মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী

  • Home
  • Bangladesh
  • Fulbaria
  • মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী

মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী The Great Leader

26/06/2025

আজও দুনিয়াতে হেরিবে দুনতে
একি ক্রন্দন জাগে আঁখিপাতে
একি আহাজারী শুনি দিকে দিকে
বেদনা গড়ল ঢালা,
কারবালা হায় কারবালা ।।

যুগ যুগ ধরে তোমারে স্মরিয়া
জাগিতেছে একি জ্বালা
কারবালা হায় কারবালা ।।

আজও ফিরে ফিরে মহরম আসে
শোকের বারতা বয়ে
আজও মুসলিম কাঁদে কাঁদে ঘরে ঘরে
কারবালার স্মৃতি লয়ে ।
কারবালা হায় কারবালা ।।

আজও তাই দাউ দাউ দাবানলে
নিখিলের অন্তর শুধু জ্বলে,
বিশ্বের মুসলিম আজও তাই
গায় মারশিয়া মালা ।
কারবালা হায় কারবালা ।।

26/06/2025

১৯৪৯ সালের জুন মাসে কতিপয় মুসলিম লীগ এমএলএ ও কর্মী যারা দলীয় প্রভুদের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে তারা ঢাকায় দুদিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে তারা তরুণ ভিন্নমতাবলম্বী শামসুল হক কর্তৃক লিখিত মূল দাবি নামক পুস্তিকায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের দাবি ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে। সম্মেলনে তারা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে গণমানুষের মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কর্তৃক ৪০-সদস্যবিশিষ্ট সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব এই সম্মেলনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তারিখে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। তাঁরই সভাপতিত্বে ১৯৪৯ সালের ২৪ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
[আওয়ামী লীগ (১৯৪৯-১৯৭১); শ্যামলী ঘোষ]

09/06/2025

হুজুরের পারিবারিক জীবনে অনেক রসঘন ঘটনা ঘটিয়া থাকে। এই ঈদেও একটি ঘটিল।
ঈদ উপলক্ষ্যে কে একজন হুজুরের কনিষ্ঠ নাতিনের জন্য এক জোড়া লাল মোজা কিনিয়া দিয়াছিল। ঈদের দিন একটা মোজা পাওয়া গেল। আরেকটি পাওয়া গেল না। হুজুর নিজে তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিলেন। না, পাওয়া গেল না। সবাই আফসোস করিল, শীলু নতুন মোজা পরিতে পারিল না। শীলু কাঁদিল। হুজুর অনেক বুঝাইয়া সামলাইয়া নিলেন। পরদিন সকাল বেলা শীলু তাহার দাদার নিকট পয়সা চাহিল। বিস্কুট খাইবে। হুজুর সস্নেহে পকেট হইতে ভাংতি পয়সার লাল একটি পুটলি বাহির করিলেন। শীলু চেঁচাইয়া উঠিল, এইতো আমার মোজা। সখেদে হুজুরের স্ত্রী আগাইয়া আসিলেন। অপরাধীর স্বরে হুজুর বলিলেন, খেয়াল করিনি। পাঞ্জাবীর পকেট কানা হয়ে গেছে। কিন্তু মোজায় পয়সা রাখছি তা তো বুঝি নাই।
(তাঁহার ঈদ, ১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাপ্তাহিক হক কথায় প্রকাশিত।)

09/06/2025

হুজুরের পারিবারিক জীবনে অনেক রসঘন ঘটনা ঘটিয়া থাকে। এই ঈদেও একটি ঘটিল।
ঈদ উপলক্ষ্যে কে একজন হুজুরের কনিষ্ঠ নাতিনের জন্য এক জোড়া লাল মোজা কিনিয়া দিয়াছিল। ঈদের দিন একটা মোজা পাওয়া গেল। আরেকটি পাওয়া গেল না। হুজুর নিজে তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিলেন। না, পাওয়া গেল না। সবাই আফসোস করিল, শীলু নতুন মোজা পরিতে পারিল না। শীলু কাঁদিল। হুজুর অনেক বুঝাইয়া সামলাইয়া নিলেন। পরদিন সকাল বেলা শীলু তাহার দাদার নিকট পয়সা চাহিল। বিস্কুট খাইবে। হুজুর সস্নেহে পকেট হইতে ভাংতি পয়সার লাল একটি পুটলি বাহির করিলেন। শীলু চেঁচাইয়া উঠিল, এইতো আমার মোজা। সখেদে হুজুরের স্ত্রী আগাইয়া আসিলেন। অপরাধীর স্বরে হুজুর বলিলেন, খেয়াল করিনি। পাঞ্জাবীর পকেট কানা হয়ে গেছে। কিন্তু মোজায় পয়সা রাখছি তা তো বুঝি নাই।
[তাঁহার ঈদ, ১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাপ্তাহিক হক কথায় প্রকাশিত।]

