25/07/2025
বেহাল মহাসড়কে পরিবহন ব্যবসায় ধস, যাত্রী বেড়েছে ট্রেনে
আমিরজাদা চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর চার লেন প্রকল্পের কাজ। সড়কে খানাখন্দ। এসব কারণে ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ যেন এখন নিয়মিত ঘটনা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকছে যানজট।
এই অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা সড়ক পথের পরিবর্তে বেছে নিচ্ছেন রেলপথ। এতে যাত্রীর চাপ বাড়ছে ট্রেনে। আর লোকসান গুনছে পরিবহন ব্যবসায়ীরা
আগে প্রতিদিন ঢাকাগামী ভিবিন্ন বাসের টিকিট বিক্রি হতো ৫০ হাজার টাকার মতো। এখন তা নেমে এসেছে ১৫ হাজার টাকায়। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে যানজট।
ঢাকায় যেতে যেখানে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা, সেখানে ৬-৮ ঘণ্টা লাগছে। আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রতিদিন পরিবহন ব্যবসায় এই বিপর্যয় নেমেছে। যাত্রীরাও এসব সহ্য করতে পারছেন না। তারা বিকল্প হিসেবে ট্রেনকে বেছে নিচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে জনদুর্ভোগ চরমে নেমেছে।
চলতি বছরের ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৮ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় নতুন করে দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এফকন।
মহাসড়কে রোদের সময় প্রচণ্ড ধুলা এবং বৃষ্টি হলে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। পুনিয়াউট থেকে ঘাটুরা মেডিকেল পর্যন্ত পুরো সড়কেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে ভরা।
দুর্ভোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে আশুগঞ্জ গোলচত্বর, বিশ্বরোড গোলচত্বর, সদর উপজেলার রাধিকা থেকে উজানিসা পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশার কারণে বিশ্বরোড গোলচত্বর থেকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে কোনো কোনো সময়ে লেগে যাচ্ছে ৪-৫ ঘণ্টা।
বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় রাস্তা
মহাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ। যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। মহাসড়কের এমন বেহাল দশায় সঠিক সময়ে গন্তব্যে না যেতে পাড়ায় লোকসানে পড়েছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।
এরইমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা চলাচলকারী কয়েকটি পরিবহন ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি সার্ভিসগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাগামী সোহাগ পরিবহনের সহকারী ব্যবস্থাপক ইমরান হোসেন বলেন, আগে প্রতিদিন টিকিট বিক্রি হতো ৫০ হাজার টাকার মতো। এখন তা নেমে এসেছে ১৫ হাজার টাকায়। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে যানজট।
ঢাকায় যেতে যেখানে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা, সেখানে ৬-৮ ঘণ্টা লাগছে। আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রতিদিন পরিবহন ব্যবসায় এই বিপর্যয় ঘটছে। যাত্রীরাও এসব সহ্য করতে পারছেন না। তারা বিকল্প হিসেবে ট্রেনকে বেছে নিচ্ছেন।
গত পাঁচ বছর ধরেই পরিবহন মালিকরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এখন আর সহ্য করা যাচ্ছে না। যানজট আর খানাখন্দের কারণে পরিবহন ব্যবসায় ধস নেমেছে। উত্তরা, রয়েল ও মিয়ামি পরিবহন ব্যবসা আপাতত বন্ধ। আমরা জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে সমস্যাগুলো তুলে ধরলে রাস্তায় ইট-সুরকি ফেলে কিছুটা ঠিক করে, কিন্তু কয়েকদিন পরই শেষ।
কাজি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার রুক্কু মিয়া জানান, যানজটের কারণে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তার খানাখন্দের কারণে প্রতিদিনই বাস নষ্ট হচ্ছে। সময়মতো গাড়ি কাউন্টারে আসতে পারছে না। যাত্রীরাও রাগ দেখান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাস মিনিমাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া বলেন, গত পাঁচ বছর ধরেই পরিবহন মালিকরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এখন আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
যানজট আর খানাখন্দের কারণে পরিবহন ব্যবসায় ধস নেমেছে। উত্তরা, রয়েল ও মিয়ামি পরিবহন ব্যবসা আপাতত বন্ধ। আমরা জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে সমস্যাগুলো তুলে ধরলে রাস্তায় ইট-সুরকি ফেলে কিছুটা ঠিক করে, কিন্তু কয়েকদিন পরই শেষ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় শরিফুল ইসলাম নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন বাস থেকে ট্রেনের যাত্রা আরামদায়ক। বাসে আগে আমরা তিন ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছাতে পেরেছি। যানজটের কারণে এখন লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। অথচ ট্রেনে লাগে মাত্র দুই আড়াই ঘণ্টা। কিন্তু ট্রেনে আসন পাওয়া কষ্টকর।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলে কাজের গতি বাড়তে পারে। তবে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে খানাখন্দগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হচ্ছে।