চলন্তিকা

চলন্তিকা নান্দনিক বই প্রকাশনী "চলন্তিকা" সব সময় আপনাদের ভাল কিছু দেয়ার চেষ্টা করে আসছে । পাঠকের মন জয় করা এতটা সহজ কাজ না, কিন্তু আমরা বদ্ধপরিকর ।

কথায় আছে, হাসি নাকি স্বাস্থের জন্য ভালো। আর পৃথিবীতে অন্যতম কঠিন কাজটি হলো মানুষকে হাসানো। এই কঠিন কাজটিই খুবই সাবলীল ও ...
23/08/2025

কথায় আছে, হাসি নাকি স্বাস্থের জন্য ভালো। আর পৃথিবীতে অন্যতম কঠিন কাজটি হলো মানুষকে হাসানো। এই কঠিন কাজটিই খুবই সাবলীল ও সুনিপুণভাবে অবলিলায় করে যাচ্ছেন লেখক ফাহমিদা মাহবুবা। তার লেখা রম্য গল্প ও উপন্যাস যেকোন মানুষকে হাসতে বাধ্য করে। চলন্তিকা সাহিত্য পুরষ্কার ২০২২ এ রম্য ক্যাটাগরিতে লেখক ফাহমিদা মাহবুবা বিজয়ী হন।

লেখক ফাহমিদা মাহবুবার জন্মদিনে চলন্তিকা পরিবারের পক্ষ থেকে জানাই অনেক অনেক শুভকামনা। লেখকের রম্য উপন্যাস "ঘটনার ঘনঘটা" ২০২৩ এর অমর একুশে বইমেলায় চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো। এছাড়াও ২০২৪ এ লেখকের একক উপন্যাস রোমান্টিক রম্য ঘরনার "সিরিয়াস প্রেম" এবং ২০২৫ এ ব্যাপক ঝামেলা পাকানো "ঝামেলায় জমেলা" বইটিও চলন্তিকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
লেখকের সুস্থ জীবন, সুন্দর সাহিত্যচর্চা, পরিশীলিত জীবনবোধের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
এভাবেই হাসতে থাকুন আর হাসাতে থাকুন পাঠকদের।

শুভ জন্মদিন।

 #বুক_রিভিউবই : জলজোছনা লেখক : শিরিন শবনম প্রচ্ছদশিল্পী : ফারিহা তাবাসসুম জনরার : উপন্যাসিকাপ্রকাশনী : চলন্তিকামলাট মূল্...
14/08/2025

#বুক_রিভিউ

বই : জলজোছনা
লেখক : শিরিন শবনম
প্রচ্ছদশিল্পী : ফারিহা তাবাসসুম
জনরার : উপন্যাসিকা
প্রকাশনী : চলন্তিকা
মলাট মূল্য : ২২০ টাকা

★পাঠসংক্ষেপ:
"জলজোছনা" মূলত কোনো গল্পনির্ভর উপন্যাসিকা নয় বরং এক গভীর অনুভব ও অন্তর্লোকের যাত্রা। লেখক শিরিন শবনম আপু এখানে ঘটনা প্রবাহকে কেন্দ্র করে কাহিনি সাজাননি বরং মানুষের হৃদয়ের সূক্ষ্মতম আবেগ, উপলব্ধি ও অন্তর্গত ভাবনাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। যা মানুষের অনুভূতি আর ভাবনার এক নীরব ভ্রমণ। যেগুলো আমরা অনেক সময় অনুভব করলেও ভাষায় প্রকাশ করি না। লেখক শিরিন শবনম দু’টি মাত্র চরিত্রের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় করিয়েছেন এক রহস্যময় সংযোগের, যা বাস্তবতার বাইরে গিয়ে চলে মানুষের মনের অদৃশ্য জগতে।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র পিয়তি—যিনি নিজের জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে ফেসবুকে এক রহস্যময় বন্ধুর সঙ্গে ভিন্নধর্মী কথোপকথনে জড়িয়ে পড়েন। এ সম্পর্কের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই, তবু তা গভীরভাবে নাড়া দেয় তার অন্তর্জগতে।
লেখক জলের সঙ্গে চাঁদের মায়া, আলো-ছায়ার খেলা আর ভালোবাসার নীরব স্রোত দিয়ে মানুষের মনের ভেতরের জগৎকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভালোবাসাকে এখানে কোনো পাওয়া-না-পাওয়ার হিসাব নয়—বরং এক আলোকিত অনুভূতি হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা নিজের ভেতরেই থেকে মানুষকে পূর্ণতা দেয়।
লেখক শিরিন শবনম কাব্যিক ভাষায় দেখিয়েছেন, কীভাবে সাধারণ আলাপও কারও জীবনে গভীর প্রতিফলন ফেলতে পারে। পিয়তির দোলাচল, অনিশ্চয়তা, অজানা আকর্ষণ এবং অস্তিত্বের প্রশ্ন গল্পটিকে দিয়েছে দর্শনময় এক আবহ।
বইটা পড়তে গিয়ে মনে হবে, যেন ঢেউয়ের ভাঙা ছায়ার মতো আমাদের অনুভূতিগুলোও ক্ষণস্থায়ী হলেও তার সৌন্দর্য অমলিন। জলজোছনা মূলত নিজের ভেতরের আয়নায় নিজেকে দেখা আর সেই আয়নায় নতুন করে নিজেকে চিনে নেওয়ার গল্প।
যারা গভীর ভাবনায় ডুবে যেতে চান, আত্মজিজ্ঞাসায় আনন্দ পান, তাদের জন্য জলজোছনা একটি অসাধারণ পাঠ হবে।

★পাঠ প্রতিক্রিয়া:
জলজোছনা পড়তে গিয়ে মনে হলো, আমি যেন কোনো গল্প নয়, বরং একটানা এক অনুভূতির স্রোতে ভেসে যাচ্ছি। এখানে নাটকীয় বাঁক বা তীব্র ঘটনাপ্রবাহ নেই কিন্তু আছে এমন সব শব্দ আর বর্ণনা, যা পড়লেই মনে গভীর এক ঢেউ লাগে। এই বইতে ভালোবাসা যেন কোনো সম্পর্কের হিসাব নয় বরং এমন এক অনুভব, যা কাউকে না ছুঁয়েও মনকে ভরে দিতে পারে।
পড়তে পড়তে একসময় মনে হবে, লেখক যেন পাঠকের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন মনোজগতের সেই জায়গায়। যেখানে বাইরের কোলাহল নেই আছে কেবল নীরব আলো-ছায়া আর নিজের সাথে কথা বলার সময়। সম্পর্ক এখানে পরিচয়ের সীমায় বাঁধা নয়। না পুরো আপন, না পুরো পর; তবু তার টান থাকে হৃদয়ের গভীরে। লেখক শিরিন শবনমের লেখার সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো, তিনি ভাবনাগুলোকে কাব্যিক ছোঁয়ায় সাজিয়েছেন কিন্তু তাতে কোনো আড়ম্বর নেই। ভাষা সহজ অথচ তার ভেতরে লুকিয়ে আছে অনেক স্তরের অনুভূতি। জলজোছনা এমন এক বই, যা দ্রুত পড়ে শেষ করার নয় এটা ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে পড়লে তবেই তার সৌন্দর্য ধরা দেয়।
শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এসে মনে হয়েছে, এই বইয়ের আসল শক্তি তার আবহে। যা পড়া শেষে অনেকক্ষণ ধরে মাথায় ঘুরে বেড়ায়। মননশীল পাঠকের জন্য এটা এক দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

★বইয়ের অন্যান্য দিক:
বইয়ের প্রচ্ছদ খুবই স্নিগ্ধ আর চোখ ধাধানো সুন্দর। বইয়ের প্রডাকশন কোয়ালিটিও আর বাইন্ডিং চমৎকার ছিলো। বানান ভুল তেমন চোখে পড়েনি। সব মিলিয়ে ভালো লাগার মতোই একটা বই।

★পছন্দের কিছু লাইন:
১."তুমি জানো না বিরহের কত রং প্রেমের কত রং বেদনার কত রং তুমি শুধু সার্বজনীন এক নাম নিঃসঙ্গতা।"
২."আমি নতজানু হই নিজের হৃদয়ের চাওয়ার কাছে।। জগৎ জীবন রইল তার নিজের মতই কোলাহলপূর্ণ। শুধু আমার নিজের মাঝে অস্তিত্বময় এক অপরূপ জলজোছনা।"
৩."প্রেমের শবদেহে নিষ্ঠুর নির্দয় এক এপিটাফ হলো লেখা এ জীবন কেবলই এক মায়ার খেলা।"
৪."দুরন্ত আবেগ অনিবার্য প্রয়োজন পাল্টে যায় সবকিছু বদলে যায় অতি ধীরগতি লয়ে মসৃণ গতিপথে নিঃশব্দ পদচারণায় কে কবে পারে তার খবর রাখতে আগেভাগে?"

