11/08/2025
বাংলাদেশ, জনগণ, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রূঢ় বাস্তবতা!
অফিসের কাজে গুলশান গেলাম দুপুরের পর। কাজ শেষ করে যখন রাস্তায় নামলাম, তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধা প্রায়। তখন চোখে পড়ে ছবির এই দৃশ্য। একজন নারী জুবুথুবু হয়ে বসে আছে ফুটপাতে। জীবিত তবে মনে হবে প্রাণহীন। পাশেই একটু উঁচুতে বসা একটা কিশোর, মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর চেহারা। দেখেই মনে হচ্ছে কোন মাদরাসায় পড়ে। কাছে যেতে শুনলাম স্পষ্ট স্বরে সালাম দিয়ে বললো "ভাইয়া আমার মা ক্যান্সার রোগী, একটু সহায়তা করুন" মহিলাটির দিকে তাকালাম, এ যে জড়বস্তু!
ইট পাথরের শহরে অনেক রকমের মানুষ প্রতারণার ফাঁদ পাতে। এই মহিলা হয়তো সত্যিই অসুস্থ। অথবা ভিন্ন কিছুও হতে পারে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না, আমি যাচ্ছি কঠিন এক সত্যের দিকে। নিজেকেই দাড় করালাম এক রূঢ় বাস্তবতার সামনে।
মৌলিক চাহিদার এক স্তম্ভ হলো চিকিৎসা। স্বাধিকারের ৫৮ বছর পর আমাদের এই স্তম্ভ কতটা নড়বড়ে তা চিন্তা করলাম। মহাশূন্য অনুভব করলাম। রাষ্ট্রকাঠামোতে চিকিৎসা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু দীর্ঘ দিনের অবহেলায় এই অংশটা ভঙ্গুর পড়ে আছে। কিছু মেডিকেল কলেজ আছে সত্য তবে সেখানে সেবা পাওয়াটা যুদ্ধে জেতার মতো। চিকিৎসা চলে গেছে বেসরকারী সেক্টরে। আর সেখানে প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসার সুযোগ কই? দরিদ্র সেখানে চিকিৎসার ব্যয়ের ভয়ে মরার আগেই একবার মরে, আয়ু শেষ হলে দ্বিতীয়বার মরে। সাথে দেনার দায়ে পরিবার ধুঁকে ধুঁকে মরে।
আমাদের পাশের দেশের টাটা শিল্পগোষ্ঠী! ভারতের জিডিপির ৪% জোগান দেয় টাটা গ্রুপ। রতন টাটা তার সম্পদে ৬৫% দান করেছেন জনকল্যাণে। টাটা গ্রুপ তৈরী করেছে বিশ্বের বৃহত্তম ক্যান্সার হাসপাতাল। এই হাসপাতালে প্রায় বিনামূল্যে চিকিৎসা পায় ভারতের নাগরিকেরা। একজন বাংলাদেশীর এই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় ১০ লক্ষ টাকা হলে ভারতীয়ের লাগে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ।
আমরা বাংলাদেশীরা এখানেও হতভাগ্য। আমাদের দেশে বহু বড় বড় শিল্প গ্রুপ আছে। তাদের খবর ছড়ায় টাকা পাচারে, জমি দখলে আর পরিবেশ দূষণে। এখানে ওয়াজের মাঠে সততার বাণী বলা লোকের নামেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আসে।
প্রান্তিক মানুষদের জন্য আসলেই কেউ নেই! না রাষ্ট্র, না শিল্পগ্রুপ!
এ কেমন দেশ? এ কেমন রাষ্ট্রকাঠামো?
Copy Kaji Rasel