
17/07/2025
অভিনেত্রী সুনেত্রা: বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ৮০ ও ৯০ দশক ছিল এক সোনালি অধ্যায়। এই সময়টিকে আরও সমৃদ্ধ করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের অন্যতম অভিনেত্রী সুনেত্রা। তাঁর রূপ, ব্যক্তিত্ব ও অভিনয়শৈলীতে মুগ্ধ হয়েছিল কোটি দর্শক। আজও তার নাম উচ্চারিত হলে স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ঢালিউড, টলিউডের সেই জৌলুসপূর্ণ দিনগুলো।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন-
সুনেত্রার প্রকৃত নাম ছিল রীনা সুনেত্রা কুমার। ১৯৭০ সালের ৭ জুলাই ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পড়াশোনায়ও ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন, যা তার বর্ণাঢ্য জীবনের আরেকটি গৌরবময় অধ্যায়।
চলচ্চিত্রে আগমন-
মাত্র ১৫ বছর বয়সে, ১৯৮৫ সালে সুনেত্রা ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিনয় জগতে পা রাখেন। তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘উসিলা’, যেখানে নায়ক ছিলেন তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেতা জাফর ইকবাল। শুরু থেকেই তার অভিনয় দক্ষতা, সৌন্দর্য ও সাবলীল উপস্থিতি দর্শক-প্রশংসা কুড়াতে থাকে।
জনপ্রিয়তার শিখরে-
১৯৯০ সালে ‘পালকী’ ছবির মাধ্যমে সুনেত্রা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ছবি মুক্তি পেতে থাকে এবং তিনি শুধু ঢালিউড নয়, টলিউড, এমনকি পাকিস্তানি ও উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয়ের সুযোগ পান।
শুধু অভিনয় নয়, তিনি ছিলেন দক্ষ নৃত্যশিল্পী, গায়িকা এবং মডেলও। একাধিক শিল্পমাধ্যমে তার বিচরণ তাকে বর্ণময় এক তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র-
সুনেত্রা অভিনীত বহু চলচ্চিত্র দর্শক হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
উসিলা, পালকী, শিমুল পারুল, ভাই আমার ভাই, দুঃখিনী মা, লায়লা আমার লায়লা, স্ত্রীর স্বপ্ন, বাদশা ভাই, বোনের মতো বোন, ভাবীর সংসার- ইত্যাদি।
এইসব ছবিতে তার সাবলীল অভিনয়, আবেগপ্রবণতা ও আকর্ষণীয় উপস্থিতি তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের স্মরণীয় এক মুখে পরিণত করেছে।
মৃত্যুর করুণ অধ্যায়-
দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন সুনেত্রা। ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল কলকাতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৩ বছর। তার প্রয়াণে চলচ্চিত্র অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। সামাজিক মাধ্যমে ভক্ত, সহশিল্পী ও শুভানুধ্যায়ীরা তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
চির স্মরণীয় সুনেত্রা-
সুনেত্রা ছিলেন কেবল এক জন অভিনেত্রী নন, ছিলেন এক অনন্য শিল্পী, যিনি তার রূপ, ব্যক্তিত্ব ও শিল্পপ্রতিভা দিয়ে দর্শকের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। তার মৃত্যু আমাদের শোকাহত করলেও, তার অভিনীত অসংখ্য ছবি, সুনিপুণ শিল্পসৃষ্টি ও হৃদয়ছোঁয়া ব্যক্তিত্ব আমাদের স্মৃতিপটে চিরভাসমান থাকবে।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সুনেত্রার নাম চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Trand News Bangla