রিভিউতে: শাহানাজ রিয়া
(ভুলত্রুটি মার্জনীয়)

✨ অভিনন্দন লেখক সালমা সুলতানা ✨চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে ২০২৫ এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে লেখক সালমা সুলতানা-র চমৎকার গল্পগ্র...
13/08/2025

✨ অভিনন্দন লেখক সালমা সুলতানা ✨

চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে ২০২৫ এর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে লেখক সালমা সুলতানা-র চমৎকার গল্পগ্রন্থ “রঙ্গমঞ্চ "।
পাঠকদের ভালোবাসা আর চাহিদায় বইটি ইতোমধ্যেই স্টক আউট। আলহামদুলিল্লাহ।

এই সাফল্যের জন্য লেখক সালমা সুলতানাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশে কিছুটা সময় লাগলেও পাঠকের অপেক্ষা সার্থক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

চলন্তিকার পক্ষ থেকে আবারও—
🌸 শুভকামনা, সালমা সুলতানা 🌸

✨ অভিনন্দন লেখক আফসানা নীতু ✨চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল লেখক আফসানা নীতু-র অসাধারণ উপন্যা...
12/08/2025

✨ অভিনন্দন লেখক আফসানা নীতু ✨

চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল লেখক আফসানা নীতু-র অসাধারণ উপন্যাস “অতি সাধারণ”।
পাঠকদের ভালোবাসা আর চাহিদায় বইটি ইতোমধ্যেই স্টক আউট। আলহামদুলিল্লাহ।

এই সাফল্যের জন্য লেখক আফসানা নীতুকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশে কিছুটা সময় লাগলেও পাঠকের অপেক্ষা সার্থক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

চলন্তিকার পক্ষ থেকে আবারও—
🌸 শুভকামনা, আফসানা নীতু 🌸

ছবি কৃতজ্ঞতা আরফিয়া

বর্তমান সময়ের মেধাবী ও স্বচ্ছচিন্তার লেখক সাবিকুন নাহার নিপাকে জানাই চলন্তিকা পরিবারের পক্ষ থেকে জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ...
10/08/2025

বর্তমান সময়ের মেধাবী ও স্বচ্ছচিন্তার লেখক সাবিকুন নাহার নিপাকে জানাই চলন্তিকা পরিবারের পক্ষ থেকে জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
তার একক সমকালীন রোমান্টিক উপন্যাস "ভেতর বাহির" ২০২৫ সালের অমর একুশে বইমেলায় চলন্তিকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সমাজ, সম্পর্ক ও মানবমনের জটিল বাস্তবতাকে সংবেদনশীল কলমে তুলে ধরার জন্য তিনি পাঠকমনে ইতিমধ্যেই বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন।
লেখকের ব্যক্তি ও সাহিত্য জীবনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। সুন্দর হোক আগামীর পথচলা।

শুভ জন্মদিন।

 #বুক_রিভিউবই: অল্প কথার গল্পেরালেখক: আফরোজা মামুদজনরা: ছোটগল্পগ্রন্থপৃষ্ঠা: ১৮৮প্রচ্ছদ: আফরোজা মামুদ ও নিগার সুলতানাপ্র...
10/08/2025

#বুক_রিভিউ
বই: অল্প কথার গল্পেরা
লেখক: আফরোজা মামুদ
জনরা: ছোটগল্পগ্রন্থ
পৃষ্ঠা: ১৮৮
প্রচ্ছদ: আফরোজা মামুদ ও নিগার সুলতানা
প্রকাশনী: চলন্তিকা
প্রকাশকাল: ২০২৫ বইমেলা
মূল্য: ৪৫০ টাকা

★গল্প সংক্ষেপ:
অল্প কথার গল্পেরা বইটিতে রয়েছে আঠারোটি ভিন্ন স্বাদের গল্প। প্রতিটি গল্পের প্লট, আবহ ও চরিত্র বিন্যাস পাঠককে আলাদা আলাদা অনুভূতির ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়। কোথাও নিঃসঙ্গতা, কোথাও মুক্তিযুদ্ধ, কোথাও প্রেম-প্রতারণা বা সামাজিক টানাপোড়েন—সব মিলিয়ে এক বৈচিত্র্যময় পাঠ-অভিজ্ঞতা।

১. ইতি বৃহন্নলা:
এই গল্পটি আমাদের আশেপাশে থাকা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবনাচার নিয়ে লিখা। তাদের স্ট্রাগল, মানুষের থেকে পাওয়া অবহেলার এক নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে এই গল্পে।

২. অবেলায়:
জীবনের একটা সময়ের পর মানুষ কতোটা একাকিত্ব বোধ করে সেই চিত্র এই গল্পে ফুটে উঠেছে।

৩. আমার বাবার আংকেল হয়ে ওঠার গল্প:
এই গল্পটা যেন আমাদের সমাজের একটা চিত্র তুলে ধরলো। বাবা না থাকলে মা যেভাবে বাচ্চাদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে বাবারা সেটা পারেনা। গল্পটা শেষ হতে হতে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো। কি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম বলে বুঝানোর মতো না। এজন্যই হয়তো মুরব্বিরা বলেন "মা মরে গেলে বাপ হয় তাউই"।

৪. ওয়ান্স ইন আ ব্লু মুন:
মানুষ কতোটা অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর হতে পারে সেটা এই গল্পের লক্ষণীয় একটা দিক। গল্পটা পড়ে মন কেমন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তবে গল্পের সমাপ্তিটা অনেক দ্রুত মনে হয়েছে।

৫. পৃথিবীর কঙ্কাবতী:
জীবন মানেই সংগ্রাম, দুঃখ ও বেদনা। সে আপনি যে অবস্থানেই থাকুন না কেন। ভিন্ন সামাজিক অবস্থানের দুই নারীর জীবন ধারণের মর্মাস্পর্শী চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক এই গল্পে।

৬. দ্বিতীয় রমণী:
এই গল্পে ফুটে উঠেছে একটা সংসার কিভাবে এক নিমিষেই ভেঙে গুড়িয়ে যেতে পারে সেই চিত্র। এই গল্পটা মানুষের সম্পর্কের ভিতকে নাড়িয়ে দিতে পারবে।

৭. ছ্যাকামাইছিন:
পুরান ঢাকার মানুষের ভাষা এম্নিতেও আমার কিউট লাগে। এই গল্পটা পড়তে গিয়ে আমি বারবার আটকা যাচ্ছিলাম, তবে গল্পের লেখা পড়তে গিয়ে আমার মুখ দিয়ে যে পুরান ঢাকার মানুষের টোন চলে আসছিলো তা ঠিক বুঝতে পারছিলাম।

৮. চুরি:
আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে যারা দাড়ি-টুপি পড়ে মোল্লার ভাব নিয়ে চলাফেরা করে, বছরে বছরে বাচ্চা পয়দা করে জান্নাত হাসিল করত্ব অথচ তাদের ভরণপোষণের খরচ দিতে ইচ্ছুক না। আবার এমন অনেক কুটনি টাইপের মহিলাও আছেন যারা অন্যের ভালো থাকা সহ্য করতে পারেন না। গরীব পরিবারের মেয়েদের জীবন হয়তো গল্পের ❝আপা❞ চরিত্রের মতোই যন্ত্রণা সহ্য করতে করতেই জীবন পাড় করে দেয়। আর মায়ের কথা কি বলব, অভাবের কারণেই হয়তো মায়ের হাত পা শিকলে বাঁধা। তবে এই গল্প আমাদের আবারো মনে করিয়ে দেয় যে — অভাবে স্বভাব নষ্ট কথাটা মিথ্যে না।