02/06/2025

রাত্রিতে ছোট্ট নৌকাটিতে হুজুর শুইয়াছেন, আমি শুইয়াছি, দুই মাঝি শুইয়াছে। ঝমঝম করিয়া হঠাৎ বৃষ্টি আসিয়াছে। সবাই নৌকার ছই এর মধ্যে গিয়াছি। নৌকাও তেমন সরস কিছুনা। প্রশস্ত দিকটায় হুজুর মাঝিদেরকে শুইতে দিয়াছেন। লম্বালম্বি হুজুরের পাশাপাশি আমি শুইয়াছি। পা বাড়াইয়া শোয়া যায় না। বৃষ্টিতে পা ভিজিয়া যায়। এক রাত্রি লক্ষ্য করিলাম, হুজুর পা বাড়াইয়া শুইয়া আছেন এবং তাহা দিব্যি ভিজিতেছে। আমি ডাকিলাম, হুজুর পা টানুন। হুজুর সজাগই আছেন। বলিলেন, 'বৃষ্টির পানি আপদ নাকি? তুমি খবর রাখ, এই বৃষ্টিতে মাচাং-এর কত গরু ভিজিতেছে?
[আমার ভালোবাসা মওলানা ভাসানী (বৃষ্টি-বন্যা-নদী ও তিনি); সৈয়দ ইরফানুল বারী]

02/06/2025

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছাড়া উপমহাদেশের ইতিহাস বোঝা অসম্ভব, এই সত্য এখন আগের চেয়েও পরিষ্কার, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশী স্পষ্ট। একটা কারণ উপমহাদেশের ইতিহাস কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস থেকে আলাদা নয়, যার সঙ্গে যুক্ত ভূমি মালিকানা বা অধিকারের লড়াই এবং একই সঙ্গে মাইগ্রেশান বা আবাস স্থানান্তরের ইতিহাস। তাই আসামের ভাসান চরের ইতিহাস বাদ দিলে গণমানুষের নেতা হিশাবে ভাসানীর উত্থানের মর্ম আমরা বুঝব না।

ভাসানী জাতিবাদী ছিলেন না, কিন্তু নিপীড়িত জাতির মুক্তি সংগ্রামের নিঃশর্ত সমর্থক ছিলেন। উনসত্তরের গণ অভ্যূত্থান এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দী শেখ মুজিবর রহমানকে রাজপথে বিশাল গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মুক্ত করে না আনলে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন রকম হোত। ভাসানী ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিপুল গণমানুষকে সম্পৃক্ত করা ছিল অসম্ভব। তাই বাঙালি জাতিবাদীরা যতোই ভাসানীকে ইতিহাস থেকে অদৃশ্য বা মুছে ফেলার চেষ্টা করুক, ভাসানী বারবার ফিরে আসছেন আগের চেয়ে আরও অনেক শক্তি নিয়ে, আরও বিশাল হয়ে।

ভাসানী বাংলাদেশের সেকুলারকুল ও কমিউনিস্টদের কাছে ‘লাল’ ভাসানী। তারা ভাসানীর জীবনাচারণ এবং রাজনৈতিক আদর্শে ইসলামের মুখ্য ভূমিকা অস্বীকার বা মুছে ফেলতে চায়। অন্যদিকে আরেক পক্ষ আছেন তারা ভাসানীকে পীর মানেন। ভাসানীর এই মুরিদেরা ভাসানীর ‘সবুজ’ দিকটুকু মানেন, কিন্তু ‘লাল’টুকু মুছে ফেলতে চান। চিন্তা পাঠচক্র দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই ধারার বিভ্রান্তি এবং ভাসানীকে বোঝার ক্ষেত্রে তাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতার সমালোচনা করে আসছে।

