14/10/2025
▌ইয়েমেনের ফযীলত
ইয়েমেন সেইসব ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা নানাভাবে বরকত দান করেছেন। তার মধ্যে একটি হলো, আল্লাহ তা'আলা এটিকে আহলুস সুন্নাহর দাওয়াতের একটি কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন, যেখান থেকে দাওয়াত শক্তি, দৃঢ়তা ও স্বাতন্ত্র্যের সাথে ছড়িয়ে পড়েছে; তাওহীদ ও সুন্নাহর দাওয়াত।
এই দাওয়াতের বীজ আমাদের পূর্বসূরীদের দ্বারা রোপিত হয়েছিল, নবী ﷺ-এর সময় থেকেই – যখন তিনি (ﷺ) তার সম্মানিত সাহাবীদেরকে رضي الله عنهم ইয়েমেনে দাওয়াতী অভিযানে প্রেরণ করেছিলেন।
একটি উপকারী তথ্য হিসেবে, সম্মানিত আলিম শাইখ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বিন লামহ আল-খাওলানি হাফিযাহুল্লাহ তাঁর কিতাবুত তাওহীদ (ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহিমাহুল্লাহ রচিত) এর প্রথম পাঠে উল্লেখ করেছেন যে তারা ছিলেন চারজন:
· প্রথম ও দ্বিতীয়: আবু আব্দুর রহমান মুআয বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আবু মূসা আব্দুল্লাহ বিন কায়েস আল-আশআরী رضي الله عنهما। মু’আয رضي الله عنه নবী ﷺ-এর সাথে আর সাক্ষাৎ করতে পারেননি, বরং রাসূল ﷺ-এর ইন্তেকালের পর সাহাবিদের কাছে ফিরে আসেন, অন্যদিকে আবু মূসা رضي الله عنه ফিরে এসে হজ্জুল ওদা (বিদায় হজ্জ) -এ অংশগ্রহণ করেন।
· তৃতীয়: আবুল হাসান আলী বিন আবি তালিব رضي الله عنه, এবং তিনি হজ্জুল ওদা-এর সময় ফিরে এসে তাতে অংশগ্রহণ করেন।
· চতুর্থ: আবু আমর জরীর বিন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী আল-ইয়ামানি رضي الله عنه। তাঁকে হজ্জুল ওদা-এর পরে প্রেরণ করা হয়।
এছাড়াও অন্যান্য সাহাবি رضي الله عنهم أجمعين ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। তাই এই দাওয়াহর একটি মূলভিত্তি রয়েছে, যা মহৎ সাহাবিগণই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আর এও সুপরিচিত যে ইয়েমেন এই ভূমি নবী ﷺ -এর হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
ইয়েমেন সম্পর্কিত হাদীসসমূহ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
"جَاءَ أَهْلُ الْيَمَنِ هُمْ أَرَقُّ أَفْئِدَةً، الْإِيمَانُ يَمَانٍ وَالْفِقْهُ يَمَانٍ، وَالْحِكْمَةُ يَمَانِيَةٌ"
أخرجه البخاري ومسلم
আবু হুরায়রা رضي الله عنه হতে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন:
“ইয়েমেনের লোকেরা এসেছে। তাদের অন্তর সবচেয়ে কোমল। ঈমান ইয়ামানী, ফিকহ (গভীর বুঝ) ইয়ামানী, এবং হিকমাহ (প্রজ্ঞা) ইয়ামানী।”
বর্ণনা করেছেন বুখারী ও মুসলিম।
---
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال النبي ﷺ:
"ألا إن الإيمان يمان، والحكمة يمانية، وأجد نفس ربكم من قبل اليمن"
رواه أحمد
আবু হুরায়রা رضي الله عنه হতে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন:
“শুনে রাখো! ঈমান ইয়ামানী, প্রজ্ঞা ইয়ামানী, এবং আমি তোমাদের রবের নিশ্বাস ইয়েমেন দিক থেকে পাই।”
বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ।
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে:
"إني أجد نفس الرحمن من هنا" ويشير إلى اليمن
“আমি এখানে থেকে রহমানের নিশ্বাস পাই।” এবং তিনি ﷺ ইয়েমেনের দিকে ইশারা করেন।
এই বর্ণনাটি ইমাম আলবানী رحمه الله প্রথমে দুর্বল বলেছিলেন, কিন্তু পরে তিনি এটি থেকে সরে আসেন এবং তাঁর সহীহাহ (৩৩৬৭) গ্রন্থে এটিকে সহীহ বলে সাব্যস্ত করেন।
আল-আল্লামাহ শাইখ মুহাম্মদ আমান আল-জামী رحمه الله এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন:
