর্যন্ত দেখতে চায় না। নেয়ামত সাহেব বললেন,
-ভাইসাব,আমি আমার মেয়েকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। বিয়ে ব্যাপারটা ছেলেখেলা নয়।কিন্তু মেয়েটা এতটাই বেয়াদব,বাবার কথা শুনল না।আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নাই। আমি জানি মেঘাকে আপনারা যত্নের ত্রুটি করেন নাই।

আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,

-সব দোষ আমার কপালের ভাই।ছেলেটাকে প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারি নাই।তাই ও মেয়েদের সম্মান করতে জানে না।

দুজন সর্বস্বান্ত বুড়ো কোর্টের বারান্দায় হাতল ভাঙা চেয়ারে নীরবে বসে রইলাম।ভিতরে তালাকের প্রক্রিয়া চলছে।ব্যাংকে এখনও আমার দুই লাখ টাকা ঋণ আরো দেনমোহর পরিশোধের আরো পাঁচ লক্ষ টাকা যুক্ত হল। নেয়ামত মেয়ের বিয়েতে পেনশনের অধিকাংশ টাকা খরচ করে নিঃস্ব হয়েছেন। মেয়ের চিন্তায় গত এক বছরে দুইবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন। ডির্ভোসি মেয়েকে নিয়ে সমাজের কাছে কি বলবেন তা নিয়ে আরো দ্বিগুণ চিন্তা হল।

বহুবছর আগে একটা কবিতায় পড়েছিলাম,"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে'। সন্তানকে দুধ-ভাত খাওয়ানোর আগে কি উপায়ে গরু থেকে দুধ পাওয়া যায় ধান থেকে ভাত হয় তা শেখানো জরুরি। নয়ত দুধভাত খেয়ে থালায় লাথি মারত দু'বার ভাববে না।কেননা না চাইতে যা পাওয়া যায় তা চিরকালই মূল্যহীন, যেমন মূল্যহীন ওদের কাছে বাবা-মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা।

লেখক- হাবিবা সরকার হিলা

‘প্রিন্স’-এ শাকিবের পারিশ্রমিক ৩ কোটি!প্রযোজক বললেন, ‘এটা তার প্রাপ্য’‘প্রিন্স : ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন ঢাকা’ সিনেমার পোস্...
24/08/2025

‘প্রিন্স’-এ শাকিবের পারিশ্রমিক ৩ কোটি!

প্রযোজক বললেন, ‘এটা তার প্রাপ্য’

‘প্রিন্স : ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন ঢাকা’ সিনেমার পোস্টার প্রকাশ করে চারিদিকে হইচই ফেলে দেন শাকিব খান। শোনা যাচ্ছে, এই সিনেমার পারিশ্রমিক হিসেবে তিনি ৩ কোটি টাকা নিচ্ছেন! যেখানে অন্যান্য নায়কদের পুরো সিনেমার বাজেটও এই পরিমান থাকে না। যদিও প্রযোজক ক্রিয়েটিভ ল্যান্ডের কর্ণধার শিরিন সুলতান বলেন, ‘এটা তার প্রাপ্য। যেটা উনি ডিজার্ভ করেন, সেটা তাকে অবশ্যই দিতে হবে। অবশ্যই আগের তার ছবিগুলো চেয়ে পারিশ্রমিক বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক।’

প্রকাশিত ‘প্রিন্স’ সিনেমার পোস্টারে দেখা যায়, শাকিব দুই হাতে বন্দুক উঁচিয়ে পেছনমুখী। চারপাশ ঘিরে আরও অনেকের হাতে পিস্তল। সঙ্গে লেখা রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার নাম—যেমন উত্তরা, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, কারওয়ান বাজার, শাঁখারীবাজার, গ্যান্ডারিয়া প্রভৃতি। সিনেমায় নায়িকার ভূমিকায় কে থাকছেন, সেটা এখনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এটি নির্মাণ করবেন আবু হায়াত মাহমুদ।

বিটিভি নিউজ : ফ্যাসিস্ট হাসিনার আস্থাভাজন ফরিদুজ্জামান -তাসমিনা- শামসুল গংদের নিয়ন্ত্রণে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ...
13/08/2025

বিটিভি নিউজ : ফ্যাসিস্ট হাসিনার আস্থাভাজন ফরিদুজ্জামান -তাসমিনা- শামসুল গংদের নিয়ন্ত্রণে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের রহস্যজনক ভূমিকা

ঢাকা, আগস্ট ২০২৫ :
ছাত্র -জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ১ বছর অতিবাহিত হলেও দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগ এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আস্থাভাজন মুন্সী ফরিদুজ্জামান ও সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ গংদের হাতে। এদেরই হাত ধরে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ভিডিওচিত্র সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে নিয়মিত পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া যায় বিটিভির একাধিক সূত্র থেকে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে এবিষয়ে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও অদৃশ্যকারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে বিটিভির সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে কি হাছান মাহমুদ ও হাসানুল হক ইনুর আস্থাভাজনরাই মন্ত্রণালয়ে বহাল তবিয়তে ?

