09/01/2024
– এই শুনো, ব্লাউজটার পেছনের ফিতে টা বাঁধতে পারছি না …একটু বেঁধে দিবে??
সৌমেন তাকিয়ে দেখলো মডার্ন ডিজাইন এর লাল ব্লাউজ পরিহিত নম্রতার হলুদ পিঠের বেশীরভাগটাই উন্মুক্ত।
এখনো ঠিকভাবে না লাগানো লাল রং এর ফিতে দুইপাশে প্রশ্নবোধক হয়ে ঝুলে আছে মিলনের অপেক্ষায়। উন্ন্মুক্ত পিঠ এর মসৃণতা দূর থেকেও বেশ বোঝা যাচ্ছিলো। এ ফিতের প্যাচ এর ফাঁস লাগানোর খেলাটা খেলতে হবে পিঠের উপর আন্গুলের আলতো ছোঁয়ায়- সম্মোহিত হয়ে তাকিয়ে আছে সৌমেন।
নম্রতা আবারো তাড়া দিলো – কোথায় তুমি??
সৌমেন চশমাটা ঠিক করে কাঁপা হাতে পিঠের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ফিতে টা গোল পাকাতে পাকাতে আয়নায় আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো নম্রতা হাসছে ।
সৌমেন এর বয়স ২৬। কিন্তু ২৬ বছর বয়সে স্ত্রীর সাথে কিভাবে ঘনিষ্ঠ হতো হয় – এ বিদ্যা অনেকের রপ্ত থাকলেও সৌমেনের নেই ।
এমন নয় যে মাঝে মাঝে লুকিয়ে রোমান্টিক মুভিগুলো সে দেখে না ! কিন্তু বন্ধুদের তুমুল অভিজ্ঞতার গোডাউন এর সাথে তুলনা করলে একপ্রকার কোনঠাসা হয়েই ছিলো সব অনুভূতি গুলি।
তাই প্রকাশ করতে গেলেই এখন সৌমেন এর হাত পা কেঁপে একাকার হয় ।
নম্রতা এর বয়স ও সৌমেনের সমান অর্থ্যাৎ ২৬ ।মাত্র জুনিয়র ডেন্টিস্ট হিসেবে একটা ডেন্টাল ক্লিনিক এ কাজ করছে আজকাল । সৌমেন পেশায় কম্পিউটার প্রকৌশলী। তুখোড় ছাত্র , শিক্ষা র্প্রতিষ্ঠানে সর্বদা সর্বপ্রথম।
এখন একটা চাকরী করছে বটে কিন্তু কিছুদিন পরেই হাভার্ড এ মাস্টার্স এর জন্য চলে যাবে । এর মধ্যে কিছু মোবাইল এপ এ কাজ করে বেশ নাম কামিয়েছে।
ছাত্র দুর্দান্ত হলেও রোমান্সে সৌমেন সত্যি ফেল্টুশ । বিয়ের আগে কোন প্রেম করার ছিটেফোঁটা ভাগ্য ও হয়নি তার।
নম্রতার এর সাথে এই বিয়েতে অবশ্য কেউ রাজী ছিলো না । সমবয়সী বিয়ে করার ক্ষেত্রে পরিবারের ঘোর আপত্তি ছিলো ।
প্রথমেই অবশ্য যে কথা উঠলো -তা হলো সৌমেন এর তো বিয়ের তো বয়স ই হয়নি। কিন্তু সৌমেন এর বিয়ে হবে – সেটা এই ঘরের বস্ অর্থ্যাৎ ঠাকুরমা এর প্রবলইচ্ছা।
বুড়ি বললেন ,
– এই পোলাডা বিদেশ যাবে , তোমরা কি তারে একলা ছাড়বা?? পরে বিদেশী মেম বিয়া কইরা ফালাইলে !! পোলারে বিয়া দিয়া বিদেশ পাঠাও।
পরিবারে বাবা কাকা আর মা কাকী কিন্তু ঠাকুরমার ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকে । তাই প্রতিবাদ করা কষ্ট।
সৌমেন ও শেষ চেষ্টা করেছিলো কোন রকমে ‘না’ করে করে যদি বিয়ে এড়িয়ে এ যাত্রা পার পাওয়া যায়! তাই পাত্রী নির্বাচনে যতগুলি আসলো তাদের মধ্যে প্রতিটার ই খুঁত ধরা শুরু করলো সে !