“এই হাদীস গায়বের সংবাদ হিসেবে গণ্য। হাদীসটি প্রমাণিত। ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’-এ একে বর্ণনা করেছেন। এতে ইয়েমেনের লোকদের ফযীলত উল্লেখিত আছে। ইবন তাইমিয়্যাহ رحمه الله বলেছেন, এর মানে হলো— মুসলমানদের ওপর যখন কষ্ট-সঙ্কট আসবে, আল্লাহ عز وجل ইয়েমেনের লোকদের মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য মুক্তি দিবেন।
শাইখুল ইসলাম رحمه الله আরো বলেছেন:
“এবং এটাই হয়েছিল রিদ্দাহ (মুরতাদদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধসমূহে।”
তিনি বলেছেন: “তারাই রিদ্দাহ যুদ্ধগুলোতে অংশ নিয়েছিল, নগরীগুলো বিজয় করেছিল, এবং আল্লাহ عز وجل তাদের হাত দিয়ে মুসলমানদের জন্য মুক্তি দিয়েছিলেন।”
এটাই শাইখুল ইসলামের বক্তব্য। এ ঘটনা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হয়েছে। অথচ নবী ﷺ জীবদ্দশাতেই এর খবর দিয়েছিলেন। আর এ হাদীস প্রমাণিত।”
❐ ইয়েমেনের ভূমির অন্যতম বরকত হলো, নবী ﷺ বিশেষভাবে ইয়েমেনের জন্য দুআ করেছেন। তাঁর ﷺ বাণীতে এসেছে:
"اللهم بارك لنا في شامنا ، اللهم بارك لنا في يمننا، فقالوا: وفي نجدنا يا رسول الله، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اللهم بارك لنا في شامنا، اللهم بارك لنا في يمننا."
(হাদীস ইবন উমর رضي الله عنهما থেকে বর্ণিত, সহীহ বুখারী)।
“হে আল্লাহ! আমাদের জন্য শামে বরকত দাও, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য ইয়েমেনে বরকত দাও।”
সাহাবারা رضي الله عنهم বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! আমাদের নাজদের জন্যও (দুআ করুন)।”
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য শামে বরকত দাও, হে আল্লাহ! আমাদের জন্য ইয়েমেনে বরকত দাও।”
অর্থাৎ, নবী ﷺ একাধিকবার ইয়েমেনের জন্য দুআ করেছেন।
সালাফদের সময় থেকে সমকালীন সময় পর্যন্ত ইয়েমেনে বহু মহান আলেম দেখা গেছে। যেমন ইমাম আহমদের শিক্ষক, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক আস-সান‘আনী رحمه الله।
ইতিহাসে আমরা আরও দিগ্বিজয়ী আলেম দেখতে পাই, যেমন ইমাম মুহাম্মদ আলী আশ-শাওকানী এবং আস-সান‘আনী رحمهما الله جميعا।
এ সবই আল্লাহ عزوجل-এর নিয়ামত, আর সব প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য, যিনি ইয়েমেনের এই বরকতময় ভূমিতে আহলুস সুন্নাহর দাওয়াহকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আমাদের বর্তমান যুগে এটাই প্রত্যক্ষ করা যায়, যেখানে ইমাম, ইয়েমেনের মুজাদ্দিদ, শায়খুল ইসলাম আবু আব্দুর রহমান মুকবিল ইবনে হাদি ইবনে মুকবিল ইবনে কায়িদাহ আল-হামদানি আল-ওয়াদিঈ رحمه الله رحمة واسعة দারুল হাদীস দাম্মাজ প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ عزوجل এই প্রতিষ্ঠানকে আহলুস সুন্নাহর দাওয়াহ বিস্তারের মাধ্যম বানান।
কিছু লোক বলে: "হ্যাঁ, দাম্মাজ ছিল জ্ঞানের কেন্দ্র ও আহলুস সুন্নাহর ঘাঁটি, কিন্তু এখন তা শেষ হয়ে গেছে। আর কি বাকি আছে?"
ইমাম আল-ওয়াদি'ই রহিমাহুল্লাহ-এর ইন্তিকাল ও দাম্মাজের যুগের পর, সম্মানিত শাইখ, আল্লামা, মুহাদ্দিস, নাসিহ, আমিন আবু আব্দুর রহমান ইয়াহইয়া বিন আলী আল-হাজুরী হাফিযাহুল্লাহু ওয়া র'আহু এই দাওয়াতকে আরও বিস্তৃত করেছেন এবং ছাত্রদের ও তাদের আকীদাহকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখেন।
❐ শায়খ ও মুদাররিস আবু আল-আব্বাস আবদুর রহমান আল-‘উলাইয়ান حفظه الله (শায়খ ও মুহাদ্দিস আবু আব্দুর রহমান জুমআন حفظه الله-এর স্থলাভিষিক্ত শিক্ষক) সহীহ মুসলিমের এক দরসে বলেন:
❝ওরা (সুন্নাহর শত্রুরা) ভেবেছিল তারা কিছু অর্জন করেছে যখন দাম্মাজে আক্রমণ করল। কিন্তু এটা ছিল আল্লাহ عزوجل-এর পরিকল্পনা অনুযায়ীই!
