12/10/2025
অবুঝ শিশুকন্যা মানহা এর দায়িত্ব মা-বাবা কেউ নিতে চাইছিল না.......
কোর্টের কাজের চাপ সামলে হুড়োহুড়ি, হাজারো নারী পুরুষের ঠাসাঠাসি অতিক্রম করে নিজের চেয়ারে একটু বিশ্রামের জন্য বসেই লক্ষ্য করলাম
এই ফুটফুটে কন্যা শিশুটি আমার চেয়ারের চারপাশে ঘুরাঘুরি করছে আর কি যেনো অব্যক্ত ভাষায় কিছু বলতে চাইছে।
আমি শিশুটিকে ইশারায় ডাকতেই সে আমার কাছে ঘেষে দাড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
আমি তাকে পাশের চেয়ারে তুলে বসানো মাত্র আমার পকেটে হাত দিয়ে কলমটা নিয়েই ওর হাতের মধ্যেই আকাআকি করা শুরু করে দিল।
স্বভাবসুলভ অভ্যাসে কিছুটা কৌতুহলে জানতে চাইলাম এই ফুটফুটে কন্যা শিশুটির মা-বাবা কে,
কেনই বা এত ছোট্ট শিশুটিকে আদালতে নিয়ে এসেছে। কেউ কোন কথা বলছে না,
একজন অন্যজনের দিকে শুধু তাকাচ্ছিল। আমি যখন একবার কিছু রহস্যের আলামত পেয়েছি তখন বিষয়টা আমার জানতেই হবে।
উনাদের এডভোকেটকে শিশুটির বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, যা জানলাম তা অত্যান্ত
হৃদয়স্প/র্শী, বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠলো, এই ফুটফুটে কন্যাটির নাম মানহা।
আহা! কত মিষ্টি মেয়ে, কত মধুর নাম শিশুটির। কত আবেগ, কত স্বপ্ন, কত প্রেম ভালবাসা দিয়ে বাবা-মা তার সন্তানের নাম রাখে।
কিন্তু বিষাদে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো শিশু মানহা এর অনাগত অনিশ্চিত জীবনের কথা শুনে।
শিশুটির বাবা মানহা এর মাকে বিয়ে করে প্রবাসে চলে গেছে জীবন জীবিকার সন্ধানে।
এই অবস্থায় স্বামী স্ত্রীর মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। একজন অন্যজনকে পর/কী/য়ায় আ/স/ক্ত বলে অভিযোগ করে এবং তা/লা/কের নোটিশ পাঠিয়ে দেয়।
এর মাঝে এই ফুটফুটে কন্যা শিশু মনহা পৃথিবীকে আলোকিত করে এবং নিজের অনিশ্চিত জীবন নিয়ে পৃথিবীতে আসে।
কত আর বয়স হবে হয়তো দুই বছর। এখনো মুখের ভাষা ফুটেনি। তাহার মুখে হাসি নেই,
দুনিয়ায় অনিশ্চয়তা চোখে মুখে। কি যেন বলতে চায়, কিন্তু বলার মত বয়স এখনো হয়নি।
শিশু মানহা এর বাবা-মা এর দাম্পত্য জীবনের কিছু অভিযোগ নিয়ে মানহার মা আদালতের দারস্থ হয়। কিছুদিন আদালতের বারান্দায় ঘুরাঘুরি করে ক্লান্ত হয়ে দুই পক্ষই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
সব কিছুই সেটেল্ড করা গেছে কিন্তু শিশু মানহার দায়িত্ব কেউ নিতে চাইছেনা।
এই নিয়ে দেনদরবার সারাদিন গড়িয়ে ক্লান্ত দুপুর অতিক্রান্ত। কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।
মা শিশু সন্তান নিতে চাইছে না তার অন্যত্র বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কন্যা মানহার কারনে অনাগত ভবিষ্যতে দাম্পত্য জীবনের অশান্তির আশংকা,
বাবার পক্ষের লোকজন মানহাকে নিতে চাইছেনা এই অবুঝ কন্যা শিশুটির পরিচর্যাকারী কেউ তেমন নেই তাদের পরিবারে।
এমন নিদারুণ নি/ষ্ঠু/র অ/মা/ন/বি/ক পরিস্থিতিতে এক পর্যায়ে মমতা, মায়া ও দায়িত্ব বোধ থেকে নিজের আগ্রহের কথা বললাম,
আপনারা যদি কন্যা শিশুটির দায়িত্ব নেয়ার ব্যাপারে কোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তাহলে মানহা-কে আমাকে দিয়ে দিন,
আমি ওর দায়িত্ব নিব। আমার পিছনেই মানহার মা বসাছিল। আমার কথায় কিছুটা টনক নড়ে উঠলো।
শিশু কন্যা মানহা এর দাদী এগিয়ে এলেন, বললেন আমি বয়সের ভারে অসুস্থ, নিজেই চলাচলের অযোগ্য তবুও আমি আমার নাতিনকে কাউকে দিব না,
আমি যতদিন বেঁচে আছি আমিই তাকে লালনপালন করবো।
হাফ ছেড়ে বাচলাম, কন্যা শিশু মানহার আপাতত একটা গতি হলো। অন্তত র/ক্ত বা বংশের মায়ায় হলেও শিশুটি অন্তত আশ্রয় পাবে।
আমিও তাকে দোয়া করে দিলাম। মামনা দাদীর কোলে চলে গেলো চীর দিনের মতো,
মানহার মা পাশেই দাঁড়িয়ে অশ্রুপাত করছে। মায়ের পক্ষের লোকজন মানহার মাকে শান্তনা দিচ্ছে,
তোর যখন মন চায় গিয়ে তোর সন্তানকে দেখে আসবি, কেউ বাধা দিবেনা। আহা কত সুন্দর সমাধান!
আস্তে আস্তে মানহার দাদী মানহাকে কোলে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে মানহার মা আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছছে। এমন অমানবিক পরিস্থিতিতে কখন অলক্ষ্যেই নিজের চোখেও অশ্রুপাত ঝড়ছে বুঝতে পারিনি।
ভালো থেক অবুঝ শিশু তুমি, পৃথিবীতে এসে বুঝতে শিখার আগেই তুমি যে নি/ষ্ঠু/র/তার মুখোমুখি হলে নিষ্ঠুরতার দেখা পেলে, তুমি এটা সামলে নিও। তোমার জন্য শুভ কামনা নিরন্তর।