অন্যদিকে ইসলামপন্থিদের প্রায় কোন ধারাই ভাসানীকে স্বতন্ত্র কিন্তু ইসলামী রাজনীতিরই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হিশাবে স্বীকার করে নি। এর দুটো কারন রয়েছে। ইসলামকে ভাসানী তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের অন্তর্গত করে নেবার জন্য যেভাবে শাসনবাদের বিরুদ্ধে ‘রবুবিয়াত’ বা পালনবাদের কথা বলেছেন, সেটা বোঝার সামর্থ বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনীতি অর্জন করে নি। কিন্তু অনেকে ইসলাম সম্পর্কে তাফসীর কিম্বা সার্টিফিকেট দেবার একমাত্র অথরিটি হিশাবে নিজেদের দাবি করে। ইসলাম তাদের কাছে ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা চর্চার বিষয় মাত্র। কিন্তু ইসলামে কোন ভ্যাটিকান নাই। অর্থাৎ এমন কোন কেন্দ্র নাই যাদের ফতোয়া মানা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। এমন কোন অথরিটি ইসলাম স্বীকার করে না। কিন্তু যে কোন যোগ্য ব্যক্তি তার ‘মত’ প্রকাশ করতে, অর্থাৎ ‘ফতোয়া’ দিতে পারে।


চিন্তা পাঠচক্র সব সময়ই বলে এসেছে ভাসানীকে এভাবে খোপে খোপে ঢুকিয়ে খণ্ড খণ্ড ভাবে বিচার করা যায় না। তাঁকে সামগ্রিক ভাবে না বুঝলে তার তাৎপর্য বিচার কঠিন। কিন্তু এই কাজই এখন বিশেষ ভাবে জরুরী হয়ে উঠেছে । এটা নিশ্চিত বলা যায় ভাসানীর চিন্তা ও তৎপরতার বিচারের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে গণমানুষের রাজনীতির শক্তিশালী উত্থান ঘটবে। যার চিহ্ন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ভাসানীর পর্যালোচনার অর্থ বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির অভিমুখ নির্ণয় করা। অতএব সামগ্রিক ভাবে ভাসানীর চিন্তা ও কর্ম তৎপরতা বিচার অতিশয় জরুরী।
-ফরহাদ মজহার।
#ভাসানীরভবিষ্যদ্বাণী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর ডিজাইন করা দুইশত টাকার নোট।
02/06/2025

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর ডিজাইন করা দুইশত টাকার নোট।