২০২৪ এর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালালে সরকারের স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ দপ্তরে বড় ধরণের পরিবর্তন দেখা গেলেও ব্যতিক্রম শুধু বিটিভি। মহাপরিচালক ও জেনারেল ম্যানেজার পরিবর্তন ছাড়া হয়নি কোন সংস্কার। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলেও সত্যি জুলাই ২০২৪ এ ছাত্র হত্যায় ইন্দনদাতাদের অন্যতম কুশীলব বিটিভির তৎকালীন বার্তা প্রধান হাসিনা ও হাছান মাহমুদের আস্থাভাজন মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে সম্প্রতি দেয়া হয় বিটিভি নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব। শুধু তাই নয় হাসিনাস ম্যান দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ মহসিনের দুর্নীতিবাজ স্ত্রী ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদকে দেয়া হয়েছে বিটিভির উপ- মহাপরিচালক বার্তার দায়িত্বে।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ বিটিভিতে অন্যতম প্রভাবশালী ও আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। বিটিভির একাধিক সূত্র জানায়, তার ক্ষমতার উৎস ছিল, তার ভাসুর হিসেবে পরিচিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক ও তার স্বামী হাসিনার আমলে অন্যতম লুটপাটের মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মহসিন।

বিটিভির একটি তদন্ত কমিটি রিপোর্টর অনুযায়ী, সাবেক মহাপরিচালক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম (অতিরিক্ত সচিব-পিআরএল ভোগরত) এবং উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান ও বার্তা) ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদের নেতৃত্বে ঢাকা কেন্দ্রের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব) মাহফুজা আক্তার ও তার সিন্ডিকেট সদস্যরা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ভুয়া বিল ভাউচার ও বাজেটের মাধ্যমে ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির করেছেন মর্মে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দাখিল করে।

অপরদিকে, গত ৩০/০৪/২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা দল কর্তৃক দাখিলকৃত বিশেষ অডিট রিপোর্টেও ১০,৪৪,২২,০৭৯/- টাকা অনিয়মসহ অডিশন কেলেঙ্কারী, জালিয়াতি ও আরো দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর প্রমাণ মিলেছে। শুধুমাত্র সাবেক জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারকে বদলি করা হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ। দুদক থেকেও স্বামীর প্রভাবে মামলা থেকে নাম কাটান তিনি।

শুধু তাই নয় বিটিভিতে শিল্পী তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের সাথে জড়িত কমিটির আহবায়ক তাসমিনাকে নিয়ে যখন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে তদন্ত চলছে তাকেই কোন ক্ষমতাবলে বর্তমানে বিটিভির উপ-মহাপরিচালক (বার্তা ) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হল তাতে হতবাক সকলেই।

অপরদিকে , শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উইং এ ছিলেন বিটিভির মুন্সী ফরিদুজ্জামান। সেসময়কার তার বন্ধুমহলের অধিকাংশ এখন পলাতক কেউবা জেলে। আর তিনি উল্টো প্রমোশন নিয়ে বিটিভি নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক। বর্তমানে কখনও তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা , কখনও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের নাম ভাঙিয়ে দাপটের সাথে বিটিভি নিউজকে হরিলুটের আখড়ায় পরিণত করেছেন এই মুন্সী ফরিদ। সব সময় উপর মহল ম্যানেজের দাম্ভিকতা দেখান তিনি।

কে এই মুন্সী ফরিদুজ্জামান ? ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন -মইনুদ্দিনের শাসনামলে ওয়ান ইলিভেনের কারিগরদের সাথে যোগসাজসে বিটিভির হয়ে যোগ দেন তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদের প্রেস উইং এ। পরবর্তীতে হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে এইচ টি ইমাম ও মাহবুবুল আলম শাকিলের গড়া মিডিয়া সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়ে বিটিভি সংবাদকে একপেশে করে ফেলে। কেউ প্রতিবাদ করলেই চাকুরীচ্যুত বা বদলির হুমকি দিতেন মহাপরিচালকের মাধ্যমে।

২০০৮ এ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই তার প্রেস উইং এ বিটিভির পক্ষ থেকে যুক্ত করেন মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে। একটা পর্যায়ে এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েন তিনি বিদেশ ট্যুরের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দে জড়িয়ে পড়েন শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি শাখাওয়াত মুনের সঙ্গে। অফিস বিধি লংঘনের দায়ে তাকে দেয়া হয় বিভাগীয় মামলা। শাস্তিস্বরূপ পান পদাবনতি অর্থাৎ চলমান পোস্ট থেকে একধাপ নিচে নামিয়ে দেয়া হয়। বিভাগীয় আদালতে আপীল করেও ফিরে পাননা পদ। অবশেষে তার আপা ( শেখ হাসিনা ) বিশেষ ক্ষমতাবলে চাকুরীর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন।

