12/10/2025
সনাতন ধর্মের অন্যতম ভিত্তিপ্রস্তর হল শ্রীমদ্ভাগবতম। কৃষ্ণেরই গ্রন্থবতারস্বরূপ শ্রীমদ্ভাগবতম। এই পুস্তকের দশম স্কন্দের অধ্যায় ২৯ থেকে ৩৩ পর্যন্ত বর্ণিত আছে রাস পঞ্চাধ্যায়ী – যা ভাগবতের ‘প্রাণবায়ু’ – কারণ এই অধ্যায়গুলি থেকে অতি বিরল দিব্যরস আস্বাদন করা যায়। এই অংশেই আছে গোপী গীত – ৩১ নং অধ্যায়ের ১৯টি শ্লোক। কৃষ্ণের বিরহে পীড়িতা গোপীদের গাওয়া এই গীতই রাস পঞ্চাধ্যায়ীর মুকুটমণি। কৃষ্ণের প্রতি গোপীদের তীব্র প্রেমের (মাধুর্য ভাব) নিদর্শন হল কনক মঞ্জরী ছন্দে রচিত এই গোপী গীত। এই প্রেমময়ী গীত শ্রোতাদের মন মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে এবং শ্রীমদ্ভাগবতম গ্রন্থকে ‘ভক্তির অমৃতসুধা’ বলার সার্থকতা প্রমান করে।
ভক্তির মাস দামোদর মাসে নিত্যদিন এই গোপীগীত পাঠ করলে শ্রীভগবান দামোদর অত্যন্ত প্রীত হন।
গোপ্য উচুঃ
জয়তি তেধিকং জন্মনা ব্রজঃ শ্ৰয়ত ইন্দিরা শশ্বদত্র হি ।
দয়িত দৃশ্যতাং দিক্ষু তাবকা- স্ত্বয়ি ধৃতাসবস্ত্বাং বিচিন্বতে ॥১॥
হে প্রিয় ! তোমার জন্মের কারণে বৈকুণ্ঠলোকের চেয়েও ব্রজভূমির মহিমা বেড়ে গিয়েছে। সেইজন্যই সমৃদ্ধির দেবী ইন্দিরা (লক্ষ্মী) নিজের বাসস্থান বৈকুণ্ঠ ছেড়ে এখানে এসে বাস করছেন ব্রজধামের সেবা করতে। কিন্তু হে প্রিয়তম ! দেখো তোমার গোপীরা, যারা তোমার চরণে নিজের প্রাণ সমর্পণ করে দিয়েছে, আজ বনে বনে ঘুরে তোমায় খুঁজছে।
শরদুদাশয়ে সাধুজাতসৎ- সরসিজোদর শ্রীমুষা দৃশা।
সুরতনাথ তে শুল্কদাসিকা বরদ নিঘ্নতো নেহ কিং বধঃ ॥২॥
হে হৃদয়নাথ ! আমরা তো তোমার বিনা মূল্যের দাসী ! শরৎকালে জলাশয়ের উপর চাঁদের আলো পড়ে যে সৌন্দর্য প্রকাশ পায়, তার থেকেও বেশি সুন্দর তোমার ওই দুটি চোখের দৃষ্টি দিয়ে বিদ্ধ করেছ আমাদের ! হে মনোবাঞ্ছাপূর্ণকারী প্রাণেশ্বর, চোখের দৃষ্টির দ্বারা হত করা কি বধ করা নয়? শুধু অস্ত্রের দ্বারা হত করেই কি বধ করা হয়?
বিষজলাপ্যয়া দ্ব্যালরাক্ষসাদ্- বর্ষমারুতা দ্বৈদ্যুতানলাৎ
বৃষময়াত্মজা দ্বিশ্বতোভয়াদ্- ঋষভ । তে বয়ং রক্ষিতা মুহুঃ।।
হে পুরুষোত্তম ! যমুনার বিষাক্ত জল (কালীয় নাগের কারণে), বা অজগররূপী অঘাসুর, বা ইন্দ্রের কারণে ঘটিত ভয়ঙ্কর ঝড়–বৃষ্টি–বিদ্যুৎ, দাবানল, বৃষভাসুর, ব্যোমাসুর প্রভৃতি সবরকম বিপদ থেকে প্রতিবার তুমিই আমাদের উদ্ধার করেছ।
ন খলু গোপিকানন্দনো ভবান্ - অখিলদেহিনামন্তরাত্মদৃক্।
বিখনসার্থিতো বিশ্বগুপ্তয়ে সখ উদেয়িবান সাত্বতাং কুলে ॥৪॥
হে পরম সখা ! তুমি কেবল যশোদার সন্তান নও; তুমি
অন্তর্যামী; তুমি সমস্ত দেহধারী জীবের হৃদয়ের অধিষ্ঠাতা। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার প্রার্থনার ফলস্বরূপ সমগ্র বিশ্বকে রক্ষা করার জন্য তুমি যদু বংশে জন্ম নিয়েছ।
বিরচিতাভয়ং বৃষ্ণিধুর্য তে চরণমীয়ুষাং সংসৃতের্ভয়াৎ
করসরোরুহং কান্ত কামদং শিরসি ধেহি নঃ শ্রীকরগ্রহম্ ॥৫॥
হে যদুকুলশিরোমণি ! ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে তুমি সবথেকে বেশী অগ্রণী। জন্মমৃত্যুর চক্রের ভয়ে যারা তোমার চরণে আশ্রয় নেয়, তোমার হস্তকমলের ছায়ায় তারা নিরাপদ আশ্রয় এবং নির্ভয় চিত্ত লাভ করে। হে আমাদের প্রিয়তম ! তোমার যে করকমল সকলের অভিলাষ পূর্ণ করে; যার দ্বারা তুমি দেবী লক্ষ্মীর পাণিগ্রহণ করেছ – তোমার সেই হস্তকমল আমাদের মাথায় রাখ।
ব্রজজনার্তিহন্ বীর যোষিতাং- নিজজনস্ময়ধ্বংসনস্মিত ।
ভজ সখে ভবৎকিঙ্করীঃ স্ম নো জলরুহাননং চারু দর্শয় ||৬||
হে বীর শিরোমণি শ্যামসুন্দর ! তুমি সমস্ত ব্রজবাসীদের দুঃখ দূর করে থাকো। তোমার মৃদু হাসির এক ঝলকেই ভক্তদের সব অহঙ্কার চুরমার হয়ে যায়। হে প্রিয় সখা ! আর আমাদের উপর রাগ করে থেকো না; এবার তোমার প্রেমবারি আমাদের উপর বর্ষণ কর। আমরা তোমার পাদপদ্মে সদা নিয়োজিত সেবিকা। এই অবলা ভক্তদের একটি বার তোমার পরমসুন্দর শ্যামল মুখমণ্ডলের দর্শন করাও।
প্রণতদেহিনাং পাপকর্ষণং তৃণচরানুগং শ্রীনিকেতনম্ ।
ফণিফণার্পিতং তে পদাংবুজং কৃণু কুচেষু নঃ কৃন্ধি হৃচ্ছয়ম্ ॥৭॥
তোমার চরণকমল শরণাগতদের সমস্ত পাপ নষ্ট করে দেয়। সমস্ত সৌন্দর্য, মাধুর্যের এমন খনি তোমার চরণযুগল যে দেবী লক্ষ্মী স্বয়ং তোমার চরণসেবা করতে তৎপর থাকেন। ওই দুটি চরণ নিয়েই তুমি আমাদের গরু-বাছুরদের পিছনে ঘুরে বেড়াও; এমনকি আমাদের জন্য সাপের (কালীয় নাগের) ফণার উপরেও ওই চরণদুটিকে রাখতে দ্বিধা বোধ কর না। তোমার থেকে দূরে থাকার এই নিদারুণ বিরহ বেদনা আমাদের হৃদয় বিদারিত করছে; মিলনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমাদের অস্থির করে তুলেছে। তুমি দয়া করে তোমার চরণযুগল আমাদের বক্ষে রেখে হৃদয়ের জ্বালা প্রশমিত কর।
