27/07/2025
#সুপ্ত_অনুরাগে
#পাঠ_অনুভূতি
♦এক নজরেঃ
•উপন্যাসের নামঃ সুপ্ত অনুরাগে
•লেখকঃ প্রভা আফরিন
•ধরনঃ রোমান্টিক
•প্রকাশনীঃ চলন্তিকা
•প্রচ্ছদঃ আভা তাজনোভা ইরা
•মুদ্রিত মূল্যঃ ৬০০
•পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২০৬
•প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব
♦ভূমিকাঃ মাঝে মাঝে আমার অদ্ভুত জেগে থাকা রাতগুলোতে যখন সকালের আগমনের টের পাওয়া যায়, তখন কেমন একটা বই বই পায় । এরকম ভাবনার খেয়ালে কোনো কিছু পেতে চাওয়া মুহূর্তগুলোতে নিজেকে ভীষণ বিবশ গোছের মনে হয় । মনে হয় এগুলো না পেলে অদ্ভুত ভাবে দুঃখ কষ্ট নিয়ে ভেসে বেড়াতে হবে । বই পড়তে উদাসীন মনটাকে তবুও জোর নিয়ে বলতে হবে, আমার ভীষণ বই বই পাচ্ছে । তোমার তা সফল করার কোনো ইচ্ছা কেনো নেই, মন? মন বুঝি থমকে যায়, কষ্ট পায় । কিন্তু বাঁধা দেয় না । কারণ মনের শহরে বইয়ের জন্য যে আরো অধিকতর ভালোবাসা । এটা যেন প্রথম প্রেমের বৃষ্টির ছোঁয়ার মতো । তা বারণ করা যায় না, এড়িয়ে চলা যায় না । কিন্তু বাধাগ্রস্ত হয়, কখনও জড়িয়ে নেয়া হয় । এভাবেই মনের সাথে বই পড়ার ভালোবাসা প্রেম এবং অভিমানের মধ্যেই বাঁধা পড়ে আছে । সেই বাঁধা পড়ায় উল্টো গতিতে প্রভাবিত হতে থাকি । আজকেও আমার একটা বই বই পেয়েছিল খুব । এই বইটাকে বিছানায় রেখেছিলাম যেদিন বইটা প্রথম পেয়েছিলাম সেদিন থেকে । এতকাল ধরে কখনও জড়িয়ে ধরে রেখেছি । কখনও পাশে রেখে শুয়েছি । আজকে বড় অবেলায় হঠাৎ করে পড়ার জন্য বই বই পাওয়া মুহূর্তে এই বইটি ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাইনি আমি । অবশ্য এটাকেই তো বোধহয় পাওয়ার ছিল ।
♦নামকরণঃ যদি মনের আনন্দে অনুভূতি নিয়ে একরাশ আবেগ দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে । তবে জেনে নেয়ার মতো করে বলে দিতে হয়, এই উপন্যাস ‘পুষ্প নিকেতন-এর তেপান্তর-এ মন দেয়ার উপাখ্যান’ । পুষ্প নিকেতন যেন তেপান্তরে ভেসে গিয়ে মন নিয়ে কোথাও হারিয়ে যায় । কারো পুষ্প নিয়ে তেপান্তরী হওয়ার আখ্যান । ভালোবাসা কোথাও যেন অপ্রকাশিত হওয়ার মধ্যে থেকেও অনুভবে প্রকাশিত করার এক আবেগ ফুটিয়ে তুলে দিয়ে যায় ।
♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ জগতের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও মহার্ঘ্য বস্তুর উৎপত্তিস্থল সর্বদা দুর্গম স্থানেই হয় । যেমন বিশুদ্ধতম জলধারার উৎপত্তি ঘটে প্রকাণ্ড পর্বতের খাঁজে, দুর্লভ হীরে কিংবা সোনার অস্তিত্ব মেলে ভূ-তলের প্রস্তরীভূত গর্ভে । তেমনই ভালোবাসা নামক স্বর্গীয় অনুভূতির উৎপত্তিস্থল মানবহৃদয়ে নিহিত । যে দুষ্প্রয়াসী ব্যক্তি একবার সেই অনুভূতির সন্ধান পেয়েছে, সে হাজারো চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তার কাছে