৯. তেজ কাটাল:
প্রেম জাত-কুল, ধর্ম এসব কিছুই মানে না। কিন্তু এসব ধর্মীয় বাধা উপেক্ষা করেও কখনোবা দুটি মন এক হতে চায়। কিন্তু তা কি চাইলেও সম্ভব সবসময়?? সামাজিক ও ধর্মীয় বাধা বিবেধ তো একটা থেকেই যায়। পরিবারের চাপে পরে হয়তো আলাদা হতে সেই দুই মন কে। প্রেম বিরহের এক নিদারুণ চিত্র ভেসে উঠে এই গল্পে।

১০. মেঘে ঢাকা সূর্য:
এই গল্পটিও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বর্বরতার চিত্র তুলে ধরে। যেখানে পাক হানাদারের হিংস্রতা থেকে রক্ষা পায়নি সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া বাচ্চা কিংবা মৃত কোনো লাশ।

১১. মনোয়া পাখি:
গল্পটা যেন আমাদের আশেপাশে এইমাত্র ঘটে যাওয়া কোনো চিত্র। গল্পে আমরা একজন স্ত্রীর তার স্বামীর কর্তব্যপরায়ণতা ও ভালোবাসার চমৎকার উদাহরণ পাই। সাথে আমরা এটাও উপলব্ধি করি যে শখ করে এমন কোনো কাজ করা উচিৎ নয় যা আমাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনে। তবে গল্পের শেষটা আমায় ব্যথিত করেছে।

১২. দ্য মলিকিউলার লজিক অব লাইফ:
এই গল্পটি বিদেশি প্রেক্ষাপটে লেখা। যেখানে থ্রিল, রোমাঞ্চ ও ক্রাইম সব রয়েছে। যারা থ্রিলার পড়তে পছন্দ করেন তাদের এটা অনেক ভালো লাগবে।

১৩. প্রদোষকাল:
মুক্তিযুদ্ধের সময় নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের চিত্র ফুটে উঠেছে এই গল্পে যা পাঠকের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করবে নতুন ভাবে।

১৪. ঘোর:
এই গল্পটি এক বিদেশি মানুষকে নিয়ে যিনি নিজের স্ত্রীকে হারিয়ে তার শোকে কাতর হয়ে থাকতেন এবং তার একাকী জীবনকে ঘিরেই এই গল্প। এই গল্পটি হয়তো অনেকের মনকে নাড়া দিবে।

১৫. কুইচ্চা:
গল্পটা পড়ে হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যথা হয়ে যাবার উপক্রম হইছে। এই গল্প আমাদের শিখায় স্বামী ঝগড়া করলেও বাপের বাড়ি চলে না গিয়ে কি দারুণ ভাবে রিভেঞ্জ নেওয়া যায়।

১৬. শাপমোচন:
এই গল্পটিতে শিক্ষনীয় কিছু বিষয় আছে। গল্পে অভিশাপ ও সেটা থেকে মুক্তির পথ ফুটে উঠেছে। ক্ষমা একটা সুন্দর গুণ যা এই গল্পে সুন্দর করে প্রকাশ করা আছে।

১৭. বুয়া:
এই গল্পটা আমাদের বর্তমান সমাজের নিত্যদিনের চিত্রই বলা চলে। কিছু বুয়ার অত্যাচার এতো বেশি যে মাসে মাসে তাদের চেঞ্জ করা লাগে। তবে তাদেরও মাঝেমধ্যে একটু আধটু ভালো থাকতে ইচ্ছে করে, যা এই গল্পে ফুটে উঠেছে।

১৮. শ্রাবণ গগন ঘিরে:
এই গল্পটি ফুটে উঠেছে আমাদের সমাজের এক জঘন্যতম পাপ পরকীয়া নিয়ে। এই পাপের প্রতিশোধ নেয়ার দৃশ্যও গল্পে দেখানো হয়েছে।

★পাঠ প্রতিক্রিয়া:
আফরোজা মামুদের লেখনশৈলী একদিকে যেমন সাবলীল, অন্যদিকে আবেগঘন। অতি অল্প কথায় তিনি চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছেন। গল্পগুলোতে হাস্যরস, রহস্য, বেদনা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি—সবই জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিটি গল্প যেন জীবনের একটি ছোট আয়না। বইটি পড়তে গিয়ে কখনো হাসি, কখনো বিষাদ, আবার কখনো গভীর চিন্তায় ডুবে থাকতে হয়।
তবে কয়েকটি গল্পে সমাপ্তি মাইন্ডব্লোয়িং ছিল, আবার কিছু গল্প একটু সংক্ষিপ্ত হওয়ায় আচমকা শেষ হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এটি পড়ার মতো এবং মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো একটি বই।

★ভালো লাগা ও ত্রুটি:
গল্পের প্লট ও বৈচিত্র্য চরিত্রচিত্রণ বেশ ভালো লেগেছে। গল্পে সংলাপের সাবলীলতা প্রশংসনীয় ছিলো। গল্পগুলোর নামকরণ ও প্রচ্ছদের নিপুণতা এক কথায় চমৎকার। লেখকের মসৃণ লেখনী ও নির্ভুল বানান হওয়ায় পড়তে বেগ পেতে হয়নি এবং বেশি ভালো লেগেছে অধিকাংশ গল্পের প্রাঞ্জল সমাপ্তি। তবে কয়েকটি গল্প প্রত্যাশার তুলনায় বেশি সংক্ষিপ্ত হওয়ায় আচমকা শেষ হয়েছে বলে মনে হয়। আর কিছু গল্পের প্লট আরও বিস্তৃত করা যেত।

রেটিং: ৪/৫
রিভিউতে: শাহানাজ রিয়া

 #অল্প_কথার_গল্পেরালেখক: আফরোজা মামুদপ্রকাশনী: চলন্তিকা প্রচ্ছদ: আফরোজা মামুদ এবং নিগার সুলতানা মলাট মূল্য: ৪৫০৳'অল্প কথ...
01/08/2025

#অল্প_কথার_গল্পেরা
লেখক: আফরোজা মামুদ
প্রকাশনী: চলন্তিকা
প্রচ্ছদ: আফরোজা মামুদ এবং নিগার সুলতানা
মলাট মূল্য: ৪৫০৳

'অল্প কথার গল্পেরা' একটি গল্প সংকলন বই। সংকলনটিতে রহস্য, থ্রিলার, সামাজিক, মুক্তিযুদ্ধ এবং রম্য ঘরানার মোট ১৮টি ছোট গল্প রয়েছে।
গল্পের বিষয়বস্তু ও লেখনশৈলীর জন্য গল্পগুলো অনন্য। বাক্য গঠন, উক্তি আধুনিকতা ও বাস্তবতার মিশেলে লেখক ভিন্ন মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। গল্পের বৈচিত্র্য মুগ্ধ করবে সবাইকে।
এক একটা গল্প যেন আমাদের জীবনের সম্পর্কের জটিলতা, অস্তিত্বের গভীরতা সবকিছু উপলব্ধি করাবে। এই বইটি পড়ে আপনার মনোজগতে গভীর দাগ কাটবে, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে।
লেখক আফরোজা মামুদ তার লেখা, বর্ণনা দিয়ে পাঠককে আকৃষ্ট করবে। প্রতিটা গল্পে জীবনের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্নার অনুভূতিতে ভাসাবে। সব শ্রেণির পাঠকদের ভালো লাগবে ' অল্প কথার গল্পেরা' বইটি।
এই গল্প সংকলন বইটি জীবনের রূপ, জটিলতা নিয়ে দারুণভাবে লিখেছেন। প্রতিটা চরিত্রকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। সংকলনটি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে যেমন লিখেছে তেমন রম্য নিয়েও লিখেছেন। তাই বইটি পড়লে পাঠক বিভিন্ন স্বাদ পাবে। আমাদের সমাজের বিভিন্ন দিক দিয়ে গল্পগুলা সাজানো হয়েছে।
চরিত্রগুলো অল্প কথায় দারুণভাবে প্রকাশ করেছে। প্রতিটা গল্পের শেষে লেখক একটা করে মেসেজ দিয়েছেন।

একদম ঝরঝরে লেখা বানানে কোন ভুল নেই। বইটা পড়ে পাঠকের খুব ভালো লাগবে।

রিভিউতে তিথি রহমান

 #দহনের_দিনে_জোছনার_ফুলরিভিউতে ফাতেমা ইসমাইল কেয়াদহনের দিনে জোছনার ফুল : দেশ্রপ্রেম নাকি ব্যক্তিপ্রেম!"কান্ট্রি কামস ফার...
28/07/2025

#দহনের_দিনে_জোছনার_ফুল
রিভিউতে ফাতেমা ইসমাইল কেয়া

দহনের দিনে জোছনার ফুল : দেশ্রপ্রেম নাকি ব্যক্তিপ্রেম!