মধুরয়া গিরা বল্গুবাক্যয়া বুধমনোজ্ঞয়া পুষ্করেক্ষণ ।
বিধিকরীরিমা বীর মুহ্যুতীর- অধরসীধুনাপ্যায়য়স্ব নঃ ॥৮॥
হে কমল নয়ন ! কী মধুর তোমার বাণী ! তোমার বলা এক একটি শব্দ আমাদের কাছে অমৃতের চেয়েও সুমিষ্ট। এমনকি বড় বড় বিদ্বান ব্যক্তিরাও সেই শব্দ একটিবার শোনার জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত। সেই বাণীর রসাস্বাদন করে তোমার দাসী এই গোপীরা মোহাবিষ্ট হয়ে আছে। হে দানবীর ! দিব্যামৃতের চেয়েও মধুর তোমার ওই অধরসুধা পান করিয়ে এবার আমাদের জীবন রক্ষা কর; আমাদের এই একটি ইচ্ছা পূর্ণ কর তুমি।
তব কথামৃতং তপ্তজীবনং কবিভিরীড়িতং কল্মষাপহম্ I
শ্রবণমঙ্গলং শ্রীমদাততং ভুবি গৃণন্তি তে ভূরিদা জনাঃ ||৯||
হে প্রভু ! তোমার লীলাকথাও অমৃত-স্বরূপ। তোমার বিরহে পীড়িত মানুষদের জন্য তো তোমার লীলাগাথাই প্রাণশক্তি। তাবড় তাবড় জ্ঞানী মহাত্মারা, ভক্তকবিরা তোমার লীলাগান গেয়েছেন। তোমার লীলাগাথা সমস্ত পাপ-তাপ তো নাশ করেই - সেই সঙ্গে লীলা শ্রবণ মাত্র পরম মঙ্গল, পরম কল্যাণ প্রাপ্তি হয়। তোমার লীলাকাহিনী পরম সুন্দর, পরম মধুর এবং তার বিস্তৃতি অসীম। যে তোমার লীলাগান করে, সে-ই প্রকৃতপক্ষে জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণকারী।
প্রহসিতং প্রিয় প্রেমবীক্ষণং বিহরণং চ তে ধ্যানমঙ্গলম্ ।
রহসি সংবিদো যা হৃদিস্পৃশঃ কুহক নো মনঃ ক্ষোভয়ন্তি হি ||১০||
হে প্রিয় ! একটা সময় ছিল – যখন তোমার ওই প্রেমপূর্ণ হাসি, তোমার রূপ, তোমার নানান বিচিত্র কীর্তিকলাপ – এসব নিয়েই আমরা আনন্দে মগ্ন হয়ে থাকতাম। সেসব ভেবেও আমরা পরম সুখ লাভ করতাম। তারপর তোমার সাথে মিলন হল। তুমি একান্তে হৃদয়স্পর্শী কৌতুকালাপ করলে, ভালবাসা অভিব্যক্ত করলে। হে ছলনাময় ! এখন সেই সব কথা স্মরণ করেই আমাদের হৃদয় রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
চলসি যদ্ ব্রজাচ্চারয়ন্ পশূন্ নলিনসুন্দরং নাথ তে পদম্।
শিলতৃণাঙ্কুরৈঃ সীদতীতি নঃ- কলিলতাং মনঃ কান্ত গচ্ছতি ॥১১॥
হে আমাদের প্রিয় প্রভু ! হে প্রিয়তম ! পদ্মের থেকেও সুকোমল তোমার চরণযুগল। গোচারণ করতে যখন তুমি ব্রজ থেকে বেরোও – আমরা তো এই ভেবেই আকুল হয়ে পড়ি যে তোমার ওই নরম চরণযুগলে নুড়ি, গাছের ডালপালা, কুশ বা কাঁটা বিঁধে আঘাত না লেগে যায়। তোমার কষ্টের অনুভূতি চিন্তা করাও আমাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক।
দিনপরিক্ষয়ে নীলকুন্তলৈর- বনরুহাননং বিভ্রদাবৃতম্ ।
ঘনরজস্বলং দর্শয়ন মুহর- মনসি নঃ স্মরং বীর যচ্ছসি ॥১২॥