ফরিদুজ্জানের প্রতি এতটাই হাসিনার আস্থাশীল ছিল পরবর্তীতে তার সিনিয়রকে ( বর্তমানে বিটিভির জেনারেল ম্যানেজার নুরুল আজম পবন ) ডিঙিয়ে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে বিটিভিতে নিয়োগ দেয় ফ্যাসিস্ট হাসিনা। শুধু তাই নয় আওয়ামীলীগের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাকের কাছ থেকে কি পরিমান অনৈতিক সহায়তা নিয়েছেন তা বিটিভির সবার মুখে মুখে।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এতটাই বিশ্বস্থ ছিলেন এই ফরিদ প্রায় রাতেই মন্ত্রীর ৩৪ মিন্টু রোডের বাসায় দেখা যেত দুইজনকে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায়। সেই সময় মুন্সী ফরিদের কাছে তুলে দেওয়া হাছান মাহমুদের একজন নিউজ প্রেজেন্টার এখনও বীরদর্পে খবর পড়ছেন বিটিভি নিউজে। বর্তমান জিএম বাধা দিলেও বলেন উপরের নির্দেশে তার নিউজ চলবে ? তবে কি উপর বলে বর্তমান সরকারকেও বিব্রত করার চেষ্টা করছেন এই ফরিদুজ্জামান।

অথচ জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াতে বিনা কারনে নিউজ থেকে বাদ দেন অনেককেই। বিটিভির মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম বর্তমান সরকারের সময়ে নিয়োগ পেলেও বিটিভির সাবেক কর্মকর্তা হাওয়ায় চক্ষু লজ্জায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননা বলে জানা যায়।

শুধু তাই নয় জুলাই আন্দোলনে শুধুমাত্র পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট করায় রিপোর্টার এ কে এম শহীদুল্লাহকে জুলাই মাসের প্রাপ্ত সম্মানী কেটে দিয়ে অফিস ডিউটি থেকে দুরে রাখেন। ৫ আগস্ট বিজয়ের পর ফোন করে সেই রিপোর্টারকে অফিসে এনে নিজেকে তাৎক্ষণিক জুলাই যোদ্ধা ঘোষণা করেন। যদিও পরবর্তীতে ১৩ বছর কাজ করা সত্ত্বেও উক্ত রিপোর্টার কাজ পারেনা এমন অভিযোগ এনে বিনা নোটিশে তাকে চাকুরিচ্যুত করেন। মুন্সী ফরিদের এ কাজে যিনি সহযোগিতা করেন তিনি হলেন বিটিভির উপ মহাপরিচাক বার্তা সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ। যার স্বাক্ষরে ঘটে সব অন্যায় অবিচার। তাকেও ব্ল্যাকমেইলিং করতে বাদ যায়নি এই ফরিদ। মুন্সী ফরিদ বিভিন্ন সময় ঠাট্টার ছলে বলেন, মহসিন ভাইর বন্ধু দুর্যোগের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জেলে আর একই পদে তিনি বাসায় এসির বাতাস খান। মুন্সীর এই ডায়ালগে তিনি যা করতে বলেন তাসমিনা আহমেদ এখন তাই করেন। কারণ স্বামীর প্রভাবে আওয়ামীলীগ আমলে এই সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ বিটিভির বার্তা সম্পাদক থেকে আইন অমান্য করে রাতারাতি তিনটি প্রমোশন নিয়ে ভারপ্রাপ্ত ডিজি পর্যন্ত হয়েছিলেন।

বিটিভি নিউজে এখনও রিপোর্টাররা স্ক্রিপ্ট এ ফ্যাসিস্ট হাসিনা লেখায় তা কেটে এডিট করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিখতে বাধ্য করেন এই বিটিভি নিউজের এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা।

জুলাই আন্দোলন চলাকালে যখন পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শহীদ হচ্ছেন ছাত্ররা তখন এই মুন্সী ফরিদুজ্জামান ও হাসিনার সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ আরাফাত মিলে বিটিভিতে প্রচার করে হাসিনার গুণগান নিয়ে সম্মৃদ্ধির অগ্রযাত্রা নামের অনুষ্ঠান। আর সে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পান বিটিভির সেরা কর্মকর্তার পুরস্কার।

গত ২৯ মে ২০২৪ তারিখে ২০২৪-এর কথিত জাতীয় নির্বাচনে বিটিভির সংবাদ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB) প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বিটিভি সংবাদ সাড়ে ৪ কোটি টাকা অপচয় করেছে। ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ একমাত্র উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) এবং মুন্সী মো: ফরিদুজ্জামান একমাত্র মুখ্য বার্তা সম্পাদক হিসেবে এই অনিয়ম-দুর্নীতির দায় কোনও ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না কিন্তু অদ্যাবধি তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিষয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
হাসিনা পলানোর পর নিজেকে রক্ষা করতে কিছু চুক্তিভিত্তিক

রিপোর্টারকে বিনা নোটিশে বাদ দেন এই মুন্সী ফরিদুজ্জামান। অথচ হাসানুল হক ইনু ও হাছান মাহমুদের হাতে নিয়োগপ্রাপ্ত রিপোর্টাররাই এখন তার আস্থাভাজন। করাচ্ছেন তাদের দিয়ে নানা চাঁদাবাজি। কাউকে দিয়ে বিনামূল্যে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা আবার কাউকে দিয়ে জমি দখলের কাজ। কেউ এসব অনৈতিক কাজ না করতে চাইলে হাসিনার মত বিটিভিকে নিজের বাব-দাদার সম্পত্তি মনে করে রিপোর্টারদের চাকুরিচ্যুত করেন ঠুনকো অজুহাতে।

