27/07/2025
কিছু পুরুষ আছে পুরুষত্ব জাহির করে নারীর সাথে দুর্ব্যবহার ও হুকুম জারি করে। তারা বুঝাতে চায় আমি যা বলব সেটাই ঠিক সেটাই শেষ কথা। আমি যা বলব তা সেকেন্ডের মধ্যে করতে হবে। তুমি বউ তুমি শুধু আমার হুকুম পালন করবা কোন কথা বলা যাবেনা বললেই ৩ তালাক দিয়ে বের করে দেব।
একটা মেয়ে হয়তো এখানেই আটকে সংসার করে কারণ সমাজের ভীতি, মানুষের কথা, পারিবারিক অসম্মান, নিজের আর্থিক ও মানসিক, পারিবারিক সাপোর্ট না থাকার কারণে। চুপচাপ মেনে নিয়ে সহ্য করে সংসার করে। কিন্তু তার মন চায় মুক্তির সুবাতাস সে চায় কবরে গিয়ে হলেও যেন একটু শান্তি পায় নিরুপায় হয়ে মেয়েটা হয়তো বেঁচে থাকে মৃত্যুর প্রতিক্ষায়। আর সংসার করে মানসিক যন্ত্রণায়। আমরা কেবল বাহিরের মারধরকেই টর্চার ভাবি কিন্তু কখনো কখনো মানসিক টর্চার শারীরিক টর্চারের থেকেও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ভেতরে ভেতরে মেয়েটা শেষ হয়ে যায় কিন্তু কেউ কিছু জানেনা মেয়েটার দম বন্ধ হয়ে আসে চায় একটু মুক্ত বাতাস। সুখী মনে সংসার করা আর বাধ্য হয়ে, বন্দিনী হয়ে সংসার করা এক জিনিস নয়। একটু ঘুমালেও মেয়েটা জেগে উঠে স্বামীর চিৎকার, কটু কথা আর রাগী স্বামীটার মুখ মনে করে মনে হয় এই বুঝি সব শেষ করে দিলো এই বুঝি রেগে গিয়ে কিছু ভেঙে ফেললো এই বুঝি আমাকে তালাক বলে ফেলল। ঘুমের মাঝেও মেয়েটার নিশ্বাস বন্দ হয়ে শরীরে কাঁপুনি দেয়। তবু মেয়েটা নিয়ম করে সংসার করে কারণ সে যে বন্দিনী।
আর কিছু পুরুষ আছে যারা স্ত্রীকে সম্মান করতে জানে। তারা স্ত্রীর চাওয়া পাওয়ার মূল্যায়ন করে, স্ত্রীকে রোবট কিংবা চাকরিনীর মতো হুকুম করেনা বরং সুন্দর ব্যবহার করে। তারা কথায় কথায় তো নয় বরং তালাকের কথা চিন্তাও করেনা। রাগ হলে ভাঙচুর করে চিল্লাচিল্লি করেনা বরং চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে যায় কিংবা কথা বলেনা। তারা চামারের মতো অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেনা৷
আমি বলছিনা স্ত্রীকে শাসন করা যাবেনা কিন্তু সারাক্ষণ তার মুখ বন্ধ রেখে তাকে দমিয়ে রেখে তাকে পরমায়েশ জারি করা শাসন নয়, সে যদি ভুল করে অবশ্যই তাকে শাসন করার অধিকার স্বামীর আছে। সেই ভুলটা সামান্য একটা কাজ না করার জন্য স্বামী তাকে নিশ্চয়ই প্রহার করতে পারে না? যদি স্ত্রী পরকিয়া করে, বেপর্দায় চলে, সালাত না পড়ে, পরপুরুষের সাথে কথা বলে সেসবের জন্য অবশ্যই শাস্তি পাবে কিন্তু সংসারে একটা কাজ না করা বা তার একটা মতামত দিতে না পারা কিছু বললে দমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া এটা কখনোই সম্মানিত পুরুষ করতে পারেনা। উত্তম পুরুষের নিজ আচরণের কারণেই "স্ত্রী" তাকে মন থেকে সম্মান করতে, সেবা করতে আগ্রহী হয়। তারা স্ত্রীর সকল ভালো কাজের প্রসংশা করে স্ত্রীকে ভালো কাজে উৎসাহিত করে।
যারা স্ত্রীকে অসম্মান করে দিনশেষে স্ত্রীও সেই পুরুষকে অসম্মান করে। কিছু কিছু বুড়ো মহিলাকে দেখবেন শেষ বয়সে স্বামীকে ইচ্ছামতো গালি দেয় যুবক বয়সে দাপড়ানো পুরুষ পঙ্গু হয়ে শেষ বয়সে স্ত্রীর কটু কথা শুনেও চুপ করে থাকে যদিও এই বিষয়টি আমি মন থেকে ঘৃণা করি, কিন্তু ওই নারীই জানে কেবল তার মনে কত ঘৃণা আর কত ক্ষোভ জমে আছে।
শেষকথা এটাই যে স্ত্রীকে সম্মান দিলে তাকে কদর করলে সেই স্ত্রীও আপনাকে মাথার তাজ বানিয়ে রাখবে, আপনার জন্য জীবন দিয়ে দিতেও দ্বিধা করবেনা। তাই স্ত্রীকে সম্মান করুন জীবনকে সুন্দর করুন।
আসল পুরুষত্ব স্ত্রীকে সম্মানে কাপুরুষেরাই কেবল নিজের বড়ত্ব জাহির করতে স্ত্রীর উপর চোটপাট করতে জানে।
#পুরুষত্ব
#উম্মে_সালমা_নিশু