হে আমাদের বীর প্রিয়তম ! দিনের শেষে যখন তুমি বন থেকে বাড়ী ফিরে আসো, তখন আমরা দেখি – তোমার চুলের উপর নীল ফুল লেগে থাকে; আর সেই চুল তোমার কমলসম মুখের উপর এসে পড়ে; সেই সঙ্গে গরুদের খুর থেকে উড়ে আসা ধুলোও আছড়ে পড়ে তোমার উপর। তোমার এমন মনোহর রূপ দেখিয়ে তুমি আমাদের হৃদয়ে মিলনের আকাঙ্ক্ষা উৎপন্ন করে দাও।
প্রণতকামদং পদ্মজার্চিতং ধরণিমন্ডনং ধ্যেয়মাপদি ।
চরণপঙ্কজং শন্তমং চ তে রমণ নঃ স্তনেষ্বর্পয়াধিহন্ ॥১৩॥
হে প্রিয়তম ! আমাদের সব কষ্ট দূর করতে একমাত্র তুমিই পার। তোমার চরণকমল শরণাগত ভক্তদের সমস্ত অভিলাষ পূর্ণ করতে পারে। স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী সেই চরণযুগলের সেবা করেন। সেই চরণযুগল তো এই জগতের ভূষণ ! কঠিন সময়ে তোমার চরণকমল স্মরণ করলে সব বিপত্তি কেটে যায়। হে কুঞ্জবিহারী ! তোমার ওই পরম কল্যাণময় চরণ দুটি আমাদের হৃদয়ে রেখে এই বিরহ যন্ত্রণা শান্ত করে দাও।
সুরতবর্ধনং শোকনাশনং স্বরিতবেণুনা সুষ্ঠু চুম্বিতম্ ।
ইতররাগবিস্মারণং নৃণাং বিতর বীর নস্ত্যেধরামৃতম্ ॥১৪॥
হে বীর শিরোমণি ! তোমার অধরামৃত মিলন সুখকে বাড়িয়ে তোলে এবং বিরহজনিত সব শোক–সন্তাপ নষ্ট করে দেয়। তোমার ওই অধরকে সারাক্ষণ চুম্বন করে থাকার সুযোগ পায় ওই সুরেলা বাঁশি। যাঁরা একবার তোমার অধরের স্বাদগ্রহণ করেছে, তাঁদের আর অন্য কোন আসক্তির কথা মনেও আসে না। তোমার ওই অধরসুধা একটিবার আমাদের উপর বর্ষণ কর।
অটতি যদ্ভবানহ্নি কাননং ত্রুটির্যুগায়তে ত্বামপশ্যতাম্ ।
কুটিলকুন্তলং শ্রীমুখং চ তে জড় উদীক্ষতাং পক্ষ্মকৃদ্দৃশাম্ ॥১৫॥
হে প্রিয় ! দিনের বেলা যখন তুমি বনবিহার করতে চলে যাও, তখন তোমায় দেখতে না পেয়ে এক-এক ক্ষণ সময় আমাদের কাছে এক-এক যুগের সমান মনে হয়। আর তুমি যখন সন্ধ্যাবেলা ফিরে আসো, যখন কোঁকড়ানো চুলগুলি তোমার পরম সুন্দর মুখারবিন্দের উপর পড়ে; সেই অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সময় তো চোখের পাতা পড়লেও আনন্দের বিঘ্ন ঘটে বলে মনে হয় আমাদের। বিধাতা, যিনি এই চক্ষুপল্লব সৃষ্টি করেছেন, তাঁকেই মূর্খ বলে মনে হয়।
পতিসূতান্বয়ভ্রাতৃবান্ধবান্- অতিবিলঙ্ঘ্য ত্যেন্ত্যচ্যুতাগতাঃ ।
গতিবিদস্তবোদ্ গীতমোহিতাঃ কিতব যোষিতঃ কস্ত্যজেন্নিশি ॥১৬॥
হে আমাদের প্রিয় শ্যামসুন্দর ! আমরা আমাদের স্বামী, সন্তান, ভাই, বন্ধু, কুল-পরিবার ত্যাগ করে তাঁদের ইচ্ছা এবং আজ্ঞা উলঙ্ঘন করে তোমার কাছে চলে এসেছি। তোমার পরিকল্পনা বুঝতে পেরে, প্রতিটা সংকেত অনুধাবন করে, আর তোমার মধুর গানে মোহিত হয়ে এখানে এসেছি আমরা। হে প্রতারক ! তোমার বাঁশির সুর শুনে যে নারীরা এত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই মাঝরাতে তোমার কাছে ছুটে এসেছে, তাঁদের এই অবস্থায় ত্যাগ করতে তুমি ছাড়া আর কে-ই বা পারবে?
