
27/04/2025
#কুহুবাস
❑বই পরিচিতি :
▪️নাম : কুহুবাস
▪️লেখক : তামান্না স্মৃতি
▪️জনরা : থ্রিলার
▪️মুদ্রিত মূল্য : ৫০০৳
▪️প্রকাশনী : চলন্তিকা
▪️প্রচ্ছদশিল্পী : ফারিহা তাবাসসুম
▪️রিভিউতে : ফারজানা উর্মি
"কঠিন সময়ের পাশাপাশি কখনো কখনো মানুষের জীবনে অবিশ্বাস্য রকমের আনন্দের সময়ও তৈরি হয়! নিজেরই অজান্তে কখনো কখনো কারো জীবনে এমন সব চমৎকার মুহূর্তের সৃষ্টি হয় যার জন্য সে নিজেও প্রস্তুত থাকে না।"
❑ভালো লাগার দিক :
"কুহুবাস" বইটি পড়াকালীন পাঠক একাধিক জনরার স্বাদ পাবে। কখনো পাঠকের মনে হবে ফ্যান্টাসি জগতে বসবাস করছে৷ আবার কখনো মনে হবে একটি স্বাভাবিক নিত্তনৈমিত্তিক জীবন-যাপন করছে। কিন্তু সবকিছুই থাকবে ধোঁয়াশার মতো। মানুষ হারিয়ে যাওয়ার পেছনের রহস্য অনুমান করতে পারলেও একসময় মনে হবে কে যেন চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেছে। ধরা দিয়েও যেন দেয়নি ধরা। পাঠকের মনে একের পর এক প্রশ্ন জাগবে কিন্তু উত্তর মিলবে না। আজমীর ফয়সাল, রায়হান কবির, নাবিলা কিংবা গবেষণার সঙ্গী হওয়া প্রত্যেক সদস্য একসময় সমাধানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেলেও রহস্য উদঘাটন করতে পারবে কিনা সেটাই হলো বহুল আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। উপন্যাসের সমস্ত জট যখন একটা একটা করে খুলতে থাকবে তখন পাঠককের চমকানোটাই শুধু বাকি থাকবে। বইটির এতো সব রহস্য পাঠকের মস্তিষ্কের জং পরিষ্কার করবে।
রহস্যে ভরপুর উপন্যাসগুলো অন্যরকম এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। সেই সাথে যদি পাওয়া যায় ফ্যান্টাসির স্বাদ তাহলে তো কথায় নেই। বইটি ভালো লাগার প্রথম কারণ হলো এর জনরা। দ্বিতীয়ত, বইটির প্লট। তৃতীয়ত, উপস্থাপনা এবং সর্বশেষ, লেখিকার লেখনশৈলী। এই সবকিছুর মিশেলে বইটি প্রাণ পেয়েছে এবং পাঠক পেয়েছে প্রশ্নের পাহাড়ে সময় কাটানোর সুযোগ।
লেখিকা তামান্না স্মৃতির লেখনশৈলী প্রশংসাযোগ্য। লেখিকার শব্দবুনন, বাক্যবিন্যাস, প্লট বাছাই, লেখার ভঙ্গিমা অসাধারণ। পাঠকের মনে জায়গা করে নেওয়ার জন্য যা যা দরকার এর সবকিছুই এই বইটিতে পাওয়া যাবে।
❑বইটি কেন এবং কারা পড়বেন :
মানুষ বই কেন পড়ে? এর নানাদিক কারণ থাকতে পারে। কেউ বই পড়ে আনন্দের জন্য। আবার কেউ পড়ে অবসর সময় কাটানোর জন্য। কেউবা ভালো লাগা, জ্ঞান আহরণ করা, জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করা, অজানাকে জানার জন্যও বই পড়ে থাকে। কুহুবাস বইটি পাঠককে পড়তে সাজেস্ট করার কারণও এর মধ্যেই নিহিত।
কুহুবাস এমন একটি বই যেখানে কয়েকটি জনরার মিশেল একসাথে পাওয়া যাবে। যাদের সামাজিক জনরা পছন্দ তারা যেমন বইটি পড়তে পারবে তেমনি যাদের ফ্যান্টাসি কিংবা থ্রিলার পছন্দ তারাও নির্দ্ধিধায় বইটি পড়তে পারবে। সব বয়সের পাঠকের জন্য বইটি উপযুক্ত।
