17/04/2025
আমার বাবা জনাব কান্তি লাল আচার্য্য।
তিনি ৩৫ বছর ধরে ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন। গতকাল ১৬.০৪.২৫ তারিখে কোনো প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়াই তাঁকে বলপূর্বক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করানো হয়েছে। বাবার অপরাধ কী, সমস্যাটাই বা কী, কিছুই বলা হয়নি।
জানেন, স্কুলে ঝামেলা শুরুর আগেই বাবাকে বারণ করা হয়েছিল স্কুলে যেতে। বলা হয়েছিল, “স্কুলে গেলে অপমানিত হতে হবে।”
বাবা জবাবে বলেছিলেন, “আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার কোনো অপরাধ নেই। যদি আমাকে পদ থেকে সরে যেতে বলা হয়, আমি নির্দ্বিধায় সরে যাব। তবুও আমি স্কুলে যাব। আমি কেন পালিয়ে বেড়াব। কেউ যদি আমার অপরাধের প্রমাণ দিতে পারে, দিক।”
পদত্যাগ করার আগেও স্কুলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। তবুও বাবা ছিলেন নির্ভীক। তাঁকে জোর করে একটি কাগজে সই করতে বলা হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল, দুর্নীতির অভিযোগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।
বাবা স্পষ্ট বলেছিলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। এই পৃষ্ঠায় আমি সই করব না। আমি স্বাভাবিকভাবে পদত্যাগ করছি।
সে সময় বাবাকে একদল মানুষ মারধরের চেষ্টা করেছিল।
পরে আরেকটি কাগজে লেখা হয়, ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।
কি চমৎকার, তাই না। আমার বাবা কত মানুষকে ঘরে বসিয়ে পড়িয়েছেন, কতজনকে বিনামূল্যে শিক্ষাদান করেছেন, কতজনের ফি মওকুফ করেছেন। আজ সেই শিক্ষকের এই পরিণতি।
বাবা এখন অসুস্থ। বিশ্বাস করুন, আমরা কেউই মেনে নিতে পারছি না যে ৩৫ বছর শিক্ষকতা করার পর একজন মানুষের এমন অপমানজনক পরিণতি হতে পারে।
আপনারা এমন আচরণ করেছেন যেন একজন জীবন্ত মানুষকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে। এতদিন অন্যদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি, আজ আমার বাবার সঙ্গে ঘটলো।
জানেন, আমরা মেয়েরা বাবার অপমানের সেই ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছি না। ভাবুন, উনি শুধু একজন শিক্ষক নন, উনি আমাদের বাবা।
আপনার বাবার সঙ্গে যদি এমন হতো, আপনি কেমন অনুভব করতেন?
একজন শিক্ষকের এই অপমান। পৃথিবীতে একমাত্র আমরা, এই হীন মানসিকতার জাতিই, শিক্ষকদের এভাবে বারবার অপমান করি।
আজ আমাদের সঙ্গে হয়েছে, কাল হয়তো এই মবই এসে অন্যের ঘরে দাঁড়াবে।
ঈশ্বর কাউকে ছেড়ে দেন না ভাই।
বিশ্বাস করুন, বাবার দীর্ঘশ্বাস, চোখে থাকা আতঙ্কের ছায়া, এগুলোর ফল কখনোই ভালো হয় না।
ভাবনা আচার্য্য
#সনাতন