04/08/2025
নগরকান্দায় কাঁদায় বন্দি জীবন: শেখরকান্দিসহ চার গ্রামের ১০ হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ
বিশেষ প্রতিনিধি,
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় শেখরকান্দি, পাইককান্দি, দেলবাড়িয়া ও বেলবাড়িয়া—এই চার গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ বছরের পর বছর চলাচল করছেন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে। বর্ষা এলেই দেড় কিলোমিটারের রাস্তা পরিণত হয় কাদা আর জলাবদ্ধতার যন্ত্রণায় ভরা এক বিভীষিকাময় পথে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে। আর হেঁটে চলাও হয়ে পড়ে অসম্ভব।
উপজেলা সদরের পাশেই থাকা এ রাস্তাটি শহীদনগর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শেখরকান্দি হয়ে পাইককান্দির হালিম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার। এর মধ্যে দেড় কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা সবচেয়ে করুণ। রাস্তাটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত হলেও (আইডি: ৩২৯৬২৫১০৩), ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকাবাসীর আবেদন-নিবেদন সত্ত্বেও আজও পাকা হয়নি।
পদে পদে বাধা—শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবিকার পথে
এই রাস্তাটিই চার গ্রামের মানুষের উপজেলা সদর, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও জেলা শহরের সঙ্গে একমাত্র সংযোগ। রাস্তা ভালো না থাকায় গ্রামবাসীকে ধুলা ও কাদার সঙ্গে যুদ্ধ করে যাতায়াত করতে হয় বছরজুড়ে। বর্ষায় কাদা, গ্রীষ্মে ধুলা—এটাই নিত্যদিনের বাস্তবতা।
স্থানীয় আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ জালাল, মামুন মিয়া, মমিন মিয়া ও জাকারিয়া জানান, জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলেনি আশ্বাসের বাইরে কিছু। পাঁচ বছর আগে নিজেরা চাঁদা তুলে রাস্তা মাটি দিয়ে ভরাট করেছিলেন, কিন্তু বর্ষা ও বন্যায় সব ভেসে গেছে।
শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও করুণ। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই কাঁদামাখা পথ পেরিয়ে যেতে হয় নগরকান্দা কলেজ, মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমি, কোদালিয়া ও মাদ্রাসাগুলিতে। বৃষ্টির দিনে বই হাতে হাঁটা তো দূরের কথা, পা তোলা দায়।
দুর্ভোগ মানেই অতিরিক্ত খরচ
দেলবাড়িয়া গ্রামের অটোচালক রুবেল মিয়া বলেন, “রাস্তা খারাপ থাকায় গাড়ি রাখতে পারি না, ভাঙ্গায় গ্যারেজে রাখতে হয়। প্রতিদিন গ্যারেজ ভাড়া ও যাতায়াতে খরচ হয় ২৫০ টাকা। এই টাকা আমার পরিবারের খাবার থেকে কেটে দিতে হয়।”
৮০ বছরের বউ রাহেলার দীর্ঘশ্বাস
শেখরকান্দির প্রবীণ রাহেলা বেগম বলেন, “৮০ বছর আগে এই গ্রামে বউ হয়ে এসেছি, তখন পালকিতে যেতাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি, কিন্তু এই রাস্তাটা পাকা হতে দেখি নাই। রাস্তায় কাদা দেখে এখনো মেয়েরা এই গ্রামে বিয়ে করতে চায় না।”
জনপ্রতিনিধিদের দায়সারা আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ সবকিছু
শহীদ নগর ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন, “আমি বহুবার ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদে আবেদন দিয়েছি। শহীদ নগরের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন নিলু একবার রাস্তা দেখে পাকা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি মারা যান। এরপর আর কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”
প্রকৌশল বিভাগের প্রতিক্রিয়া
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল খালেক জানান, “আপনার মাধ্যমে জানলাম বিষয়টি, পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
📌 জনগণের প্রশ্ন: স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন চারটি গ্রামের হাজারো মানুষ কাদা আর দুর্ভোগকে নিয়তি ভেবে বেঁচে থাকবে?
📢 দাবি: অবিলম্বে রাস্তাটি সংস্কার ও পাকাকরণের উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে আর কোনো শিক্ষার্থী, রোগী বা নারী—কাদা মাড়িয়ে জীবনযুদ্ধে নামতে না হয়।