পৌঁছাতে চায়; কিন্তু নিকটে পৌঁছে গেলেও কখনো সখনো বাহ্যিক প্রভাবে সৃষ্ট দেয়াল দূরত্ব মেটাতে দেয় না । দেয়ালকে ভেদ করতে আবেগের শৈল্পিক শ্রম দিয়ে হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে তৈরি করতে হয় একটি জানালা । যে জানালায় হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখা যায় প্রথম প্রেমের ঝুম বৃষ্টিকে । আঁজলায় ভরে পান করা যায় অনুরাগের অমিয় সুধা ।
♦প্রচ্ছদঃ এই প্রচ্ছদটা ভীষণ সুন্দর । এবং আবেগতাড়িত করার এক চেষ্টা করে যায় অহরহ । একনাগাড়ে কিছুক্ষণ দেখলেই মুগ্ধ হয়ে ভেসে যেতে হয় । মনে হয় পৃথিবীতে মুগ্ধতা নামক বিশেষণগুলো বোধহয় এরকম বস্তুগুলোর প্রশংসা অর্থেই ব্যবহৃত হতে চেয়েছে রোজ । রোজকার এ জীবনে উপন্যাসটি ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে ভেসে আসে অপরাজিতা ফুল, একটা জানালা, দুই কাপ চা, জানালার পর্দা । কিন্তু তার থেকেও ভেসে আসে বাইরের নিস্তব্ধ উদাসীন আকাশে এক অদ্ভুত ভালোবাসা । যে ভালোবাসা পৃথিবীতে আসতে চায় বিভিন্ন রূপ নিয়ে । সম্পর্ক নিয়ে ।
♦পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
✓পটভূমিঃ বলতে দ্বিধা নেই প্রথমদিকে উপন্যাসটি পড়তে পড়তে রোজকার জীবনের গড়ে উঠা পাঠক মনে তোলা নিয়মিত পটভূমির মতো মনে হওয়া উপন্যাসটির প্রতি প্রথম আলোড়ন জেগেছিল হঠাৎ করে কাহিনীর গভীরতা । কোথাও একটা অদ্ভুত আলোড়ন তুলে দেয়ার মতো করে গল্পটা ভেসে এসেছিল । আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল, এটা এমন একজন লেখকের লিখনশৈলী । যার লেখা নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের অহরহ পড়া রোমান্টিক উপন্যাসগুলোর মতো কোথাও একটা হবে না । সামাজিক টানাপোড়েন, জীবনের আলোড়ন, ভালোবাসার তীব্র চেষ্টা, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সম্পর্কের দায়বদ্ধতা ঘিরে রাখা উপন্যাসটির পটভূমিকে একটা পর্যায়ে ভীষণ ভালোবাসতে ইচ্ছে করে । মনে হতে থাকে যেন এই উপন্যাসটা বড্ড বেশি প্রিয় । পুষ্প নিকেতন এর কোনো পুষ্প তেপান্তরে গিয়ে বাঁধা পড়ার এই যাত্রা অনেককিছুর সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায় । কোথাও উপন্যাসের গল্প বলার ধাঁচ মুগ্ধ করে । কোথাও একনাগাড়ে জীবনে বয়ে যাওয়া দুঃখ আলোড়ন তুলে । কোথাও কিছু পেয়েও পাওয়া না পাওয়ার অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা নিশ্চুপ করে দেয় । এই এত এত অসহযোগ পরিস্থিতির মতো মুহূর্তগুলোতে আমি বরং উল্টো বিশেষণে তাল মেলাই । আমার উপন্যাসের গভীরতা মন টানে । একনাগাড়ে গল্প বলার ধাঁচে যে ভারসাম্যতা আসে তা ভীষণ আবেগতাড়িত করে দেয় । উপন্যাসের গতি প্রবাহে পটভূমির প্রেক্ষাপটে দৃশ্যপটগুলো তাই মন কাড়ে খুব । যেন বলতে চায় আপন করে নেও তো!
