
14/05/2024
পুরুষ।।
পৃথিবীর সমস্ত গল্প জীবনের মতো মায়ের কোল থেকেই শুরু হয়।
গতকাল এক মা তার চার বছরের ছেলে সন্তানকে নিয়ে বসেছিলেন ডাক্তার চেম্বারের সামনে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, স্কুলে যায়? উত্তরে মা বললেনঃ না, এখনো দেইনাই, স্কুলে গেলেই তো শুরু হয়ে যাবে সংগ্রাম, শেষ তো আর নিজের চোখে দেখে যেতে পারব না, থাক না আর একটা বছর, আমার কোলে।।
কয়েকটি বাক্য মাত্র, জানিনা মায়ের মুখে শোনা বলেই এমন লেগেছে কিনা, তবে মা তো। তার অনুধাবন যে অপরিসিম হতে বাধ্য।
কলিজার টুকরো ছেলেটা যে তার স্কুল জীবনের ব্যস্ততা থেকে অল্প অল্প করে হারিয়ে যাবে বাস্তবতার করুন দহনে, সেটা মা জানে। স্কুলের মার্ক থেকে তার প্রতিযোগিতা শুরু, তারপর চাকরি, সংসার, দায়িত্ব আর অসন্তুস্টির সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অহেতুক এক প্রতিযোগিতায় হার মানিয়ে নিজেকেই জয়ী করতে হবে বার বার। তবুও সবাই তুলনা করবে আংগুল তুলে আরেকটু উপরে। এভাবে একটু করে উপরের নামে হারিয়ে যাবে সবার প্রিয় হাসসোজ্জল মূখটি।
বলতে পারেন একজন পুরুষ কবে সুখি। তার সুখতো কেবল প্রিয় মানুষ গুলোর মুখের হাসি, যতটুকু হাসতে দেখে আর চাহিদা যেন বেরে যায় সাথে সাথেই। আরেকটু বেশি আগামিকাল।
জীবন থেকে পুরুষ নামক প্রানীটির পাওয়া বলতে কি হিসেব করেছেন কখোনো? আজ যাকে সফল হতে দেখছেন, তার সফলতার পেছনের গল্পটা জানেন কি কেউ?
জিজ্ঞেস করেছেন একবার? যদি জিজ্ঞেস করেন কখনো, দেখবেন তার চোখের দিকে তাকিয়ে। আজ যে সুখের সময়টা সে পার করছে তার পেছনের গল্পটা ততই বেশি অসুখের। শুরুটাই হয় পরিবারের খোচা থেকে। আশেপাশের নিকটাত্মীয় বা পাড়া প্রতিবেশি, সবার তাকে নিয়ে যেন বড্ড দুসচিন্তা। সে যখন তার গল্পটি বলবে, তাকিয়ে দেখবেন তার চোখের দিকে। অতিতের একেকটি লাঞ্ছনা গঞ্জনার বিবরন যখন দিবে, তার চোখে থেমে থাকা ঘরিটি দেখতে পাবেন।
থমকে গিয়েছিল সময় তখন।।
আজ যে পুরুষটি রিক্সা চালায়, কতটুকুই বা পাওনা তার? হাসিমুখে যখন জিজ্ঞেস করেঃ মামা কই যাইবেন? তার চোখে তাকিয়ে দেখবেন যেন মনে হবে আপনিই তার জীবনের শেষ পরিশ্রমের লক্ষ।।
কিন্তু না। এভাবে আপনার মতো আরো ৪০/৫০ জনকে বহন করে তার কেবল একটি দিনের পরিশ্রমের সমাপ্তি ঘটে। হাসিমুখে সামান্য আহার নিয়ে পরিবারের কাছে ফেরা।
আপনি ভাবছেন আপনার চাকুরি করা মানুষ টির গল্প ভিন্ন? একটুও না।
প্রত্যেকটি পেশার দিন থেকে রাতের গল্প এটি।
মামা চাচার জোরে হোক কিংবা নিজের যোগ্যতায় অফিসে অফিয়ে ধরনা দিয়ে জুটানো চাকরিটা, হুকুম আর তারপর আরেকটি হুকুমের শেষ করার নামই উপারজন, যাকে আমি আমার ভাষায় বলি পরিবারের জন্যে কুরিয়ে আনা সুখ।।
আপনার খুব কাছের মানুষ টিও বলবে না আজ সে কতজনের অপমান আর কড়া কথা শুনেছে, জিজ্ঞেস করলে দেখবেন সে নিজের কস্টে কাটানো দিনটাকেও কি বাহাদুরির সাথে মিথ্যা বর্ণনা দিবে যেন সেই সেরা ছিল।।
আসল গপ্লটা কি জানেন? সে এখন তার শান্তির নীড়ে আছে। ভুলে গেছে সবই তার পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে।। সে চার্জ নিচ্ছে, আগামিকাল যে তাকে দিগুন শক্তি নিয়ে আবার নামতে হবে, সবার জন্য সুখ কড়িয়ে আনতে।।
একটিমাত্র দিন, হোক সে আপনার বাবা,ভাই, কিংবা স্বামী। ঘরে ফেরার পর হাসিমুখে তাকে বরন করুন। খানিকটা ব্যস্ত হয়ে পরুন তার যত্নের প্রতি। খুব বেশি না, ১০ টি মিনিট। দেখবেন, পৃথিবী জয়ের শক্তি ভর করবে তার কাধে। আপনারই জন্য।।