25/06/2025
ইস"রাইলকে দমন করার পন্থা -
প্রফেসর ডঃ নাজিমুদ্দিন এরবাকান
"জায়নবাদ" হল একটি কুমিরের মত। এর উপরের চোয়াল হল আমেরিকা আর নিচের চোয়াল হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর জিহ্বা আর দাঁত হল ইসরাইল এবং এর শরীর সহ অন্যান্য অঙ্গসমূহ হল মুসলিম দেশসমূহ সহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী, মিডিয়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন।
আমি এর উপর এত জোর দিচ্ছি কেন? কারণ আমাদের ভুল ধারণা হল, আমরা যায়নবাদ বলতে শুধু ইয়াহুদি জাতি আর ইসরাইলকেই বুঝে থাকি। এই বৃহৎ কুমিরটি আজ বিশ্বকে গ্রাস করে, শান্তি-শৃঙ্খলাকে হজম করে, গাজায় নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করছে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে আজ সবচেয়ে বড় বাধা হল এই যায়নবাদ।
আমরা মানবজাতিকে কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারি? কারণ Great Middle East Project যায়নবাদীদের আকিদার সাথে সম্পর্কিত; এই বিষয়কে তারা তাদের দ্বীনের অংশ বলে মনে করে থাকে। ইসরাইলের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রী এই কথাটি বলে থাকেন যে, “আমাদের দুটি মানচিত্র রয়েছে—একটি হল দেওয়ালে খচিত, অপরটি হল আমাদের অন্তরে খচিত মানচিত্র।”
এটাই হল ইসরাইলের পরিকল্পনা। মুসলিম হিসেবে আমরা কী করে থাকি?
OIC-সহ অন্যান্য সংগঠনের নামে বিভিন্ন সম্মেলনের আয়োজন করে থাকি এবং সেখানে সারাদিন ফাঁকা বুলি আওড়াই। সভাশেষে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে সারা দুনিয়ায় প্রচার করি—“অনতিবিলম্বে ইরাক থেকে আমেরিকার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।” টেলিভিশন অথবা পত্র-পত্রিকায় এই খবর দেখে রকফেলারেরা কফির কাপে আয়েশী টান দিয়ে ব্যঙ্গাত্মক অট্টহাসি দিয়ে বলে
"তোমরা এই সকল অবাস্তব পরিকল্পনা নিয়েই বসে থাকো, আর জেনে রাখো আমরা আমাদের প্রতিটি পরিকল্পনা পদে পদে বাস্তবায়ন করছি।"
এমনকি ইরানিরা মনে করে যে—“আমরা নিজেরা পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছি, আমরা আধুনিক অস্ত্র বানাচ্ছি...” ইত্যাদি। সাবধান! এই সকল চিন্তার মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতারিত করবেন না। আপনারা যদি এই পথেই চলতে থাকেন তাহলে শত বছরে ও
ইসরাইলিদের কিছুই করতে পারবেন না।
তাহলে আমরা কী করব?
এর থেকে উত্তরণের একটাই পথ—আমাদেরকে কুরআনের আলোকে নতুন দুনিয়া সৃষ্টি করতে হবে। কারণ ইসলাম ছাড়া বিশ্বে শান্তি অসম্ভব। আমরা কিভাবে এই নতুন দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করব?
আমি ২৪ জুন ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলাম এবং শপথ নেওয়ার পর আমার অফিসে আসি। এরপর সর্বপ্রথম আমেরিকার রাষ্ট্রদূত আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে। সে আমাকে বলে—“আমরা জানি আপনার দাওয়াত হচ্ছে ইসলাম, আর আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন—অবশ্যই আমরা এটা পছন্দ করিনি। কিন্তু আপনাদের সাথে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে ছয়টি শর্তে আপনার সাথে কাজ করতে পারি,
১। ইরানের সাথে আপনাদের বাণিজ্য পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলারের বেশি করতে পারবেন না।
২। ইরানে যেতে পারবেন না।
৩। মুসলিম দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে পারবেন না।
৪। তুরস্কে অবস্থিত আমেরিকা ও ইসরাইলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর কাজে বাধা দিতে পারবেন না।
৫। তুরস্কে অবস্থিত আমেরিকান সামরিক ঘাঁটিগুলো বন্ধ করতে পারবেন না।
৬। ইরাকের পাইপলাইনগুলো উন্মুক্ত করতে পারবেন না।
আমাদের ইতিহাসে আলী পাশার একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে—"আমি যে রাষ্ট্রীয় কাজ করতে যাই না কেন, প্রথমে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে পরামর্শ করি এবং সে যা বলে, আমি ঠিক তার বিপরীতটাই করি।"
আমিও ঠিক একই কাজ করেছি-
রাষ্ট্রদূত যা বলেছে, আমি তার উল্টো কাজ করেছি। সে বলেছিল, “৫০ মিলিয়নের বেশি বাণিজ্য করতে
পারবেন না”— অথচ আমি শুধু ইরানের গ্যাসের জন্যই ২.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করি। এমনকি আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, ইরানের সাথে তুরস্কের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ১০ বিলিয়ন, ২০ বিলিয়ন, ৫০ বিলিয়নের মধ্যে সীমিত থাকবে না, বরং তা জার্মানি ও ফ্রান্সের সাথের সম্পর্কের চেয়েও বেশি হবে।
১৫ দিন পর আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ারেন এম. ক্রিস্টোফার এবং আঙ্কারার রাষ্ট্রদূত ক্রসম্যান এই দুই ইয়াহুদি শলাপরামর্শ করে যে, “যাই হোক না কেন, রেফাহ পার্টি এবং এরবাকানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।” তাদের সেই ষড়যন্ত্রের দলিলগুলো আমার কাছে রয়েছে।
আমি এই সকল কথা কেন বলছি?