তাসমিনা ও মুন্সী ফরিদ গং তাদের অবস্থান ধরে রাখতে তাদেরই আস্থাভাজন নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলমকে বিটিভির পক্ষ থেকে যুক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ। নিয়ম ভেঙে নিউজের কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে। এক্ষেত্রেও নাম ভাঙ্গানো হয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর। আর শামসুল আলম তাদের আস্থাভাজন হবার কারন ২০২৪ এর ৭ জুলাই বিটিভি কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের আন্দোলন দমনে এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ আরাফাতের নির্দেশে মিথ্যা প্রপাকাণ্ডের যে সংবাদ প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেখানে শামসুল আলমকে প্রধান করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। যার স্মারক নম্বর -১৫.৫৪.৩০২৫।০২৫.১৮.০০২.২২.১৫৭।

দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি ছাত্র হত্যার নেতৃত্বদানকারী শামসুল আলম এখন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সদস্য। বিটিভি থেকে শামসুল আলমের মনোনয়ন হিসেবে বলা হয় বর্তমান প্রেস সচিবের চাহিদা ? সত্যি কি তাই ? আদৌ কি জানতেন তার সম্পর্কে বর্তমান প্রেস সচিব জুলাইযোদ্ধা শফিকুল আলম ? ছাত্র হত্যার নেতৃত্বদানকারী শামসুল আলম এখন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্য। পুরো নিউজরুম জুড়ে চলছে প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, প্রেস সেক্রেটারি, তথ্য সচিব, উপপ্রেস সেক্রেটারিদের নাম ভাঙিয়ে রমরমা ব্যবসা।

২৮টি দেশের ৪৭টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে ৮ম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৫ এ আগামী ২৪ থেকে ২৮ আগস্ট পাঁচ দি...
12/08/2025

২৮টি দেশের ৪৭টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে
৮ম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৫ এ

আগামী ২৪ থেকে ২৮ আগস্ট পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৮ম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৫। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আয়োজনে ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারের এই উৎসবের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে টরন্টোর স্ক্যারবরোর ২২ লেবেভিক এভিনিউ’র সিনেপ্লেক্স ওডেন এ।

গত কয়েক বছর এখানেই এক আনন্দ-উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচুর চলচ্চিত্রপ্রেমীদের উপস্থিতিতে টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এর উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আর অন্য তিন দিন অর্থাৎ ২৫, ২৬, ২৭ আগস্ট চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টার’ এ। এর মধ্যে মাঝের দিন থাকবে শিশু চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী এবং শিশুদের জন্য একটি বিশেষ সেশন।

পাঁচ দিনব্যাপী এই চলচ্চিত্র উৎসব প্রতিদিন শুরু হবে বিকাল ৬ টায় এবং শেষ হবে রাত ১১ টায়। এবারের উৎসবে ২৮টি দেশের ৪৭টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে। প্রথম দিনে কানাডা, ইরান, জার্মানী ও বাংলাদেশের দুটি স্বল্প ও দুটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে। ছবিগুলো হচ্ছে, ইরানের ‘ব্লাইন্ড স্পট’, কানাডার পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইউনিভার্সাল ল্যাংগুয়েজ,’ জার্মানীর ‘মাদার লাভ’ এবং বাংলাদেশের পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আম কাঁঠালের ছুটি’। শেষ দিনে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশের দুটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘১৯৭১ : সেই সব দিন’ ও ‘আগন্তক’ এবং ফিলিপাইন ও কানাডার দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ল্যাগল্যাগ’ ও ‘ইটস নাইস টু মিট ইউ’।

টরন্টো ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত ৮ম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৫ এর উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে দেখানো হবে কানাডার চলচ্চিত্র নির্মাতা ম্যাথিউ র‍্যাঙ্কিন নির্মিত ৮৯ মিনিটের কাহিনি চলচ্চিত্র ‘ইউনিভার্সাল ল্যাংগুয়েজ’। ২০২৪ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ইতোমধ্যে সমালোচক ও দর্শক মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ’র মতে, ২০২৪ সালে নির্মিত সারা বিশ্বের সেরা পাঁচ চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘ইউনিভার্সাল ল্যাংগুয়েজ’।

এ বছর ৯৭তম একাডেমী এওয়ার্ড এর জন্য কানাডা থেকে এই চলচ্চিত্রটিকে ‘বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম’ ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়েছে। ‘ইউনিভার্সাল ল্যাংগুয়েজ’ এর পরিচালক ম্যাথিউ র‍্যাঙ্কিন এর জন্ম ম্যানিটোবার উইনিপেগ এ, ১৯৮০ সালে। তিনি পড়াশোনা করেছেন মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে। এক্সপেরিমেন্টাল চলচ্চিত্র নির্মাতা ম্যাথিউ র‍্যাঙ্কিন এর প্রথম কাহিনি চলচ্চিত্র ‘দ্য টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি’ মুক্তি পায় ২০১৯ সালে।

