23/08/2023
প্রথম তিন মাস আমার বাবু নিয়ে কি করেছি? এইভাবে বুকের ভেতরে জড়িয়ে রেখেছি ২৪ ঘন্টা!
কোলে নিও না এত বেশী বাবুকে, পরে অভ্যেস হয়ে যাবে আর কোল ছাড়া থাকবে না। শুধু বাংলায় না ইংরেজীতেও এমন অযথা উপদেশ হরহামেশা লোকে নতুন মায়েদের দেয়, বলে You’re making a rod for your back. বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে নেই, কোলে নিয়ে বসে থাকতে নেই, চোখ বন্ধ করলেই বাবুকে বিছানায় শুইয়ে দাও ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি এই সব অপ্রয়োজনীয় উপদেশ কানেই নেই নি, প্রথম তিন মাস আমি আমার বাবু বুক থেকেই নামাই নি। কেন?জানেন
কারন আমার শরীর আমার বাবুর প্রথম বাসস্থান, আমার শরীরেই ওর প্রথম খাদ্য, একমাত্র মায়ের কাছে মায়ের শরীরের গন্ধে উত্তাপে শিশু নিরাপদ অনুভব করে, গর্ভের স্মৃতি আর মায়ের কাছাকাছি থাকার তীব্র আকাঙ্খা জেনেটিক প্রোফাইলে নিয়েই সে জন্মেছে। এই নিরাপত্তার অনুভূতি শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্টে অন্যতম ভূমিকা রাখে, শিশু নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে শেখে, গর্ভের বাইরের জগতের সাথে মানিয়ে নিতে শেখে, হজমশক্তি বাড়ে এবং মায়ের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন হয়।
মায়ের সাথে এই বন্ডিং শুধু শিশু না মায়ের জন্যও উপকারী, শিশু যখন মায়ের বুকে থাকে মায়ের অক্সিটোসিন আর প্রোল্যাকটিন এই দুই ধরনের হরমোন নৃঃসিত হয়, এতে মায়ের বুকে প্রচুর দুধ আসে, মায়ের নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রনে থাকে যেটা পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন কমায়, মন রিলাক্স করে; মা এতে খুব দ্রুত সেরে ওঠেন।
আমার ছেলে জন্মের পরের প্রথম তিন মাস আমি ওকে বুকেই রেখেছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমার ছেলে ইনসিকিউরিটিতে ভোগে নি, চাওয়ার আগে মা পেয়েছে সবসময় পেয়ছে।ও অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী একটা বাচ্চা যে সবার কাছে যায়, হাসিমুখে ভাব বিনিময় করে। বাচ্চা বেশী বেশী কোলে নিলে পরে আর কোল থেকে নামতে চাইবে না এটা একটা ভুল কথা।
একা একটা নবজাতকের যত্ন নিতে নিতে কাজ করতে সিজারের রোগী, আমার কি ক্লান্ত লাগতো না? আমার কি দূর্বল লাগতো না? আমার কি ঘুম পেত না? আমাকে দেখতে বিধ্বস্ত মনে হলেও আমি এভাবেই শান্তি পেয়েছি। আমার মা থেকে শুরু করে সবাই বলতেন, সারাক্ষন কোলে রাখ কেন? বিছানায় ঘুম পারাও। তবুও আমি বিছানায় রাখতাম না, বুকেই রাখতাম, কারন আমার এবং আমার বাবুর কাছাকাছি থাকাটাই বায়োলজিকালি নরমাল একটা বিষয়, বরং আমার বাচ্চা চোখের সীমানার বাইরে গেলেই আমার এনজাইটি দুশ্চিন্তা শুরু হয়, ও যেমন আমার গায়ের গন্ধে শান্ত থাকে আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই কারন নাড়ী কাটলেই মা এবং শিশুর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় না, এই যোগাযোগের শিকড় আমাদের দুজনের মস্তিষ্কেই দৃঢ়ভাবে গাথা।
কাজেই আমি আমার নিজের বাচ্চা যেমন খুশী কোলে নেব যতক্ষন খুশী কোলে নেব। থাকুক আমার ঘর এলোমেলো, বাকি সব কাজ পরে থাকুক। সব কিছু পরে করা যাবে কিন্তু আমার বাবু এত ছোট আর কোনদিন থাকবে না, মায়ের এত কাছে থাকার আকাঙ্খা সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকবে, কাজেই এই সুন্দর সময়টা আমরা দুজনেই যতটা পারি উপভোগ করবো।
কোলে নিও না বলে যারা দরদ দেখাতে আসেন তারা দয়া করে মায়ের অন্যন্য কাজে সাহায্য করেন যাতে মা আরো বেশীক্ষন শিশুকে তার প্রাপ্য সময়টুকু দিতে পারেন। মায়ের দায়িত্ব কেবল ন্যাপী পরিষ্কার, ঘুম পারানো আর খাওয়ানোই না, মায়ের বুকের তাপ, মায়ের আদর আর মায়ের স্পর্শও শিশুর অধিকার, সেই সুযোগটুকু মাকে অবশ্যই করে দিতে হবে।
আমরা যখন বাইরে কোথাও যাই আমাদের কি দিন শেষে বাড়ী ফেরার জন্য মনটা ছটফট করে না? নিজের ঘর নিজের বিছানার চেয়ে শান্তি কি আর কোথাও আছে? আমার নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের শরীরই ওর নিজের বাড়ী, নিজের ঘর থেকে ওকে বঞ্চিত করবেন না। এর চেয়ে বেশী আরাম ওর জন্য আর কোথাও নেই, শিশুকে তার আপন নিবাস, তার মায়ের শরীরেই বাস করতে দিন। শিশুদের স্থান শুধুই মাতৃক্রোড়ে ❤️