15/06/2025
এক কোম্পানীতে ছিলো এক পিঁপড়া। সে প্রতিদিন ৯টায় অফিসে ঢুকতো। তারপর কারো সঙ্গে সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে কাজে বসে যেতো।
সে যে পরিমাণ কাজ করত, তাতে কোম্পানির উৎপাদন হতো প্রচুর এবং এর ফলে সে আনন্দের সঙ্গেই জীবন নির্বাহ করতো।
ওই অফিসের সিইও সিংহ অবাক হয়ে দেখত, এই পিঁপড়াটি কোনো ধরনের সুপারভিশন ছাড়াই প্রচুর কাজ করছে। সিংহ ভাবল, পিঁপড়াকে যদি কারও সুপারভিশনে দেওয়া হয়, তাহলে সে আরও বেশি কাজ করতে পারবে।
কয়েক দিনের মধ্যেই সিংহ একটি আরশোলাকে পিঁপড়ার সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দিল। সুপারভাইজার হিসেবে এই আরশোলাটির ছিল দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আর সে দুর্দান্ত রিপোর্ট লিখতে পারতো।
আরশোলাটি প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিল, এই অফিসে একটি অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম থাকা উচিত।
কয়েক দিনের মধ্যেই আরশোলাটির মনে হলো, তার একজন সেক্রেটারি দরকার, যে তাকে রিপোর্ট লিখতে সাহায্য করবে। … সে একটা মাকড়সাকে নিয়োগ দিল এই কাজে যে সব ফোনকল মনিটর করবে, আর নথিপত্র রাখবে।
সিংহ খুব আনন্দ নিয়ে দেখল যে আরশোলাটি তাকে প্রতিদিনের কাজের হিসাব দিচ্ছে আর সেগুলো বিশ্লেষণ করছে গ্রাফের মাধ্যমে। ফলে খুব সহজেই উৎপাদনের ধারা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাচ্ছে এবং সিংহ সেগুলো বোর্ড মিটিংয়ে ‘প্রেজেন্টেশন’ আকারে পেশ করে বাহবা পাচ্ছে।
কিছুদিনের মধ্যেই আরশোলার একটি কম্পিউটার ও লেজার প্রিন্টার প্রয়োজন হলো এবং এগুলো দেখভালের জন্য আইটি ডিপার্টমেন্ট গঠন করল। আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেল মাছি।
আমাদের কর্মী পিঁপড়া, যে প্রতিদিন অফিসে এসে প্রচুর কাজ করে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে বাসায় ফিরত, তাকে এখন প্রচুর পেপার ওয়ার্ক করতে হয়, সপ্তাহের চার দিনই নানা মিটিংয়ে হাজিরা দিতে হয়।
নিত্যদিন এসব ঝামেলার কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটায় উৎপাদন কমতে লাগল, আর সে বিরক্ত হতে লাগল।
সিংহ সিদ্ধান্ত নিল, পিঁপড়া যে বিভাগে কাজ করে, সেটাকে একটা আলাদা ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করে সেটার একজন ডিপার্টমেন্ট প্রধান নিয়োগ দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।
সিংহ ঝিঁঝিপোকাকে ওই ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিল। ঝিঁঝিপোকা প্রথম দিন এসেই তার রুমের জন্য একটা আরামদায়ক কার্পেট ও চেয়ারের অর্ডার দিল।
কয়েক দিনের মধ্যেই অফিসের জন্য স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করতে ঝিঁঝি পোকার একটি কম্পিউটার ও ব্যক্তিগত সহকারীর প্রয়োজন হলো। কম্পিউটার নতুন কেনা হলেও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে ঝিঁঝিপোকা নিয়োগ দিল তার পুরোনো অফিসের একজনকে।
পিঁপড়া যেখানে কাজ করে, সেখানে আগে ছিল চমৎকার একটা পরিবেশ। এখন সেখানে কেউ কথা বলে না, হাসে না। সবাই খুব মনমরা হয়ে কাজ করে।
ঝিঁঝিপোকা পরিস্থিতি উন্নয়নে সিংহকে বোঝাল, ‘অফিসে কাজের পরিবেশ’ শীর্ষক একটা স্টাডি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
পর্যালোচনা করে সিংহ দেখতে পেল, পিঁপড়ার বিভাগে উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
কাজেই সিংহ কয়েক দিনের মধ্যেই স্বনামখ্যাত কনসালট্যান্ট পেঁচাকে অডিট রিপোর্ট এবং উৎপাদন বাড়ানোর উপায় বাতলে দেওয়ার জন্য নিয়োগ দিল।
পেঁচা তিন মাস পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্ট মনিটর করল, সবার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলল। তারপর বেশ মোটাসোটা একটা রিপোর্ট পেশ করল সিংহের কাছে। ওই রিপোর্টের সারমর্ম হলো, এই অফিসে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী বেশি। কর্মী ছাঁটাই করা হোক।
পরের সপ্তাহেই বেশ কয়েকজন কর্মী ছাঁটাই করা হলো। বলুন তো, কে সর্বপ্রথম চাকরি হারালো?
ওই হতভাগ্য পিঁপড়া। কারণ, পেঁচার রিপোর্টে লেখা ছিল, ‘এই কর্মীর মোটিভেশনের ব্যাপক অভাব রয়েছে এবং সর্বদাই নেতিবাচক আচরণ করছে, যা অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট করছে।
শিক্ষাঃ
অতিরিক্ত ম্যানেজমেন্ট, অপ্রয়োজনীয় মিটিং ও কাগজপত্র আসল কর্মদক্ষতা নষ্ট করে। যারা কাজ করে, তাদের গুরুত্ব না দিলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশেষে বলির পাঁঠা হয় সেই নিষ্ঠাবান কর্মী, যে একসময় অফিসের আসল চালিকাশক্তি ছিল।
★সংগ্রহিত.