01/06/2025

জেলা প্রশাসক জানালেন, মাওলানা ভাসানী সেদিন সন্ধ্যায় বরিশাল থেকে খুলনা আসবেন সড়কপথে রূপসা ফেরিঘাট দিয়ে। আমার কাজ রূপসা ফেরিঘাট থেকে মাওলানা সাহেবকে খুলনা সার্কিট হাউসে নিয়ে আসা, জেলা প্রশাসক ও সামরিক আইন প্রশাসকের সঙ্গে একটি জরুরি সাক্ষাৎকারের কথা বলে। আমি শুনে কিছুটা হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করলাম, কিন্তু তিনি না আসতে চাইলে? তাঁকে কি গ্রেপ্তার করতে হবে?
প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক বললেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ পাঠাতাম, তোমাকে না। তোমাকে পাঠাচ্ছি মাওলানা সাহেবকে কৌশলে নিয়ে আসতে। তুমি আমার গাড়ি নিয়ে যাবে, ওটিতে তাঁকে নিয়ে আসবে। ব্রিগেডিয়ার দুররানি বললেন ইংরেজিতে, আমরা তোমার ওপর ভরসা করে আছি।
অগত্যা রওনা হলাম রূপসা ফেরিঘাটের উদ্দেশে জেলা প্রশাসকের সরকারি গাড়িতে, পেছনে জিপে কিছু পুলিশ, যাতে বিপদ হলে তারা সামাল দিতে পারে। ফেরিঘাটে যখন পৌঁছালাম, তখন রাত আটটা, গাড়ির চলাচল খুব কম। আমি সরাসরি ফেরিতে গাড়ি ঢুকিয়ে ফেরিচালককে বললাম ওপারে নিয়ে সে যেন ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে। এ ধরনের আদেশ পেয়ে ফেরিচালক হতভম্ব হলেও সঙ্গে পুলিশ দেখে সে ভাবল, আমি কেউকেটা। তাই বিনা প্রতিবাদে ওপারে ফেরি নিয়ে গেল। ওপারে পৌঁছে আমি গাড়ি আর কূলে তুললাম না। আমার আর পুলিশের জিপ ফেরিতেই থাকল। উদ্দেশ্য, আর কোনো গাড়ি যেন না উঠতে পারে। আর সেই সুযোগে ঘাটে পৌঁছানোর পর মাওলানাকে যেন আমি আমার গাড়িতে ওঠাতে পারি। কিন্তু এমনই কপাল, কিছুক্ষণ পর মাওলানা ভাসানী একটি ছোট গাড়িতে এলেন, যেটা তাঁর ড্রাইভার কসরত করে ফেরিতে তুলে ফেলল। আমার কৌশল কাজে লাগল না।
অগত্যা গাড়ি ফেরিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমি ভাসানীর গাড়ির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তাঁকে আমার পরিচয় দিয়ে বললাম যে আমি তাঁকে খুলনায় অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে। এতে অত্যন্ত খুশি হয়ে ভাসানী গাড়ি থেকে বেরিয়ে আমার সঙ্গে হাত মেলালেন। আমার জীবনে এই প্রথম মাওলানা ভাসানীর সাক্ষাৎ, কিছুটা অভিভূত। তবু সাহস করে বললাম, স্যার, আপনাকে জেলা প্রশাসক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাতের খাবারের জন্য সার্কিট হাউসে, সঙ্গে গাড়িও পাঠিয়েছেন। এই বলে সামনের গাড়িটি দেখালাম।
গাড়ির দিকে যেতে যেতে ভাসানী জিজ্ঞেস করলেন জেলা প্রশাসকের নাম। বলতেই তিনি চিনলেন। ভাবলাম, আর কোনো চিন্তা নেই, তিনি আমার সঙ্গে যাবেন। হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, সার্কিট হাউসের নিমন্ত্রণে আর কেউ আছেন কি না। আমি কিছু না ভেবেই বললাম ব্রিগেডিয়ার দুররানির কথা। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ভাসানী পিছু ফিরে তাঁর গাড়িতে সটান উঠে পড়লেন। তিনি দরজা বন্ধ করার আগে আমি দৌড়ে তাঁর গাড়িতে পাশে বসে তাঁর হাত দুই হাতে ধরে বললাম, স্যার, দয়া করে একটু সার্কিট হাউস হয়ে যান। আমার ওপর জেলা প্রশাসক অনেক নির্ভর করে আছেন। আমার চাকরিজীবনের সবে শুরু।
