
15/07/2025
গুড্ডুর আলাদা ঘর লাগবে বাবা। ও তো বড় হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন! আপনি অনুগ্রহ করে যদি বাইরের ঘরে শিফট করেন।
সোমার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালেন বিভাস। বয়স তো বাড়ছে। আটাত্তরে পা দিয়েছেন কিছুদিন হল।
বাইরের ঘর মানে সোফা- কাম- বেডটিতে কিভাবে পারবেন! অথচ গুড্ডুর প্রয়োজনটাও ফেলে দেবার নয়।
সত্যিই তো,ফাইভে উঠল। যদিও তৃতীয় একটি বেডরুম আছে,যা সোমার নিজস্ব , ব্যক্তিগত জিনিসে ভর্তি।
রাত দুটো অবধি সেখানেই কি সব খুট খুাট করে সে ল্যাপটপে। সেখানে কি ব্যবস্থা করা যেত না ! কিছুই বললেন না বিভাস। যদিও ফ্ল্যাটের মালিক তিনি, মোটা টাকা পেনশন পান |
সংসারের সিংহভাগ খরচ তিনিই করেন | বিভাসের নামে,সমস্ত ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সও। তাই কারো কাছে হাত পাতার প্রয়োজন নেই তাঁর। তবুও কিছু কিছু কথা না বলাই সৌজন্যতা । নিজেরই ছেলে, বৌমা , নাতি । একসঙ্গে থাকছেন,এতেই মাঝে মধ্যে সংকোচ হয় তাঁর।
রাগ করে ওরা চলে গেলে তাঁর আর রইল কী ! যুথিকা তো মাঝজীবনে তাকে একলা ফেলে চলে গেলেন , তারপর থেকে এদের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন |
স্কুল থেকে ফেরার পর নতুন ব্যবস্থার কথা শুনে গুড্ডুর প্রতিক্রিয়া দেখে বিভাসও অবাক। "এটা কেমন ব্যবস্থা মা!"
"কেন,তুই যে বললি".. "হ্যাঁ,বলেছি। কিন্তু আমি কি বলেছি তুমি বুঝো নি।"
রাতে সোফা -কাম -বেডের অনভ্যস্ত পরিসরে ঘুম আসছিল না বিভাসের।হঠাৎ গুড্ডুর গলা।
"দাদু ওদাদু আমার একা শুতে ভয় করছে। চলো,আজ থেকে তুমি আর আমি।" " না,না রে দাদুভাই , তোর মা আবার"....
"আমি থাকতে তোমার কোনো ভয় নেই দাদু । এ নিয়ে আর একটাও কথা নয়।" একটি দশ বছরের ছেলে কথাটা বলছে না আটাশ বছরের যুবক তা বোধগম্য হচ্ছিল না বিভাসের। অবাক হতেও ভুলে যাচ্ছেন।
চোখ দুটো এত বেইমানি করলে তো মুশকিল। ঘুমন্ত গুড্ডুর পাশে শুয়ে অশ্রু আর বাধা মানল না বিভাসের।
অবহেলায় এক ফোঁটা কান্না আসেনি তাঁর কোনদিন । কিন্তুু ভালোবাসার সঙ্গে কে আর কবে জিততে পেরেছে!
এখন বিভাসের পঁচাশি চলছে । বয়সের ভারে ন্যুব্জ দেহ মন দুটোই । একজন সেবিকার আর এক রাধুনীর তত্ত্বাবধানে একা থাকেন ।
বাজার ঘাট রাধুনীর করে সাথে গোটা সংসারের দেখ ভাল । বিভাস কিছুই আর পারেন না।
তন্ময় আর সোমা তিন বছর হলো চলে গিয়েছে তাদের নতুন ফ্ল্যাটে। তাঁকে দেখতে আসার অবশ্য সময় হয় না কারো। তিনমাস পরপর এসে তন্ময় ব্যাঙ্কের টাকা তুলে দিয়ে যায়।
পাঁচ বছর পর পড়াশোনা শেষ করে আজ গুড্ডু আমেরিকা থেকে ফিরছে শুনেছিলেন আগেই | করব না করব না ভেবেও ফোন করেছিলেন সোমাকে |
গুড্ডুকে একবার দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করে। যদি যাবার ইচ্ছা...... এক কথায় নাকচ করে দিয়েছে সোমা ।
"অত দূর থেকে আসছে, ছেলেটাকে কদিন থিতু হতে দিন বাবা। নাতিকে দেখার দিন তো আর আপনার পালিয়ে যাচ্ছেনা।" মনটা খারাপ তাই বিভাসের।
একটা বই পড়ার চেষ্টা করলেন। রেখে দিলেন। চোখে অনেকদিনই ছানি পড়েছে।একা যেতে পারেন না। কেউ নিয়ে যাবে না জানেন। কাকে বা বলবেন? কারো সময় নেই। সবাই নিজেদের কে নিয়ে ব্যাস্ত | বেলটা বেজে উঠল না ?
কে এল এ সময়ে , সকাল তো আটটা সবে। রান্নার মাসি নয়টায় আসে। "দেখো তো সাবিত্রী কে এল।" "দাদাইইইই"..... কী শুনলেন!
পড়ে যাবেন যে খাট থেকে ! গুড্ডুর গলা না... আটাশ বছরের না দশ বছরের সেটা বোধগম্য হচ্ছেনা বিভাসের! "ওরে ছাড় ছাড়,আগে দেখি তোকে ভালো করে, কেমন সাহেব হয়েছিস , হ্যাঁরে, মেমসাহেব বৌ আনবি নাকি".আমার জন্য , চোখে এত জল কোথায় যে থাকে,কই কখনো তো দেখতে পাননা...
"হ্যাঁরে, মা বাবা কই, ওরা আনতে যায়নি তোকে?" " গিয়েছে ,আমি ওদের চোখ এড়িয়ে উবের নিয়ে পালিয়ে এলাম। ভয় নেই, মেসেজ করেছি।
আগে আমি আমার দাদাইএর কাছে আসব , তারপর কথা।" থমথমে মুখে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল তন্ময় আর সোমা । পুরোনো আমলের ফ্ল্যাটবাড়ি, লিফট নেই।
বেলের আওয়াজ শুনে সাবিত্রী দরজা খুলেছে। "বৌদি,আপনারা!" "গুড্ডু কই!" "ওর দাদুর ঘরে।" ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকতেও গিয়েও থেমে গেল সোমা ।
দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলো , দাদুর বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে দাদুর আদর খাচ্ছে তার গুড্ডু | দাদু ওর মাথায় , পিঠে , শরীরে, চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
"দাদু , ঠিকমতো দেখতেও তো পাওনা তুমি। মোবাইলে আমার ছবি দেখে বলছ এটা কার ছবি! চোখের ছানি কেউ কাটাতে নিয়ে যায়নি?"
"নারে লাগবে না"... "আমি নিয়ে যাব। দিন দুই সময় দাও।জেটল্যাগটি কাটলেই"... " কি রে গুড্ডু ,তুই এখানে চলে এলি ?তোর জন্য কত রকমের রান্না করেছি ,বাড়িতে চল আগে"...
"আমি এখানেই থাকব , এটাই আমার নিজের বাড়ি , দাদুর কাছে", অদ্ভুত এক হিম ঠাণ্ডা চোখে তাকাল গুড্ডু , "তোমরা চলে যাও। বিকেলে গিয়ে দেখা করব। এখন স্নান করে ঘুমোব।"
হতভম্ব সোমার সামনে দিয়ে ট্রলি ব্যাগ দুখানা টেনে নিয়ে পাশের রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল গুড্ডু ।
゚