04/08/2017
বিরলে নবম শতকের সপ্তরথ মন্দির....
দিনাজপুরের বিরলে প্রত্নতাত্তি্বক খননে বাংলাদেশে প্রথম সপ্তরথ মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। দুই মাসেরও বেশি সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি দল খননের মাধ্যমে মন্দিরটি আবিষ্কার করে। এটি আনুমানিক নবম থেকে একাদশ শতকের বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সপ্তরথ মন্দিরের নিচে আরও একটি মন্দির রয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৪-০৫ সালের দিকে জাবির প্রত্নতাত্তি্বক গবেষণার জন্য দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় মোট ১২২টি স্থান চিহ্নিত করা হয়। পরে উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে বুড়ির থান বা বুড়ি মাতারানীর মন্দির থান নামে পরিচিত স্থানটির ওপর গুরুত্বারোপ করে দুই মাস আগে খননকাজ শুরু হয়। জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছানের নেতৃত্বে ১৪ জন শিক্ষার্থী এ খননকাজে অংশ নেন। এ ছাড়া তাদের সাহায্য করেন প্রত্নতাত্তি্বক খননে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মহাস্থানগড় থেকে আসা ১৫ জন এবং কাহারোল থেকে আসা ২৫ শ্রমিক।
বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এই খননে অর্থায়ন করছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। প্রায় দুই মাসের খননে এখানে যে মন্দিরটি আবিষ্কার হয়েছে তা দেখতে এখন লোকজন ভিড় করছেন সেখানে। উঁচু মাটির ঢিবি খনন করে পাওয়া মন্দিরটি পুরোপুরি বের করে তা সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সব ধর্মের মানুষের।
খননদলের পরিচালক ড. স্বাধীন সেন জানান, স্থানীয়ভাবে বুড়ির থান বা বুড়ি মাতারানীর মন্দির থান নামে পরিচিত এই ঢিবিটির দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ৮০ মিটার আর উত্তর-দক্ষিণে ৬০ মিটার। আবিষ্কৃত মন্দিরটি ঢিবির আকারের তুলনায় বেশ ছোট। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিম দিকে অভিক্ষেপ বিশিষ্ট ৬ দশমিক ২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের নিরেট কাঠামোর মাঝখানে রয়েছে গর্ভগৃহ। এটিও দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ২ মিটার করে। পূর্বদিকে যুক্ত রয়েছে ৮ মিটার বর্গাকার একটি কক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, কক্ষটি ছিল মন্দিরের মণ্ডপ। পুরো মন্দিরটির আকার ও বৈশিষ্ট্য বুঝতে আরও সময় লাগবে।
ড. সেন আরও জানান, রথ শব্দটি প্রাচীন মন্দিরের স্থাপত্য গঠন ও শৈলী প্রকাশকারী পরিভাষা। দেয়ালের বহির্গাত্রের উল্লম্ব অভিক্ষেপগুলোকে রথ বলা হয়। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, মন্দিরটি বর্তমানে উড়িষ্যায় থাকা কলিঙ্গ মন্দির স্থাপনা রীতির অনুসারী। এই রীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা শিল্পশাস্ত্র, যেমন ভুবন প্রদীপে মন্দিরগুলোকে ত্রিরথ, পঞ্চরথ, সপ্তরথ ও নবরথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন আবিষ্কৃত মন্দিরটি তারও আগেকার আরেকটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের ওপরে নির্মিত হয়েছে। এর গর্ভগৃহের উপরিকাঠামো হিসেবে রেখা দেউল ধরনের শিখর ছিল বলে অনুমান করা যায়। গর্ভগৃহের কেন্দ্রে একটি সপ্তরথ অভিক্ষেপবিশিষ্ট পাথরের বেদি রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ৯০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪২ সেন্টিমিটার। এই বেদির পশ্চিম পাশের অর্ধবৃত্তাকার খাঁজের মধ্যে প্রতিমার নিম্নাংশ প্রবিষ্ট করে রাখা হতো। তবে খননের সময় জায়গাটিতে একটি ছোট মাটির তৈরি ঘট পাওয়া গেছে। এখনও হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ প্রতিমার প্রতীকী হিসেবে ঘটপূজা করে থাকে। উড়িষ্যার মন্দিরের স্থাপত্যরীতির মতো ইট দিয়ে নির্মিত মন্দিরের উপস্থিতি বাংলা অঞ্চলে বিরল নয়। গত বছর কাহারোলের মাধবগাঁওয়ে এই দলটিই একটি নবরথ মন্দির খনন করেছিল। তবে এ মন্দিরটি বাংলাদেশে আবিষ্কৃত প্রথম সপ্তরথ মন্দির।