"কান্ট্রি কামস ফার্স্ট" মতবাদে বিশ্বাসী এক অকুতোভয় যুবক, নব্য তরুণী ডাক্তার এবং তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা আরও কিছু মানুষের জীবনালেখ্য 'দহনের দিনে জোছনার ফুল'। তবে আমার মতে উপন্যাসটি একজন প্রতিভাবান লেখিকার দুঃসাহসী প্রচেষ্টার সার্থক ফসল।
ক্ষণিকের পথসঙ্গী থেকে মনোসঙ্গী হয়ে ওঠা দুজন মানুষ এবং তাদের বারোয়ারি উপলব্ধিতে ঠাসা মোহান্ধ জীবনের গল্প নিয়ে লেখা এই উপন্যাস আমাকে স্থবির করে দেয়, উত্তাল বিষণ্ণতায় ভোগায় প্রবলভাবে।

উপন্যাসের কাহিনী শুরু সদ্য মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা আধিরাকে নিয়ে। মধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের নজরদারি আর ভালোবাসায় মোড়া জীবন থেকে বের হয়ে স্বাধীনভাবে মাত্র তিনটে মাস কাজ করতে চায় সে! আর এখানেই তো বাঁধে বিপত্তি! তরুণী ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি, স্বাধীনতা খুঁজতে এসে স্বেচ্ছায় ভালোবাসার এক মায়াময় শেকলে নিজেকে আটকে ফেলবে মনের অজান্তেই। ভালোবাসা বড় ছোঁয়াচে রোগ, এর থেকে নিস্তার পায় নি মেজর আদিত্য আহসানও। খুব গোপনে সংক্রমণ রোগটির প্রকোপে আদিত্যের বুকের ভেতরের আস্ত শহরটায় আধিরার হাসিমুখের ছবি সাঁটানো হয়ে যায়। একদিকে যখন প্রেমিকযুগল জারুলের দিন কাটাচ্ছে, ঠিক অন্যদিকে তখন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল জাতিগত নিপীড়ন ও দমনের মাঝে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এক অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সীমিত সম্পদ, বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর চাপে অভাব এবং দারিদ্র্যের কষাঘাতে ন্যায়-নীতি ভুলে মানুষ জায়গাটিকে অপরাধের আঁতুরঘরে পরিণত করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মেজর আহসান নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আপনজনদের নিরাপদ নীড় ফেলে চলে আসে এই অপরাধপূর্ণ এলাকায়। পেছনে রয়ে যায় আধিরার প্রগাঢ় অনুভূতির সুতীব্র আর্তনাদ।

দেশের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তির মূলীভূত হওয়ার প্রতরনাপূর্ণ প্রয়াস, দীর্ঘদিন ধরে বয়ে চলা কিছু সম্পর্কের ভেতরকার জটিলতা, তার রেশ ধরে আসা মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা এবং এর পরিণতি নিয়ে লেখা 'দহনের দিনে জোছনার ফুল' পাঠককে কখনো হাসাবে, কখনো কাঁদাবে আবার কখনো নিয়ে যাবে কৃষ্ণচূড়ার বিস্ময়কর সুন্দর বিকেলে।

"মাঝরাতে যদি চাঁদ আলো না বিলায়, ভেবে নিব আজ তুমি চাঁদ দেখোনি। "

বইটি পড়ে শেষ করার পর মনে কেন জানি একধরণের স্নিগ্ধকর শান্তি অনুভব করছি। আদিত্য-আধিরার কমলাপুর রেলস্টেশনে পরিচয়, সোলজারস ডেনে যাওয়া, তাদের ঝগড়া-খুনসুটি, সেই জঙ্গলমহলের রাত, তাদের প্রেম, আদিত্যর মায়ের জেদ, অদ্ভুত এনগেজমেন্ট, তাদের অভিমান, দূরে যাওয়া, আদিত্যের শান্তিকুঞ্জে আসা; লেখিকা সরল রেখার মতো গল্প এঁকেছেন, আর তাই সমান্তরাল গতিতে আমরা খুঁজে পাই একটি প্রেমের গল্প, এক দেশপ্রেমীর ধাপে ধাপে নিজের দেশের জন্য সর্বস্ব বিসর্জন দেয়ার সংগ্রামকেও উপলব্ধি করি। লেখিকা এমনভাবে চরিত্রগুলোর বর্ণনা করেছেন যে মনে হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই চোখের সামনে হাঁটছে-ফিরছে; সময় আর প্রেক্ষাপটের সাথে মিশে যাচ্ছে পাঠকের নিজের অস্তিত্ব- কী অদ্ভুত!

বইটির প্লট আমাদের সকলের পরিচিত; কিন্তু এর গ্রন্থনা ও বিন্যাস অত্যন্ত মজবুত। প্রেমের রেশ ধরে লেখা তিন বাহিনীর গৌরবজ্জ্বল জীবনধারাকে লেখিকা অসামান্য নৈপুণ্য বিশ্লেষণী আলো ফেলে অর্থপূর্ণ করে তুলেছেন।

পরিশেষে বলবো, এক সৈনিকের পারিবারিক জীবনের আড়ালে অগাধ দেশপ্রেমের আদলে লেখা সমকালীন জনরার এক অমৃতসম উপাখ্যানের স্বাদ নিতে চাইলে নিজের সঙ্গী করতে পারেন 'দহনের দিনে জোছনার ফুল'।

বইয়ের নাম: দহনের দিনে জোছনার ফুল
লেখায়: আফিফা পারভীন
জনরা: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: চলন্তিকা
প্রচ্ছদ: মো: সাদিতউজজামান
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪১৬ টি
মুদ্রিত মূল্য: ১১০০ টাকা

 #সুপ্ত_অনুরাগে #পাঠ_অনুভূতি♦এক নজরেঃ•উপন্যাসের নামঃ সুপ্ত অনুরাগে •লেখকঃ প্রভা আফরিন •ধরনঃ রোমান্টিক •প্রকাশনীঃ চলন্তিক...
27/07/2025

#সুপ্ত_অনুরাগে
#পাঠ_অনুভূতি

♦এক নজরেঃ
•উপন্যাসের নামঃ সুপ্ত অনুরাগে
•লেখকঃ প্রভা আফরিন
•ধরনঃ রোমান্টিক
•প্রকাশনীঃ চলন্তিকা
•প্রচ্ছদঃ আভা তাজনোভা ইরা
•মুদ্রিত মূল্যঃ ৬০০
•পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২০৬
•প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লেখনীতেঃ রিফায়াত হাসান সাকিব