{ وَمَكَرُوا۟ وَمَكَرَ ٱللَّهُۖ وَٱللَّهُ خَیۡرُ ٱلۡمَـٰكِرِینَ }
{এবং তারা কৌশল করেছিল এবং আল্লাহ্ও (জবাবে) কৌশল করেছিলেন, আল্লাহ কৌশলীদের শ্রেষ্ঠ} [আলে ইমরান: ৫৪]
সুতরাং আল্লাহ তা'আলা পরিকল্পনা করলেন, এবং এখন আপনার কাছে কার্নে একটি দাম্মাজ আছে, শুহুহতে একটি দাম্মাজ আছে, আল-হামীতে একটি দাম্মাজ আছে, আল-গাইদায় একটি দাম্মাজ আছে, হাসওয়াইনে একটি দাম্মাজ আছে, আডেনে একটি দাম্মাজ আছে, এমনকি ইয়েমেনের বাইরের দেশগুলোতেও দাম্মাজ আছে।❞ উদ্ধৃতি সমাপ্ত।
এবং তিনি সহীহ মুসলিমের অন্য এক পাঠেও উল্লেখ করেছেন:
তিনি আরেক দরসে বলেন:
❝... আর মানুষ ভাবে আমরা শুধু কথার মানুষ। না, যদি তারা হাদীসের দাওরাতে আসে, তারা দেখবে আমরা কী করি। আমরা এমন এক জাতি যারা কিতাব শেষ করি! আমরা সহীহ বুখারী শেষ করি, সহীহ মুসলিম শেষ করি, কিতাব মুখস্থ করি, হাদীস মুখস্থ করি। বিপরীতে তারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যারা এই দাওয়াহর বিরোধী।❞
❐ শায়খ আবু আব্দুর রহমান জুমআন লাহমার حفظه الله বলেছেন:
❝... হে আমার ভাইয়েরা, আল্লাহ তোমাদের বরকতময় করুন। এই দাওয়াহ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি অপবাদপ্রাপ্ত ও নিন্দিত বহু কুত্সিতদের মাঝে; ইয়েমেনের আহলুস সুন্নাহর দাওয়াহ, ইয়েমেনের আহলুস সুন্নাহর উলামা, এবং তাদের থেকে যারা খাইরে আছেন... এ এক মহাশক্তি!
ইয়েমেনের এই দাওয়াহ, সালাফিয়্যাহ, এবং এর বহনকৃত বিষয়... আর এ এক দৃঢ় ইলম (অর্থাৎ আলেমগণ)!
কিছু মানুষ অহংকার করে আক্রমণ ও অপবাদ দেয়... আর অপবাদ তো আগে থেকেই আছে। তবে তোমাদের উচিত, হে তালিবে ইলম, যে এদের ব্যাপারে সতর্ক হও যারা এই কল্যাণকর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করে।
যারা ইয়েমেনের সুন্নাহর মারাকিজের বিরুদ্ধে সতর্ক করে, সে আসলে ভেঙে পড়া পাহাড়চূড়ার কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।❞
সুতরাং ইয়েমেনের কল্যাণ শেষ হয়ে যায়নি। বরং এ সবই আল্লাহ عزوجل-এর নিয়ামত, তিনি শুধু দাওয়াহকেই প্রতিষ্ঠিত করেননি, বরং এর শিকড়কেও দৃঢ় করেছেন।
আর এই দাওয়াহকে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম কারণ হলো তামাইয়্যুজ (পরিচ্ছন্ন পার্থক্য) —
তাওহীদ ও শিরকের মাঝে, সুন্নাহ ও বিদআতের মাঝে, আহলুস সুন্নাহ ও আহলুল বিদআতের মাঝে।
ইয়েমেনের আলিমগণ, আল্লাহ তা'আলা তাদের সবাইকে হিফাযত করুন, সংরক্ষণ করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সকল প্রকার ভালো দান করুন, তারা ইয়েমেন জুড়ে অনেক মারকাজ (কেন্দ্র) প্রতিষ্ঠা করেছেন; ৫০টিরও বেশি। এই মারাকিজে গৃহীত পদ্ধতি হল আহলুল হাদীসের পদ্ধতি, যারা নবী ﷺ-কে ছাড়া অন্য কাউকে তাদের ইমাম হিসেবে গ্রহণ করে না।
সোর্স: ছবিতে ও কমেন্টে