28/02/2025
হিন্দুস্তান ইউনিলিভার-এর শ্রমিক থেকে নাম হয় জনি লিভার!
একসময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কলম বিক্রি করতেন তিনি। তারকাদের ডায়লগ, নাচ নকল করে করতেন রোজগার। পরবর্তীতে সেই তিনিই হয়েছেন বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা কমেডিয়ান। স্টান্ডআপ কমেডি থেকে শুরু করে রূপালি পর্দায় লোক হাসানোর এ কারিগর জনি লিভার। যিনি কমেডি করেই পেয়েছেন পরিচিতি।
এখন দুনিয়াব্যাপী পরিচিত হলেও জনি লিভার ভীষণ অর্থ-কষ্টে বেড়ে উঠেছেন। সংগ্রামী এক জীবন পার করে বর্তমান অবস্থান তৈরি করেছেন এই অভিনেতা। পর্দায় লোক হাসানো এই মানুষটি একসময় নিজেই নিজেকে শেষ করে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বোনদের কারণে তা আর করা হয়ে উঠেনি।
১৯৫৭ সালের ১৪ আগস্ট জনি লিভারের জন্ম। সবার কাছে জনি লিভার নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম জন প্রকাশ রাও জানুমালা। অভিনেতা-কৌতুকশিল্পী হিসেবে খ্যাতি মিললেও জনি পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেননি। তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে জনি ছিলেন সবার বড়। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই স্কুল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। কাজ খুঁজতে অন্ধ্রপ্রদেশ ছেড়ে মুম্বাই চলে আসতে হয়েছিল।
জনি লিভারের বাবা হিন্দুস্তান ইউনিলিভার প্ল্যান্টে একজন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু বাবার আয়ে ৭ জনের পরিবারের খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। স্কুলের টাকা এবং রেশন দিতে না পেরে একসময় স্কুল ছেড়ে দেন তিনি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিল যে, জনি লিভার মুম্বাইয়ের রাস্তায় কলম বিক্রি শুরু করে দেন। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে কলম বিক্রি করে খুব বেশি আয় করা যাচ্ছিলো না। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
বেশ কিছুদিন কলম বিক্রির পর বাবার সাথে হিন্দুস্থান ইউনিলিভার লিমিটেডে কাজে যোগ দেন। এতে নিয়মিত অর্থের একটা সংস্থান হয়। পায়ের নিচে মাটি পায় পুরো পরিবার। তবে কলম বিক্রির সময় বলিউড স্টারদের মিমিক্রি করার যে গুণ রপ্ত করেছিলেন জনি লিভার তা ত্যাগ করেননি। মাঝেমধ্যেই ঝালিয়ে নিতেন এই অভ্যাস। অফিসের প্রোগ্রামে জনি মাঝেমধ্যেই গলা ও নাচ নকল করে দেখাতেন।
এরকমই এক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার সময় বলিউড স্টারদের নকল না করে বরং ইউনিলিভারের কিছু অফিসারের গলা নকল করেন। এই নকল এতোটাই অবিকল ও নিখুঁত ছিল যে, সকলে মিলে তার নাম দেন জনি লিভার।
সেই সময় অফিসের কাজের পাশাপাশি স্ট্যান্ডআপ কমেডি করতেন জনি লিভার। বলা হয়ে থাকে, তিনিই ভারতবর্ষের প্রথম স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান। একটা সময় স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় ডাক আসতে থাকে তার। শো বাড়ছিল, সঙ্গে টাকা-পয়সাও। এক পর্যায়ে তাকে অফিস ছেড়ে দিতে হয়। ছয় বছর চাকরি আর জনি লিভার নাম নিয়ে ইউনিলিভার হিন্দুস্থান ছাড়েন তিনি।
এরপর তিনি পুরোপুরি স্ট্যান্ডআপ কমেডিতেই মনোযোগ দেন। দেশে-বিদেশে স্ট্যান্ডআপ কমেডি করে যাচ্ছিলেন। টেলিভিশনেও কাজ করা শুরু করেন। বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও একটি অনুষ্ঠান করেন জনি। এই অনুষ্ঠানের পরপরই বলিউডের নজরে আসেন তিনি।
১৯৮০ সালে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কমেডি অ্যালবাম ‘হাসি কে হাঙ্গামে’ হইচই ফেলে দিয়েছিল। এটি ভারতজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একই বছর দক্ষিণী সিনেমার পরিচালক কে বিজয়ন ‘ইয়ে রিস্তা না টুটে’ সিনেমার কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে নতুন মুখ খুঁজছিলেন। গায়ক কল্যাণজি জনির নাম সুপারিশ করলে তাকে কাস্ট করেন তিনি। ১৯৮১ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি জনিকে।
জনি লিভারের কমিক সেন্স এতটাই প্রখর যে পর্দায় তার উপস্থিতি দর্শককে কখনো মুখ ভার করে থাকতে দেয়নি। অক্ষয় কুমার, গোবিন্দ, সালমান খান, শাহরুখ খান থেকে শুরু করে তৎকালীন বলিউডের প্রায় প্রত্যেক প্রথম সারির অভিনেতার সঙ্গেই স্ক্রিন শেয়ার করেছেন জনি।
চালবাজ, রাবন রাজ, বাজিগর, রাজা হিন্দুস্থানী, দুলহে রাজা, দিওয়ানা মাস্তানা, লাভকে লিয়ে কুচভি করেগা, হাউসফুল সিনেমার মত জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপর জনি লিভার ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ান পুরস্কারের জন্য তের বার মনোনীত হয়েছেন এবং দিওয়ানা মাস্তানা ও দুলহে রাজা সিনেমায় অভিনয়ের জন্য দুইবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।
অর্থের অভাবে সপ্তম শ্রেণিতে পাঠ চুকানো জনি লিভার এখন নিজের মার্সিডিজ চালান। এটি তাঁর বড় পছন্দের গাড়ি। ক্যারিয়ারে এত সফলতা অর্জনের পরও একদমই সাদামাটা জীবনযাপন করেন জনি লিভার।তার আচার-আচরণে কখনো দম্ভ প্রকাশ পায়নি।
তথ্যসূত্র: বলিউড হাঙ্গামা