শুধু নম্রতার ছবি দেখে সৌমেন কোন খুঁত পেলো না। অনেক মেয়ের ছবি দেখেই ভালো লেগেছিলো – নম্রতার ক্ষেত্রে সেরকম হলে এবারো দেখেই মনের হাল্কা ভালা লাগা টা লুকিয়ে দিব্যি না করে দিতো !
কিন্তু নম্রতার ছবি তে থমকে যেতে হলো , রীতিমত তোতলাতে শুরু করলো। বাস্তবে এত সুন্দর মেয়ে হয় না , সিনেমার ম্যগাজিনগুলোতে মেকাপ লাগানো নায়িকার কভার পেজের ছবি এমন হয় ।
সৌমেন বানিয়ে খুঁত বলতে গিয়েই ২০ মিনিট ধরে ভাবছিলো।
ঠাকুরমা বললেন,
-এই মাইয়াই সমু এর পছন্দ হইছে। তাই এইটাই ফাইনাল!
খবর নিয়ে জানা গেলো মেয়ে একই বয়সী ! কি যন্ত্রনা ,
ছোট কাকা একটু সাহস সঞ্চয় করে বললো , ‘মা বয়স তো এক!’
– তো কি হয়েছে ?? তোদের বংশের যেই চেহারা – কেউ তো আমার ধাত পাস নাই তোরা। সব গুলা রে এ ৬০ এর মত বুড়ো লাগে । নাতি সমু টাও না পাইলো আমার গায়ের রং না পাইলো চেহারা । কেমন যেন মেয়েমাইনষের মত লজ্জাবতী হইয়া থাকে পোলাডা । সবগুলি তোদের বাবার মত হইছস! আকাইম্মা । নাতিটাও তোগো মত হইসে । এই মেয়েটা অনেক সুন্দর । বয়স এক হইলেও এইটাই ফাইনাল ।
বিয়েটা হয়ে গেলো। ছবি তে নম্রতা যতটা সুন্দর , বাস্তবে আরো অনেক বেশী সুন্দর ।
এতটাই সুন্দর যেন মনে হয় তাকে সবসময় ঘরের ভেতর সাজিয়ে ই রাখা উচিত। বিয়ের সময় বন্ধুরা দেখে বলে উঠলো,
– “হোয়াট দ্যা …… ম্যান, পাইলি কেমনে মামা !!’
তারপর তাকে আর নম্রতা কে জড়িয়ে যা যা ভবিষ্যৎবাণী করলো তা কোনো বিদেশী পর্ন চলচ্চিত্র থেকে কম নয়।
এসব শুনে সেদিন প্রচন্ড রাগ মেশানো লজ্জা হচ্ছিলো সৌমেনের।
সনাতন ধর্মালম্বীদের বিয়ের পরের দিন রাতে বৌ কে শশুর বাড়ীর পাশাপাশি অন্য বাড়িতে ঘুমুতে হয়। নম্রতা প্রতিবেশী সাধন কাকার বাড়ীতে ঘুমালো।
তার পরের দিন কাকাতো মামাতো ভাইবোন মিলে বাসর সাজিয়ে দিলো। সাবালক হবার পর এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে পাশাপাশি ঘুমাবে -এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না সৌমেনের ।
বিয়ের আগে ২ দিন ফোনে কথা হয়েছে , সব আলতু ফালতু কথা , পড়াশুনা কেরিয়ার , কি কি শখ , কোনো কোন বন্ধুদের নিয়ে বেহুদা গল্প। কিন্তু বাসর সজ্জায় কি বলবে সৌমেন বুঝতে পারছিলো না।
নম্রতা অনেক সহজ করে দিলো।
প্রথমেই বললো -কিছু খেয়েছ কিছুক্ষন আগে ?
