14/12/2023
মথুরাপুর দেউল:
পরিচয়:
মথুরাপুর দেউল বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে অবস্থিত একটি দেউল বা মঠ। এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়; তবে কারো কারো অনুমান এটি সপ্তদশ শতকের স্থাপনা।
অবস্থান:
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে মথুরাপুর দেউলটি অবস্থিত। এই দেউলটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে মধুখালী-রাজবাড়ী ফিডার সড়কের দেড় কিলোমিটার উত্তরে এবং মধুখালী-বালিয়াকান্দি আঞ্চলিক সড়কে মধুখালী সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গাজনা ইউনিয়নে সড়কের পশ্চিম দিকে অবস্থিত যার বিপরীত দিক (সড়কের পশ্চিম দিক) দিয়ে বয়ে গেছে চন্দনা নদী।
ইতিহাস:
কথিত আছে সংগ্রাম সিং নামক বাংলার এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেছিলেন ৷১৬৩৬ সালে ভূষণার বিখ্যাত জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিংকে এলাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তৎকালীন শাসকের ছত্রছায়ায় তিনি বেশ ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন ৷ এলাকার রীতি অনুসারে তিনি কাপাস্তি গ্রামের এক বৈদ্য পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন এবং মথুরাপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন ৷ অন্য এক সূত্রমতে, সম্রাট আকবরের বিখ্যাত সেনাপতি মানসিং রাজা প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের স্মারক হিসেবে এই দেউল নির্মাণ করেছিলেন ৷ সে অনুযায়ী, মথুরাপুর দেউল একটি বিজয়স্তম্ভ ৷ তবে সূত্রটির সত্যতা নিরুপন সম্ভব হয়নি ৷
বর্ণনা:
এই দেউলটি বারোকোন বিশিষ্ট এবং মাটি থেকে প্রায় ২১.২ মিটার উঁচু; যার ভিতর একটি ছোট কক্ষ রয়েছে।
এর গঠন প্রকৃতি অনুসারে একে মন্দির বললে ভুল হবে না ৷ এটি একটি রেখা প্রকৃতির দেউল ৷ ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপনা গুলোর মধ্যে মথুরাপুর দেউল সম্ভাবত একমাত্র রেখা প্রকৃতির দেউল ৷ দেউলটি বারো কোণ বিশিষ্ঠ একটি ভবনের মত স্থাপনা ৷ দেউলটিতে দুইটি প্রবেশ পথ আছে, একটি দক্ষিণ মুখী অন্যটি পশ্চিম মুখী ৷
এটি তৎকালীন ভবনগুলোর মধ্যে একমাত্র বারো কোণবিশিষ্ঠ কাঠামো ৷ বারোটি কোণ থাকায় উপর থেকে দেখলে এটিকে তারার মত দেখা যায় ৷ দেউলটির উচ্চতা ৮০ ফুট ৷ স্থাপনাটির মূল গঠন উপাদান চুন-সুরকির মিশ্রণ ৷ দেউলের বাইরের দেয়ালটি লম্বালম্বিভাবে সজ্জিত, যা আলোছায়ার সংমিশ্রণে এক দৃষ্টিনন্দন অনুভূতির সৃষ্টি করে ৷ পুরো স্থাপনা জুরে টেরাকোটার জ্যামিতিক ও বাহারী চিত্রাংকণ রয়েছে ৷ রামায়ণ কৃষ্ণলীলার মত হিন্দু পৌরাণিক কাহীনির চিত্র, গায়ক, নৃত্যকলা, পবন পুত্র বীর এবং যুদ্ধচিত্রও এইসদাউলের গায়ে খচিত রয়েছে ৷ প্রতিটি কোনের মাঝখানে কৃত্তিমূখা স্থাপন করা রয়েছে ৷ তবে দেউলটির কোথাও কোন লেখা পাওয়া যায় নি ৷ বাংলার ইতিহাসে এর নির্মাণশৈলী অনন্য বৈশিষ্ঠ বহন করে ৷ এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সুরক্ষিত সম্পদ ৷
যাতায়াত:
মথুরাপুর দেউলটি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে অবস্থিত। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে মধুখালীুরাজবাড়ী ফিডার সড়কের ঠিক দেড় কিলোমিটার উত্তরে দেউলটির অবস্থান।
গাবতলী বাসষ্ট্যান্ড হতে ঢাকা-ফরিদপুর রুটে চলাচল কৃত যেকোন গাড়ীতে ফরিদপুর অথবা ঢাকা থেকে বরিশাল, ঢাকা থেকেতেকে গোপালগঞ্জ এর যেকোন গাড়ীতে ভাঙ্গা নেমে ফরিদপুর যেতে হবে। তারপর ফরিদপুর এর পুরাতন অথবা নতুন বাসষ্ট্যান্ড হতে মধুখালী, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোহর গামী যেকোন বাসে উঠে মধুখালী বাসষ্ট্যান্ডে নামতে হবে। তারপর মধুখালী হতে যেকোন পরিবহনে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে পৌছে যাবেন ঐতিহ্যবাহী মথুরাপুর দেউল এবং উপভোগ করতে পারবেন এর দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য্য।
বি:দ্র: আজ আমি ফরিদপুর কে নিয়ে একটি ভিডিও পোষ্ট করলাম। যেটা ইউটিউবার বা ভ্রমন ব্লগার “শাহাদত হোসেন লুক্সু” ভাই এর ইউটিউব চ্যানেল Mr Luxu থেকে নেয়া। ওনি ফরিদপুর কে অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন ওনার ভিডিওর মাধ্যমে। আপনারা চাইলে পুরো ভিডিও টি ওনার ইউটিউব চ্যানেল থেকে দেখে আসতে পারেন।
#ফরিদপুরজেলা
@মায়াজাল
Akter liza