একেক পর এক মানুষ হারিয়ে যাওয়া, আজমীর ফয়সালের গবেষণা, রায়হান-নাবিলার সম্পর্ক, আনিকার দোটানাভাব সবকিছুর কারণ জানতে হলে পড়তে হবে কুহুবাস বইটি। উক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও সমাধান মিলবে আরো কিছু রহস্যের। যা পাঠকের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করতে যথেষ্ট। কুহুবাসে আটকে যাওয়া জাল থেকে কীভাবে মুক্তি মিলবে কিংবা আদৌও মুক্তি মিলবে কিনা জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে তামান্না স্মৃতির লেখা "কুহুবাস" বইটি।
❑ব্যক্তিগত মতামত :
"কুহুবাস" সামাজিক, ফ্যান্টাসি, থ্রিলারের মিশেলে রচিত একটি বই। সামাজিক এবং থ্রিলার প্রেমী হওয়ায় বইটির প্রতি শুরু থেকেই একটা আকর্ষণ ছিল। তবে এর মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে আজমীর ফয়সাল নামক এক গবেষক।
লেখক তামান্না স্মৃতির বই আগে পড়া হলেও থ্রিলার পড়েছি এই প্রথম। সত্যি কথা বলতে আমি একটুও অনুমান করতে পারিনি আগে কী হবে! যত পড়ছিলাম মাথা তত হ্যাং হয়ে যাচ্ছিল। মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিলো, কেন হচ্ছে এসব! কিন্তু উত্তর আর হাতের নাগালে ধরা দিচ্ছিল না।
এই বইটা আমার একদম নিখুঁত মনে হয়েছে। মনে যেসব প্রশ্ন জেগেছে সবগুলোর উত্তর পেয়েছি। আমি সাধারণত একটানা বই পড়ি না কিংবা পড়তে পারি না। কিন্তু এই উপন্যাসটা আমাকে এমনভাবে আকর্ষিত করেছিল যে এক বসায় পড়ে শেষ করেছি। আজমীর ফয়সালের সম্পৃক্ততা, রায়হানের দায়িত্ব, নাবিলা, আনিকা, শিহাবসহ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যে খেলায় মেতেছিল তা থেকে কি মুক্তি মিলবে? ফিরে আসতে পারবে আপন ভুবনে? একটা সময় এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেয়েছিল। কিন্তু কিছু সময়ের ব্যবধানে তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কিছু মানুষের জন্য ভীষণ খারাপ লেগেছে। তারমধ্যে আসিফ অন্যতম।
কুহুবাস বইটার রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তবে এটুকু বলতে পারি, অনেকদিন পর একটা থ্রিলার উপন্যাস আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আর স্মৃতি আপুর লেখা তো বরাবরই চমৎকার। বইটা যতটা আশা নিয়ে শুরু করেছিলাম ততটাই তৃপ্তি নিয়ে শেষ করেছি।
❑বইয়ের কোয়ালিটি :
"কুহুবাস" বইটিকে মোটামুটি মাঝারি সাইজেই ফেলা যায়। এই সাইজের বইগুলোই মূলত আমি পড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। চলন্তিকার প্রোডাকশন কোয়ালিটি ভালো। তাদের বই সুবিধাজনক স্থানে রেখে নির্বিঘ্নে পড়া যায়। কুহুবাস বইটির বাঁধাই, কালার, পেইজের গুণগত মান, ফ্রন্ট সাইজ, মার্জিন ইত্যাদি বিষয়গুলো সন্তোষজনক। সামান্যতম টাইপিং মিস্টেক পর্যন্ত চোখে পড়েনি। এই বিষয়টা ভালো লেগেছে। কুহুবাস বইটির বাঁধাই খুব বেশি শক্তও নয় এবং খুব ঢিলাও নয়। এজন্য পড়ে আরাম পেয়েছি। এছাড়া বইটির প্রচ্ছদ একদম নজরকাঁড়া। প্রচ্ছদটির মর্মার্থ পাঠক বই পড়লেই বুঝতে পারবে।