খননদলের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. কামরুল আহছান জানান, ২০০৪-০৫ সালে বিরলের এই প্রত্নস্থানগুলো প্রথম শনাক্ত করেন জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের গবেষণা শিক্ষার্থী খন্দকার মেহবুবুল ইসলাম। পরে তার ও অন্যান্য গবেষণা অনুযায়ী এই উপজেলায় মোট ১২২টি বিভিন্ন কালপর্বের প্রত্নস্থান চিহ্নিত করা হয়। খননকৃত প্রত্নস্থানটি পারুলগঙ্গা নামের একটি নদীর মৃত খাতের দুই পাশ ধরে রৈখিক বিন্যাসে ছড়িয়ে থাকা মানববসতির অংশ ছিল। অঞ্চলটির নদীব্যবস্থার বদলের সঙ্গে এই বসতিগুলোর বিকাশ ও বিলুপ্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সপ্তরথ এই মন্দিরটির নিচে আরেকটি মন্দির আছে। পাশাপাশি সেখানে আরও একটি স্থাপনা রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। মন্দিরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং তা নবম থেকে একাদশ শতকের বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে এর নিচে থাকা মন্দিরটি বৌদ্ধদের বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা আরও পুরনো বলে মনে হয়।
খননের সহকারী পরিচালক ও পিএইচডি গবেষণা শিক্ষার্থী আবির বিন কায়সার শুভ ও শামীমা শিমু বলেন, পুরো প্রত্নস্থানটি যথাযথভাবে খনন ও নথিভুক্তকরণ করতে আরও চার মাস সময় লাগবে। খননের স্তরবিন্যাস বুঝে এখানে মানুষের বসতির পরিবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, খনন কার্যক্রমে নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এই মন্দিরগুলো উন্মোচিত হলে এর মাধ্যমে অতীত সভ্যতা ও বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যাবে। মন্দিরটি উন্মোচিত হলে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
বিরলে নবম শতকের সপ্তরথ মন্দির দিনাজপুর প্রতিনিধি দিনাজপুরের বিরলে প্রত্নতাত্তি্বক খননে বাংলাদেশে প্রথম সপ্তরথ মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। দুই মাসেরও বেশি সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি দল খননের মাধ্যমে মন্দিরটি আবিষ্কার করে। এটি আনুমানিক নবম থেকে একাদশ শতকের বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সপ্তরথ মন্দিরের নিচে আরও একটি মন্দির রয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৪-০৫ সালের দিকে জাবির প্রত্নতাত্তি্বক গবেষণার জন্য দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় মোট ১২২টি স্থান চিহ্নিত করা হয়। পরে উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে বুড়ির থান বা বুড়ি মাতারানীর মন্দির থান নামে পরিচিত স্থানটির ওপর গুরুত্বারোপ করে দুই মাস আগে খননকাজ শুরু হয়। জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন ও অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছানের নেতৃত্বে ১৪ জন শিক্ষার্থী এ খননকাজে অংশ নেন। এ ছাড়া তাদের সাহায্য করেন প্রত্নতাত্তি্বক খননে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মহাস্থানগড় থেকে আসা ১৫ জন এবং কাহারোল থেকে আসা ২৫ শ্রমিক। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এই খননে অর্থায়ন করছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। প্রায় দুই মাসের খননে এখানে যে মন্দিরটি আবিষ্কার হয়েছে তা দেখতে এখন লোকজন ভিড় করছেন সেখানে। উঁচু মাটির ঢিবি খনন করে পাওয়া মন্দিরটি পুরোপুরি বের করে তা সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সব ধর্মের মানুষের। খননদলের পরিচালক ড. স্বাধীন সেন জানান, স্থানীয়ভাবে বুড়ির থান বা বুড়ি মাতারানীর মন্দির থান নামে পরিচিত এই ঢিবিটির দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ৮০ মিটার আর উত্তর-দক্ষিণে ৬০ মিটার। আবিষ্কৃত মন্দিরটি ঢিবির আকারের তুলনায় বেশ ছোট। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিম দিকে অভিক্ষেপ বিশিষ্ট ৬ দশমিক ২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের নিরেট কাঠামোর মাঝখানে রয়েছে গর্ভগৃহ। এটিও দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ২ মিটার করে। পূর্বদিকে যুক্ত রয়েছে ৮ মিটার বর্গাকার একটি কক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে, কক্ষটি ছিল মন্দিরের মণ্ডপ। পুরো মন্দিরটির আকার ও বৈশিষ্ট্য বুঝতে আরও সময় লাগবে। ড. সেন আরও জানান, রথ শব্দটি প্রাচীন মন্দিরের স্থাপত্য গঠন ও শৈলী প্রকাশকারী পরিভাষা। দেয়ালের বহির্গাত্রের উল্লম্ব অভিক্ষেপগুলোকে রথ বলা হয়। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, মন্দিরটি বর্তমানে উড়িষ্যায় থাকা কলিঙ্গ মন্দির স্থাপনা রীতির অনুসারী। এই রীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা শিল্পশাস্ত্র, যেমন ভুবন প্রদীপে মন্দিরগুলোকে ত্রিরথ, পঞ্চরথ, সপ্তরথ ও নবরথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন আবিষ্কৃত মন্দিরটি তারও আগেকার আরেকটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের ওপরে নির্মিত হয়েছে। এর গর্ভগৃহের উপরিকাঠামো হিসেবে রেখা দেউল ধরনের শিখর ছিল বলে অনুমান করা যায়। গর্ভগৃহের কেন্দ্রে একটি সপ্তরথ অভিক্ষেপবিশিষ্ট পাথরের বেদি রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ৯০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪২ সেন্টিমিটার। এই বেদির পশ্চিম পাশের অর্ধবৃত্তাকার খাঁজের মধ্যে প্রতিমার নিম্নাংশ প্রবিষ্ট করে রাখা হতো। তবে খননের সময় জায়গাটিতে একটি ছোট মাটির তৈরি ঘট পাওয়া গেছে। এখনও হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ প্রতিমার প্রতীকী হিসেবে ঘটপূজা করে থাকে। উড়িষ্যার মন্দিরের স্থাপত্যরীতির মতো ইট দিয়ে নির্মিত মন্দিরের উপস্থিতি বাংলা অঞ্চলে বিরল নয়। গত বছর কাহারোলের মাধবগাঁওয়ে এই দলটিই একটি নবরথ মন্দির খনন করেছিল। তবে এ মন্দিরটি বাংলাদেশে আবিষ্কৃত প্রথম সপ্তরথ মন্দির। খননদলের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. কামরুল আহছান জানান, ২০০৪-০৫ সালে বিরলের এই প্রত্নস্থানগুলো প্রথম শনাক্ত করেন জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের গবেষণা শিক্ষার্থী খন্দকার মেহবুবুল ইসলাম। পরে তার ও অন্যান্য গবেষণা অনুযায়ী এই উপজেলায় মোট ১২২টি বিভিন্ন কালপর্বের প্রত্নস্থান চিহ্নিত করা হয়। খননকৃত প্রত্নস্থানটি পারুলগঙ্গা নামের একটি নদীর মৃত খাতের দুই পাশ ধরে রৈখিক বিন্যাসে ছড়িয়ে থাকা মানববসতির অংশ ছিল। অঞ্চলটির নদীব্যবস্থার বদলের সঙ্গে এই বসতিগুলোর বিকাশ ও বিলুপ্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সপ্তরথ এই মন্দিরটির নিচে আরেকটি মন্দির আছে। পাশাপাশি সেখানে আরও একটি স্থাপনা রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। মন্দিরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং তা নবম থেকে একাদশ শতকের বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে এর নিচে থাকা মন্দিরটি বৌদ্ধদের বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা আরও পুরনো বলে মনে হয়। খননের সহকারী পরিচালক ও পিএইচডি গবেষণা শিক্ষার্থী আবির বিন কায়সার শুভ ও শামীমা শিমু বলেন, পুরো প্রত্নস্থানটি যথাযথভাবে খনন ও নথিভুক্তকরণ করতে আরও চার মাস সময় লাগবে। খননের স্তরবিন্যাস বুঝে এখানে মানুষের বসতির পরিবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, খনন কার্যক্রমে নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এই মন্দিরগুলো উন্মোচিত হলে এর মাধ্যমে অতীত সভ্যতা ও বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যাবে। মন্দিরটি উন্মোচিত হলে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।