‘ইউনিভার্সাল ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাঁর দ্বিতীয় কাহিনি চলচ্চিত্র।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশী কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের উদ্যোগে ২০১৪ সালে টরন্টোতে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৭ সালে ছিল কানাডার ১৫০তম বার্ষিকী। সেই বছরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ বহুজাতিক এই দেশটির প্রতি গভীর ভালোবাসা জানানোর জন্যই টরন্টো ফিল্ম ফোরামের এই চলচ্চিত্র উৎসবের নামকরণ করা হয় টরন্টো ‘মাল্টিকালচারাল’ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।

এই চলচ্চিত্র উৎসবটি ইতোমধ্যে হয়ে উঠেছে পৃথিবীর স্বাধীন ও বিকল্পধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটি গ্রহণীয় সংগঠন। এ বছর ১১৮টি দেশ থেকে এই চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য প্রায় ৪ হাজার বিভিন্ন দৈর্ঘ্য ও আঙ্গিকের চলচ্চিত্র জমা পড়েছে।

এবারের চলচ্চিত্র উৎসব উৎসর্গ করা হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতির প্রতি। এ বছরটি হচ্ছে ঋত্বিক ঘটকের জন্ম শত বার্ষিকী। ১৯২৫ সালের ৫ নভেম্বর ঋত্বিক ঘটক ঢাকায় জন্মেছিলেন। তাঁর বেড়ে উঠা ছিল পদ্মার তীরের রাজশাহী শহরে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তাঁর পরিবারকে রাজশাহী থেকে কলকাতায় চলে যেতে হয়।

ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়াকে ঋত্বিক কোনভাবেই মেনে নিতে পারেন নি। ‘ভাঙ্গা বাংলার দগ্ধ প্রাণ’ ঋত্বিক ঘটক কাছ থেকে, আর জীবন দিয়ে দেখে গেছেন জোর করে শেকড় থেকে উপড়ানো মানুষের দুঃখ, কষ্ট আর মানবেতর জীবনযাপন। ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে এসব মানুষের জীবনকে তুলে এনেছিলেন এক শৈল্পিক মহিমায়।

আইনস্টাইনের মেয়ের বিয়ে। সবাই চার্চে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে উনি মেয়েকে বললেন, তুমি চার্চের দিকে যাও আমি ল্যাব থেকে ১০ মিন...
26/07/2025

আইনস্টাইনের মেয়ের বিয়ে। সবাই চার্চে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে উনি মেয়েকে বললেন, তুমি চার্চের দিকে যাও আমি ল্যাব থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে আসছি। উনি চার্চে ফিরে এলেন না। মেয়ের বিয়ে হয়ে গাড়িতে চড়ে হানিমুনে গেলেন। ৭ দিন পর মেয়ে ফিরে এসে মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা কোথায়? তখন মা বললেন, ওই যে গেছেন আর আসেননি। তখন মেয়ে নিজে ল্যাবে গিয়ে দেখলেন, বাবা গভীর চিন্তায় মগ্ন। বাবা, কি ব্যাপার! উনি বললেন, মা তুমি চার্চে যাও, আমি কাজটা ১০ মিনিটের মধ্যেই শেষ করে আসছি। এরকমই গভীর ছিল তাঁর ধ্যান, অধ্যাবসায়।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানি স্যার আলবার্ট আইনস্টাইনকে নিয়ে কিছু মজার গল্প। ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল,"গবেষণার জন্য আপনার কী কী দরকার?" আইনস্টাইন বললেন,"একটা ডেস্ক, কিছু কাগজ আর একটা পেনসিল। সঙ্গে দরকার বড় একটা ডাস্টবিন, যেখানে আমার সব ভুলে ভরা সব কাগজগুলো ফেলব।"

বেলজিয়ামের রানি আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ করেছেন। তাঁকে নিতে স্টেশনে হাজির হল গাড়ির বহর। কিন্তু স্টেশনে আইনস্টাইনকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। কিছুক্ষণ পর সাদাসিধে পোশাকে বেহালা বাজাতে বাজাতে রাজপ্রাসাদে হাজির হলেন আইনস্টাইন। রানি লজ্জিত হলেন। জানালেন যে, তাঁকে আনতে গাড়ি রেলস্টেশনে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে এসেছে। আইনস্টাইন বললেন,"আমি ইচ্ছে করেই গাড়ি বহরকে এড়িয়ে গেছি। পায়ে হেঁটে বেহালা বাজাতে বাজাতে এসেছি। যদি গাড়িতে আসতাম, তবে কি এভাবে বেহালা বাজাতে পারতাম? সাধারণ মানুষের মত শহরটাকে দেখতে পারতাম?" এমনই সহজ সরল আর সাধারণ ছিলেন তিনি।

