26/04/2025
গতকাল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পারভেজ হত্যার বিচারের দাবিতে মোমবাতি প্রজ্বলন আর বিক্ষোভ মিছিলের ডিউটি শেষ করে থানায় গিয়ে হাজতের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হাজত থেকে একটা ছেলে বারবার করে ডাকছিল। হাজতের সামনে যেতেই জিজ্ঞেস করল 'তার পরিবারের কেউ এসেছে কিনা!'
আমি যেহেতু তাকে আগে কখনো দেখিনি মামলার এজাহারনামীয় আসামী হিসেবে নাম জানলেও মুখ দেখে তাকে চিনতে পারার কথা না। পরে তার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম স্টুডেন্ট মানুষ এবং অনুমান করেই বললাম তুমি যেন কয় নাম্বার আসামী, - 'সে বললো স্যার এক নাম্বার আসামী কিন্তু আমি ছুরি মারিনি।' যদিও বেশিরভাগ অপরাধীরা এটাই বলে থাকে।
পুনরায় জিজ্ঞেস করল তার পরিবারের কাউকে দেখেছি কিনা! তার চোখ মুখে পরিবারকে দেখার কি যে আকাঙ্খা সেটা বলে বুঝাতে পারবনা। যাইহোক তদন্ত আর প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় তার শাস্তি নির্ধারণ হবে। কিন্তু অপরাধের পর এই যে হৃদয়ভরা কাকুতি এসব দিয়ে কি সে এখান থেকে বের হতে পারবে! পরিবারকে দেখার এই আকাঙ্খা কি কেন্দ্রীয় কারাগারের চার দেওয়ালে বসে আদৌ কোনদিন শেষ হবে! সে কিংবা তার পরিবার কি আর কোনদিন স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে?
স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যে ছোটখাট ব্যাপারে আমরা মাথা গরম করে ফেলি, সুকান্তের আঠারো ভেবে পদাঘাতে সব চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলতে চায়, পরিবারের কথা শুনতে চায়না, সিনিয়রদের মানতে চায়না, আইন আদালত মানতে চায়না, নিজে যা ভাবি তাই সঠিক মনে করি, আবেগের বশে এই সঠিক মনে করাটা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা পারভেজ হত্যা মামলার আসামীরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
আজকে তাদের বন্ধু-বন্ধব কেউ পাশে নেই, তার সহপাঠী তথা পুরো বাংলাদেশ এখন তাদের দ্রুত বিচার প্রত্যাশা করছে। অপরাধবোধে ফাঁসিতে মরার আগে ভেতরে ভেতরে যে মরা আপনি আর আপনার পরিবার মরবে তার দায়ভার কে নিবে এখন! পারভেজের মত হাসিমাখা একটা ছেলের পরিবারের দায়িত্ব কে নিবে! নিজেকে আর নিজের পরিবারকে এমন কুৎসিতভাবে ধ্বংশ করে দেওয়ার জন্য কি আমাদের 'বাবা-মা' রা আমাদের জন্ম দিয়েছিলেন,আমাদের পেছনে এত শ্রম দিয়েছিলেন?
কপিঃ উপস্থিত পুলিশ অফিসার।