✓আবহ গঠনঃ এই উপন্যাসে আবহ তৈরির জায়গা অনেকখানি । বেশ গুরুত্ব নিয়ে উপন্যাসটি তৈরি করা হয়েছে যে তা বোঝা যায় যেন । বড় মায়া দিয়ে যেন তৈরি করার মতো করে যেন ধাঁচ ফেলে তৈরি করা । যেহেতু উপন্যাসে পটভূমিটা রোজকার জীবনের গল্পের মতো মনে হলেও গভীরতা আছে, তাই উপন্যাসের ভাবাবেগে কোথাও একটা যেন আবহ তৈরির জায়গাটা অদ্ভুত এক সুর তুলে । মনে আলোড়ন তৈরি করে ফেলার মতো । দুইটি বিচরণ করা ‘পুষ্প নিকেতন’, ‘তেপান্তর’ বেশ প্রভাবিত করে । সম্পর্কের ধাঁচ, আবেগতাড়িত অনুভব, অপরাজিতা ফুল এবং বিভিন্ন বিশেষণে মোড়ানো আপেক্ষিকতা এই উপন্যাসে অদ্ভুত সুন্দর এক আবহ তৈরি করে দেয় ।
♦চরিত্র গঠনঃ এই উপন্যাসের চরিত্র গঠনেও এক অদ্ভুত মিষ্টি ছোঁয়া গেঁথে আছে । যদিও এই ছোঁয়া টের পাওয়া যায় না । প্রতিটি চরিত্র তা তার উপস্থিতি দীর্ঘ সময় থাকুক বা কম সময় কিন্তু যতক্ষণই ছিল ততক্ষণ যেন কোনো না কোনো ধরনের অদ্ভুত বিভিন্ন বিশেষণ নিয়ে রাজত্ব করে বেড়িয়েছিল । কোথাও থেকে ভেসে বেড়াচ্ছিল ভালোবাসা, কোথাও থেকে নিঃসঙ্গতা । কোথাও হারিয়ে পাওয়ার সুর । কোথাও না পাওয়ার বেদনা । কোথাও যেন পাখির করুণ সুরে ডাকার মতো করে সমাজের অহংবোধে পারিবারিক অদ্ভুত টান । এই এত এত মিশেলে বিভিন্ন চরিত্র আসে । গল্পের প্রয়োজনে মিশে যায়, মিলে যায় নিজেদেরকে নিয়ে ।
♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ
•সুপ্তঃ ভালোবাসাকে নিজের আকাশে ভাসিয়ে দিয়ে, পাখি তুমি মনের আকাশে যতটা জায়গা মেলে উড়ো, ততটাই শব্দ করে উচ্ছলতা নিয়ে উড়ো এরকম আবেগতাড়িত হওয়া অনুভব নিয়ে ভেসে বেড়ানো পুরুষ চরিত্রটি মনের দিক থেকে উচ্ছল । প্রাণবন্ত স্বভাবের পুরুষটির ডিয়ার বাডি নিয়ে অদ্ভুত এক স্পর্শ পাওয়ার টান আছে যেন । কিছু পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে ভেসে বেড়ানো চরিত্রটির কিছু অতীত তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, দ্বিধান্বিত হয় । কিন্তু ভালোবাসায় যেন পাওয়ার কোনো তাড়া । প্রিয় ভালোবাসা, তোমার নাম বিশিষ্ট সবকিছুই তার কাছে স্বাদহীন কিন্তু তোমার নামের বিশেষে মানুষটা মূল্যবান হয়ে ঘুরে বেড়ায় ।
•কাজুঃ জীবনের প্রতি উদাসীন মানুষটির ঘুরে বেড়ানোর তাড়া । জীবনের প্রতি বিরহের ছাপ দিয়ে উদাসীন ঘুরে বনেবাদাড়ে এলোমেলো পা ফেলার ধাপগুলো স্পর্শ হয়ে যেন তাকে ব্যাখ্যা করে । বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মজা করার মানসিকতা নিয়ে চলে আসার অদ্ভুত এক চেষ্টা তার মাঝে ।
