13/02/2025
ফ্রিল্যান্সিং করলেই টাকা আর টাকা।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং অনেক জনপ্রিয় ক্যারিয়ার অপশন, এটি নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রচুর ভুল ধারণা রয়েছে। এসব ভুল ধারণার কারণে অনেকেই হতাশ হয় বা প্রতারণার শিকার হয়। হয়তো এই একটি মাত্র পোস্ট আপনার অনেকগুলো ভুল ধারণাকে সঠিক পথে নিয়ে আসবে।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা
প্রথমভাগ - নন-ফ্রিল্যান্সারদের জন্য
❌ ফ্রিল্যান্সিং মানেই সহজে টাকা আয়
ফ্রিল্যান্সিং মানেই ঘরে বসে আরাম করে টাকা কামানো। কিন্তু বাস্তবে এটি কঠিন একটি পেশা, যেখানে দক্ষতা, ধৈর্য ও পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। যেটা বাস্তবে অন্যান্য পেশার চেয়ে অনেকটা কঠিন।ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় করতে হলে স্কিল অর্জন করতে হবে, অভিজ্ঞতা নিতে হবে, এবং ক্লায়েন্টদের সাথে কমিউনিকেট করা শিখতে হয়।
❌ কোনো স্কিল ছাড়াই ফ্রিল্যান্সিং করা যায়
কোনো কিছু না শিখেই ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করা অসম্ভব। অনেকে ডাটা এন্ট্রি, "ক্যাপচা টাইপিং", ক্লিক করে আয়, অ্যাড পোস্টিং ও ফেক রিভিউ লেখা, ইউটিউব ভিডিও ভিউ, লাইক ও সাবস্ক্রাইবার বিক্রি, ইনভেস্ট করে প্রতি মাসে আয়, ফরেক্স ট্রেডিং , অনলাইন বেট এর মতো কাজ খোঁজে, যা আসলে কোনো স্থায়ী ক্যারিয়ার নয়। এরকম অনেক বিষয় আছে যেগুলো বাইরে থেকে লোভনীয় হলেও আদতে লংটার্ম কাজ করতে এগুলো খুবই রিস্কি এবং বেয়াইনি। ভালো ইনকাম করতে হলে অবশ্যই স্কিল অর্জন করতে হবে। স্কিল ছাড়া বিকল্প নেই।
❌ রাতারাতি লাখপতি হওয়া সম্ভব
কয়েকদিন ফ্রিল্যান্সিং করলেই মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করা সম্ভব। বাস্তবে, একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে কমপক্ষে ৩-৬ মাস স্কিল শেখা, অভিজ্ঞতা অর্জন, এবং ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার প্রয়োজন হয়। শুধু কাজ শিখলেই হয়না, আপনাকে মার্কেটিং করতে জানতে হবে। আপনাকে ক্লায়েন্টের সাথে কমিউনিকেট করার জন্য বেসিক কমিউনিকেটিব ইংলিশ জানতে হবে।
❌ ফ্রিল্যান্সিং করতে কোনো বিনিয়োগ লাগে না
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্য হলেও গভীর ভাবে চিন্তা করলে এটা ভুল। কোন স্কিল ডেভলপ করার জন্য মিনিমাম আপনার ৬ মাস যে সময় দিতে হবে এটার চেয়ে বড় বিনিয়োগ আর হতে পারেনা।
আর্থিকভাবে ধরলে আপনি ডিজাইন, ভিডিও ইডিটিং এর জন্য মিনিমাম লক্ষটাকার কাছাকাছি ইনভেস্ট করতে হবে শুধুমাত্র ল্যাপটপ/কম্পিউটারের জন্য। এছাড়াও ভালো ইন্টারনেট ছাড়াও আরো অনেক ইউটিলিটি বিল! শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ না, আপনি যদি কোন কোর্স করতে চান সেক্ষেত্রেও আপনাকে অনেক টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা
দ্বিতীয়ভাগ - যারা শুরু করেছেন তাদের জন্য
❌ একবার স্কিল শিখলেই আজীবন ইনকাম করা যাবে
একবার গ্রাফিক ডিজাইন বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখে নিলেই সারা জীবন কাজ আসতে থাকবে এটাও আমার আপনার ভুল ধারণা। প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন টুল ও সফটওয়্যার আসছে। ডিজাইন ট্রেন্ড, SEO স্ট্র্যাটেজি বা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়মিত আপডেট হচ্ছে। তাই ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন জিনিস শিখতে হবে এবং নিজের দক্ষতা আপগ্রেড করতে হবে।
❌ শুধু মার্কেটপ্লেসে ভালো রিভিউ থাকলেই ইনকাম নিশ্চিত
Fiverr বা Upwork-এ যদি কয়েকটা ভালো রিভিউ পাওয়া যায়, তাহলে কাজের অভাব হবে না, এটা ভ্রান্ত ধারণা। আমার টপরেটেড আপওয়ার্ক একাউন্ট পড়ে আছে। লেভেল টু ফাইভার একাউন্ট সাসপেন্ড হয়েছে। লেভেল ওয়ান ফাইভার একাউন্ট অর্ডার বিহিন পরে আছে। শুধু রিভিউ থাকলেই হবে না, আপনাকে নিয়মিত প্রোফাইল আপডেট করতে হবে। এক্সপার্টদের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।
Fiverr-এর মতো প্ল্যাটফর্মে অ্যালগরিদম পরিবর্তন হলে র্যাংকিং পড়ে যেতে পারে যেকোনো সময়, আপনাকে ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নতুন ট্রেন্ড ও মার্কেট ডিমান্ডের সাথে মানিয়ে নিতে না পারলে রিভিউ থাকা সত্ত্বেও কাজ আসা বন্ধ হয়ে যাবে।
❌ শুধু স্কিল থাকলেই সফল হওয়া যাবে