♦ভূমিকাঃ মাঝে মাঝে আমার অদ্ভুত জেগে থাকা রাতগুলোতে যখন সকালের আগমনের টের পাওয়া যায়, তখন কেমন একটা বই বই পায় । এরকম ভাবনার খেয়ালে কোনো কিছু পেতে চাওয়া মুহূর্তগুলোতে নিজেকে ভীষণ বিবশ গোছের মনে হয় । মনে হয় এগুলো না পেলে অদ্ভুত ভাবে দুঃখ কষ্ট নিয়ে ভেসে বেড়াতে হবে । বই পড়তে উদাসীন মনটাকে তবুও জোর নিয়ে বলতে হবে, আমার ভীষণ বই বই পাচ্ছে । তোমার তা সফল করার কোনো ইচ্ছা কেনো নেই, মন? মন বুঝি থমকে যায়, কষ্ট পায় । কিন্তু বাঁধা দেয় না । কারণ মনের শহরে বইয়ের জন্য যে আরো অধিকতর ভালোবাসা । এটা যেন প্রথম প্রেমের বৃষ্টির ছোঁয়ার মতো । তা বারণ করা যায় না, এড়িয়ে চলা যায় না । কিন্তু বাধাগ্রস্ত হয়, কখনও জড়িয়ে নেয়া হয় । এভাবেই মনের সাথে বই পড়ার ভালোবাসা প্রেম এবং অভিমানের মধ্যেই বাঁধা পড়ে আছে । সেই বাঁধা পড়ায় উল্টো গতিতে প্রভাবিত হতে থাকি । আজকেও আমার একটা বই বই পেয়েছিল খুব । এই বইটাকে বিছানায় রেখেছিলাম যেদিন বইটা প্রথম পেয়েছিলাম সেদিন থেকে । এতকাল ধরে কখনও জড়িয়ে ধরে রেখেছি । কখনও পাশে রেখে শুয়েছি । আজকে বড় অবেলায় হঠাৎ করে পড়ার জন্য বই বই পাওয়া মুহূর্তে এই বইটি ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাইনি আমি । অবশ্য এটাকেই তো বোধহয় পাওয়ার ছিল ।

♦নামকরণঃ যদি মনের আনন্দে অনুভূতি নিয়ে একরাশ আবেগ দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে । তবে জেনে নেয়ার মতো করে বলে দিতে হয়, এই উপন্যাস ‘পুষ্প নিকেতন-এর তেপান্তর-এ মন দেয়ার উপাখ্যান’ । পুষ্প নিকেতন যেন তেপান্তরে ভেসে গিয়ে মন নিয়ে কোথাও হারিয়ে যায় । কারো পুষ্প নিয়ে তেপান্তরী হওয়ার আখ্যান । ভালোবাসা কোথাও যেন অপ্রকাশিত হওয়ার মধ্যে থেকেও অনুভবে প্রকাশিত করার এক আবেগ ফুটিয়ে তুলে দিয়ে যায় ।

♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ জগতের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও মহার্ঘ্য বস্তুর উৎপত্তিস্থল সর্বদা দুর্গম স্থানেই হয় । যেমন বিশুদ্ধতম জলধারার উৎপত্তি ঘটে প্রকাণ্ড পর্বতের খাঁজে, দুর্লভ হীরে কিংবা সোনার অস্তিত্ব মেলে ভূ-তলের প্রস্তরীভূত গর্ভে । তেমনই ভালোবাসা নামক স্বর্গীয় অনুভূতির উৎপত্তিস্থল মানবহৃদয়ে নিহিত । যে দুষ্প্রয়াসী ব্যক্তি একবার সেই অনুভূতির সন্ধান পেয়েছে, সে হাজারো চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তার কাছে পৌঁছাতে চায়; কিন্তু নিকটে পৌঁছে গেলেও কখনো সখনো বাহ্যিক প্রভাবে সৃষ্ট দেয়াল দূরত্ব মেটাতে দেয় না । দেয়ালকে ভেদ করতে আবেগের শৈল্পিক শ্রম দিয়ে হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে তৈরি করতে হয় একটি জানালা । যে জানালায় হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখা যায় প্রথম প্রেমের ঝুম বৃষ্টিকে । আঁজলায় ভরে পান করা যায় অনুরাগের অমিয় সুধা ।

♦প্রচ্ছদঃ এই প্রচ্ছদটা ভীষণ সুন্দর । এবং আবেগতাড়িত করার এক চেষ্টা করে যায় অহরহ । একনাগাড়ে কিছুক্ষণ দেখলেই মুগ্ধ হয়ে ভেসে যেতে হয় । মনে হয় পৃথিবীতে মুগ্ধতা নামক বিশেষণগুলো বোধহয় এরকম বস্তুগুলোর প্রশংসা অর্থেই ব্যবহৃত হতে চেয়েছে রোজ । রোজকার এ জীবনে উপন্যাসটি ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে ভেসে আসে অপরাজিতা ফুল, একটা জানালা, দুই কাপ চা, জানালার পর্দা । কিন্তু তার থেকেও ভেসে আসে বাইরের নিস্তব্ধ উদাসীন আকাশে এক অদ্ভুত ভালোবাসা । যে ভালোবাসা পৃথিবীতে আসতে চায় বিভিন্ন রূপ নিয়ে । সম্পর্ক নিয়ে ।

♦পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

✓পটভূমিঃ বলতে দ্বিধা নেই প্রথমদিকে উপন্যাসটি পড়তে পড়তে রোজকার জীবনের গড়ে উঠা পাঠক মনে তোলা নিয়মিত পটভূমির মতো মনে হওয়া উপন্যাসটির প্রতি প্রথম আলোড়ন জেগেছিল হঠাৎ করে কাহিনীর গভীরতা । কোথাও একটা অদ্ভুত আলোড়ন তুলে দেয়ার মতো করে গল্পটা ভেসে এসেছিল । আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল, এটা এমন একজন লেখকের লিখনশৈলী । যার লেখা নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের অহরহ পড়া রোমান্টিক উপন্যাসগুলোর মতো কোথাও একটা হবে না । সামাজিক টানাপোড়েন, জীবনের আলোড়ন, ভালোবাসার তীব্র চেষ্টা, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সম্পর্কের দায়বদ্ধতা ঘিরে রাখা উপন্যাসটির পটভূমিকে একটা পর্যায়ে ভীষণ ভালোবাসতে ইচ্ছে করে । মনে হতে থাকে যেন এই উপন্যাসটা বড্ড বেশি প্রিয় । পুষ্প নিকেতন এর কোনো পুষ্প তেপান্তরে গিয়ে বাঁধা পড়ার এই যাত্রা অনেককিছুর সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায় । কোথাও উপন্যাসের গল্প বলার ধাঁচ মুগ্ধ করে । কোথাও একনাগাড়ে জীবনে বয়ে যাওয়া দুঃখ আলোড়ন তুলে । কোথাও কিছু পেয়েও পাওয়া না পাওয়ার অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা নিশ্চুপ করে দেয় । এই এত এত অসহযোগ পরিস্থিতির মতো মুহূর্তগুলোতে আমি বরং উল্টো বিশেষণে তাল মেলাই । আমার উপন্যাসের গভীরতা মন টানে । একনাগাড়ে গল্প বলার ধাঁচে যে ভারসাম্যতা আসে তা ভীষণ আবেগতাড়িত করে দেয় । উপন্যাসের গতি প্রবাহে পটভূমির প্রেক্ষাপটে দৃশ্যপটগুলো তাই মন কাড়ে খুব । যেন বলতে চায় আপন করে নেও তো!

✓আবহ গঠনঃ এই উপন্যাসে আবহ তৈরির জায়গা অনেকখানি । বেশ গুরুত্ব নিয়ে উপন্যাসটি তৈরি করা হয়েছে যে তা বোঝা যায় যেন । বড় মায়া দিয়ে যেন তৈরি করার মতো করে যেন ধাঁচ ফেলে তৈরি করা । যেহেতু উপন্যাসে পটভূমিটা রোজকার জীবনের গল্পের মতো মনে হলেও গভীরতা আছে, তাই উপন্যাসের ভাবাবেগে কোথাও একটা যেন আবহ তৈরির জায়গাটা অদ্ভুত এক সুর তুলে । মনে আলোড়ন তৈরি করে ফেলার মতো । দুইটি বিচরণ করা ‘পুষ্প নিকেতন’, ‘তেপান্তর’ বেশ প্রভাবিত করে । সম্পর্কের ধাঁচ, আবেগতাড়িত অনুভব, অপরাজিতা ফুল এবং বিভিন্ন বিশেষণে মোড়ানো আপেক্ষিকতা এই উপন্যাসে অদ্ভুত সুন্দর এক আবহ তৈরি করে দেয় ।

