05/06/2025
((একটি মেয়ের নীরব কান্না এবং একজন চরিত্রহীনের গল্প))
সায়রা খুব সাধারণ একটা মেয়ে ছিল।
তার স্বপ্ন ছিল ছোট—একটা ভালোবাসার সংসার, একটু হাসি, একটা শান্ত জীবন।
সে ভালোবেসেছিল রাহাতকে।
রাহাত ছিল তার ক্লাসমেট। প্রথম দিকে শুধু হ্যালো, তারপর একদিন কবিতার খাতা দিয়ে বলেছিল—
"তোমার চোখ দুটো আমার কবিতা লেখার প্রেরণা।"
সেই কবিতা দিয়েই শুরু, আর তারপরে দীর্ঘ চার বছরের প্রেম।
রাহাত বলত,
"সায়রা, তুই আমার জীবন। তোকে ছাড়া আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।"
কিন্তু ভবিষ্যতের কথা বলেই একদিন তারা পালিয়ে গেল।
সায়রা মায়ের কাঁদা মুখ রেখে, বাবার কড়া শাসন ভেঙে রাহাতের হাত ধরেছিল।
বিয়ের পর শুরুটা ছিল একটা রূপকথা—
ভাড়া বাসা, একসাথে বাজার করা, বৃষ্টিতে ভিজে চা খাওয়া—সব যেন একটুকরো স্বর্গ।
💔 ধীরে ধীরে সেই স্বর্গে আগুন লাগে…
রাহাত একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি পায়।
নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু, নতুন নারীরা…
সায়রা টের পায়—রাহাত বদলাচ্ছে।
রাতে দেরি করে ফেরা, ফোনে ফিসফিসে কথা, চট করে রাগ করে ওঠা, বিছানায় ঘুম না হওয়া—সবকিছুই বদলের আলামত।
একদিন হঠাৎ রাত ১টায় রাহাত যখন ঘরে ফেরে, সায়রা বলেছিল,
"তুমি কি সত্যি কাজ করছিলে?"
রাহাত তখন গলা তুলে বলেছিল,
"তুমি এত সন্দেহ করো কেন? আমি কি তোমার দাস?"
সেদিন থেকেই সায়রা চুপ করে গেল।
সে কিছু জিজ্ঞেস করতো না, শুধু ভেতরে ভেতরে মরতে শুরু করলো।
🍼 এরমধ্যেই সে জানতে পারে—সে মা হতে চলেছে।
তার বুক কেঁপে ওঠে—সে ভাবে,
"যে মানুষটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রেম শিখিয়েছে,
আজ আমি তার সন্তানের মা হচ্ছি—তবুও সে অন্য নারীর বাহুতে ঘুমায়…"
একদিন রাতে, রাহাত ঘুমিয়ে গেলে, তার ফোনে একটা মেসেজ আসে—
"আজকের রাতটা ছিলো স্বপ্নের মতো… তোমার বুকটা এত শান্ত, রাহাত।"
সায়রা পাথরের মতো বসে থাকে।
তার পেটের শিশুটি যেন কেঁদে ওঠে ভেতর থেকে।
কিন্তু সে চুপ থাকে।
কারণ তার হাতে তখন একটা ছোট জামা—
যেটা সে কিনেছে ভবিষ্যতের জন্য… তার সন্তানের জন্য।
🩵 সে নিজেই ডাক্তারের কাছে যায়।
রাহাত জানেই না তার বাচ্চা আসছে।
জানলেও কিছুই বলবে না—সে এখন রাতে বাড়ি ফেরে না, ফোন ধরেও না।
সায়রা নিজের পেটে হাত রেখে রোজ রাতে বলে—
"তোর জন্য আমি বেঁচে আছি মা। তুই এস, আমি তোকে ভালোবাসবো এমনভাবে,
যেমন তোর বাবা কখনও কাউকে ভালোবাসেনি…"
🔚 প্রসবের দিন
সায়রা একা।
হাসপাতালের বিছানায়, গায়ে স্যালাইন, পাশে কেউ নেই।
কেউ নেই—না বাবা, না মা, না স্বামী।
ডাক্তার এসে বলে—
"ম্যাডাম, আপনি মেয়ে সন্তান পেয়েছেন। মা-মেয়ে সুস্থ আছেন।"
সায়রার ঠোঁটে হালকা একটা হাসি, চোখে অঝোর জল।
হাসপাতালের করিডোরে হেঁটে যায় নার্স, কানে পড়ে কয়েকজনের ফিসফাস—
"আজ ওই মেয়েটার স্বামী নাকি এক রিসোর্টে ধরা পড়েছে অন্য মহিলার সাথে…"
সায়রা তবুও চুপ।
সে বাচ্চাটাকে বুকের কাছে এনে শুধু বলে—
"দেখ মা, তোর বাবা কারো হতে পারলো না।
কিন্তু আমি? আমি শুধু তোর হবো।
তুই আমার পৃথিবী।"
এরপর......