
11/07/2025
একজন মানুষকে মে*রে ফেলা হলো—নির্মমভাবে, সবার সামনে। অথচ কেউ এগিয়ে এলো না। কেউ এক পা-ও বাড়াল না, কেউ বলল না ‘থামো!’
চারপাশে লোক ছিল। কেউ দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ মোবাইল বের করেছে ভিডিও করার জন্য, কেউ মুখ ঘুরিয়ে চলে গেছে। যে সংখ্যাটা একজন মানুষ ছিল, সেটা দুই, তিন বা তার চেয়ে বেশি—২০/২২ জন। তারা সবাই মিলে চাইলে জীবনটা হয়তো বাঁচাতে পারতো। কিন্তু না, কেউ এগোল না।
প্রশ্ন জাগে—আমরা এত ভীরু কেন? কিসের এত ভয়?
পুলিশে জড়ানো? বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা? নিজের ক্ষতির আশঙ্কা?
নাকি আমরা সত্যিই একেকটা দাসে পরিণত হয়েছি—ভয় আর স্বার্থের শিকলে বাঁধা?
একটা সময় ছিল, যখন অন্যায়ের প্রতিবাদে মানুষ প্রাণ দিতো। আজ আমরা প্রাণ না দিয়ে শুধু চুপ করে থাকি। আমরা শিখে গেছি—"যতক্ষণ নিজের গায়ে না লাগে, ততক্ষণ চুপ থাকা ভালো।" এই চুপ থাকাই আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে—একেকজন করে, ধীরে ধীরে।
আমরা এখন এমন একটা সমাজে বাস করি, যেখানে একজন মানুষকে প্রকাশ্যে হ*ত্যা করা হলে আশপাশের মানুষ সরে দাঁড়ায়।
এটা কেবল ভয় নয়—এটা অবজ্ঞা, অমানবিকতা আর মনুষ্যত্ব হারানোর চূড়ান্ত উদাহরণ।
আমরা এখন এমন একটা মানসিক বন্দিশালায় বাস করছি, যেখানে মানুষ দেখে দেখে চোখ বুজে ফেলে।
যেখানে একটি জীবনের মূল্য নেই—একটি আওয়াজ, একটি হাত বাড়ানো যেন দোষের বিষয়!
যেখানে নিজের নিরাপত্তার অজুহাতে অন্যের মৃ*ত্যু মেনে নেওয়াকে “বুদ্ধিমানের কাজ” ধরা হয়।
এই কি আমাদের সমাজ? এই কি আমাদের মানুষ হওয়া?
তবে ভাবতে হয়, এই ভয় আমরা কোথা থেকে পেলাম?
আমাদের জন্ম থেকেই কি আমরা দাস ছিলাম?
নাকি সিস্টেম আমাদের দাস বানিয়েছে?
আমাদের পরিবার, শিক্ষা, ধর্ম, রাষ্ট্র—সবাই কি আমাদের শেখায়নি শুধু চুপ থেকে নিজেরটা বাঁচাও?
আমরা স্বাধীন দেশে বাস করি—কাগজে-কলমে।
কিন্তু মানসিকভাবে আমরা এখনো দাস।
আমরা এখনো একেকজন করে নিজের ঘরের মধ্যে আটকে থাকি, অন্যের কষ্ট-অন্যায়ের দিকে পিঠ ফিরিয়ে থাকি।
মানুষ মরছে, নারী নিগৃহীত হচ্ছে, শিশু নির্যাতিত হচ্ছে, বৃদ্ধ লাঞ্ছিত হচ্ছে—আর আমরা বলি, "আল্লাহ দেখছেন", "নিজের ঝামেলায় যাই না জড়াই।"
আচ্ছা, যদি কালকে তোমার ভাই হতো ওই মানুষটা? যদি ওই মানুষরা তোমার বোনকে মারতো? যদি ওইখানে তুমি থাকতে?
তখনও কি তুমি চুপ থাকতে?
আজ না হয় তুমি চুপ ছিলে—কাল হয়তো কেউ তোমার জন্যও চুপ থাকবে।
এভাবেই একেকজন করে আমরা মরব।
কারণ আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় ব্যাধি হলো "অন্যায়ের বিরুদ্ধে একা না দাঁড়ানো"।
আমরা ভয় পাই—কারণ আমরা একা।
আর আমরা একা থাকি—কারণ আমরা কেউ কারো পাশে দাঁড়াই না।
তাই এখন সময়—ঘুম ভাঙানোর।
সময় এসেছে ভয়ের দেয়াল ভাঙার।
সময় এসেছে প্রতিবাদ করার, সাহসী হবার।
নাহলে এই সমাজ একদিন এমন হবে, যেখানে কেউ কারো জন্য কান্নাও করবে না।
একজন মানুষ যখন আরেকজন মানুষকে রক্ষা করতে চায় না, তখন সে আর মানুষ থাকে না।
এই সমাজকে আবার মানুষময় করতে হবে।
সাহসিকতা, বিবেক আর ভালোবাসায় গড়া সমাজই পারে এমন ভয়ঙ্কর নীরবতা থেকে আমাদের উদ্ধার করতে।
প্রতিটি মানুষ যেন আরেকজনের জন্য দাঁড়াতে পারে—এই হোক আজকের শপথ।
ভয় নয়, প্রতিবাদ হোক আমাদের নতুন পরিচয়।
#মানুষ_হও #ভয়েরশিকল_ভাঙো #প্রতিবাদকরো #অন্যায়ের_বিরুদ্ধে_একহই