08/08/2025
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তৎকালীন বাংলায় কবিগানের বিকাশকে স্বর্ণযুগ বলা যায়। যদিও তার পূর্বেও এবং পরেও বহুদিন ধরেই কবিগানের বিস্তৃতি ঘটেছে। কবিগান মূলত দুজন কবিয়ালের মুখোমুখি সুরে, ছন্দে ও যুক্তিতে লড়াই—যা একপ্রকার সংগীতনির্ভর বিতর্ক।
এই লড়াইয়ে বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে এসেছে—বেদ-পুরাণ, শরিয়ত-মারেফত, নারী-পুরুষ, গুরু-শিষ্য, এমনকি রাজনীতি ও ইতিহাসের মতো বিষয়ও। গানের উত্তেজনার সাথে সাথে বাজনাদারদের হাতে ঢোল, খোল, কাঁসি, বাঁশি, হারমোনিয়ামের লয়ে ওঠানামা করে এক অপূর্ব সুরের আবহ সৃষ্টি হয়।
শুরুর দিকে কবিগান অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট ছিল—তৎকালীন শিক্ষিত সমাজের মতে, এটি একসাথে বসে শোনার উপযোগী ছিল না। কবিয়াল বিজয় সরকার নরসিংদীর হরিচরণ আচার্য ও রাজেশ সরকারের অনুসারী হয়ে কবিগান সংস্কারে মনোনিবেশ করেন।
মাত্র ১৩ টাকার বায়না নিয়ে বসির উদ্দিনের নৌকায় চড়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে কবিগান, বিচ্ছেদ গান, ধুয়া গান, পদাবলি কীর্তন, অষ্টক গান পরিবেশন করেছেন বিজয় সরকার। বিজয়ের গান শুধু গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়, শহরের শিক্ষিত সমাজের হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছে।
পল্লীকবি জসীম উদ্দীন বলেছেন,
"মাঝে মাঝে দেশীয় গ্রাম্য গায়কদের মুখে বিজয়ের রচিত বিচ্ছেদ গান শুনিয়া পাগল হই। এমন সুন্দর সুর বুঝি কেহই রচনা করিতে পারে না।"
মনোজ কান্তি রায়-এর জীবনে বিজয় সরকার যতটা শিক্ষাগুরু, ততটাই আধ্যাত্মিক গুরু। বাড়ির আঙিনায় দুর্গা প্রতিমায় তিনি যতটা মমতায় চোখ ফুটিয়ে তোলেন, ঠিক ততটা মমতায় বুকে আগলে রেখেছেন বিজয়ের পদাবলি।