তবে সবচেয়ে মজার গল্পটা হল, আইনস্টাইন আপেক্ষিকতা তত্ত্ব(The Theory of Relativity) আবিষ্কারের জন্য পৃথিবীতে সর্বাধিক পরিচিত। মজার ব্যাপার তিনি কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পাননি। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে হাতে গোণা কয়েকজন মাত্র বিজ্ঞানী তাঁর এই তত্ত্বটি বুঝতে পারেন। আর তাই হয়ত রয়েল সুইডিশ একাডেমির জুরিবোর্ড আইন্সটাইনের তত্ত্বটির নিগূঢ় অর্থটি বুঝাতে পারেনি। তাই সে বছর নোবেল তাঁর কপালে না জুটলেও ১৯২১ সালে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া(Photo Electric Effect) ব্যাখ্যা করে, তিনি পেলেন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ।

সবাই বলেছিল সূর্যের আলোয় ছবি করা যায় না, বাবার পাশে ছিলেন শুধু বংশীকাকু, তৈরি হল ‘পথের পাঁচালী’ ,,,বংশীকাকু। বংশী চন্দ্র...
23/07/2025

সবাই বলেছিল সূর্যের আলোয় ছবি করা যায় না, বাবার পাশে ছিলেন শুধু বংশীকাকু, তৈরি হল ‘পথের পাঁচালী’ ,,,
বংশীকাকু। বংশী চন্দ্রগুপ্ত। ‘পথের পাঁচালী’ থেকে ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’— বাবার অধিকাংশ ছবির শিল্প নির্দেশক। বাবা ঠিক করলেন ‘পথের পাঁচালী’ করবেন। শুনেই সুব্রত মিত্র আমাদের বাড়িতে। বংশীকাকু প্রচণ্ড উৎসাহ নিয়ে বললেন, “এ বার একটা সিনেমা হোক। নতুন কিছু হোক। বেশির ভাগ থিয়েটার হয়ে যাচ্ছে।”
বাবা, সুব্রত মিত্র, বংশীকাকু তিন জনেই অঁরি কার্তিয়ে-ব্রেসেঁর ভক্ত। তিন জনেই চাইছেন প্রাকৃতিক আলোয় ‘পথের পাঁচালী’ শুট করা হোক। অন্য দিকে ‘পথের পাঁচালী’ প্রসঙ্গে অধিকাংশ প্রযোজকেরা প্রশ্ন তুলছেন, বলছেন, কোনও ভাবেই প্রাকৃতিক আলোয় এই ছবি শুটিং করা যাবে না। অপেশাদারদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রেও তাঁরা আপত্তি তুলছেন, কিন্তু বাবা তো সে সব কিছু না শুনে উল্টো পথেই হেঁটেছিলেন। কোথায় কী ভাবে ওই ছবি শুট হল, সেটা তো আজ অধিকাংশ মানুষের জানা।
কিন্তু বাবা যে উল্টো পথে যেতে পেরেছিলেন তার অনেকটাই বংশীকাকুর উপর নির্ভর করে। কাশ্মীর থেকে আসা এই শিল্পীর দেখার চোখ ছিল অসাধারণ। আর বিভূতিভূষণের লেখায় তো সেট তৈরিই হয়েছিল। আলাদা করে ভাবতে হয়নি বাবা অথবা বংশীকাকুকে। আমার মনে আছে ‘পথের পাঁচালী’ প্রসঙ্গে বাবা বলেছিলেন, শুধু সেট ডিজ়াইনিং নয়, ছবির সংলাপ লিখতেও তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বিভূতিভূষণ। বাবা তখনও সংলাপ লেখায় সড়গড় হননি, ফলে পথের পাঁচালীর অধিকাংশ সংলাপ বিভূতিভূষণের লেখা থেকে ব্যবহৃত।
ছবি তৈরির সময় বাইরে শুটিং শুরু হলেও বাড়ির ভিতরের দৃশ্য তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রচুর সেটের কাজ থাকত। সেটে দিন, রাত সব দেখানো যায়, সেটাও একটা বাড়তি সুবিধে ছিল। বংশীকাকু এমন ভাবে সেট তৈরি করতে শুরু করলেন, মানুষ বুঝতে পারত না কোনটা আসল, কোনটা নকল। ‘পথের পাঁচালী’র কুঁড়ে ঘরও করছেন আবার শতরঞ্জ কে খিলাড়ির রাজদরবারও করছেন, আবার শুন্ডি রাজা বা হাল্লা রাজার দরবারও করছেন। এই যে বিভিন্ন ধারা, সব কিন্তু নিখুঁত ভাবে হত। বাবা প্রাথমিক কাঠামো এঁকে দিতেন। বাবা নিজেও তো শিল্পী ছিলেন। বাকিটা বংশীকাকুর দায়িত্ব। ফিল্মে কোনও কিছু যে ফাঁকি দিয়ে বা প্রতারণা করে কিছু দেখানো যেতে পারে— তা বিশ্বাসই করতেন না বংশীকাকু।