আমরা দোয়া করি—ইরানের ইসলামি বিপ্লব তার পূর্ণতায় পৌঁছাতে পারে। কিন্তু আমরা এটা জানি, আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য তারা যেমন ষড়যন্ত্র করেছে, ঠিক তেমনি ইরানের বিপ্লবও যাতে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারে, সে জন্য তারা সকল ধরনের ষড়যন্ত্র করবে।
আপনারা এদেরকে সুযোগ না দেওয়ার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকবেন। কারণ যায়নবাদীরা ৫৭০০ বছরের একটি পুরাতন সংগঠন।
আমেরিকার চল্লিশটি রণতরী রয়েছে এবং তারা হুমকি দিয়ে বলে যে ইরানকে ভালোভাবে শায়েস্তা করবে। এমতাবস্থায় আমরা কি শুধু বসে থাকব? নাকি ৪১টি রণতরী বানাব? আর এগুলো বানাতে যে সময় লাগবে,
সেই সময়েই তারা আমাদের নিঃশেষ করে দেবে।
এই রণতরীগুলো বানানোর জন্য আমাদের এত অর্থই বা কোথা থেকে আসবে? আমরা ৪১টি বানাতে বানাতে ওরা ৮০টি বানিয়ে ফেলবে। তাহলে আমরা যায়নবাদকে কিভাবে পরাজিত করব?
আল্লাহ মহান, রাব্বুল আলামিন, দয়াবান ও দয়ালু। প্রযুক্তির উন্নয়ন ইসলামের জন্য একটি বড় নিয়ামত। আমরা এমন প্রযুক্তি আবিষ্কার করব—যার মাধ্যমে তারা আমাদের আক্রমণ করার সময় তাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দিয়েই তাদের রণতরীগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে।
এটা কি সম্ভব নয়?
হ্যাঁ, এটা ইলেকট্রিক্যাল-ইলেকট্রনিক্সে সম্ভব। আমরা ওজনহীন বিমান তেহরান থেকে তেলআবিবে পাঠাব এবং এখানে বসে তা দেখব। এরপর এটি ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানবে।
এগুলো কি সম্ভব?
হ্যাঁ, সম্ভব। আমি এসবের প্রোটোটাইপ তৈরি করে এনেছি। কারণ প্রযুক্তির কোন শেষ নেই। ইরানের ইসলামী বিপ্লব নতুন দুনিয়া সূচনার একটি দরজা। তুরস্ক ও ইরানের সম্পর্ক একটি বীজের মতো। এর চারপাশে রয়েছে D-8, এর চারপাশে D-60, ষাটটি মুসলিম দেশ এবং নিপীড়িত একশো টি দেশ।
এরপর রাশিয়া, চীন, আফ্রিকা, ভারতসহ ৬০০ কোটি মানুষকে নিয়ে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে চাই।
আমরা কমন মুদ্রা হিসেবে ইসলামি দিনার চালু করব। ইসলামী জাতিসংঘ এবং নিজস্ব ন্যাটো প্রতিষ্ঠা করব।
আর এভাবেই আমরা একটি নতুন দুনিয়া গড়ব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা ইব্রাহিমের ৪৬ নম্বর আয়াতে বলেন:
﴿وَقَدْ مَكَرُوا مَكْرَهُمْ وَعِندَ اللَّهِ مَكْرُهُمْ وَإِن كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ﴾
“তারা তাদের সব রকমের চক্রান্ত করেছে, কিন্তু তাদের প্রত্যেকটি চক্রান্তের জবাব আল্লাহর কাছে ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন ছিল যাতে পাহাড়ও টলে যেত।”
আল্লাহ আরও বলেন:
إِنْ يَنْصُرْكُمُ اللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ
"যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন, কেউ তোমাদের পরাজিত করতে পারবে না।"
আমি এর আগে ইরানে D-8 খুলেছিলাম। এখন আমি এসেছি দুটি লক্ষ্য নিয়ে:
১। ইরানের বিপ্লবের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করা। আত্মবিশ্বাস রাখলে আপনারাই বিজয়ী হবেন। আল্লাহ আপনাদের সহায় হবেন।
২। ইরান ও তুরস্ক ইনশাআল্লাহ একটি নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে।
(২০০৯ সালে ইরান সফরে দেওয়া বক্তব্যের আংশিক অনুবাদ)
অনুবাদক: বুরহান উদ্দিন আজাদ।
゚ #ব্রেকিং #