03/11/2025
জার্মানি সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করি!
১. বাংলাদেশে কালো কালির কলম ব্যবহার করা হলেও জার্মানিতে নীল কালির কলম ব্যবহার করে!
২. আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকটি লেকচার হয় সাধারনত ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। ক্লাস একদম সময়মতো শুরু হয় এবং মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি থাকে। ক্যাম্পাসে জার্মানির হিসেবে তুলনামূলক অর্ধেক দামে (৩ ইউরোর একটু বেশি) দুপুরের লাঞ্চ করা যায়৷ সাদারনত হালাল আইটেম থাকে।
৩. একেকটি লেকচারে যত পরিমাণ পিডিএফ সরবরাহ করা হয়, বাংলাদেশে একটি বিষয়ে পুরো সেমিস্টারেও আমার তত পরিমাণ শিট পড়তে হয় নাই!
৪. পড়াশোনার জন্য যত রকম সুযোগ-সুবিধা দরকার, সবই জার্মান সরকার প্রদান করে। প্রায় ৯৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি নেই। প্রফেসররা যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ; ইমেইল করলে সাধারণত উত্তর দেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তিন মাস ক্লাস, চতুর্থ মাসে পরীক্ষা, এরপর দুই মাস সেমিস্টার ব্রেক। তবে পাশ করা যথেষ্ট কঠিন। কোনো বিষয়ে তিনবার ফেল করলে কোর্স থেকে বাদ দেওয়া হয়। ক্লাসরুমে জার্মান সহপাঠীদের নিজস্ব সার্কেল থাকে, তবে অন্যরা বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মগুলোর ভাড়া বাইরের তুলনায় অনেক কম। এখানে প্রত্যেকের জন্যে সিঙ্গেল রুম থাকে। রুমের সাইজ একজনের জন্যে খুবই কম্ফোর্টেবল ভাবে থাকার মত হয়ে থাকে! বন শহরে স্টুডেন্ট ডর্মে ৩২০ থেকে ৪৫০ ইউরো পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। এর মধ্যে ওয়াইফাই ও বিদ্যুৎ বিল অন্তর্ভুক্ত থাকে। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ডর্ম ভাড়ায়। তবে রেডিও বিল নিজে দিতে হয় (পাশাপাশি রুমের কয়েকজন শেয়ার করেও দেয়া যায়)।
৬. দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরচ হয় পাবলিক হেলথ ইন্সুরেন্সে। বয়স ৩০ বছরের কম হলে মাসে ১৪০ ইউরো, ৩০ বছরের বেশি হলে ২৪০ ইউরো দিতে হয় (বেতন ১৫০০ ইউরোর বেশি হলে আরও বেশি দিতে হয়)। এই ইন্সুরেন্সে দাঁতের কিছু চিকিৎসা বাদে প্রায় সবকিছু কভার করে। এখানকার ডাক্তাররা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করে। অর্থাৎ হেলথ ইন্সুরেন্সের মান্থলি পেমেন্টের বাইরে চিকিৎসার জন্যে আলাদা বিল দিতে হয়না।
৭. তৃতীয় সর্বোচ্চ খরচ হয় খাবারের জন্য। মাসে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ ইউরো খরচ হয়। এখানে প্রচুর হালাল দোকান আছে, সুপারসপ গুলোতেও হালাল খাবার পাওয়া যায়, (এছাড়া হালাল গোস্তের জন্যে টার্কিশ সপ ওবা, জেলদি আছে) তাই হালাল খাবার পাওয়া নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
৮. ফলের দাম তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক সময় কম, কারণ প্রায়ই অফার থাকে। তবে গরুর মাংস ও সবজির দাম তুলনামূলক বেশি। দেশি মুরগির দাম প্রায় বাংলাদেশের মতোই। তবে কলা, তরমুজ ইত্যাদির দাম বেশি এবং কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। কোমল ও মদ্যপ পানীয়ের দাম তুলনামূলকভাবে কম। খাতা-কলমের দাম বাংলাদেশের কাছাকাছি বা কিছুটা বেশি (একেক সুপার শপে একেক রকম হয়)
পোশাকের দাম অনেক বেশি। এক জোড়া ভালো জুতা বা একটি ভালো শীতের পোশাক কিনতে ৪০ থেকে ১০০ ইউরো পর্যন্ত বাজেট রাখতে হয়। মোবাইল ও ল্যাপটপের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি, তবে মান অনেক ভালো। এখানে ক্যাশ টাকা (ইউরো) ক্যারি করা লাগেনা, সব পেমেন্ট কনট্রাক্টলেস (NFC) এ করা যায়, চাইলে ক্যাশেও করা যায়!