বংশীকাকু বাবার সঙ্গে একের পর এক ছবির কাজ করতে শুরু করলেন। এমন সেট তৈরি করলেন যে, মানুষ শুধু বংশীকাকুর সেট দেখতেই আসতেন। তখন স্টুডিয়োর নিরাপত্তা পেরিয়ে সাধারণ মানুষের ঢুকে পড়া সহজ ছিল না। কিন্তু কিছু মানুষ ছিলেন, যাঁদের স্টুডিয়োয় যাতায়াত ছিল। তাঁরা বাইরে থেকে আরও লোক নিয়ে আসতেন বংশীকাকুর তৈরি সেট দেখার জন্য। সে সময় শুন্ডি রাজার সেট দেখার জন্য মানুষের কী ভিড়! ভীষণ খুঁতখুঁতে ছিলেন। নিজে হাতে অনেক জিনিস করতেন যেটা সচরাচর শিল্প নির্দেশকেরা করেন না। ওঁকে দেওয়ালে ঠোকাঠুকি করতেও দেখেছি। আবার প্রয়োজনে রিফ্লেক্টর নিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। নিজের কাজের জন্য অহঙ্কার করতে কোনও দিন দেখিনি।
বাবার সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে মিশে গিয়েছিলেন। বাবার সঙ্গে কাজ করা তো সহজ নয়। বাবা কী চাইছেন সেটা বুঝে কাজ করা, সফল হওয়া সহজ কথা নয়। দেখেছি, ওঁর খুঁটিনাটির জিনিসের প্রতি খুব লক্ষ ছিল, ‘নায়ক’-এর ট্রেনের সেটের কথাই ধরা যাক। কেউ বুঝতে পারবে কোনটা সত্যি ভেস্টেব্‌ল আর কোনটা স্টুডিয়ো?
ওই ইউনিটে বংশীকাকুর প্রথম স্টিল ক্যামেরা এল। ওই ক্যামেরা দিয়ে কত ছবি যে তুলেছেন, তার হিসাব নেই। তখন তো ইউনিটে আলাদা করে চিত্রগ্রাহক ছিল না। ‘পথের পাঁচালী’ শুটিং-এর যা স্থিরচিত্র আমরা দেখতে পাই তাঁর অধিকাংশ বংশীকাকুর তোলা। আর যে ছবিতে বংশীকাকুকে দেখি, ধরে নিই সেগুলি হয় সৌমেন্দু রায় অথবা, দীনেন গুপ্তর বা সুব্রত মিত্রের তোলা।
ছবির লোকেশন যে মুহূর্তে ঠিক হত, সেই মুহূর্তে দেখতাম বংশীকাকু একনাগাড়ে লোকেশনের ছবি তুলছেন। সেখানকার জানলা-দরজা কিছুই বাদ দিতেন না। সারা ক্ষণ হাতে ফিতে, এটা মাপছেন, ওটা মাপছেন, লোকেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠত। আমি জানি না, বংশীকাকুর মতো শিল্প নির্দেশক আর তৈরি হয়েছে কি না!
বাবার সঙ্গে কাজ করতে করতেই বোম্বে থেকে ডাক এল বংশীকাকুর। বাবাও ওঁকে নির্দ্বিধায় যেতেই বললেন। বাবা জানতেন ওখানে তিনি যা পারিশ্রমিক পাবেন, তা কলকাতায় কোনও ভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। আমার মনে আছে, বংশীকাকু বলেছিলেন, “মানিক তোমার সঙ্গে কি আমার টাকার সম্পর্ক?” সত্যজিৎ রায়ের ইউনিটে বংশীকাকুই একমাত্র যিনি বাবাকে ‘মানিক’ বলে ডাকতেন। শুধু ইউনিটের লোক নয়। আমাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন বংশীকাকু, তাঁর সহজ-সরল মনোভাবে।
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবির সেট, শুন্ডি রাজার দরবার তৈরি হয়েছে। আমিও সেট দেখতে গিয়েছি। নিউ থিয়েটার্সের ফ্লোরে ঢুকছি, দেখি উত্তমবাবুও ঢুকছেন। তার আগে ‘চিড়িয়াখানা’ হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখেই বললেন, “এই যে বাবু কী ব্যাপার?” আমি জিগ্যেস করলাম , “আপনি এখানে!” বললেন “দেখি, বংশীদা কী সেট বানিয়েছে। ওর সেট নিয়ে খুব শুনছি।”
বংশীকাকুর সেট নিয়ে যেমন চারিদিকে কথা হত তেমনি ওঁর সেটে সবাই তটস্থ থাকত। বোম্বের পরিচালকেরা ওঁর সঙ্গে কাজ করার সময় খুব বুঝেশুনে শট নিতেন। এমন চমৎকার সেট, তা যেন ছবিতে ঠিকমতো প্রকাশ পায় সে দিকে তাঁদের বিশেষ নজর ছিল।
গুপী বাঘার ঘর তৈরি হয়েছে, শুন্ডি রাজ্যে ফোয়ারা চলছে। আমি শুটিং দেখছি। আচমকা দেখি আমার পাশেই খিল খিল করে হাসছেন তনুজা। পাশের ফ্লোরে কাজ করছিলেন, বংশীদার সেটের কথা শুনে দেখতে এসেছেন। তখন এক ইউনিট থেকে আর এক ইউনিটে চলে যাওয়া যেত, অন্যের কাজে মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করা যেত। এখন এ সব কিচ্ছু নেই!