♦চরিত্র গঠনঃ এই উপন্যাসের চরিত্র গঠনেও এক অদ্ভুত মিষ্টি ছোঁয়া গেঁথে আছে । যদিও এই ছোঁয়া টের পাওয়া যায় না । প্রতিটি চরিত্র তা তার উপস্থিতি দীর্ঘ সময় থাকুক বা কম সময় কিন্তু যতক্ষণই ছিল ততক্ষণ যেন কোনো না কোনো ধরনের অদ্ভুত বিভিন্ন বিশেষণ নিয়ে রাজত্ব করে বেড়িয়েছিল । কোথাও থেকে ভেসে বেড়াচ্ছিল ভালোবাসা, কোথাও থেকে নিঃসঙ্গতা । কোথাও হারিয়ে পাওয়ার সুর । কোথাও না পাওয়ার বেদনা । কোথাও যেন পাখির করুণ সুরে ডাকার মতো করে সমাজের অহংবোধে পারিবারিক অদ্ভুত টান । এই এত এত মিশেলে বিভিন্ন চরিত্র আসে । গল্পের প্রয়োজনে মিশে যায়, মিলে যায় নিজেদেরকে নিয়ে ।

♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ

•সুপ্তঃ ভালোবাসাকে নিজের আকাশে ভাসিয়ে দিয়ে, পাখি তুমি মনের আকাশে যতটা জায়গা মেলে উড়ো, ততটাই শব্দ করে উচ্ছলতা নিয়ে উড়ো এরকম আবেগতাড়িত হওয়া অনুভব নিয়ে ভেসে বেড়ানো পুরুষ চরিত্রটি মনের দিক থেকে উচ্ছল । প্রাণবন্ত স্বভাবের পুরুষটির ডিয়ার বাডি নিয়ে অদ্ভুত এক স্পর্শ পাওয়ার টান আছে যেন । কিছু পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে ভেসে বেড়ানো চরিত্রটির কিছু অতীত তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, দ্বিধান্বিত হয় । কিন্তু ভালোবাসায় যেন পাওয়ার কোনো তাড়া । প্রিয় ভালোবাসা, তোমার নাম বিশিষ্ট সবকিছুই তার কাছে স্বাদহীন কিন্তু তোমার নামের বিশেষে মানুষটা মূল্যবান হয়ে ঘুরে বেড়ায় ।

•কাজুঃ জীবনের প্রতি উদাসীন মানুষটির ঘুরে বেড়ানোর তাড়া । জীবনের প্রতি বিরহের ছাপ দিয়ে উদাসীন ঘুরে বনেবাদাড়ে এলোমেলো পা ফেলার ধাপগুলো স্পর্শ হয়ে যেন তাকে ব্যাখ্যা করে । বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মজা করার মানসিকতা নিয়ে চলে আসার অদ্ভুত এক চেষ্টা তার মাঝে ।

•শিমুলঃ বোনের কাছে সবকিছু আবদার করা ছেলেটার জীবনে যত্ন করে বড্ড আকাশের মতো করে উড়বার ইচ্ছে । কিন্তু পরিস্থিতি তাকে ভয় পাওয়ায় । পিছিয়ে দেয় । বিভিন্ন পরিস্থিতি এলে তাই সুখকে কাছে পাওয়ার সময়েও তাই স্পর্শ করার তাড়া ।

•অপরাজিতাঃ গৎবাঁধা জীবনের গল্পে কোথাও নিজেকে মেলে দিতে চাওয়ার চেষ্টা এবং ইচ্ছে দুইয়ের সংমিশ্রণে বাঁধা পড়া না পড়ার আখ্যানে সমগোত্রীয় শব্দ হিসেবে নাম দিয়ে সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া মেয়েটির নাম অপরাজিতা । কারো স্বপ্ন পূরণ করতে চাওয়া, নিজেকে কোথাও ভাসিয়ে না দেওয়ার চেষ্টা তাকে শক্ত করতে চায় । ভালোবাসতে বাঁধতে দিতে চায় । কিন্তু বাঁধা পড়েও যেন পড়া হয় না । শিকলে বাঁধা আবদ্ধ জীবনে নিজের হাসি বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে যেন ।

•আনিস রহমানঃ সমাজের চিরাচরিত নিয়মের মর্যাদা এবং অভ্যাসের এক মেলবন্ধনে জীবনের কোথাও একটা গিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে যে সুখ সুখ আবছায়াটি টের পাওয়া হয়, সেটা বোধহয় পাওয়া হয় না । অদৃশ্য এক আলোড়নে শুধু হাতের কাছে অবয়বের আবছায়া স্পর্শ বোধহয় পাওয়া হয় । আনিস রহমান তেমনই একজন মানুষ । যিনি নিজের সম্মান, মর্যাদা, অবস্থা সবকিছুর প্রতি খেয়ালে কোথাও একটা অনেকগুলো বিষয় হারিয়ে ফেলতে বসেন ।

•রফিক ইমামঃ নিজ সন্তানকে ভালোবাসতে চাওয়া মানুষটি জীবনে অদ্ভুত আলোড়নে সুখের সাথে স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়তে চেয়েছিলেন । কখনও তা পাওয়া হয়েছিল, কখনও বোধহয় নিঃসঙ্গতা এলোমেলো পা ফেলে রাতের অন্ধকারে সন্ধি পেতেছিল । এই বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের হাসিখুশি মানুষটির কিছু অতীত তাকে আঁকড়ে ধরে বেড়ায় ।

•ফারিহাঃ সময়ের অদ্ভুত এক টানে এই নারীটি জীবনের অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছিলেন । প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খেয়াল বশে জীবনের সুখ কোনো একটা জায়গায় গিয়ে বাঁধা পড়ে । কোথাও গিয়ে ছুটে বেড়ায় । কোথাও গিয়ে এই জীবনের সবকিছুতে নিজেকে মেলে ধরতে শিখে যায় সে । ‌

•টুকিটাকি চরিত্রঃ এছাড়াও এই উপন্যাসে আরো বেশ কয়েকটি চরিত্র আছে । যারা উপন্যাসের ভাবাবেগে প্রেক্ষাপট এবং দৃশ্যপট অনুযায়ী উপন্যাসের গল্পে এসেছে । উপন্যাসে ভেসে এসেছে নিজের সুখের স্বল্প দায় নিয়ে বেঁচে থাকা ফরিদ, যার কিছু কিছু মুহূর্তগুলো বেশ সুন্দর হয়ে মনে কাজ করে । এছাড়াও আছেন নিজের স্বকীয়তা নিয়ে নিশ্চুপে চলাচল করা জাহেদা । যিনি সন্তানদের জন্য কখনও শব্দ দিয়ে নিশ্চুপতা ভাঙেন । এছাড়াও উপন্যাসে ভেসে আসে সমাজ, পরিবারের বিভিন্ন সংস্কার থেকে হঠাৎ করে খানিক সুখের আহরণে বেরিয়ে পড়া বেলী, যার জীবনে সুখের দায়ে কখনও রাগ হয় । কখনও হিংসা হয় । কিন্তু রোজকার সমাজে তা তৈরি হওয়া পিছনের গল্পগুলো দেখা হয় না । নিরীহ গোছের চুপচাপ নিজেকে বরণ করে নেয়া আজিজ যেন ভেসে বেড়ায় পুরোটা উপন্যাস জুড়ে । নিজেকে মেলে ধরে আবছায়া অদৃশ্য অনুভব দিয়ে । উপন্যাসে আবছায়া এক আলোড়ন, এক আবহ নিয়ে নিজের উপস্থিতি মেলে ধরা তন্ময় এর ভালো হতে ইচ্ছে করে খুব । কখনও এক ভোরে, কিংবা কখনও রাতের অন্ধকারে তার ইচ্ছে করে ভালো প্রেমিক হতে । ভালো প্রেমিক হওয়ার চেষ্টায় সফল হতে হতে জীবনের মায়ায় এগিয়ে যেতে চায় । সাময়িক কিছু পরিস্থিতি জীবনকে এলোমেলো করে বেড়ায় । কখনোবা তা কাটিয়ে ফেলা হয়ে যায় কিন্তু জীবনের অদ্ভুত লুকোছাপা এবং লুকোচুরির মেলবন্ধনে মানুষটি তা এড়িয়ে চলতে চায় । নিজের নামের মতোই হওয়া বৈশাখী এর কোনো এক দায়ের জীবনে কিছু না হতে পারার কষ্ট অন্য কিছু দিয়ে মেলে ধরতে চেয়েছিলেন ।