রহসি সংবিদং হৃচ্ছয়োদয়ং প্রহসিতাননং প্রেমবীক্ষণম্ ।
বৃহদুরঃ শ্রিয়ো বীক্ষ্য ধাম তে মুহুরতিস্পৃহা মুহ্যতে মনঃ ॥১৭॥
হে প্রিয় ! আমাদের সাথে নিভৃতে থাকার সময় তুমি মিলনের ইচ্ছা প্রকাশ করতে; তোমার সাথে মধুর কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের প্রেমোচ্ছ্বাস যেন তীব্রতর হয়ে উঠত। তোমার বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা, প্রেমপূর্ণ চাহনি, আর ওই ভুবনমোহন হাসি দিয়ে তুমি আমাদের মন জয় করেছিলে। তোমার ওই বিশাল বক্ষঃস্থলের দিকে তাকিয়ে দেখতাম যে এই সেই স্থান যেখানে দেবী লক্ষ্মী সর্বদা বিরাজ করেন। হে প্রিয়তম ! সেই তখন থেকে তোমার প্রতি আমাদের আকুলতা বেড়েই চলেছে; আর আমাদের হৃদয় তোমার প্রতি অত্যন্ত আসক্ত হয়ে উঠছে।
ব্রজবনৌকসাং ব্যক্তিরঙ্গ তে বৃজিনহন্ত্র্যলং বিশ্বমঙ্গলম্ ।
ত্যজ মনাক্ চ নস্ত্বৎস্পৃহাত্মনাং স্বজনহৃদ্রুজাং যন্নিষূদনম্ ॥১৮॥
হে প্রিয় ! ব্রজবাসীদের সমস্ত দুঃখ-তাপ নষ্ট করার জন্য এবং সমগ্র বিশ্বের পূর্ণ মঙ্গল সাধনের জন্যই তুমি এই সংসারে অবতরণ করেছ। আমাদের হৃদয় তোমার প্রতি লালসায় ভরে উঠছে। এমন কিছু ঔষধি প্রদান করো যাতে তোমার এই আপনজনদের মনঃকষ্ট চিরতরে নির্মূল হয়।
যৎ তে সুজাতচরণাম্বুরুহং স্তনেষু ভীতাঃ শনৈঃ প্রিয় দধীমহি কর্কশেষু ।
তেনাটবীমটসি তদ্ব্যথতে ন কিংস্বিৎ কূর্পাদিভির্ভ্রমতি ধীর্ভবদায়ুষাং নঃ ॥১৯॥
হে শ্রীকৃষ্ণ! তোমার ওই চরণযুগল পদ্মফুলের থেকেও কোমল। আমাদের কঠোর স্তনে সেই চরণ স্পর্শও আমরা ভয়ে ভয়ে করি পাছে তোমার চরণে কোন প্রকার আঘাত লেগে যায়। ওই সুকোমল চরণ নিয়েই তুমি এই নিশুতি রাতে ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ। কাঁকর, পাথর, কাঁটায় চোট পেয়ে ব্যথা লেগে যাবে না? তোমার কষ্টের কথা ভাবলেও আমাদের জ্ঞান লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়। এবার হয়তো আমরা সত্যিই চেতনা হারাচ্ছি। হে প্রিয় শ্যামসুন্দর ! হে প্রাণনাথ ! আমাদের জীবন একমাত্র তোমার জন্য। আমরা তোমার জন্যই বেঁচে আছি; শুধু তোমার জন্য।
শ্রীগোপীকাগীতম কি----জয় 👏