আমার মিনতির জন্য কি না জানি না, মাওলানা ভাসানী স্থির চোখে চেয়ে হেসে বললেন, চলো, তোমার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মোলাকাত করেই যাই, তবে ওই সরকারি গাড়িতে নয়, আমার গাড়িতে। বলে তিনি একটু সরে আমাকে জায়গা করে দিলেন। গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়া আরও দুজন লোক ছিল, একজন সামনে, আরেকজন ভাসানীর ডান পাশে। আমি পাশে বসে চলতে চলতে আল্লাহকে শুকরিয়া জানালাম।
সার্কিট হাউস পৌঁছানোর পর ভাসানীকে ভেতরে নিয়ে দেখি জেলা প্রশাসক অভ্যর্থনাকক্ষে নিজেই দাঁড়িয়ে, আর ব্রিগেডিয়ার দুররানি পাশে। দুজনই ভাসানীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে হাত মেলালেন। পরে তাঁকে তাঁরা পাশের একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন। আমাকে জেলা প্রশাসক বললেন অভ্যর্থনাকক্ষে অপেক্ষা করতে।
পাশের কক্ষে মিটিং ঘণ্টা খানেক চলল। ঘরের ভেতর কথাবার্তা বেশ নিচু গলায় হচ্ছিল, তাই কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু শেষের দিকে ভাসানী জোর গলায় কথা বলছিলেন। আগের কথা যদিও শুনিনি, তাঁর শেষের কথা শুনে মনে হলো, তিনি ব্রিগেডিয়ারকে উদ্দেশ করে বলছেন খাঁটি উর্দুতে, ‘দেখো, পাকিস্তান বাঙালি মুসলমান নে বানায়া, উও পাকিস্তান তোড়না নেহি চাহতে, তোমহারা প্রেসিডেন্ট ইসকো তোড়না চাহতা হ্যায়। (বাঙালি মুসলমানরা পাকিস্তান বানিয়েছে, তারা পাকিস্তান ভাঙতে চায় না, তোমার প্রেসিডেন্ট ভাঙতে চায়)।’ এই কথা বলতে বলতে দরজা খুলে ভাসানী বেরিয়ে আসেন, পেছন পেছন ব্রিগেডিয়ার দুররানি আর জেলা প্রশাসক। কিন্তু কথা তখনো তাঁর শেষ হয়নি। ভাসানী তাঁর স্বভাবসুলভ আঙুল উঁচিয়ে উর্দুতে বলেন, এভাবে পাকিস্তান থাকবে না। তারপর সোজাসুজি ব্রিগেডিয়ার দুররানিকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া একজন ব্যভিচারী। তোমরা (সেনাবাহিনী) এ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছ না কেন? তোমাদের বুদ্ধি-বিবেচনা নেই? এ লোক শুধু মদখোরই নয়, অসৎ চরিত্র। এই লোকই পাকিস্তান ভাঙবে।
ভাসানী বাইরে দাঁড়িয়ে আঙুল নাচাতে নাচাতে বলছেন আর আমি অবাক বিস্ময়ে দেখছিলাম লাল মুখ করে ব্রিগেডিয়ার দুররানি তাঁর কথা শুনে যাচ্ছেন নীরবে। আর কথা না বাড়িয়ে ভাসানী যখন গাড়িবারান্দার দিকে যাচ্ছিলেন, তখন জেলা প্রশাসক রাতের খাবারের কথা বললে তিনি জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, রাতে তিনি বেশি খান না, এবং এখন বিশ্রামের জন্য তাঁর নির্দিষ্ট স্থানে যাবেন। আমি পেছনে পেছনে এলে তিনি বললেন, তাঁর সঙ্গে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই বলে তিনি তাঁর গাড়িতে উঠে গেলেন। গাড়িবারান্দায় দাঁড়িয়ে জেলা প্রশাসক ও ব্রিগেডিয়ার দুররানি তাঁকে বিদায় দিলেন।
সেদিন ব্রিগেডিয়ার দুররানি মাওলানা ভাসানীকে কতখানি বোঝাতে পেরেছিলেন জানি না, কিন্তু যেভাবে ভাসানী সামরিক সরকার আর তার প্রধানকে সম্বোধন করেছিলেন বিশেষ বিশেষণে (তার কয়েকটি শব্দ আমি বাদ দিয়েছি), তা থেকে এটাই বুঝেছিলাম, তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বরং ভাসানীই তাঁকে শুনিয়ে গেলেন।
[জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, অ্যাসাসিনেশন অব জিয়াউর রহমান অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ বইয়ের লেখক, প্রথম আলো]