•শিমুলঃ বোনের কাছে সবকিছু আবদার করা ছেলেটার জীবনে যত্ন করে বড্ড আকাশের মতো করে উড়বার ইচ্ছে । কিন্তু পরিস্থিতি তাকে ভয় পাওয়ায় । পিছিয়ে দেয় । বিভিন্ন পরিস্থিতি এলে তাই সুখকে কাছে পাওয়ার সময়েও তাই স্পর্শ করার তাড়া ।
•অপরাজিতাঃ গৎবাঁধা জীবনের গল্পে কোথাও নিজেকে মেলে দিতে চাওয়ার চেষ্টা এবং ইচ্ছে দুইয়ের সংমিশ্রণে বাঁধা পড়া না পড়ার আখ্যানে সমগোত্রীয় শব্দ হিসেবে নাম দিয়ে সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া মেয়েটির নাম অপরাজিতা । কারো স্বপ্ন পূরণ করতে চাওয়া, নিজেকে কোথাও ভাসিয়ে না দেওয়ার চেষ্টা তাকে শক্ত করতে চায় । ভালোবাসতে বাঁধতে দিতে চায় । কিন্তু বাঁধা পড়েও যেন পড়া হয় না । শিকলে বাঁধা আবদ্ধ জীবনে নিজের হাসি বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে যেন ।
•আনিস রহমানঃ সমাজের চিরাচরিত নিয়মের মর্যাদা এবং অভ্যাসের এক মেলবন্ধনে জীবনের কোথাও একটা গিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে যে সুখ সুখ আবছায়াটি টের পাওয়া হয়, সেটা বোধহয় পাওয়া হয় না । অদৃশ্য এক আলোড়নে শুধু হাতের কাছে অবয়বের আবছায়া স্পর্শ বোধহয় পাওয়া হয় । আনিস রহমান তেমনই একজন মানুষ । যিনি নিজের সম্মান, মর্যাদা, অবস্থা সবকিছুর প্রতি খেয়ালে কোথাও একটা অনেকগুলো বিষয় হারিয়ে ফেলতে বসেন ।
•রফিক ইমামঃ নিজ সন্তানকে ভালোবাসতে চাওয়া মানুষটি জীবনে অদ্ভুত আলোড়নে সুখের সাথে স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়তে চেয়েছিলেন । কখনও তা পাওয়া হয়েছিল, কখনও বোধহয় নিঃসঙ্গতা এলোমেলো পা ফেলে রাতের অন্ধকারে সন্ধি পেতেছিল । এই বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের হাসিখুশি মানুষটির কিছু অতীত তাকে আঁকড়ে ধরে বেড়ায় ।
•ফারিহাঃ সময়ের অদ্ভুত এক টানে এই নারীটি জীবনের অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছিলেন । প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খেয়াল বশে জীবনের সুখ কোনো একটা জায়গায় গিয়ে বাঁধা পড়ে । কোথাও গিয়ে ছুটে বেড়ায় । কোথাও গিয়ে এই জীবনের সবকিছুতে নিজেকে মেলে ধরতে শিখে যায় সে ।
•টুকিটাকি চরিত্রঃ এছাড়াও এই উপন্যাসে আরো বেশ কয়েকটি চরিত্র আছে । যারা উপন্যাসের ভাবাবেগে প্রেক্ষাপট এবং দৃশ্যপট অনুযায়ী উপন্যাসের গল্পে এসেছে । উপন্যাসে ভেসে এসেছে নিজের সুখের স্বল্প দায় নিয়ে বেঁচে থাকা ফরিদ, যার কিছু কিছু মুহূর্তগুলো বেশ সুন্দর হয়ে মনে কাজ করে । এছাড়াও আছেন নিজের স্বকীয়তা নিয়ে নিশ্চুপে চলাচল করা জাহেদা । যিনি সন্তানদের জন্য কখনও শব্দ দিয়ে নিশ্চুপতা ভাঙেন । এছাড়াও উপন্যাসে ভেসে আসে সমাজ, পরিবারের বিভিন্ন সংস্কার থেকে হঠাৎ করে খানিক সুখের আহরণে বেরিয়ে পড়া বেলী, যার জীবনে সুখের দায়ে কখনও রাগ হয় । কখনও হিংসা হয় । কিন্তু রোজকার সমাজে তা তৈরি হওয়া পিছনের গল্পগুলো দেখা হয় না । নিরীহ গোছের চুপচাপ নিজেকে বরণ করে নেয়া আজিজ যেন ভেসে বেড়ায় পুরোটা উপন্যাস জুড়ে । নিজেকে মেলে ধরে আবছায়া অদৃশ্য অনুভব দিয়ে । উপন্যাসে আবছায়া এক আলোড়ন, এক আবহ নিয়ে নিজের উপস্থিতি মেলে ধরা তন্ময় এর ভালো হতে ইচ্ছে করে খুব । কখনও এক ভোরে, কিংবা কখনও রাতের অন্ধকারে তার ইচ্ছে করে ভালো প্রেমিক হতে । ভালো প্রেমিক হওয়ার চেষ্টায় সফল হতে হতে জীবনের মায়ায় এগিয়ে যেতে চায় । সাময়িক কিছু পরিস্থিতি জীবনকে এলোমেলো করে বেড়ায় । কখনোবা তা কাটিয়ে ফেলা হয়ে যায় কিন্তু জীবনের অদ্ভুত লুকোছাপা এবং লুকোচুরির মেলবন্ধনে মানুষটি তা এড়িয়ে চলতে চায় । নিজের নামের মতোই হওয়া বৈশাখী এর কোনো এক দায়ের জীবনে কিছু না হতে পারার কষ্ট অন্য কিছু দিয়ে মেলে ধরতে চেয়েছিলেন ।
♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাসটি যখন একটা সময় পড়ে হঠাৎ করে মনে হলো, এই উপন্যাসটি পড়ে আমার যা কখনও করতে ইচ্ছে করে না, তাই করতে হবে নাকি! আমি ভয়ে থাকি । অদ্ভুত এক আলগোছে চিন্তায় ক্ষয়ে যেতে থাকি । মনে হয়, এই পৃথিবীতে সুখের মুহূর্তে চোখে ছলছল ভাব আমার জন্য নতুন কিছু নয় । এবং এই উপন্যাসটি বিভিন্ন সম্পর্ক পূরণের । কিছু বিশ্লেষণের । দিনশেষে সম্পর্কের রসায়ন এবং মুহূর্তকে কাছে নিতে গিয়ে এই উপন্যাস পিতা এবং সন্তানের । তাদের সম্পর্কের রসায়ন, কিংবা আবছায়া অনুভব ভালো লাগা দেয় । অদ্ভুত মোহনীয় পরিবেশ তৈরি করে । এছাড়াও এই উপন্যাসে সংলাপের মাঝে কিছু অদ্ভুত কাব্যিক আবেগ ভেসে আসে যা ভালো লাগা দেয় । কথার পিঠে কথা, মনের কাছে মন এই মুহূর্তগুলোতে একে অপরের সাথে কথার আলোড়নে কাব্যিক এক অদ্ভুত সৌন্দর্য তৈরি করে যেন । যা ভালো লাগা দেয় কেমন একটা । এছাড়াও আনিস রহমান এবং শিমুল এর একটা দৃশ্যপট ভীষণ মনের কাছাকাছি হয়ে থাকে । কাজু এর কিছু হাস্যরস, শিমুল এর দুরন্ত ছলছল মুহূর্ত এবং তন্ময়-সুপ্ত অদ্ভুত সম্পর্কের বাক্যালাপ বেশ মুগ্ধ করে ফেলতে চায় । সমাজের অদ্ভুত সংস্কার, বাবা মায়ের নিজস্ব ধ্যানধারণা যেন ভেসে আসে । দিনশেষে পুষ্প নিকেতন তেপান্তরে গিয়ে হারালো নাকি তেপান্তরে গিয়ে কেউ পুষ্প নিকেতন এর মনকাড়া আলোড়ন খেয়ালে রাখলো সেটাই দেখার ।