– হ্যা আইসক্রিম।
– কাছে আসো
সৌমেন হার্টটা বোধহয় জাম্পিং জ্যাক হয়ে গেলো কিছুক্ষনের জন্য ।
কাছে আসতেই নম্রতা কাছে ঝুঁকে হাতের ডগা দিয়ে সৌমেন এর ঠোঁটের এর কোনায় লেগে থাকা আইসক্রিম একটু অবশিষ্ট টা মুছে দিলো।
নম্রতা নীচু হতেই আঁটসাঁট লাল ব্লাউজ এ আটকে থাকা বর্তুলকার সুডৌল উন্নত স্তনদ্বয়ের বিভাজক রেখার উপরিভাগ দেখা যাচ্ছিলো … নিশ্বাস বন্ধ হবার অবস্থা !
সৌমেন টের পাচ্ছিলো ধীরে ধীরে তার রক্তকণিকায় আগ্নেয়গিরির লাভা মিশে যাচ্ছে। কি পারফিউম মেখেছিলো নম্রতা, সৌমেনের সেই ধারনা নেই কিন্তু তার সুগন্ধে কিছুটা নেশাগ্রস্ত হয়ে রইলো সে।
– শোনো , একটা কথা বলি? আমরা যদি তোমার এই ঘরে থাকি এই ঘরের ইন্টেরিয়র কিন্তু পরিবর্তন করতে হবে। আর closet এ রাখা তোমার কিছু কিছু জামা যদি খুঁজে না পাও – আমাকে বকা দিও না….মনে করো হারিয়ে গেছে … আর আমাকে একটু শপিং এ নিয়ে যাবে?
– বিয়ের ২ দিন পরেই এতটা অধিকার কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো সৌমেন এর। কিন্তু ভালো লাগলো।
নম্রতা কথা থামাচ্ছিলো না বাসর রাতে ।এটা ওটা বলেই যাচ্ছে। সৌমেন শুনছে। মাঝে মাঝে উত্তর দিচ্ছে হাসছে। এক সময় তারা শুয়ে পড়লো। যেমন দুইজন বন্ধু পাশাপাশি ঘুমিয়ে যায়। শুধু মাঝরাতে আবিষ্কার করলো একটা নরম পেলব হাত তাকে জড়িয়ে ধরেছে ঘুমের ঘোরে। সৌমেন এর খারাপ লাগলো না।
যৌনতা কে দূরে রেখেই মধুর এবং সরল বন্ধু সম্পর্কটার মধ্যে দিয়েই নম্রতা কে কেন্দ্র করে এই প্রথম একজন নারীকে ধীরে ধীরে জানতে শুরু করেছিলো সৌমেন।
সাধারনত একটা অপরূপা মেয়ের অন্যান্য গুন্ কম থাকে- এই বিশ্বাস টা ছিলো সৌমেন এর । নন্দিনীর যেই রূপ তাতে একেবারেই গুন না থাকার ই কথা ছিল। কিন্তু বধূ নম্রতা কয়েকিদিনের মধ্যে সবার মন জয় করে ফেললো। গান নাচ জানে , মজার মজার রান্না জানে , বড়দের কে ম্যানেজ করতে জানে ।
বিশেষ করে ঠাকুরমার তো উঠতে বসতেই একটাই খোঁজ – চড়ুই পাখি টা কই রে !
কয়েক দিন আগেও পরিবারের সবার জন্য বেতনের সব টাকা খরচ করে জামা কাপড় কিনে এনেছে নম্রতা ।
আজ নম্রতার কাকাতো বোন এর বিয়ের রিসেপশন ,তাই বোধহয় নম্রতা খুব সাজ সজ্জা করছে । সৌমেন খুব অল্প সময় নিয়ে তৈরী হয়ে বসে আছে ।
প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে সে নম্রতা কে তৈরী হতে দেখছে আর ফোনে ক্রিকেট খেলার স্কোর দেখছে । একবার ভেবেছিলো রুম থেকে উঠে বৈঠক খানায় টিভি ছেড়ে খেলা দেখবে । কিন্তু নম্রতা তাকে উঠতে দেখেই এমন অবাক দৃষ্টিতে তাকালো !! ভয়ে আর উঠেনি সৌমেন।
কখনো এত কাছ থেকে এতক্ষন ধরে কোন মেয়েকে সাজতে দেখেনি সৌমেন। এত সুন্দর মানুষের এত সাজার কি দরকার বুঝতে পারছিলো না ।
ব্লাউজের পেছনের ফিতেটা লাগিয়ে বিছানায় আধাশোয়া হয়ে বললো
– তুমি কি জানো তুমি না সাজলেও , ঐ বিয়ের রিসপশনে তোমাকেই সবচেয়ে বেশী সুন্দর লাগতো !
