07/04/2025
গল্প : আনমনে সে
পর্ব : ০২
লেখিকা : ѕυcнηα αктєя ( সূচনা )
সকালে জ্ঞান ফিরে আসতেই তারওপর ছেলেটি ঘুমিয়ে আছে,, ঘুমের মধ্যে এতো নিষ্পাপ লাগছে তাকে,, যে কেউ একবার দেখাতেই ক্রাস খাবে,, কেউ বুঝবেও না যে সে রাতের বেলায় মেয়েটির সাথে এমন হিংস্র পশুর মতো করেছে,,মেয়েটি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আনমনেই মুচকি হাসে,, তারপর হটাৎ এই গত রাতের কথা মনে পরে যায়,,মেয়েটি দেখে তার শরীরে কোনো কাপড় নেই,, তারপর মেয়েটা ধাক্কা দিয়ে ছেলেটিকে সরিয়ে দিয়ে চাদর দিয়ে নিজেকে কিছুটা ঢেকে ওয়াশ রুমে চলে যায়...
ওয়াশ রুমে গিয়া সাওয়ার এর নিচে দারিয়ে কান্না করতে করতে আগে কথা গুলো মনে করতে থাকে...
-------------------[ Flashback ]---------------------
বাবা আমার কলেজের পরীক্ষার রুটিন টা হয়তো ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছে একটু দেখে দেবে প্লিজ!!
- ঠিক আছে দেখে দিচ্ছি কিন্তু মা তোমাকে কতো করে বললাম ফেসবুকে নিজের একটা একাউন্ট খুলো,, আমি কি সব সময় বাসায় থাকি বলো!!
- বাবা আমার এই ফেসবুক এপ টা না একটুও পছন্দ না তাই তুমিই দেখে দেবে সব সময়!!
- না মা তুমি আজকেই নিজের একটা একাউন্ট খুলো,, শুধু কারোর সাথে বেশি গভীর বন্ধুত্ব আর কোনো বাজে সম্পর্কে নিজেকে জরিও না তাহলেই হবে!!
- আচ্ছা বাবা ঠিক আছে!!,
- সেদিন বাবার কথা মতো ফেসবুকে নিজের নামে একটা একাউন্ট খুলি,, কিন্তু প্রোফাইলে নিজের কোনো ছবি দেইনি,, শুধু নিজের পছন্দের একটা কার্টুনের ছবি লাগিয়েই জীবনের প্রথম ফেসবুক জগৎ পা রাখি!!
- আসসালামু আলাইকুম আমি আর্শি!! এইবারের HSC candidate,, আমি ছোট্ট একটা গ্রামের খুবই সাধারণ ঘরের সাধারণ একটা মেয়ে,, আমরা এক ভাই এক বোন,, ছোট বেলা থেকে বাবার একটা ভুলের কারণে আম্মু কে এখন পর্যন্ত কান্না করতে দেখি,, যদিও বাবা ভুলটাকে শুধরে নিয়েছে,, তাও সেটার দাগ টা তো আম্মুর মনে ঠিকই রয়ে গিয়েছে,, আম্মু প্রেম ভালোবাসা কখনোই পছন্দ করে না,, নিজেও কখনো এসবে যরায় নি এবং আমাদের দু'ভাইবোনকেও নিষেধ করেছে..!!
- আমি আমার আম্মুর বাধ্য মেয়ে,, পৃথিবীর সব এক পাশে থাকলেও আমার আম্মু আরেক পাশে,, সে যা বলবে তাই হবে,, আম্মুকে আর নিজেকে সেই ছোট বেলায়ই কথা দিয়েছিলাম যে আমি কখনোই নিজেকে এই সব প্রেম ভালোবাসার নামে মিথ্যা মায়ায় নিজেকে যরাবো না!!
- তাই নিজেকে ঠিক ওমন ভাবেই তৈরি করেছি,, কখনো কোনো ছেলের প্রতি নিজেকে দূর্বল হতে দেই নি,, Inter 1st year পর্যন্ত মানে ফেসবুক একাউন্ট খোলার আগ পর্যন্ত কোনো ছেলে ফ্রেন্ডও ছিলোনা আমার,, আমি বরাবরই খুব চুপচাপ আর একা থাকতে পছন্দ করি,, খেলা ধুলোর প্রতি নেশা ছিলো কিন্তু আম্মু বলেছে,, আমি বড় হচ্ছি,, আর মেয়েদের না-কি এতো লাফালাফি করা ঠিক না!!
