12/05/2025
দুর্নীতি-ঘুষে যদি নীতির বদল না হয়, বাচ্চাদের পাঠ্যপুস্তকে কেন?
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলা মাধ্যমে বাচ্চাদের রাজনৈতিক গিনিপিগ হিসেবে বিবেচনা করে প্রতিটা সরকার।
যখন যে সরকার আসবে সেই সরকার সিলেবাসে হাত দেবে, টেক্সট বদলাবে। পূর্বে একজন শিক্ষার্থী চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এক রকম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ল, এখন আরেক রকম পড়ছে, আবার অন্য কোন দল ক্ষমতায় আসলে অন্যরকম পড়বে। এ বছর যে নায়ক, আরেক বছর সে ভিলেন। এই পরিবর্তন শুধু মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে না, জাতীয় ইতিহাস থেকে শুরু করে সাহিত্যের টেক্সট পর্যন্ত সবখানে।
গত বছর এক উন্নয়নের গল্প, এ বছর আরেক উন্নয়নের গল্প। পরিবর্তন আসে সামাজিক রীতিনীতি ও অনুষঙ্গেও।
ধরুন, একটা জায়গায় ছিল, ছেলেশিশু মাকে সাহায্য করছে ঘরের কাজে, মেয়েশিশু বাবার সঙ্গে বাজারে গেছে। এখন করা হলো উল্টোটা। মুসলমান সমাজে মেয়েশিশু কেন বাজারে যাবে? এই প্রশ্ন থেকে একটা পক্ষ পরিবর্তন করে দিলো। আরেকটা পক্ষ এসে মনে করল, মেয়েশিশু আর ছেলেশিশুর কাজএক্সচেঞ্জের মধ্য পরস্পরের কাজ সম্পর্কে ধারণা পাক। অথবা কাজের কোনো জেন্ডার থাকা উচিত না। এখন কোন পক্ষ ঠিক-বেঠিক, সেটা আমার আলোচনার বিষয় না। জনগণ হিসেবে আমার কথার যেহেতু মূল্য নেই, আমি কোনো মতামত দিচ্ছি না, আপনারাই ঠিক করে নেন------
আপনারা ঘুষ খাওয়ার সময় তো বলেন না, অমুক দল ঘুষ খায় আমরা খাবো না, আগের দল দুর্নীতি করত, আমরা করব না। দুর্নীতি-ঘুষে যদি নীতির বদল না হয়, বাচ্চাদের পাঠ্যপুস্তকে কেন?
গত পঞ্চাশ বছরেও এই জাতির একটা একক সমন্বিত শিক্ষানীতি দাঁড়ায়নি, আগামীতেও দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণ নেই! সিলেবাস পরিবর্তন আর বেসিক নীতি পরিবর্তন, দুটো কিন্তু আলাদা বিষয়। প্রয়োজনে সিলেবাস আপডেট করা আর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নীতিগত পরিবর্তন করা, ইতিহাস বদলে ফেলা এক বিষয় না।
তাই একটা কথা সব রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই!
একজন চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আপনাদের ভোটার না। কোনো দলেরই ভোটার না। ওর বয়স মাত্র ১১ বছর। অবশ্য ভোটার হলেও অসুবিধা ছিল না, ভোটের রাজনীতি এদেশে খুব একটা চলেও না। আমি নিজে জীবনে একবারও ভোট দিইনি। আমার চল্লিশ বছরের জীবনে গ্রাম, থানা, জেলা, বা জাতীয় কোনো পর্যায়ে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। আগামীতেও হবে না। কারণ আমি ভোট দিতে চাই অন্তত একজন সৎ লোককে, সেই নিশ্চয়তা এই মরার দেশে কখনোই পাবো না। আমার ভোট দেওয়া না দেওয়ায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু আসেও যায় না, তাই মূল কথায় আসি। কাজ হবে না, তবু অনুরোধটা করি, আপনাদের রাজনৈতিক বিদ্বেষ, রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে এসব শিশুদের দয়া করে মাফ করে দেন!
এমন একটা পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেন যেন কোনো দলকেই এসে হাত দিতে না হয়, অন্তত রাজনৈতিক কারণে। বাকি সব কিছু ওলটপালট করে দেন, ভাগবাটোয়ারা করে নেন দেশটা, শুধু শিশুদের মাফ করে দেন। সব শাসকের কাছেই এটা অনুরোধ!