♦প্রিয় অংশঃ এই উপন্যাসটি যখন একটা সময় পড়ে হঠাৎ করে মনে হলো, এই উপন্যাসটি পড়ে আমার যা কখনও করতে ইচ্ছে করে না, তাই করতে হবে নাকি! আমি ভয়ে থাকি । অদ্ভুত এক আলগোছে চিন্তায় ক্ষয়ে যেতে থাকি । মনে হয়, এই পৃথিবীতে সুখের মুহূর্তে চোখে ছলছল ভাব আমার জন্য নতুন কিছু নয় । এবং এই উপন্যাসটি বিভিন্ন সম্পর্ক পূরণের । কিছু বিশ্লেষণের । দিনশেষে সম্পর্কের রসায়ন এবং মুহূর্তকে কাছে নিতে গিয়ে এই উপন্যাস পিতা এবং সন্তানের । তাদের সম্পর্কের রসায়ন, কিংবা আবছায়া অনুভব ভালো লাগা দেয় । অদ্ভুত মোহনীয় পরিবেশ তৈরি করে । এছাড়াও এই উপন্যাসে সংলাপের মাঝে কিছু অদ্ভুত কাব্যিক আবেগ ভেসে আসে যা ভালো লাগা দেয় । কথার পিঠে কথা, মনের কাছে মন এই মুহূর্তগুলোতে একে অপরের সাথে কথার আলোড়নে কাব্যিক এক অদ্ভুত সৌন্দর্য তৈরি করে যেন । যা ভালো লাগা দেয় কেমন একটা । এছাড়াও আনিস রহমান এবং শিমুল এর একটা দৃশ্যপট ভীষণ মনের কাছাকাছি হয়ে থাকে । কাজু এর কিছু হাস্যরস, শিমুল এর দুরন্ত ছলছল মুহূর্ত এবং তন্ময়-সুপ্ত অদ্ভুত সম্পর্কের বাক্যালাপ বেশ মুগ্ধ করে ফেলতে চায় । সমাজের অদ্ভুত সংস্কার, বাবা মায়ের নিজস্ব ধ্যানধারণা যেন ভেসে আসে । দিনশেষে পুষ্প নিকেতন তেপান্তরে গিয়ে হারালো নাকি তেপান্তরে গিয়ে কেউ পুষ্প নিকেতন এর মনকাড়া আলোড়ন খেয়ালে রাখলো সেটাই দেখার ।

♦সংলাপঃ এই উপন্যাসের সংলাপ ধারণ বেশ ভালো । কাব্যিক এক আবেগ ভেসে এসেছে কোথাও কোথাও । এছাড়াও সম্পর্কের রসায়নে বিভিন্ন আলাপে আলাপচারিতা করার এক চেষ্টা ভেসে এসেছে যা বেশ ভালো লাগা দেয় । কোথাও কোথাও এই উপন্যাসে বর্ণনামূলক আবহ এবং সংলাপ ভিত্তিক আবছায়া এর মাঝে যেন এই উপন্যাসটির উপস্থাপন করার ভঙ্গিমা আলাদা হয়ে দাঁড়ায় ।

♦লেখক প্রসঙ্গেঃ ‘সুপ্ত অনুরাগে’ লেখক প্রভা আফরিন এর তৃতীয় উপন্যাস । আমার পড়া হিসেবেও এটি তার তৃতীয় উপন্যাস । কোথাও একটা গিয়ে এটা লেখকের নিজস্ব লিখনশৈলীর বাইরে গিয়ে অন্যরকম এক চেষ্টা । কিন্তু সেই চেষ্টাতেও যেন নিজস্ব এক ধাঁচ বের হয়ে এসেছে । অদ্ভুত এক স্বকীয়তা বিরাজ করেছে । এই উপন্যাসেও সম্পর্কের আবছায়ায় পিতা-সন্তান এর অদ্ভুত রসায়ন আবার ভেসে আসতে চেয়েছে । এরকমই এক মুহূর্তগুলোতে আমার হঠাৎ করে মধুসখা এর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল । তবে এখানের গল্প অন্যরকম । অন্যরকম এক টান । কোথাও গিয়ে পটভূমিতে এক গভীরতা । পটভূমি উপস্থাপন করার মাঝে চৌকস এক ছাপ গল্পটিকে সুন্দর করে তুলে । অদ্ভুত সুন্দর এই লেখাটার মতো লেখা কখনও কখনও বেশ পড়তে ইচ্ছে করে । লেখকের পরবর্তী লেখার জন্য বেশ শুভকামনা রইলো ।

♦প্রকাশনীঃ এই বইটা বেশ সুন্দর ভাবে বাঁধাই করা হয়েছে । প্রচ্ছদটা দারুণ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । বেশ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে কেনো যেন । প্রচ্ছদ ফুটিয়ে তোলা, বই বাঁধাই বেশ ভালো । উপন্যাসটি সাজানো বেশ সুন্দর । আশ্চর্য ভাবে এই উপন্যাসটির বানান ত্রুটি এবং টাইপিং মিস্টেক বেশ প্রশংসার যোগ্য । তেমন নেই বললেই চলে । এত সুন্দর ভাবে বইটি ফুটিয়ে তুলতে পারা বেশ অসাধারণ । বইটির মূল্য পাঠক হিসেবে হতাশ করে দিতে চায় । এদিকটিতে নজর দেয়া একান্ত জরুরি বলে মনে হয় । অন্যথায় অসাধারণ একটা কাজ হয়েছে বলা যায় ।

♦রেটিংঃ ৪.৮/৫

♦উপসংহারঃ উপসংহারে আসলেও কিছু বলার নেই । সবথেকে যা বলতে ইচ্ছে করে তা হলো, এই অনুভূতিটা আমি অনেকক্ষণ ধরে একটু একটু করে লিখেছি । সকালে একটু, এখন একটু । এত সময় নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে হয়েছে, এই উপন্যাসটি এতটা সুন্দর না হলেও পারতো । এত কাব্যিক আবেগে আবেগতাড়িত না করতেও পারতো । চরিত্রগুলোর মাঝের বিভিন্ন সুখ এবং কষ্টের মুহূর্তগুলো মনে আলোড়ন না করলেও পারতো । শুধু একটা অংশবিশেষ দিয়ে শেষ করি,

“তুমি ছাড়া সকল অপরাজিতা স্বাদহীন । তুমি ছাড়া সকল অপরাজিতা গন্ধহীন । তোমার কাছে সকল অপরাজিতারা মলিন। এরপরেও কী সন্দেহ থাকে তুমি কতটা মূল্যবান?”

◾বই পরিচিতি : বইয়ের নাম: চৌধুরী কথন লেখক: তামান্না স্মৃতি প্রচ্ছদ: সোহেল আশরাফজনরা: সমকালীন উপন্যাস প্রকাশনী: চলন্তিকা প...
26/07/2025

◾বই পরিচিতি :
বইয়ের নাম: চৌধুরী কথন
লেখক: তামান্না স্মৃতি
প্রচ্ছদ: সোহেল আশরাফ
জনরা: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: চলন্তিকা
পেইজ সংখ্যা: ৮৮
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা
প্রথম প্রকাশ: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২

◾ কাহিনি সংক্ষেপ:
চৌধুরী বাড়ির অন্দরমহলে চলমান দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর এক অনির্বচনীয় নিঃসঙ্গতার গল্প "চৌধুরী কথন"।
গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে অবন্তী। যিনি তার স্বামী জহির এবং একমাত্র কন্যা টুনিকে নিয়ে এক শান্ত, পরিপাটি সংসারের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সেই স্বপ্নে ছায়া ফেলে জহিরের অতীত প্রেম নীরা। জহিরের মনে নীরার জন্য যে টান আজও অটুট, তা যেন বারবার ভেঙে দেয় অবন্তীর আশা।
অন্যদিকে, নীরা এখন রিমুকে নিয়ে স্বামী রফিকের থেকে আলাদা থাকে। তাদের বৈবাহিক সম্পর্কটিও কেবল নামমাত্রে টিকে আছে। রফিক হয়তো চেষ্টা করেছে ঘর বাঁধতে, কিন্তু নীরার মন বারবার যেন পিছন ফিরে চায় কিন্তু কেন? এখনো কি জহির তার অনুভবের কেন্দ্রে? নাকি আছে অন্য কোনো অদেখা ক্ষত?