[ Flashback এর প্রথম টুকু বোরিং লাগতেই পারে কিছু করার নেই স্টোরি মেলাতে হইলে এইটুকু লিখতেই হবে ]
- তাই ক্লাস সেভেন থেকেই ছেড়ে দিলাম সবধরনের খেলাধুলো,, নিজের ইচ্ছেতেই বোরকা পড়া শুরু করলাম,, ক্লাস সেভেন থেকে আজ পযন্ত আমার চেহারা আমাদের গ্রামের কেউ কখনো আর দেখিনি,, কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও হয় বোরকা নয়তো হিজাবের সাথে মাস্ক পরে যাই,, সব কিছু ঠিকই চলছিলো কিন্তু আমি গল্পের বই আর কার্টুনের প্রতি নেশাটা কখনোই কমাতে পারিনি!!
- আমার জীবনের প্রথম দূর্ঘটনা টা ঘটে ক্লাস 8 থেকে,, আমি গনিতে দূর্বল ছিলাম তাই পরীক্ষার সময় একটু সমস্যার জন্য JSC তে অনেক খারাপ করে বসি,, ঠিক ঐদিন থেকে শুরু হয় আমার জীবনের খারাপ দিন গুলো,, পাড়া-প্রতিবেশী হতে আত্বী-স্বজন মা বাবা কেউ তখন আমার পাশে ছিলো না সবাই যার মতো করে উঠতে বসতে কথা শুনিয়েছে!!
- তখন থেকেই শুরু হয় আমার ডিপ্রেশনের সাথে বন্ধুত্ব,, যেটা আজও আমাকে ছেড়ে যায় নি,, পুরো একটা বছর আমাকে এই সহ্য কর বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়!!
- তারপর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঠিক না হলেও আমি সেটা কে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি,, যেহেতু আমাকে বাচতে হবে তাই এমন মরে মরে বাচা যায় না,, তাই সব কিছু ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেই,, দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকটা বছর আমি তখন নতুন নতুন কলেজে ওঠেছি!!
- আমাদের কলেজটা সরকারি,, এখানের সব ধরনের নোটিশই ফেসবুকের মাধ্যমে দেওয়া হয় এমনকি কবে কলেজ বন্ধ কবে খোলা সব কিছু!! আমার সব সময় এই পার্সোনাল ভাবে "ফেসবুক" "টিকটক" এই দুইটা এপ পছন্দ না,, কিন্তু বাবার কথায় ঐদিন একাউন্ট টা খুলেছিলাম!!
- ভালোই চলছিলো দিন গুলো,, আমি নতুন কোনো জিনিস পেলে ওটার প্রতি খুব আগ্রহ দেখাই সব সময়,, কিন্তু ফেসবুকের ক্ষেত্রে এমনটা হতো না,, তাও কলেজের জন্য বাধ্য হয়ে দেখা লাগতো,, আমার কলেজের বেস্টি ইশরাত ছাড়া,, অপরিচিত কারোর কোনো ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট ও একসেপ্ট করতাম না,, তবে কিছু দিন যাওয়ার পর বেছে বেছে ভালো প্রোফাইল ওয়ালা মেয়েদের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করতাম!!
- একদিন একটা id থেকে হটাৎ করে মেসেজ আসে,, আমি মেয়ে ভেবে ওকে রিপ্লাই দেই,, কিছুক্ষণ কথা বলার পরে জানতে পারি ওটা একটা ছেলে,, তারপর নাম খেয়াল করে দেখি আসলেই ওটা একটা ছেলের নাম দেওয়া কিন্তু আমি খেয়াল করি নি!!
- ছেলেটার কথা গুলো খুব সুন্দর ছিলো ওর নাম ছিলো রাফসান,, ওকে আমি সাথে সাথে ব্লোক দিতে চেয়েও কেনো জানি পারলাম না,, ওর সাথে কথা হতো প্রায় প্রতিদিন,,ওকে আমি প্রথম দিনই বলেছিলাম আমি প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করি না যদি আমার সাথে কথা বলার হয় তাহলে যাতে সে শুধু ফ্রেন্ড হিসেবেই থাকে,,
- তারপর সেও রাজি হয়,, রাফসানকে আমার বেস্টি ইশার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই,, আস্তে আস্তে রাফসানও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে ওঠে!!
- সত্যি বলতে রাফসানের মতো করে আমি নিজেই কখনো নিজেকে বুঝিনি ও এতোটা নিখুদ ভাবে আমাকে বোঝে,, ওর এই দিকটাই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো!!
- রাফসান আমার থেকে বয়সে মাত্র ১ বছরের বড় কিন্তু ক্লাসমেট,,তবে ওদের বাড়ি শহরে,, আমার থেকে ওর মধ্যে ম্যাচিউরিটি বেশি কারণ ও পৃথিবীটাকে একটু হলেও দেখেছে যেটা তখন আমি দেখিনি,, আমি তো সারাক্ষণ কার্টুন নিয়ে পরে থাকতাম তাই কাজ কর্মও বাচ্চাদের মতো,, আমার সব ফ্রেন্ডরা আমাকে বাচ্চা বেড়াল বলে ডাকে!!
- ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ হওয়ার পর আমি ওর কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখি,, ভালো লাগতো ওর সাথে কথা বলতে,, আমাদের ফ্রেন্ডশিপ টা ৫ মাসের ছিলো ভালোই ছিলাম আমরা,, একদিন ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখতে পাই,,একটা বড় কোম্পানিতে ইমার্জেন্সি পিএর প্রয়োজন!!
- পড়ালেখা না কাজের দক্ষতা দেখে সিলেক্ট করা হবে,, আমি প্রথম দিন স্কিপ করে যাই পোস্ট টা!!
- কিছুদিন পরে আবার ঐ রকম একটা পোস্ট আমার চোখের সামনে আবার চলে আসে!! তখন মনে মনে ভাবি “ আচ্ছা আমার চাকরিটা যদি আমি পাই তাহলে কেমন লাগবে,, ওফ্ কি আনন্দ টাই না হবে আমি জীবনের প্রথম কোনো কাজ করবো নিজের পায়ে দারাবো,, কিন্তু এতো এতো মানুষ এপ্লাই করবে এখানে আমি কি আদোও চান্স পাবো ”!!
- আমি রাফসান কে তখন পোস্ট টা সম্পর্কে বলি,, রাফসান তখন সরাসরি না করে দেয়া,, বলে যে...
রাফসান : দেখ আর্শি তর এই ধরনের কাজ করা লাগবে না,, এই কোম্পানিটা তো শহরের আর তুই তো গ্রামে কি করে করবি বলতো কাজটা হুম.!!
আর্শি : কেনো রে কোম্পানিটা কি খুব খারাপ বলনা!! যদি খারাপ হয় তাহলে আমি কাজ করবো না কিন্তু যদি ভালো হয় তাহলে ক্ষতি কি!!
রাফসান : ও্মম না ওতোটা খারাপ না তবে তোর ইচ্ছে!!
- তখন আমি আর কিছু বলিনি তারপর একদিন,, পোস্টটা থেকে আরো ডিটেইলস বের করে আমি অনলাইনে ইন্টারভিউ দেই!! তখন আমি নিজেই নিশ্চিত ছিলাম না কাজটা নিয়ে তাই কাউকে কিছু বলি নি..!!! এমনকি রাফসান বা ইশরাত কেও না!!
- তারপর হটাৎ এই একদিন আমাকে উনাদের অফিসে যেতে বলা হয়...কিন্তু আমি তো গ্রামের মেয়ে ঢাকা শহর তেমন একটা চিনি না,, আর বাবা মাও একা একা ছাড়বে না,, তাই কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না,, তখন হটাৎ মাথা আম্মু আব্বু কে না জানিয়েই একা ঢাকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই..
কলেজের জন্য বের হয়ে ঢাকা চলে যাই উনাদের লোকেশন অনুযায়ী গুগল ম্যাপ দেখে দেখে চলে যাই সেই অফিসে...
কিছুক্ষণ বাহিরে বসে ছিলাম তারপর একটা আপু আসে...সে আমাকে প্রাথমিক কিছু জিজ্ঞেসা করে তারপর ইন্টারভিউ রুমে নিয়ে যায়,, যদিও অনলাইনে ইন্টারভিউ দেওয়া তে তখন আর তেমন কিছু জিজ্ঞেস করে নি শুধু চাকরি টা কনফার্ম করার জন্য ডাকা হয়েছিলো...
ইন্টারভিউ রুমে উনারা ৫ জন ছিলো...আফিয়া আপু,, রুহি আপু,, আরিসা আপু,, শাওন ভাইয়া,, আর রিশান রহমান সবার সাথে মোটামুটি ভাবে পরিচিত হই...তারপর চাকরিটা কনফার্ম করে বাসায় ফিরে যাই...ওখানে বেশি সময় না লাগায় বাসায় ফিরতেও কোনো সমস্যা হইনি...
বাসায় আসার পর আম্মু আব্বু কে চাকরির কথাটা বলি...তারা প্রথমে রাজি না হলেও আমার জেদের কাছে হারমেনে তারাও রাজি হয়ে যায়,, আসলে আমি লোকের কথা মতে ভালোর ভালো আবার প্রচুর ঘাড়ত্যাড়া স্বভাবের,, তাই আম্মু আব্বু তেমন জোর করে নি...
কিন্তু আমাকে তো চাকরিটা করতে হলে ঢাকায় থাকতে হবে,, তাই বাবা মায় সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে ফুপির বাড়িতে রেখে আসবে...কিন্তু আমি না করে দেই আর অফিসের কাছাকাছি একটা কলেজে ভর্তি হয়ে,, একা একটা বাসা ভাড়া নেই সেখানে আমি আর আমার এক ক্লাস মেট ( তাহিয়া ) এক সাথে থাকবো..
চলবে............🥴