– বাব্বাহ !! এত রোমান্টিক কথা …তুমি বলতে পারো ?
– তোমাকে কিন্তু এমনিতে এত বেশী সাজতে দেখি না
– আরে আজকে উর্মির বিয়ে না ?? কত কত মানুষ আসবে জানো ??
– আচ্ছা
– শোন স্যুটেড বুটেড হয়ে বিছানায় আবার গড়াগড়ি খেয়ো না । আর চুলে একটু জেল দাও না !
– ‘হাহ্ ‘! দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সৌমেন
– আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে বলো তো!
– সৌমেন সত্যি এতক্ষন খেয়াল করেনি পরিপূর্নরুপে । এবার সামনা সামনি তাকালো !!
– ইউ লুক বিউটিফুল এস অলয়েজ কিন্তু আজ অনেক বেশী সেক্সি লাগছে !
এ কথা শুনে নম্রতার ফর্সা গালে নব যৌবনা বাঙালী মেয়েদের মত লালিমার আভা পরিস্ফুট হয়ে উঠলো।
– ‘কি করবো ! তুমি তো আর পাত্তা দাও না ।’ এক চিলতে মুচকি হাসি ঠোঁটের কোনায়। ‘আচ্ছা আজ কিন্তু আমার এক্স এর সাথে দেখা হয়ে যাবে তোমার!’
কথাটা এতটা সাবলীল ভংগীতে বললো নম্রতা , অথচ সৌমেন এর বুঝে উঠতে বেশ খানিকক্ষণ লেগে গেলো ।
– আই হোপ ! মজা করছো !
– নাহ্ । সিরিয়াস , সে উর্মির মামার দিকের আত্মীয় , তাই সে আজকে আসবে ।
– তুমি তো আমাকে বলো নি , তোমার সাথে কারো…….
– তুমি কি আমাকে কখনো জিজ্ঞেস করেছো?
সৌমেন এর ভেতর কিছুক্ষন আগের কিলবিল করে বাড়তে থাকা যৌন আকর্ষন অভিমানের কালো মেঘে ঢাকা পড়ে গেলো। প্রচন্ড রাগ লাগছে সৌমেন এর।
– এত বড় ব্যাপার টা আমার কাছে লুকালে !
– লুকাইনি , আমরা দু’জন অতীত নিয়ে কথা বলিনি কখনো তেমন! আর তাছাড়া এমন কিছু ছিলো না ৫ মাস টিকেছিলো সম্পর্ক । আমাদের বিয়ের ২ বছর আগেই ব্রেকআপ !!
– নাম কি তার ?
– অভি … আই মিন অভিজিৎ
নম্রতা কাছে আসলো , সৌমেন এর গালে হাত রেখে বললো –
– তুমি রাগ করছো কেনো এতো!
সৌমেন হাত টা সরিয়ে দিয়ে বললো,
– বাইরে অপেক্ষা করছি । তুমি আসো।
– সোম্………
অভিজিৎ এর অজ্ঞাতে ই তাকে ঘিরে ই কোন এক আলোকিত বেডরুম মেঘলা হয়ে গেলো …
কোথায় যেন সৌমেন হেরে গেলো , অভিজিৎ জিতেই গেলো – এটা ভাবতেই ভাবতেই গাড়ির ব্যকসিটে দুজনের মাঝে মহাশ্মশান এর নীরবতা বড় থেকে বড় হয়ে উঠছিলো জানুয়ারীর হিম হিম ঠান্ডায়।
#অনুরাগ
প্রথম পর্ব ১
ধীমান
————————
চলবে—
| আগামী পর্বে শেষ করে দিবো |
নেক্সট পার্ট সবার আগে আইডিতে দেওয়া হবে নিল অংশে চাপ দিয়ে এখনি আইডি ফলো করে রাখুন