এই মূল দুই জুটি ছাড়াও উপন্যাসে রয়েছে অর্পা, মুকুল, উম্মে ফায়রোজাসহ আরও কিছু চরিত্র, যারা প্রত্যেকে নিজস্ব বেদনা আর বাস্তবতার মুখোমুখি। তবে একদিন চৌধুরী বাড়িতে হঠাৎ আগমন ঘটে মুকুলের। তার উপস্থিতি শুধু নতুন এক রহস্যই যোগ করে না, বরং চরিত্রদের অতীত ও বর্তমানকে নতুন করে উসকে দেয়।
জীবন, ভালোবাসা আর ভুলের মধ্যে দাঁড়িয়ে চরিত্রগুলো যে সিদ্ধান্ত নেয়তা কখনো মমতা জাগায়, আবার কখনো প্রশ্ন তোলে পাঠকের মনে।

◾ চরিত্র বিশ্লেষণ:
★জহির: এই চরিত্রটি যেন ভালোবাসা আর দায়িত্বের মাঝখানে হারিয়ে যাওয়া এক পুরুষের প্রতিচ্ছবি। একদিকে তার অতীত প্রেম নীরাকে ঘিরে স্মৃতি, অপরদিকে বর্তমান স্ত্রী অবন্তীর প্রতি একরকম দায়বদ্ধতা। এই টানাপোড়েনেই তার চরিত্রের দ্বৈততা স্পষ্ট। সে কখনো প্রেমিক, কখনো স্বামী, কিন্তু আদতে সে কোনো ভূমিকাতেই পূর্ণতা আনতে পারে না।

★নীরা: নীরা এক রহস্যময় নারী। তার নির্লিপ্ততা কি জহিরের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, নাকি পুরনো কোনো যন্ত্রণার ভার? রফিকের আন্তরিকতাও তার হৃদয়ের দরজা খুলতে পারে না, বরং সে নিজেকে একটা অদৃশ্য দেয়ালের আড়ালে রেখে চলে। নীরা চরিত্রটি পাঠকের মনে বারবার প্রশ্ন জাগায়—সে সত্যিই ভালোবাসা খুঁজছে, না কেবল পালিয়ে বেড়াচ্ছে নিজের ক্ষত থেকে?

★অবন্তী: এই চরিত্রটা যেন প্রতীক হয়ে উঠেছে আমাদের সমাজে থাকা হাজারো বাঙালি নারীর। যিনি ভালোবাসেন, ত্যাগ করেন, নীরবে সব সহ্য করেন শুধু সংসারটা রক্ষা করতে। তার ‘চুপ করে থাকা’র মধ্যেও এক ধরনের প্রতিবাদ আছে, আছে গভীর বেদনা। উপন্যাসের শেষদিকে তার নেয়া সিদ্ধান্ত পাঠককে ভাবায়।

★রফিক: সে এক ট্র্যাজিক স্বামী চরিত্র। যে ভালোবাসে, চায় সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে, কিন্তু সে যেন বারবার অদৃশ্য এক দেয়ালে ধাক্কা খায়। তার ভালোবাসা, রিমুর প্রতি টান—সবই বাস্তব, কিন্তু হয়তো যথেষ্ট নয়।

★মুকুল: এই চরিত্রটি বইয়ের নিরব উত্তাপ। সে কাহিনিতে এসেছে হঠাৎ, কিন্তু তার সিদ্ধান্ত, তার আচরণ ও যুক্তির ভেতর দিয়ে আমরা দেখতে পাই এক চিন্তাশীল, ভারসাম্যপূর্ণ মানুষকে। যার উপস্থিতি অনেককিছু বদলে দিতে পারে।

★রিমু ও টুনি: এই দুটি শিশু চরিত্র বইয়ে খুব বেশি জায়গা না নিলেও, তাদের অস্তিত্বের ভেতর দিয়েই উঠে এসেছে সম্পর্কের ব্যর্থতার চরম মূল্য। এরা নির্দোষ, অথচ সবকিছুর শিকার।

★অর্পা: চৌধুরী বাড়ির এই কন্যাটি ছিল যেন এক নীরব উপস্থিতি, যার আচরণে ভেসে আসে ভিন্ন এক বাস্তবতা ও অভিমান।

★উম্মে ফায়রোজা: একজন পরিণত, সহমর্মী নারী। যিনি অবন্তীর একাকীত্ব বুঝতে পেরে পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন।

◾লেখনশৈলী, প্লট: লেখা সহজ, সাবলীল এবং পাঠকের অনুভব ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। লেখক অতিরিক্ত অলঙ্কার ব্যবহার না করেও অনেক গভীরতা ছুঁয়ে গেছেন।
প্লট প্রথমদিকে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি করলেও, ধীরে ধীরে সেই জট খুলেছে অনেকটাই কৌতূহল বজায় রেখেই।

◾প্রচ্ছদ, বানান ও বাইন্ডিং: বানান ও সম্পাদনা অনেকটাই গোছানো, তবে মাঝে মাঝে কিছু টাইপিং ভুল চোখে পড়েছে, তবে পড়তে অসুবিধা হয়নি।
বাঁধাই ও প্রোডাকশন কোয়ালিটি ছিল সন্তোষজনক। পাতার রং, ফন্ট ও স্পেসিং এমন ছিল যে দীর্ঘ সময় ধরে পড়লেও চোখে ক্লান্তি আসেনি। প্রচ্ছদও কাহিনির আবহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

◾ পাঠ প্রতিক্রিয়া:
"চৌধুরী কথন" একটি সহজ কাহিনি নয় এটা সম্পর্ক, নীরব যন্ত্রণা আর মানসিক দ্বন্দ্বের সূক্ষ্ম জাল। উপন্যাসটি যত এগিয়েছে, ততই পাঠক হিসেবে আমি নিজেকে চরিত্রগুলোর ভেতরে আবিষ্কার করেছি। কখনো অবন্তীর নিঃশব্দ স্বপ্নভঙ্গ আমাকে কষ্ট দিয়েছে, কখনো নীরার জটিলতা বিভ্রান্ত করেছে। আবার জহিরের আত্মকেন্দ্রিক ভালোবাসা মনে হয়েছে এক ধরনের আত্মপ্রবঞ্চনা।
এই উপন্যাসের বড় গুণ হলো এটি পাঠককে সিদ্ধান্তহীন করে তোলে। কে ঠিক, কে ভুল এটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। বরং বইটি বারবার প্রশ্ন তোলে ভালোবাসা কি সবসময় ন্যায়ের পথে চলে? সম্পর্কের বৈধতা কি কাগজের স্বাক্ষরে নির্ধারিত হয়, নাকি মনোযোগে?
সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে উপন্যাসের “শিশুরা”—টুনি ও রিমু। তারা যেন উচ্চস্বরে কিছু না বলেই, পুরো উপন্যাসজুড়ে এক প্রকার কান্না ছড়িয়ে রেখেছে। বড়দের ভালোবাসা ও ভুল সিদ্ধান্তের ভার ওদের কাঁধেই যেন বেশি।
এই উপন্যাস কেবল পরকীয়া বা দাম্পত্য কলহের গল্প না। এটা দায়বদ্ধতা, আত্মপ্রতারণা ও ভালোবাসার অন্ধ দিকগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কোনো চরিত্রই নিখুঁত না, কিন্তু সেই অদেখা খুঁতগুলোর মাঝেই বইটির প্রাণ।

◾ শেষকথা:
যারা সম্পর্কের জটিলতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং ভালোবাসার অস্পষ্ট ব্যাখ্যা নিয়ে লেখা সমকালীন উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন—"চৌধুরী কথন" তাদের জন্য উপযুক্ত। এ উপন্যাসে নেই অতিরঞ্জিত নাটকীয়তা, বরং আছে জীবনের বাস্তব অথচ অনুচ্চারিত কিছু দিক—যা আমাদের সমাজে প্রতিদিনই ঘটে, কিন্তু সবসময় আলোচনায় আসে না।

রেটিং: ৪/৫
রিভিউতে ~ শাহানাজ রিয়া(ভুলত্রুটি মার্জনীয়)

Address

11/6 Free School, Street Kathal Bagan
Dhaka
1205

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when চলন্তিকা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to চলন্তিকা:

Share

Category