02/11/2024
31/10/2024

তবে এতটুকু লিখতেই হয়, মওলানা ভাসানী বিপ্লবী চিন্তাধারার একজন সুফি ছিলেন। আলেম সমাজ দূর-দূরান্ত থেকে সন্তোষে আসতেন এবং নানা প্রশ্নের অবতারণা করতেন। ১৯৭৬ সনের জানুয়ারি মাসে মহাচিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই-এর মৃত্যুতে মওলানা ভাসানীর প্রেরিত বার্তার শেষ বাক্য May Allah bless his soul প্রসঙ্গে আলেমগণ বললেন, যিনি স্রষ্টায় বিশ্বাসী নন, যিনি আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসী নন তার জন্যে এ মুনাজাত কেন? মওলানা ভাসানী অতিশয় সহজ ভাষায় বললেন, ‘৭০ কোটি মানুষের দেশ থেকে তারা সকল নকল খোদা তাড়িয়েছে। এটাই বা কম কিসে? ‘লা-ইলাহা’ আগে, তার পরে ইল্লাল্লাহ্। তোমরা তো নকল খোদার বেড়াজালে হাবুডুবু খাচ্ছ। আসল খোদার সব্ধান পাবে কিভাবে?’
১৯৭০ সনের ০৫ অক্টোবরে একই মাত্রার কথা বলেছিলেন ১৯৪০ দশকের তুখোর রাজনীতিক, ষাটের দশকে ইসলামিক একাডেমির ডায়রেক্টর আবুল হাশিমকে। তিনি চিনের বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা টেপ-রেকর্ডারে মওলানা ভাসানীকে শুনাতে ঢাকা হতে সন্তোষ এসেছিলেন। মনোযোগ সহকারে শুনে বললেন, ‘খুব ভাল বলেছেন। কিন্তু একটা কথা বাদ পড়ে গেছে।’ জনাব আবুল হাশিম বললেন, ‘বলুন শুনে রাখি। চান্স পেলে পরে বলব।’ মওলানা ভাসানী বললেন, ‘আপনি বলতে পারতেন, চিনারা সব নকল খোদা ঝাটিয়ে তাড়িয়েছে। এ কাজ মস্ত ঈমানদারের কাজ। ময়দান থেকে আগাছা সাফ করা হয়েছে। এবার কেবল আসল খোদাকে বসিয়ে দিলেই তো হক্কুল ইবাদের সাথে হক্কুল্লাহও আদায় হয়ে যায়।’
[নানান মাত্রায় মওলানা ভাসানী, সৈয়দ ইরফানুল বারী]

31/10/2024

বন্যার তান্ডবে কেবল ভাঁটা ধরেছে, এমন সময় একদিন আমার করটিয়ার বাসার ঘাটে আসাম প্রত্যাগত একটি ভদ্রলোকের নৌকা ভিড়ল । নাম তাঁর আবদুল হামিদ খাঁ । তাঁর নৌকায় মণ পঞ্চাশেক ধান । বললেন, ‘বাড়ী আমার আগে বাংলাদেশেই ছিল, তারপর যাই আসামে । বন্যার কথা শুনে বিপদের জন্য কিছু ধান নিয়ে এলাম । তার খানিকটা বিতরণ করেছি, বাকিটা আপনার সঙ্গে পরামর্শ করে বিতরণ করব ভেবে নিয়ে এলাম ।’ বললাম, ভাল করেছেন । আসাম থেকে পানি যাঁরা পাঠান, পানির জুলুম নিবারণ করতে তো তাঁদেরই আগে আসতে হয় । বন্যা বিধ্বস্তদের সাহায্য করা সম্বন্ধে তাঁর সঙ্গে আলাপ হল । তারপর তিনি তাঁর কাজে চলে গেলেন ।
লোকটার কথার গাঁথুনি, অনাড়ম্বর কাপড় চোপড়, দিল খোলাসা ভাব, দরিদ্রের জন্য দরদ মনে একটা দাগ কেটে রাখল ।
খাঁ সাহেব টাঙ্গাইল শহরের চর অঞ্চলে কাজ শুরু করলেন । তিনি আরো কয়েকবার ধান আনলেন, কাপড় সংগ্রহ করলেন, টাকা জোটালেন । খুব জোরে শোরে তাঁর কাজ চলল । দেশের সাদা-দিল মানুষ, তারা তাঁর কথায়, তাঁর দরদে, তাঁর সেবায় মুগ্ধ হয়ে গেল । কিছুদিন পর তাদের মধ্যে বলাবলি শুরু হল, লোকটা কে-রে ভাই, কোথা থেকে উড়ে এল আমাদের সাহায্যের জন্য ?
‘জানিসনা? উনি যে ভাসানীর মওলানা? দেখিস নাই তছবী? মস্ত ফকির ।’
[ভাসানীর মওলানা, ইব্রাহীম খাঁ; বাতায়ন গ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত]

31/10/2024

Address

Fulbaria

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী:

Share

Category