‘নায়ক’-এর কথা বার বার লিখছি। ছবির ট্রেনের দৃশ্যে ভেস্টেব্‌লের ব্যবহার থাকবে জেনেই বংশীকাকু যেখানে ভেস্টেব্‌ল তৈরি হয়, সেই কারখানায় চলে গিয়ে ভেস্টেব্‌ল তৈরির সব জিনিস, এমনকি সেখানকার ব্যবহৃত অ্যাশট্রে অবধি নিয়ে এসেছিলেন। আমার পরিষ্কার মনে আছে বংশীকাকু বাবাকে বলেছিলেন, “আমি সেট এমন ভাবে তৈরি করব যেই তার নীচে ট্রাকের টায়ার রাখতে পারি, যাতে ট্রেনকে তুমি দোলাতে পারো। কয়েক জন লোককে নিয়ে সেট নাড়ালে সেট ট্রেনের মতোই নড়বে।”
আলোচনা তো হল। বাবা পরে ফ্লোরে গিয়ে দেখলেন সেট এত ভারী হয়ে গিয়েছে যে টায়ার দেওয়া যায়নি। ট্রেন তো নড়বে না! এই ভেবে বংশীকাকু সারা রাত ঘুমোতে পারেননি। বাবা বলেছিলেন, “আমি এমন ভাবে ক্যামেরায় শুট করব যে ট্রেন নড়ল কি না কেউ বুঝবে না।” হলও তাই। ‘নায়ক’ দেখার সময় ট্রেন নড়ছে কি না, আমরা কেউ মাথা ঘামাইনি।
বাবা প্রায়ই গোপালপুরে যেতেন। একবার ওখান থেকেই বংশীবাবুকে লম্বা চিঠি লিখলেন। বাবা তখন ‘চারুলতা’ চিত্রনাট্য লিখছেন। সেই চিঠিতে চারুলতার সেট নিয়ে অনেক কিছু লিখেছিলেন বাবা। বংশীকাকু ‘পিরিয়ড’ ফিল্মের কাজ শুনলে আরও বেশি উথসাহী হয়ে উঠতেন। পর্দার কাপড় থেকে আসবাব সব নিজে কিনতে যেতেন। বংশীকাকুর একটা বিষয় নিয়ে কিন্তু বাবা বেশ অখুশি ছিলেন। সব নিজে হাতে করতে গিয়ে, সব নিখুঁত করতে গিয়ে, বংশীকাকু নির্দিষ্ট সময় সেট তৈরি করে উঠতে পারতেন না। দেরিতে সেট পেতেন বাবা, বলতেন, “বংশী তো কাজ করছে, দেখি যে দিন শুটিং ফেলেছি তার দু’দিন বাদে যদি শুটিং শুরু করা যায়।” আমরা জানতাম যে দিন শুটিং বলা হবে সে দিন হবে না।
বোম্বে গেলেন বংশীকাকু। ‘জলসাঘর’-এর সময় থেকে অশোক বসু বাবার সেট তৈরি করতে আরম্ভ করলেন। যোগাযোগে কোথাও ভাটা পড়েনি। শুধু সহকর্মী নয়। বাবার বন্ধু ছিলেন বংশীকাকু। আমেরিকায় বাবার রেট্রোস্পেক্টিভ হবে। চিদানন্দ দাশগুপ্ত আমন্ত্রিত, বংশীকাকুকেও নিমন্ত্রণ জানানো হল। তিনি তো যাবেন না। কিন্তু প্রথম বিদেশের আমন্ত্রণ, বাবার সঙ্গে গেলেন বংশীকাকু। ওর কাজ খুবই সমাদৃত হল। খুব খুশি হয়েছিলেন। এই পূর্ণতার মুহূর্তে ওয়াশিংটন যাওয়ার সময় ওঁর মৃত্যু হয়। ট্রেনে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আর ফিরলেন না। সেটা ১৯৮১ সালের ২৭ জুন। বাবা তখন নিউ ইয়র্কে। আরও কয়েকটি শহরে ছবি নিয়ে ঘোরার কথা। বাবা এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে সব অনুষ্ঠান বাতিল করে দেশে ফিরে আসেন।
আর বংশীকাকু? দেশে আপনজন বলতে কেউ ছিল না ওঁর। বিদেশের মাটিতেই বংশীকাকুর জীবনের ক্যানভাস স্থির হয়ে যায়।
- সন্দীপ রায় (আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে)

#সংস্কৃতি

Address

House-8, Avenue/1, Block-A, Mirpur/10
Dhaka
1216

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when sangskriti.com - সংস্কৃতি ডটকম posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to sangskriti.com - সংস্কৃতি ডটকম:

Share

Our Story

www.sangskriti.com is an Online magazine of reportage, commentary, criticism, essays, reviews on culture with fiction, satire, cartoons and poetry.