অনেকে ভাবে, স্কিল ভালো থাকলে কাজ পাবেই, অন্য কিছু দরকার নেই। কমিউনিকেশন স্কিল দরকার, কারণ ক্লায়েন্টের চাহিদা বুঝতে পারতে হবে। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ আপনার প্রোফাইল, সোশ্যাল মিডিয়া ও পোর্টফোলিও আকর্ষণীয় হতে হবে। নেটওয়ার্কিং খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরিচিতজনদের মাধ্যমেও অনেক কাজ পাওয়া যায়।
❌ শুধু ইংরেজি জানা থাকলে ক্লায়েন্ট পাওয়া সহজ
ইংরেজি অবশ্যই দরকার, কিন্তু শুধু ভাষা জানলেই হবে না। প্রোপার ক্লায়েন্ট রিসার্চ ও আউটরিচ জানা দরকার। সঠিক মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি জানা লাগবে, নাহলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন।
❌ দাম কমিয়ে রাখলেই বেশি কাজ পাওয়া যাবে
যদি অন্যদের তুলনায় কম দামে কাজ অফার করে, তাহলে বেশি কাজ পাবে। বরঞ্চ খুব কম দাম দিলে পেশাদার ক্লায়েন্টরা আপনাকে অবিশ্বাস করতে পারে। তাছাড়াও কম দামে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় বেশি লোড নিতে হয়, যা মানসিক চাপ বাড়ায়। ভ্যালু বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভালো ক্লায়েন্ট আপনার কাজের মূল্য বুঝতে পারে।
❌ ক্লায়েন্ট একবার পেলেই দীর্ঘদিন কাজ দিবে
একবার ভালো ক্লায়েন্ট পেলে সে আজীবন কাজ দেবে। অনেক সময় ক্লায়েন্টের চাহিদা বদলে যায়। বাজেট, বিজনেস পরিবর্তন বা অন্য ভালো ফ্রিল্যান্সার পেলে সে নতুন কাউকে হায়ার করতে পারে। তাই নতুন ক্লায়েন্ট খোঁজা ও সম্পর্ক বজায় রাখা—দুইটাই করতে হবে।
❌ শুধুমাত্র মার্কেটপ্লেসেই ক্যারিয়ার বানাতে হবে
ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে শুধু Upwork, Fiverr, Freelancer-এর মতো প্ল্যাটফর্মেই থাকতে হবে। মার্কেটপ্লেস ছাড়াও ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, লিংকডইন, ফেসবুক মার্কেটিং, কোল্ড ইমেইল ইত্যাদির মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়। কিছু ফ্রিল্যান্সার পুরোপুরি লোকাল মার্কেট ফোকাস করে, যেখানে প্রতিযোগিতা কম থাকে। সরাসরি এজেন্সি বা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেও কাজ পাওয়া যায়।
❌ বাংলাদেশ থেকে কাজ করলে ভালো আয় করা যায় না
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের তেমন মূল্য নেই বা তারা কম আয় করে। দক্ষ ফ্রিল্যান্সাররা মাসে হাজার বা লক্ষ ডলার ইনকাম করছে।দক্ষতা, প্রেজেন্টেশন ও প্রোফেশনালিজম থাকলে দেশ কোনো বাধা না।অনেক বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার এখন এজেন্সি বানিয়ে টিম নিয়ে কাজ করছে।
❌শুধুমাত্র ওয়ার্কলাইফ ব্যালান্সের জন্য ফ্রিল্যান্সিং করা উচিত
অনেকে ভাবে, অফিসের কাজের চেয়ে ফ্রিল্যান্সিং আরামদায়ক, তাই শুধুমাত্র স্বাধীনতার জন্য ফ্রিল্যান্সিং করবে। ফ্রিল্যান্সিং মানেই কম কাজ নয়, বরং অনেক সময় ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। ক্লায়েন্টদের টাইমজোন ফলো করতে হয়, ডেডলাইন মেইনটেইন করতে হয়। তাই শুধু "আরাম" নয়, বাস্তব পরিকল্পনা নিয়েই আসতে হবে।
❌ স্ক্যাম ও ফ্রড কাজগুলোই বেশি লাভজনক
অনেকে ভাবে, ফরেক্স ট্রেডিং, ক্লিক করে আয়, CPA মার্কেটিং, ক্যাসিনো প্রমোশন ইত্যাদি বেশি লাভজনক। এসব প্ল্যাটফর্মের বেশিরভাগই প্রতারণামূলক এবং অবৈধ। দীর্ঘমেয়াদে এসব কাজের কোনো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ নেই। বরং বৈধ ও সত্যিকারের স্কিল শিখলে ভবিষ্যতে আরও ভালো সুযোগ আসবে।
❌ শুধু একটা কাজ জানলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া যায়
শুধু স্কিল জানলেই হবে না, মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, কিভাবে প্রোফাইল তৈরি করতে হয়, ক্লায়েন্টের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করতে হয়, এসব বিষয়ও জানতে হবে।
🎯 তাহলে ফ্রিল্যান্সিং সফল হওয়ার জন্য কী করতে হবে?
- শুধুমাত্র ট্রেন্ডি বা হাইপ নয়, টেকসই স্কিল শেখা
- মার্কেটপ্লেস ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খোঁজা
- শুধু রেট কমানো নয়, ভ্যালু এবং স্কিল বাড়ানো
- নিয়মিত নতুন জিনিস শেখা এবং আপডেট থাকা
- পোর্টফোলিও বানানো ও নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করা
- ধৈর্য ধরে ক্যারিয়ার তৈরি করা, রাতারাতি সফলতার আশা না করা