৯. একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মাসে ৮৭ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারে। সেমিস্টার ব্রেকে ফুল-টাইম কাজ করা যায়। এখানে সর্বনিম্ন ঘণ্টাপ্রতি বেতন ১২.৮১ ইউরো। শিক্ষার্থীরা সাধারণত ১২.৮১ থেকে ১৩.৫০ ইউরো রেটে কাজ করে। পার্টটাইম জবে সাধারনত কোন ট্যাক্স পে করতে হয়না, তবে সোস্যাল সিকিউরিটি ফি দিতে হয়।
১০. মসজিদ তুলনামূলক কম, প্রায় সব মসজিদেই মা-বোনদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা থাকে। জুম্মা এবং ঈদের নামাজ তারা মসজিদে এসে পড়েন। রমাদানে সব মসজিদেই ফ্রি ঈফতারের ব্যবস্থা থাকে, মা বোনরাও অনেকে মসজিদে যেয়ে ঈফতার করেন।
১১. ডয়েচল্যান্ড টিকিট থাকলে ICE ছাড়া সব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ফ্রি। ট্রেনে টিকিট সবসময় চেক করেনা, বাসে-ট্রামে বন সিটিতে কখনোই টিকেট চেক করেনা।
NRW তে ট্রেন প্রায় সময় লেট করে। এক ট্রেন থেকে নেমে পরের কানেকটিং ট্রেন ধরার জন্যে আপনাকে সবসময় দৌড়াতে হবে! পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ফরেনদার পাশে জার্মান কেউ বসবে কি না, তার সম্ভাবনা ৫০-৫০! (আমার অভিজ্ঞতা এরকম ই)
১২. এখানে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সেও জার্মানরা অনেক সক্রিয়। বয়স্ক মানুষদের সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। রাস্তায় কোনো তথ্য জানতে চাইলে তারা বেশিরভাগ সময় সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারনত রেসিজম মুক্ত, বন শহরেও আমি এখনো রেসিজমের তেমন অভিজ্ঞতা পাইনি, তবে জার্মানিতে রেসিজম আছে।
১৩. সামারে তাদের ড্রেসের ঠিক থাকেনা! জার্মানদের কালচার হচ্ছে তারা মদ অফার করে! তবে কেউ মদ পান করে না জানার পর, তাকে আর মদ অফার করবেনা। তাদের পারিবারিক বন্ধন অনেকটাই কম! একটা বয়স পর্যন্ত পারিবারিক বন্ধন ভালোই থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে কমে যায় বলেই আমার ধারনা! বাচ্চা কাচ্চারা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর যার যার মত স্বাধীন! গার্ল্ফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড ই তাদের কাছে স্বামী - স্ত্রী!
১৪. দাড়ি থাকা, না থাকা নিয়ে তেমন কোন সমস্যা হয়না, কারো লম্বা দাড়ি আছে, নাকি দাড়ি নাই, কে কি পোষাক পরে আছে এগুলো নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা দেখিনাই!
১৪. বিশ্ববিদ্যালিয়ের যেসব শিক্ষার্থী রংধনুর সাথে জড়িত, তাদের পক্ষ থেকে প্রায় ই রংধনুর বিভিন্ন ইভেন্টে আমন্ত্রন জানিয়ে ইমেইল করে!
১৫. পাবলিক টয়লেট ইউজ করতে পে করতে হবে, এবং টয়লেটে টিস্যু ই একমাত্র ভরসা! 🫢
এই সব গুলো তথ্য গত ৯ মাসে বন শহরে থেকে আমার অভিজ্ঞতা! এবং সবগুলোই এভারেজ তথ্য! এক স্টেট থেকে অন্য স্টেটে, এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্থক্য হতে পারে!
আপনারা যারা জার্মানিতে আছেন আপনারাও কমেন্টে আপনাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারেন। ধন্যবাদ 😊