♦সংলাপঃ এই উপন্যাসের সংলাপ ধারণ বেশ ভালো । কাব্যিক এক আবেগ ভেসে এসেছে কোথাও কোথাও । এছাড়াও সম্পর্কের রসায়নে বিভিন্ন আলাপে আলাপচারিতা করার এক চেষ্টা ভেসে এসেছে যা বেশ ভালো লাগা দেয় । কোথাও কোথাও এই উপন্যাসে বর্ণনামূলক আবহ এবং সংলাপ ভিত্তিক আবছায়া এর মাঝে যেন এই উপন্যাসটির উপস্থাপন করার ভঙ্গিমা আলাদা হয়ে দাঁড়ায় ।
♦লেখক প্রসঙ্গেঃ ‘সুপ্ত অনুরাগে’ লেখক প্রভা আফরিন এর তৃতীয় উপন্যাস । আমার পড়া হিসেবেও এটি তার তৃতীয় উপন্যাস । কোথাও একটা গিয়ে এটা লেখকের নিজস্ব লিখনশৈলীর বাইরে গিয়ে অন্যরকম এক চেষ্টা । কিন্তু সেই চেষ্টাতেও যেন নিজস্ব এক ধাঁচ বের হয়ে এসেছে । অদ্ভুত এক স্বকীয়তা বিরাজ করেছে । এই উপন্যাসেও সম্পর্কের আবছায়ায় পিতা-সন্তান এর অদ্ভুত রসায়ন আবার ভেসে আসতে চেয়েছে । এরকমই এক মুহূর্তগুলোতে আমার হঠাৎ করে মধুসখা এর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল । তবে এখানের গল্প অন্যরকম । অন্যরকম এক টান । কোথাও গিয়ে পটভূমিতে এক গভীরতা । পটভূমি উপস্থাপন করার মাঝে চৌকস এক ছাপ গল্পটিকে সুন্দর করে তুলে । অদ্ভুত সুন্দর এই লেখাটার মতো লেখা কখনও কখনও বেশ পড়তে ইচ্ছে করে । লেখকের পরবর্তী লেখার জন্য বেশ শুভকামনা রইলো ।
♦প্রকাশনীঃ এই বইটা বেশ সুন্দর ভাবে বাঁধাই করা হয়েছে । প্রচ্ছদটা দারুণ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । বেশ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে কেনো যেন । প্রচ্ছদ ফুটিয়ে তোলা, বই বাঁধাই বেশ ভালো । উপন্যাসটি সাজানো বেশ সুন্দর । আশ্চর্য ভাবে এই উপন্যাসটির বানান ত্রুটি এবং টাইপিং মিস্টেক বেশ প্রশংসার যোগ্য । তেমন নেই বললেই চলে । এত সুন্দর ভাবে বইটি ফুটিয়ে তুলতে পারা বেশ অসাধারণ । বইটির মূল্য পাঠক হিসেবে হতাশ করে দিতে চায় । এদিকটিতে নজর দেয়া একান্ত জরুরি বলে মনে হয় । অন্যথায় অসাধারণ একটা কাজ হয়েছে বলা যায় ।
♦রেটিংঃ ৪.৮/৫
♦উপসংহারঃ উপসংহারে আসলেও কিছু বলার নেই । সবথেকে যা বলতে ইচ্ছে করে তা হলো, এই অনুভূতিটা আমি অনেকক্ষণ ধরে একটু একটু করে লিখেছি । সকালে একটু, এখন একটু । এত সময় নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে হয়েছে, এই উপন্যাসটি এতটা সুন্দর না হলেও পারতো । এত কাব্যিক আবেগে আবেগতাড়িত না করতেও পারতো । চরিত্রগুলোর মাঝের বিভিন্ন সুখ এবং কষ্টের মুহূর্তগুলো মনে আলোড়ন না করলেও পারতো । শুধু একটা অংশবিশেষ দিয়ে শেষ করি,
“তুমি ছাড়া সকল অপরাজিতা স্বাদহীন । তুমি ছাড়া সকল অপরাজিতা গন্ধহীন । তোমার কাছে সকল অপরাজিতারা মলিন। এরপরেও কী সন্দেহ থাকে তুমি কতটা মূল্যবান?”