17/07/2025
পলাশীর মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি, একজন সার্জেন্ট এসে থামতে বললেন। থামলাম। পরিচয়ের পর জানতে পারলাম উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ সেশনের বড় ভাই, মুহসীন হলেই থাকতেন। সৌজন্যমূলক কথোপকথনের পর বললেন, “একটু দাঁড়াও, একটা জিনিস দেখাই তোমাকে।”
আমি বুঝে গেলাম কী পর্যবেক্ষণ করতে বলছেন। একটু পরেই একটি বাইকে দুইজন আরোহী এলেন, কারো মাথায় হেলমেট নেই। সার্জেন্ট থামতে বলতেই থামল, কিন্তু বলল— “আমরা বার্সিডির!” যেন এটাই পরিচয়পত্র। সার্জেন্ট যখন কাগজপত্র চাইলেন, শুরু হলো উগ্র আচরণ, রাগান্বিত ভঙ্গি ও অসম্মানজনক আচরণ। বলছে— “আমরা ঢাকা ভার্সিডির স্টুডেন্ট, আমাদের কেন কাগজ দেখাতে হবে?”
কিছুক্ষণ কথোপকথনের পরই ধরা পড়ে গেলো, তারা কেউই ঢাবির না। অথচ বাইকের সামনে গর্ব করে লাগানো “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” নেমপ্লেট। পরে তারা বলতে লাগলো, “আমরা আজিমপুরের লোক, এই রাস্তায় চব্বিশ ঘণ্টা চলাফেরা করি। তাই কাগজ রাখি না।” ফোন করে ৪-৫ জনকে ডাকলেও কেউ কাগজ আনতে পারলো না। শেষ পর্যন্ত, সার্জেন্ট ১ হাজার টাকার মামলা করলেন।
বিশ্বাস করুন বা না করুন, ওই সময় দাঁড়িয়ে থাকা ১২টা বাইকের মধ্যে ৩টা বাইকে ঢাবির নেমপ্লেট থাকলেও চালকেরা কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল না।
প্রশ্ন উঠতেই পারে—নেমপ্লেট লাগালে সমস্যা কী?
সমস্যাটা আসলে কারো ব্যক্তিগত না। সমস্যা হলো, ঢাবির নাম ব্যবহার করে যারা বাইরের, তাদের অপকর্ম ঢাবির ঘাড়ে বর্তায়। পুলিশ থামালে তারা যেমন অভদ্রতা করে, তেমনি পুরান ঢাকার অলিগলিতে এমন বাইকে চড়া ছেলেদের দেখা যায় নারীদের উত্ত্যক্ত করতে—সামনে-পেছনে “ঢাবি” লেখা থাকা সত্ত্বেও।
যেহেতু বাইকের চালকের পরিচয় চট করে বোঝা যায় না, তখন মানুষ বলে ফেলে—“ঢাবির পোলাপান লম্পট”।
এটাই মূল সংকট। এই ঢাবির নাম ব্যবহার করে প্রতিদিন যারা অপকর্ম করছে, তারা আসলে ঢাবির গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগাচ্ছে। লাখ লাখ বাইকে ঢাবির নেমপ্লেট ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেগুলো ঢাবির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে প্রতিনিয়ত ভূমিকা রাখছে।
শেষে ভাইটি হালকা আক্ষেপ নিয়ে বললেন—“আমরা ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে চাকরি করি আর পোলাপান আমাদেরকে ভার্সিটির গরম দেখায়।” তিনি একরকম হাঁফ ছেড়ে বললেন—“এই এরিয়া থেকে ডিউটি শেষ হলেই বাঁচি রে ভাই!”
Photo AI Generated